সীমান্ত জেলাগুলোতে বাড়ছে সংক্রমণ

সীমান্তবর্তী আট জেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই দুই জেলায় আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। সংক্রমণ রোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ইতোমধ্যে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। সংক্রমণ বাড়লে সীমান্তবর্তী অন্য জেলায়ও একই পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে সারাদেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৫৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪৫ শতাংশ। এর আগের দিন সাতক্ষীরায় শনাক্তের হার ছিল ৩৩ শতাংশ ও যশোরে তা ছিল ২০ শতাংশ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্যতম।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল সংবাদকে জানান, ‘সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। আমরাও নিয়মিত মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি, সংক্রমণ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে যারা আসছেন (ভারত থেকে) তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য, মাস্ক পরার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদেরও নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে দুই হাজার ৯৭১ জন যাত্রী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে বিমানবন্দর দিয়ে দুই হাজার ২৬১ জন, স্থলবন্দর দিয়ে ৪৬৭ জন এবং সমুদ্রবন্দর দিয়ে ২৪৩ জন যাত্রী এসেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে ‘অবৈধভাবে’ও কিছু মানুষ বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করে থাকে। এদের মাধ্যমেও সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ অবৈধপথে যাতায়াতকারীদের কোন কোয়ারেন্টিন নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা আমাদের জন্য ভয়ের কারণ।’ সংক্রমণ ঠেকাতে তিনি সীমান্ত বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসা বন্ধ না হলে সামনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ

রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮২ জন ও রাজশাহীতে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এই দুই জেলার করোনা আক্রান্তদের বেশিরভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন রামেক হাসপাতালে।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী গতকাল সেলফোনে সংবাদকে জানান, তার জেলায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোন ‘ঝুঁকি’ নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে ১৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘লকডাউন’ চলছে। আমাদের এখানে কোন সমস্যা নেই।’

গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫৪ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৮৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং ৪৮ জন রাজশাহীর বাসিন্দা। এর মধ্যে ১৪ জন আইসিইউতে রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের।

রোগীদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে জানিয়ে রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুইজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, একজন রাজশাহীর ও একজন পাবনার। এ নিয়ে গত তিনদিনে এই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ও ১১২ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

করোনার প্রথম ধাপে রামেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৯৬ জন রোগী ছিল উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৬ জনে। ঈদের আগে সেটি কমে এসেছিল ৭১ জনে। কিন্তু ঈদের পর থেকে করোনা রোগী বাড়তে থাকে। যা একদিনে ১৬৮ জনে দাঁড়ায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫৫ শতাংশ-উল্লেখ করে রামেক পরিচালক বলেন, ‘কম নয় রাজশাহীতেও। বর্তমানে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪৫ ভাগ।’

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতদিনব্যাপী ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। লকডাউনের জন্য সাতদিন আগেই রামেক কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করেছিল বলে জানান শামীম ইয়াজদানী।

রাজশাহীতেও লকডাউন প্রয়োজন জানিয়ে রামেক পরিচালক বলেন, ‘এখানে বর্তমানে লকডাউন দেয়া না গেলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভারতীয় ধরন আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর’এ পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার সংবাদকে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোন মানুষ রাজশাহী আসবে না। রাজশাহীর কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে পারবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতফেতরদের নিয়ে শঙ্কা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গত একমাসে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ছয়জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২৩ জনের করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কিনা এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। জেলায় করোনা সংক্রমণের হার নি¤œমুখী হলেও ভারত থেকে দেশে ফেরত আসাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা এখন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের। প্রতিদিনই ৪০/৫০ জন করে দেশে ফিরছেন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে।

সিভিল সার্জন মো. একরাম উল্লাহ জানান, গত ২৬ এপ্রিল থেকে সোমবার পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন এক হাজার ছয়জন বাংলাদেশি। তারা ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের চিকিৎসাসহ নানা রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারত গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে ৪৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হলে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ১৩৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হয় ১১৩ জনের। আর ১৪ মে থেকে সোমবার পর্যন্ত আরও ১৪৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয় ৭২ জনের। এর আগে এপ্রিল মাসে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক ৬০৫ জন।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

সীমান্ত জেলাগুলোতে বাড়ছে সংক্রমণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সীমান্তবর্তী আট জেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই দুই জেলায় আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। সংক্রমণ রোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ইতোমধ্যে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। সংক্রমণ বাড়লে সীমান্তবর্তী অন্য জেলায়ও একই পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে সারাদেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৫৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪৫ শতাংশ। এর আগের দিন সাতক্ষীরায় শনাক্তের হার ছিল ৩৩ শতাংশ ও যশোরে তা ছিল ২০ শতাংশ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্যতম।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল সংবাদকে জানান, ‘সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। আমরাও নিয়মিত মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি, সংক্রমণ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে যারা আসছেন (ভারত থেকে) তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য, মাস্ক পরার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদেরও নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে দুই হাজার ৯৭১ জন যাত্রী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে বিমানবন্দর দিয়ে দুই হাজার ২৬১ জন, স্থলবন্দর দিয়ে ৪৬৭ জন এবং সমুদ্রবন্দর দিয়ে ২৪৩ জন যাত্রী এসেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে ‘অবৈধভাবে’ও কিছু মানুষ বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করে থাকে। এদের মাধ্যমেও সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ অবৈধপথে যাতায়াতকারীদের কোন কোয়ারেন্টিন নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা আমাদের জন্য ভয়ের কারণ।’ সংক্রমণ ঠেকাতে তিনি সীমান্ত বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসা বন্ধ না হলে সামনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ

রাজশাহী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮২ জন ও রাজশাহীতে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এই দুই জেলার করোনা আক্রান্তদের বেশিরভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন রামেক হাসপাতালে।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী গতকাল সেলফোনে সংবাদকে জানান, তার জেলায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোন ‘ঝুঁকি’ নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে ১৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘লকডাউন’ চলছে। আমাদের এখানে কোন সমস্যা নেই।’

গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫৪ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৮৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং ৪৮ জন রাজশাহীর বাসিন্দা। এর মধ্যে ১৪ জন আইসিইউতে রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের।

রোগীদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে জানিয়ে রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুইজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, একজন রাজশাহীর ও একজন পাবনার। এ নিয়ে গত তিনদিনে এই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ও ১১২ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

করোনার প্রথম ধাপে রামেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৯৬ জন রোগী ছিল উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৬ জনে। ঈদের আগে সেটি কমে এসেছিল ৭১ জনে। কিন্তু ঈদের পর থেকে করোনা রোগী বাড়তে থাকে। যা একদিনে ১৬৮ জনে দাঁড়ায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫৫ শতাংশ-উল্লেখ করে রামেক পরিচালক বলেন, ‘কম নয় রাজশাহীতেও। বর্তমানে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪৫ ভাগ।’

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতদিনব্যাপী ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। লকডাউনের জন্য সাতদিন আগেই রামেক কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করেছিল বলে জানান শামীম ইয়াজদানী।

রাজশাহীতেও লকডাউন প্রয়োজন জানিয়ে রামেক পরিচালক বলেন, ‘এখানে বর্তমানে লকডাউন দেয়া না গেলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভারতীয় ধরন আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর’এ পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার সংবাদকে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোন মানুষ রাজশাহী আসবে না। রাজশাহীর কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে পারবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতফেতরদের নিয়ে শঙ্কা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গত একমাসে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ছয়জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২৩ জনের করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কিনা এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। জেলায় করোনা সংক্রমণের হার নি¤œমুখী হলেও ভারত থেকে দেশে ফেরত আসাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা এখন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের। প্রতিদিনই ৪০/৫০ জন করে দেশে ফিরছেন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে।

সিভিল সার্জন মো. একরাম উল্লাহ জানান, গত ২৬ এপ্রিল থেকে সোমবার পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন এক হাজার ছয়জন বাংলাদেশি। তারা ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের চিকিৎসাসহ নানা রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারত গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে ৪৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হলে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ১৩৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হয় ১১৩ জনের। আর ১৪ মে থেকে সোমবার পর্যন্ত আরও ১৪৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয় ৭২ জনের। এর আগে এপ্রিল মাসে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক ৬০৫ জন।