সিলেটে ৪৩ বছর বয়সে সরকারি চাকরি

মাত্র ১৩ বছর বয়সে হয়েছিলেন বাবা

নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সরকারি চাকরিতে ঢোকার নিয়ম নেই কিন্তু ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরি নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কর্মরত আছেন মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকন।

খোকন সিলেট নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়ার মৃত মুসাহিদ মিয়ার ছেলে।

সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে চাকরি নেয়ার পাশাপাশি খোকনের বিরুদ্ধে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে।

‘নিষিদ্ধ বয়সে’ সরকারি চাকরি নেয়ায় খোকনের বিরুদ্ধে সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন নগরীর মুন্সিপাড়ার সুরুজ আলীর ছেলে সেলিম আহমদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকন ২০১৩ সালে বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরি নেন। চাকরি নেয়ার সময় তার ভোটার আইডি কার্ডের জন্মতারিখ (১/৭/১৯৭০ ইংরেজি) অনুযায়ী খোকনের বয়স ছিল ৪৩ বছর। সে জন্মতারিখ ‘ভুল’ উল্লেখ করে খোকন পরবর্তীতে আবেদন করে আইডি কার্ডে জন্মতারিখ সংশোধন করান কিন্তু সংশোধিত জন্মতারিখ (২/৫/১৯৮১ ইংরেজি) অনুযায়ীও খোকনের চাকরিতে ঢোকার বয়স হয় ৩২ বছর। নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সরকারি চাকরিতে ঢোকার নিয়ম নেই।

২০০৮ সালে মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকনের ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী (নং-৯১০০২৬১২৯৪৯২) জন্মতারিখ ছিল- ১ জুলাই ১৯৭০ সাল। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হওয়ার পরও সেই জন্মতারিখ বহাল ছিল। ২০১৩ সালে জন্মতারিখ একই থাকার পরও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক পদটি বাগিয়ে নেন মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকন। সেই থেকে তিনি এখন পর্যন্ত কর্মরত আছেন এ পদে। তবু খোকনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ভোটার আইডির জন্মতারিখ পরিবর্তন করে খোকন তার জন্ম বয়স কমানোর ফলে গোলামাল লেগেছে স্ত্রী-সন্তানের বয়স নিয়েও। ভোটার তালিকা অনুযায়ী- খোকনের স্ত্রীর জন্মতারিখ ১ জুলাই ১৯৭৪ সাল, বড় ছেলে জয়নাল আবেদন রাহেলের জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৯৪ সাল ও ছোট ছেলে মো. রায়হানের জন্মতারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০০ সাল এবং বর্তমানে মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকনের বয়স প্রায় ৫২ বছর কিন্তু সংশোধিত ভোটার কার্ড (জন্মতারিখ-২ মে ১৯৮১ সাল, নং- ১৯৭০৯১৯৬২০৩১২৯৪৯২) অনুযায়ী ১১ বছর বয়স কমিয়ে বর্তমানে খোকনের বয়স ৪০ বছর। এ ক্ষেত্রে তার বড় ছেলের বয়স ২৭ বছর এবং স্ত্রীর বয়স ৪৭ বছর হয়। সে অনুযায়ী খোকনের বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তার বড় ছেলের জন্ম হয়। অর্থাৎ ১২ বছর বয়সে খোকন বিয়ে করেন, যা পুরোটাই গোলমেলে।

এছাড়াও চাকরির আবেদনের সময় খোকন বালাগঞ্জ উপজেলার গলমুকাপন এলাকার ‘বাংলাবাজার উচ্চবিদ্যালয় নামক’ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণী পাস একটি সার্টিফিকেট দাখিল করেন। যেটি ভুয়া বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকনের বক্তব্য জানতে তার দুটি মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ ম-ল সিলেটভিউ-কে বলেন, খোকনের বিষয়ে অভিযোগটি যে বাদী দিয়েছেন, পরবর্তীতে শুনানির তারিখ নির্ধারিত করে তাকে উপস্থিত থাকার জন্য বারবার ডাকযোগে নোটিশ পাঠানো হয়েছে কিন্তু তিনি নোটিশটি রিসিভও করেননি, শুনানিতেও উপস্থিত হননি। তাই এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে পলাশ ম-ল বলেন, আবেদনের সময় খোকন তার বয়সের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন কিনা অথবা বয়সের তথ্য গোপন করেছিলেন কিনা সেটি আসলে তদন্তের বিষয়। তার বিরুদ্ধে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ বিষয়ে আমাদের আসলে ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার নেই।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ.এইচ.এম. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বক্তব্য দিতে পারবেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিনের মন্তব্য জানতে তার সরকারি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

বয়স নিয়ে তেলেসমাতি

সিলেটে ৪৩ বছর বয়সে সরকারি চাকরি

মাত্র ১৩ বছর বয়সে হয়েছিলেন বাবা

প্রতিনিধি, সিলেট

নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সরকারি চাকরিতে ঢোকার নিয়ম নেই কিন্তু ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরি নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কর্মরত আছেন মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকন।

খোকন সিলেট নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়ার মৃত মুসাহিদ মিয়ার ছেলে।

সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে চাকরি নেয়ার পাশাপাশি খোকনের বিরুদ্ধে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে।

‘নিষিদ্ধ বয়সে’ সরকারি চাকরি নেয়ায় খোকনের বিরুদ্ধে সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন নগরীর মুন্সিপাড়ার সুরুজ আলীর ছেলে সেলিম আহমদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকন ২০১৩ সালে বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরি নেন। চাকরি নেয়ার সময় তার ভোটার আইডি কার্ডের জন্মতারিখ (১/৭/১৯৭০ ইংরেজি) অনুযায়ী খোকনের বয়স ছিল ৪৩ বছর। সে জন্মতারিখ ‘ভুল’ উল্লেখ করে খোকন পরবর্তীতে আবেদন করে আইডি কার্ডে জন্মতারিখ সংশোধন করান কিন্তু সংশোধিত জন্মতারিখ (২/৫/১৯৮১ ইংরেজি) অনুযায়ীও খোকনের চাকরিতে ঢোকার বয়স হয় ৩২ বছর। নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সরকারি চাকরিতে ঢোকার নিয়ম নেই।

২০০৮ সালে মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকনের ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী (নং-৯১০০২৬১২৯৪৯২) জন্মতারিখ ছিল- ১ জুলাই ১৯৭০ সাল। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হওয়ার পরও সেই জন্মতারিখ বহাল ছিল। ২০১৩ সালে জন্মতারিখ একই থাকার পরও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক পদটি বাগিয়ে নেন মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকন। সেই থেকে তিনি এখন পর্যন্ত কর্মরত আছেন এ পদে। তবু খোকনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ভোটার আইডির জন্মতারিখ পরিবর্তন করে খোকন তার জন্ম বয়স কমানোর ফলে গোলামাল লেগেছে স্ত্রী-সন্তানের বয়স নিয়েও। ভোটার তালিকা অনুযায়ী- খোকনের স্ত্রীর জন্মতারিখ ১ জুলাই ১৯৭৪ সাল, বড় ছেলে জয়নাল আবেদন রাহেলের জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৯৪ সাল ও ছোট ছেলে মো. রায়হানের জন্মতারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০০ সাল এবং বর্তমানে মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকনের বয়স প্রায় ৫২ বছর কিন্তু সংশোধিত ভোটার কার্ড (জন্মতারিখ-২ মে ১৯৮১ সাল, নং- ১৯৭০৯১৯৬২০৩১২৯৪৯২) অনুযায়ী ১১ বছর বয়স কমিয়ে বর্তমানে খোকনের বয়স ৪০ বছর। এ ক্ষেত্রে তার বড় ছেলের বয়স ২৭ বছর এবং স্ত্রীর বয়স ৪৭ বছর হয়। সে অনুযায়ী খোকনের বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তার বড় ছেলের জন্ম হয়। অর্থাৎ ১২ বছর বয়সে খোকন বিয়ে করেন, যা পুরোটাই গোলমেলে।

এছাড়াও চাকরির আবেদনের সময় খোকন বালাগঞ্জ উপজেলার গলমুকাপন এলাকার ‘বাংলাবাজার উচ্চবিদ্যালয় নামক’ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণী পাস একটি সার্টিফিকেট দাখিল করেন। যেটি ভুয়া বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. জাকারিয়া মাসুদ খোকনের বক্তব্য জানতে তার দুটি মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ ম-ল সিলেটভিউ-কে বলেন, খোকনের বিষয়ে অভিযোগটি যে বাদী দিয়েছেন, পরবর্তীতে শুনানির তারিখ নির্ধারিত করে তাকে উপস্থিত থাকার জন্য বারবার ডাকযোগে নোটিশ পাঠানো হয়েছে কিন্তু তিনি নোটিশটি রিসিভও করেননি, শুনানিতেও উপস্থিত হননি। তাই এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে পলাশ ম-ল বলেন, আবেদনের সময় খোকন তার বয়সের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন কিনা অথবা বয়সের তথ্য গোপন করেছিলেন কিনা সেটি আসলে তদন্তের বিষয়। তার বিরুদ্ধে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ বিষয়ে আমাদের আসলে ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার নেই।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ.এইচ.এম. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বক্তব্য দিতে পারবেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিনের মন্তব্য জানতে তার সরকারি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।