এবারও রক্ষাকবচ সুন্দরবন

২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ যখন আঘাত হেনেছিল, তখন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল সুন্দরবন। এর থেকে যত পেছনের দিকে হাঁটা যায় দেখা যাবে, ততবারই ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ২৬০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল। তখনও সুন্দরবন না থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো। একইভাবে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল।

তবে এ আগলে রাখতে সুন্দরবনেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় গতকাল সকালে মোংলায় জরুরি সভা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তিনি দুর্যোগে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার অনুরোধ করে বলেন, দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে, এবারও তাই হবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর এক বছর পার হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় শঙ্কিত উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলার নদীরতীর ও বেড়িবাঁধের পাশে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে খুলনার কয়রা একটি। এ উপজেলার বাসিন্দা নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি জানান, দুর্যোগ কবলিত এ জনপদের মানুষ ভাঙাগড়ার মধ্যেই দিনাতিপাত করছে। একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের নতুননামে আঘাত হানছে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়।

এসব ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো জমি ও সম্পদ হারিয়ে অনেকে উদ্বাস্তু। ভয়াভহ তাদের জীবনসংগ্রামের চিত্র।

নিশীথ বলেন, ২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০ মে বিকেলে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। যার ক্ষত এখনও শুকায়নি।

আম্ফানের তাণ্ডবে ৬০ এর দশকে উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। পরবর্তীতে মানুষ টিকে থাকার স্বার্থে অনেক স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে কোনমতে তা আটকেছিল। এখন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র খবরে নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ।

নিশীথ আওর বলেন, উপকূলের মানুষ জন্মগতভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে শিখেছে। এ কারণে বড় ঝড়বৃষ্টি তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু নদীর বাঁধ ভেঙে গেলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলেন। কারণ, এ সময় পানি তাদের সর্বস্বান্ত করে দেয়, তা মোকাবিলার শক্তিও তাদের নেই।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কয়রার ২৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুইহাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে পানি প্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, বিশেষকরে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

ইমতিয়াজ বলেন, এরমধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে আতঙ্ক বেড়েছে।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান বলেন, আইলায় বাঁধ ভেঙে চার বছরের বেশি সময় পানিবন্দী থাকতে হয়েছে মানুষকে। মাত্র ১০ শতাংশের মতো ঘরবাড়ি টিকে ছিল। আইলার পর আড়াই হাজারের মতো পরিবারকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজেদের চেষ্টার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, এখানকার বড় সমস্যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়িবাঁধ। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাটির কণাগুলো একে অন্যের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা হারাচ্ছে, অর্থাৎ ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙন বাড়ছে, বাঁধগুলো টিকছে না। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবাধ জোয়ার-ভাটার (টিআরএম) মাধ্যমে ভূমি উঁচু করার সুপারিশ করেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, নানা কারণে বাঁধগুলোর সক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে ৪৮০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য সাতটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলের দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলায় অনেক প্রকৃতিনির্ভর ও লোকায়ত প্রক্রিয়া আগে ছিল। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে, যা খুঁজে বের করার দরকার। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর জোরালোভাবে উপকূলীয় বাঁধ ব্যবস্থার পুনর্বাসনের দাবি ওঠে। যে দাবি মূলত দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। উপকূল এলাকায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্র্মাণের দাবি জানান তিনি।

দাকোপ এলাকার বাসিন্দা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, উপকূলের মানুষের নানা ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে উপকূলের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

এবারও রক্ষাকবচ সুন্দরবন

শুভ্র শচীন, খুলনা

২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ যখন আঘাত হেনেছিল, তখন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল সুন্দরবন। এর থেকে যত পেছনের দিকে হাঁটা যায় দেখা যাবে, ততবারই ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ২৬০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল। তখনও সুন্দরবন না থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো। একইভাবে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল।

তবে এ আগলে রাখতে সুন্দরবনেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় গতকাল সকালে মোংলায় জরুরি সভা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তিনি দুর্যোগে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার অনুরোধ করে বলেন, দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে, এবারও তাই হবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর এক বছর পার হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় শঙ্কিত উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলার নদীরতীর ও বেড়িবাঁধের পাশে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে খুলনার কয়রা একটি। এ উপজেলার বাসিন্দা নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি জানান, দুর্যোগ কবলিত এ জনপদের মানুষ ভাঙাগড়ার মধ্যেই দিনাতিপাত করছে। একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের নতুননামে আঘাত হানছে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়।

এসব ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো জমি ও সম্পদ হারিয়ে অনেকে উদ্বাস্তু। ভয়াভহ তাদের জীবনসংগ্রামের চিত্র।

নিশীথ বলেন, ২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০ মে বিকেলে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। যার ক্ষত এখনও শুকায়নি।

আম্ফানের তাণ্ডবে ৬০ এর দশকে উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। পরবর্তীতে মানুষ টিকে থাকার স্বার্থে অনেক স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে কোনমতে তা আটকেছিল। এখন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র খবরে নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ।

নিশীথ আওর বলেন, উপকূলের মানুষ জন্মগতভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে শিখেছে। এ কারণে বড় ঝড়বৃষ্টি তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু নদীর বাঁধ ভেঙে গেলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলেন। কারণ, এ সময় পানি তাদের সর্বস্বান্ত করে দেয়, তা মোকাবিলার শক্তিও তাদের নেই।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কয়রার ২৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুইহাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে পানি প্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, বিশেষকরে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

ইমতিয়াজ বলেন, এরমধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে আতঙ্ক বেড়েছে।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান বলেন, আইলায় বাঁধ ভেঙে চার বছরের বেশি সময় পানিবন্দী থাকতে হয়েছে মানুষকে। মাত্র ১০ শতাংশের মতো ঘরবাড়ি টিকে ছিল। আইলার পর আড়াই হাজারের মতো পরিবারকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজেদের চেষ্টার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, এখানকার বড় সমস্যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়িবাঁধ। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাটির কণাগুলো একে অন্যের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা হারাচ্ছে, অর্থাৎ ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙন বাড়ছে, বাঁধগুলো টিকছে না। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবাধ জোয়ার-ভাটার (টিআরএম) মাধ্যমে ভূমি উঁচু করার সুপারিশ করেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, নানা কারণে বাঁধগুলোর সক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে ৪৮০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য সাতটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলের দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলায় অনেক প্রকৃতিনির্ভর ও লোকায়ত প্রক্রিয়া আগে ছিল। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে, যা খুঁজে বের করার দরকার। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর জোরালোভাবে উপকূলীয় বাঁধ ব্যবস্থার পুনর্বাসনের দাবি ওঠে। যে দাবি মূলত দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। উপকূল এলাকায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্র্মাণের দাবি জানান তিনি।

দাকোপ এলাকার বাসিন্দা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, উপকূলের মানুষের নানা ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে উপকূলের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।