ইউএনজিএ প্রেসিডেন্টের সৌজন্য সাক্ষাৎ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তায় উদ্বেগ প্রধানমন্ত্রীর

সম্প্রতি মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে সফররত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মায়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মায়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনায় ছিলাম। যদিও সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল না। বাংলাদেশ মায়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু মায়ানমারের এই পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাসানচরকে প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাসানচর দ্বীপে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নেয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। বৈঠকে দুজন রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে দেশের জনগণ এবং অর্থনীতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি করোনাভাইরাস থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য অন্যান্য অর্থ সুবিধা দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন।

নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার দেখানো পথে রাজনীতি থেকে প্রশাসনসহ সব সেক্টরে নারীর ক্ষমতায়ন করছি।’ জাতীয় সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং সংসদ উপনেতা চারজনই নারী- সে কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। এ বছর সরকার প্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন করার চিন্তা ভাবনার কথা জানান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। তিনি বলেন, ‘এ বছর জাতিসংঘ অধিবেশনের সময় প্রতিটি দেশ থেকে দু’জনের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত রাখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন ভলকান বজকির। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একজন লেডি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে।’ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ সারাবিশ্বের সামনে একটি দৃষ্টান্ত।’ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

ইউএনজিএ প্রেসিডেন্টের সৌজন্য সাক্ষাৎ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তায় উদ্বেগ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

সম্প্রতি মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে সফররত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মায়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মায়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনায় ছিলাম। যদিও সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল না। বাংলাদেশ মায়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু মায়ানমারের এই পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাসানচরকে প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাসানচর দ্বীপে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নেয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। বৈঠকে দুজন রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে দেশের জনগণ এবং অর্থনীতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি করোনাভাইরাস থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য অন্যান্য অর্থ সুবিধা দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন।

নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার দেখানো পথে রাজনীতি থেকে প্রশাসনসহ সব সেক্টরে নারীর ক্ষমতায়ন করছি।’ জাতীয় সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং সংসদ উপনেতা চারজনই নারী- সে কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। এ বছর সরকার প্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন করার চিন্তা ভাবনার কথা জানান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। তিনি বলেন, ‘এ বছর জাতিসংঘ অধিবেশনের সময় প্রতিটি দেশ থেকে দু’জনের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত রাখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন ভলকান বজকির। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একজন লেডি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে।’ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ সারাবিশ্বের সামনে একটি দৃষ্টান্ত।’ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।