বাঙালির অস্তিত্বে মিশে থাকা কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। গতকাল ছিল জাতীয় এ কবির ১২২তম জন্মজয়ন্তী। গরম আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে তাকে। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার জনসমাগম সীমিত রাখা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সময় কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী নজরুল ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘দুখু মিয়া’ নামে। পিতৃহীন কবি একে একে হারিয়েছেন কাছের স্বজনদের। আর্থিক অসচ্ছলতাও তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল। সব বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। সাম্য ও মানবতার চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল তার লেখনী। কবিতায় বিদ্রোহী সুরের জন্য হয়ে ওঠেন ‘বিদ্রোহী কবি’।
সকালে নজরুল সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় কবির স্বতন্ত্র কিছু মূল্যবোধ আছে। তিনি জীবনে বহুমাত্রিক দর্শনের সমাহার ঘটিয়েছিলেন। সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক কবি, মানবতার কবি, ভালোবাসার কবি- নানা দর্শনের সম্মিলন তিনি। একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মূল্যবোধ তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস। তার গান ও কবিতা আমাদের রণাঙ্গনে সাহস ও শক্তি যোগাত। তিনি প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি। সবচেয়ে বড় কথা তিনি মানবতার কবি, অসাম্প্রদায়িকতার কবি এবং গণমানুষের কবি।’ আজ তিনি নেই, কিন্তু তিনি সবসময় আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক থাকবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ মহান কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘আমাদের সব ঝড়-ঝঞ্ঝা দূর করার জন্য তিনি সবসময় বিজয়ের গান গেয়েছেন। আজকে করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য জাতীয় কবি নজরুল আমাদের খুবই উদ্বুদ্ধ করে।’
কবির আত্মার শান্তি কামনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কবির আজকের জন্মদিনে আমাদের প্রার্থনা, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক এবং বৈশ্বিক মহামারীর হাত থেকে বিশ্ব এবং আমরাও যেন রক্ষা পাই, এটি আমাদের প্রার্থনা।’
‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সকালে কবি নজরুলের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, জাসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-কমিটি, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাসদ, বাসদ, ন্যাপ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, স্বপ্ন সাহিত্য চর্চা, নজরুল চর্চা কেন্দ্র-বাঁশরী, প্রাচ্যবাংলার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় কবির সমাধিতে।
মহামারীকালে এবার জাতীয় কবির জন্মদিনে বড় কোন আয়োজন না থাকলেও রাতে অনলাইনে প্রীতি সম্মেলনের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ তাতে অংশ নেন।
এদিকে, কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির স্বীকৃতির সরকারি প্রজ্ঞাপন আজও না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেছেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে তার জাতীয় কবির স্বীকৃতির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা।
কুমিল্লা জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিরাট একটি অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কুমিল্লার নাম। এখানে প্রেম, বিয়ে, বিরহ, ব্যক্তিজীবন, সঙ্গীত ও সাহিত্যসহ জুড়ে আছে তার অনেক স্মৃতি। এবার করোনার কারণে সীমিত পরিসরের কর্মসূচির মাধ্যমে মঙ্গলবার জাতীয় কবির ১২২তম জন্মজয়ন্তী পালন করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।
বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বাঙালির অস্তিত্বে মিশে থাকা কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। গতকাল ছিল জাতীয় এ কবির ১২২তম জন্মজয়ন্তী। গরম আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে তাকে। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার জনসমাগম সীমিত রাখা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সময় কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী নজরুল ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘দুখু মিয়া’ নামে। পিতৃহীন কবি একে একে হারিয়েছেন কাছের স্বজনদের। আর্থিক অসচ্ছলতাও তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল। সব বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। সাম্য ও মানবতার চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল তার লেখনী। কবিতায় বিদ্রোহী সুরের জন্য হয়ে ওঠেন ‘বিদ্রোহী কবি’।
সকালে নজরুল সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় কবির স্বতন্ত্র কিছু মূল্যবোধ আছে। তিনি জীবনে বহুমাত্রিক দর্শনের সমাহার ঘটিয়েছিলেন। সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক কবি, মানবতার কবি, ভালোবাসার কবি- নানা দর্শনের সম্মিলন তিনি। একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মূল্যবোধ তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস। তার গান ও কবিতা আমাদের রণাঙ্গনে সাহস ও শক্তি যোগাত। তিনি প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি। সবচেয়ে বড় কথা তিনি মানবতার কবি, অসাম্প্রদায়িকতার কবি এবং গণমানুষের কবি।’ আজ তিনি নেই, কিন্তু তিনি সবসময় আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক থাকবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ মহান কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘আমাদের সব ঝড়-ঝঞ্ঝা দূর করার জন্য তিনি সবসময় বিজয়ের গান গেয়েছেন। আজকে করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য জাতীয় কবি নজরুল আমাদের খুবই উদ্বুদ্ধ করে।’
কবির আত্মার শান্তি কামনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কবির আজকের জন্মদিনে আমাদের প্রার্থনা, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক এবং বৈশ্বিক মহামারীর হাত থেকে বিশ্ব এবং আমরাও যেন রক্ষা পাই, এটি আমাদের প্রার্থনা।’
‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সকালে কবি নজরুলের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, জাসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-কমিটি, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাসদ, বাসদ, ন্যাপ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, স্বপ্ন সাহিত্য চর্চা, নজরুল চর্চা কেন্দ্র-বাঁশরী, প্রাচ্যবাংলার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় কবির সমাধিতে।
মহামারীকালে এবার জাতীয় কবির জন্মদিনে বড় কোন আয়োজন না থাকলেও রাতে অনলাইনে প্রীতি সম্মেলনের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ তাতে অংশ নেন।
এদিকে, কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির স্বীকৃতির সরকারি প্রজ্ঞাপন আজও না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেছেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে তার জাতীয় কবির স্বীকৃতির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা।
কুমিল্লা জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিরাট একটি অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কুমিল্লার নাম। এখানে প্রেম, বিয়ে, বিরহ, ব্যক্তিজীবন, সঙ্গীত ও সাহিত্যসহ জুড়ে আছে তার অনেক স্মৃতি। এবার করোনার কারণে সীমিত পরিসরের কর্মসূচির মাধ্যমে মঙ্গলবার জাতীয় কবির ১২২তম জন্মজয়ন্তী পালন করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।