ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাবে

উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও প্লাবন শুরু

প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ইয়াস। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ বিভিন্ন চর এলাকায় নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে বড় কোন ঝুঁকির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে উপকূলের নিচু এলাকাগুলো। আজ দুপুর নাগাদ ভারতের উত্তর উরিষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০-১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। এছাড়া সাগর উত্তাল থাকবে।

বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের নৌযান চলাচল। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে স্থানীয়দের বাঁচাতে সারাদেশের জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। স্থানীয় সরকার বিভাগের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ৯৫৪৫৪১৫, নৌ-মন্ত্রণালয়ের হটলাইন নম্বর ১৬১১৩ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম নম্বর ০১৩১৮২৩৪৫৬০। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান। এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, ইংরেজিতে যাকে জেসমিন বলা হয়, বাংলায় জুঁই ফুল।

গতকাল আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত একই এলাকায় অবস্থান করছিল। যা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। যা আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার দুপুর নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রম করবে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটার মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন সংবাদকে বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মুখ ভারতের দিকে রয়েছে। তাই বাংলাদেশের বড় কোন ঝুঁকির আশঙ্কা নেই। তবে উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল ভোর রাত থেকে যা আরও বাড়ছে। আজ দুপুরের দিকে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

পিরোজপুর : পিরোজপুরের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। প্রবাহিত হচ্ছে সাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ ফুট উপর দিয়ে। পিরোজপুর সদর, ভাণ্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর কাউখালী উপজেলার প্রায় ৪৫টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

নোয়াখালী : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চারপাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিঝুমদ্বীপে ও তমরুদ্দিতে বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে ৪ গ্রাম।

বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ শুরু হয়েছে। পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলার কিছু কিছু নিচু চরাঞ্চল প্রায় ২ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের নদী ও খালের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২ ফুট বেড়েছে বলে জানায় ওখানকার বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে এক দেড়-ফুট বেড়েছে।

পটুয়াখালী : কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর ভাঙা বাঁধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ১৫ গ্রাম।

উপকূল থেকে ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত

কয়েকদিন আগে ভারতের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে প্রাণঘাতী একটি ঘূর্ণিঝড়। এখন আবার পূর্ব উপকূল দিয়ে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তাই ইয়াস মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে দেশটির স্থানীয়র কর্তৃপক্ষ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আজ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমডির প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ভারতের স্থানীয় কর্মকর্তারা গতকাল গাড়ি ও নৌকায় করে উপকূলের নিচু এলাকার বাসিন্দাদের স্কুল, সরকারি ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্র বানানো বিভিন্ন স্থাপনায় সরিয়ে নিয়েছে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের পাঠানো হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। জেলেদের নৌকাগুলোকে তীরে নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি যেখানে আছড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার নিকটবর্তী উড়িষ্যার বালাসোর জেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের মেগাফোন ব্যবহার করে বাসিন্দাদের সতর্ক করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে আরেকটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ভারতের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে দেড়শ’র বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গত দুই দশকে ভারতের পশ্চিম উপকূলে এরকম শক্তিশালী ঝড় আর আঘাত হানেনি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাবে

উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও প্লাবন শুরু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে উপকূল প্লাবিত। গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে তোলা ছবি -সংবাদ

প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ইয়াস। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ বিভিন্ন চর এলাকায় নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে বড় কোন ঝুঁকির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে উপকূলের নিচু এলাকাগুলো। আজ দুপুর নাগাদ ভারতের উত্তর উরিষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০-১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। এছাড়া সাগর উত্তাল থাকবে।

বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের নৌযান চলাচল। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে স্থানীয়দের বাঁচাতে সারাদেশের জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। স্থানীয় সরকার বিভাগের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ৯৫৪৫৪১৫, নৌ-মন্ত্রণালয়ের হটলাইন নম্বর ১৬১১৩ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম নম্বর ০১৩১৮২৩৪৫৬০। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান। এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, ইংরেজিতে যাকে জেসমিন বলা হয়, বাংলায় জুঁই ফুল।

গতকাল আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত একই এলাকায় অবস্থান করছিল। যা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। যা আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার দুপুর নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রম করবে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটার মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন সংবাদকে বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মুখ ভারতের দিকে রয়েছে। তাই বাংলাদেশের বড় কোন ঝুঁকির আশঙ্কা নেই। তবে উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল ভোর রাত থেকে যা আরও বাড়ছে। আজ দুপুরের দিকে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

পিরোজপুর : পিরোজপুরের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। প্রবাহিত হচ্ছে সাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ ফুট উপর দিয়ে। পিরোজপুর সদর, ভাণ্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর কাউখালী উপজেলার প্রায় ৪৫টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

নোয়াখালী : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চারপাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিঝুমদ্বীপে ও তমরুদ্দিতে বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে ৪ গ্রাম।

বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ শুরু হয়েছে। পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলার কিছু কিছু নিচু চরাঞ্চল প্রায় ২ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের নদী ও খালের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২ ফুট বেড়েছে বলে জানায় ওখানকার বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে এক দেড়-ফুট বেড়েছে।

পটুয়াখালী : কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর ভাঙা বাঁধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ১৫ গ্রাম।

উপকূল থেকে ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত

কয়েকদিন আগে ভারতের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে প্রাণঘাতী একটি ঘূর্ণিঝড়। এখন আবার পূর্ব উপকূল দিয়ে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তাই ইয়াস মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে দেশটির স্থানীয়র কর্তৃপক্ষ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আজ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমডির প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ভারতের স্থানীয় কর্মকর্তারা গতকাল গাড়ি ও নৌকায় করে উপকূলের নিচু এলাকার বাসিন্দাদের স্কুল, সরকারি ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্র বানানো বিভিন্ন স্থাপনায় সরিয়ে নিয়েছে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের পাঠানো হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। জেলেদের নৌকাগুলোকে তীরে নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি যেখানে আছড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার নিকটবর্তী উড়িষ্যার বালাসোর জেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের মেগাফোন ব্যবহার করে বাসিন্দাদের সতর্ক করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে আরেকটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ভারতের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে দেড়শ’র বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গত দুই দশকে ভারতের পশ্চিম উপকূলে এরকম শক্তিশালী ঝড় আর আঘাত হানেনি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।