সেই গ্রীন হোমসের এমডি রাজুসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

রাজধানীতে ডেভেলপার কোম্পানি খুলে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রায় ১৪ কোটি টাকা আত্মসাত ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রীন হোমস নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুর রহমান রাজুসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডি। গতকাল সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আবদুর রহমান রাজু ছাড়াও তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন পারুল, তার ভাই মো. সাজু ও শাশুড়ি আকলিমা বেগম মঞ্জুকে আসামি করা হয়।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান জানান, ২০০৯ সালে আব্দুর রহমান রাজু ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন মিলে গ্রীন হোম প্রোপার্টিজ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি গড়ে তোলে। রাজুর শ্বশুরবাড়ি উত্তর যাত্রাবাড়ীর ১০৫/২ ঠিকানায় এ ডেভেলপার কোম্পানিটির অফিসিয়াল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট বিক্রি, বহুতল ভবন নির্মাণ, প্লট বিক্রির নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সিআইডি ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে যে টাকা নিতো সব টাকাই দেশের বাইরে পাচার করতো রাজু। তানজেনিয়ার স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড ব্যাংকে রাজু দম্পতির কোটি টাকা ডিপোজিট করার প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এছাড়া নিজ নামে, স্ত্রীর নামে, শাশুড়ি আকলিমা বেগমের নামে এবং ভাই সাজু নাটোরের বনপাড়ায় তানিশা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটায়ও বিনিয়োগ করেছে। আয়শা ব্রিকসের নামে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন করার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। আয়শা ব্রিকসসহ ১৮টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে তদন্তে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলে ২০০৯ সালের গত ২৬ এপ্রিল ২০১৪ সালের থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিক্রয়ের চুক্তিতে অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ১৪ কোটি টাকা অপরাধলব্ধ আয় করে। যাদের মধ্যে নিম্নে গ্রাহকদের কাছ থেকে মানি রিসিটের মাধ্যমে টাকা গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাহবুবুল হক জিলানীর কাছ থেকে ১৬ লাখ, মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লার কাছ থেকে ১০ লাখ, শান্তনা দাসের কাছ থেকে ১৫ লাখ, সেলিনা আক্তারের কাছ থেকে ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, মোসা. নাসিমা খাতুনের কাছ থেকে ১০ লাখ, মঞ্জুরুল হক মামুনের কাছ থেকে ৩ লাখ, আলীমুজ্জামান ভুইয়ার কাছ থেকে ৩ লাখ, এম এ আক্তারুজ্জামানের কাছ থেকে ১৫ লাখ, আয়শা সিদ্দিকার কাছ থেকে ১৭ লাখ, মোহসেনা বেগমের কাছ থেকে ২০ লাখ, সুজন সরকার ও রণজিত সরকারের কাছ থেকে ১০ লাখ, মো. আলতাফ আলমের কাছ থেকে ১০ লাখ ৬০ হাজার, মোসা. নাসিমা আক্তারের কাছ থেকে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

প্রতারণা ও আত্মসাতকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার তানজানিয়ায় পাচার করে এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত ২০১৩ সালের ২৭ মে তারিখে তানজানিয়ায় গ্রীন বাংলা লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠন করে বিদেশে বিনিয়োগ করে। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, তানজানিয়ায় ৩০০ কোটি স্থানীয় মুদ্রা ফিক্সড ডিপোজিট করে যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। অপরাধলব্ধ আয়কে বৈধ করার প্রয়াসে আসামি আবদুর রহমান রাজু ও তার স্ত্রী আসামি আম্বিয়া খাতুন পারুল তানজানিয়া থেকে ওই টাকার কিছু পরিমাণ অর্থ তাদের নিজ নামে এবং আসামি আকলিমা বেগম মঞ্জুর নামে বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরণ করে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আয় দেখিয়ে তার ভাই আসামি সাজুর মাধ্যমে আসামি আম্বিয়া খাতুন পারুলের নামে নাটোর জেলার বনপাড়ায় তানিশা ব্রিকস নামে ইটের ভাটায় বিনিয়োগ করেন।

সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২

সেই গ্রীন হোমসের এমডি রাজুসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীতে ডেভেলপার কোম্পানি খুলে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রায় ১৪ কোটি টাকা আত্মসাত ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রীন হোমস নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুর রহমান রাজুসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিআইডি। গতকাল সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আবদুর রহমান রাজু ছাড়াও তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন পারুল, তার ভাই মো. সাজু ও শাশুড়ি আকলিমা বেগম মঞ্জুকে আসামি করা হয়।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান জানান, ২০০৯ সালে আব্দুর রহমান রাজু ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন মিলে গ্রীন হোম প্রোপার্টিজ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি গড়ে তোলে। রাজুর শ্বশুরবাড়ি উত্তর যাত্রাবাড়ীর ১০৫/২ ঠিকানায় এ ডেভেলপার কোম্পানিটির অফিসিয়াল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট বিক্রি, বহুতল ভবন নির্মাণ, প্লট বিক্রির নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সিআইডি ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে যে টাকা নিতো সব টাকাই দেশের বাইরে পাচার করতো রাজু। তানজেনিয়ার স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড ব্যাংকে রাজু দম্পতির কোটি টাকা ডিপোজিট করার প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এছাড়া নিজ নামে, স্ত্রীর নামে, শাশুড়ি আকলিমা বেগমের নামে এবং ভাই সাজু নাটোরের বনপাড়ায় তানিশা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটায়ও বিনিয়োগ করেছে। আয়শা ব্রিকসের নামে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন করার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। আয়শা ব্রিকসসহ ১৮টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে তদন্তে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলে ২০০৯ সালের গত ২৬ এপ্রিল ২০১৪ সালের থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিক্রয়ের চুক্তিতে অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ১৪ কোটি টাকা অপরাধলব্ধ আয় করে। যাদের মধ্যে নিম্নে গ্রাহকদের কাছ থেকে মানি রিসিটের মাধ্যমে টাকা গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাহবুবুল হক জিলানীর কাছ থেকে ১৬ লাখ, মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লার কাছ থেকে ১০ লাখ, শান্তনা দাসের কাছ থেকে ১৫ লাখ, সেলিনা আক্তারের কাছ থেকে ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, মোসা. নাসিমা খাতুনের কাছ থেকে ১০ লাখ, মঞ্জুরুল হক মামুনের কাছ থেকে ৩ লাখ, আলীমুজ্জামান ভুইয়ার কাছ থেকে ৩ লাখ, এম এ আক্তারুজ্জামানের কাছ থেকে ১৫ লাখ, আয়শা সিদ্দিকার কাছ থেকে ১৭ লাখ, মোহসেনা বেগমের কাছ থেকে ২০ লাখ, সুজন সরকার ও রণজিত সরকারের কাছ থেকে ১০ লাখ, মো. আলতাফ আলমের কাছ থেকে ১০ লাখ ৬০ হাজার, মোসা. নাসিমা আক্তারের কাছ থেকে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

প্রতারণা ও আত্মসাতকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার তানজানিয়ায় পাচার করে এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত ২০১৩ সালের ২৭ মে তারিখে তানজানিয়ায় গ্রীন বাংলা লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠন করে বিদেশে বিনিয়োগ করে। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, তানজানিয়ায় ৩০০ কোটি স্থানীয় মুদ্রা ফিক্সড ডিপোজিট করে যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। অপরাধলব্ধ আয়কে বৈধ করার প্রয়াসে আসামি আবদুর রহমান রাজু ও তার স্ত্রী আসামি আম্বিয়া খাতুন পারুল তানজানিয়া থেকে ওই টাকার কিছু পরিমাণ অর্থ তাদের নিজ নামে এবং আসামি আকলিমা বেগম মঞ্জুর নামে বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরণ করে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আয় দেখিয়ে তার ভাই আসামি সাজুর মাধ্যমে আসামি আম্বিয়া খাতুন পারুলের নামে নাটোর জেলার বনপাড়ায় তানিশা ব্রিকস নামে ইটের ভাটায় বিনিয়োগ করেন।