আওয়ালের নির্দেশে লোক ভাড়া করে সাহিনুদ্দীনকে খুন করে সুমন

পল্লবীর বুড়িরটেকে (আলীনগর) লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের হ্যাভেলি ডেভেলপার প্রোপার্টি লিমিটেডের জমি দখলে বড় বাধা ছিল আলী আহম্মদের নাতি সাহিনুদ্দীন। সাহিনুদ্দীনকে শায়েস্তা করার দায়িত্ব পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন ব্যাপারীকে দিয়েছিল আউয়াল। ২০ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল আরও লাগলে দেবো। সাহিনুদ্দীনের হাত-পা কেটে দিতে হবে। সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করার পরিকল্পনা কয়েকদিন আগে ধানমণ্ডির অফিসে বসেই করেছিল আর সেখানেই সাহিনুদ্দীনের হাতে টাকাটা দেয় আউয়াল। গতকাল সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে ডিবির কার্যালয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, সাহিনুদ্দীন হত্যার ঘটনায় তার মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালকে। ২০ জনের বাইরে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর পরই আউলসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তারা আউয়ালসহ ৩ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ডিবির টিম ৭ হত্যার মূল নেতৃত্বদাতা সুমন ব্যাপারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে এজাহার নামীয় আসামি ছিল ৬ জন। বাকি ৪ জনের নাম এজাহারে না থাকলেও ডিবির তদন্তে হত্যার সঙ্গে তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্ট পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৫ হাজার টাকায় ৪ পেশাদার কিলারকে ভাড়া করে সুমন

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাহিনুদ্দীনকে হত্যার জন্য সুমন ৫ হাজার টাকায় ৪ জন পেশাদার খুনিকে ভাড়া করে। এ ৪ জনের মধ্যে শরীফ নামে একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য ৩ জন এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থান কিশোরগঞ্জে আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ওই ৪ ভাড়াটে খুনিসহ ১০ থেকে ১২ জন সক্রিয়ভাবে সাহিনুদ্দীন হত্যায় অংশ নিয়েছে।

সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসহান খান জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সুমন ব্যাপারীসহ মোট ৪ আসামি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগ থাকা সাবেক এমপি আউয়ালকে রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গতকাল শেষ হয়েছে।

সাহিনুদ্দীনকে হত্যার পর কিলার গ্রুপকে স্কট দিয়ে পার করে দেয় সুমন

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাহিনুদ্দীনের কাছ থেকে ইট কেনার কথা বলে ডেকে নেয় সুমন। সুমন যখন সাহিনুদ্দীনকে ফোন করে তখন সাহিনুদ্দীন বুড়িরটেক তার বাসায় ছিল। কোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর ৭ বছরের ছেলেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন। বুড়িরটেক থেকে মোটরসাইকেলে সিরামিক কারখানা পার হয়ে রাস্তার এ পাশে সুমনের এলাকায় ঢোকে। পল্লবীর ডি ব্লকের ৩১ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাড়ির সামনে এলে ওই বাড়ির গ্যারেজে সুমন, শরীফসহ ৪ থেকে ৫ জন গ্যারেজের মধ্যেই সাহিনুদ্দীনকে কোপাতে থাকে। ওই বাড়িতে আগে ভাড়া ছিল সুমন। গ্যারেজে সাহিনুদ্দীনকে কোপানো নিরাপদ মনে করেছিল সুমন কিন্তু গ্যারেজ থেকে রাস্তায় জীবন বাঁচানোর জন্য সাহিনুদ্দীন বের হয়ে এলে রাস্তার ওপর অন্যরা কোপাতে থাকে। ১০ থেকে ১২ জনের মধ্যে মনির এবং মানিক সাহিনুদ্দীনকে শেষ ২৩ সেকেন্ডে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মনির ২৩ সেকেন্ডে একাই ৩০ কোপ একাধারে দিয়ে সাহিনুদ্দীনের ঘাড় আলাদা করে ফেলে আর মনির পায়ের অংশে কোপাতে থাকে। হত্যার পর সুমন সবাইকে সামনে রেখে পেছন দিক থেকে নিজের মোটরসাইকেলে স্কট দিয়ে এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে সহযোগিতা করে। আশপাশের লোকজন ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মোবাইলে তা ভিডিও করে রাখে।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সুমন এক সময় বাসের হেলপারি করত। তার বাবা তরিতরকারি বিক্রেতা। বাসের হেলপার থেকে ছাত্রলীগ পল্লবী থানা উত্তরা শাখার সভাপতি হওয়ার পর সুমনের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। প্রথমে এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এরপর এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, যাকে তাকে কথায় কথায় কুপিয়ে জখম করা, গুলি করা, বাড়ি দখল, জমি দখলÑ সবই করত। আউয়াল তার দখলের প্রয়োজনে সুমনকে হ্যাভেলি প্রোপার্টিতে সাইট সুপার ভাইজারের চাকরি দেয়। সেই সুবাধে সুমন তার দলবল নিয়ে বুড়িরটেক এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করত। মাঝে মধ্যে সিরামিক কারখানার মধ্যে আড্ডাও দিত। এলাকাবাসীও সুমনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিল।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

আওয়ালের নির্দেশে লোক ভাড়া করে সাহিনুদ্দীনকে খুন করে সুমন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পল্লবীর বুড়িরটেকে (আলীনগর) লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের হ্যাভেলি ডেভেলপার প্রোপার্টি লিমিটেডের জমি দখলে বড় বাধা ছিল আলী আহম্মদের নাতি সাহিনুদ্দীন। সাহিনুদ্দীনকে শায়েস্তা করার দায়িত্ব পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন ব্যাপারীকে দিয়েছিল আউয়াল। ২০ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল আরও লাগলে দেবো। সাহিনুদ্দীনের হাত-পা কেটে দিতে হবে। সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করার পরিকল্পনা কয়েকদিন আগে ধানমণ্ডির অফিসে বসেই করেছিল আর সেখানেই সাহিনুদ্দীনের হাতে টাকাটা দেয় আউয়াল। গতকাল সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে ডিবির কার্যালয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, সাহিনুদ্দীন হত্যার ঘটনায় তার মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালকে। ২০ জনের বাইরে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর পরই আউলসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তারা আউয়ালসহ ৩ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ডিবির টিম ৭ হত্যার মূল নেতৃত্বদাতা সুমন ব্যাপারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে এজাহার নামীয় আসামি ছিল ৬ জন। বাকি ৪ জনের নাম এজাহারে না থাকলেও ডিবির তদন্তে হত্যার সঙ্গে তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্ট পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৫ হাজার টাকায় ৪ পেশাদার কিলারকে ভাড়া করে সুমন

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাহিনুদ্দীনকে হত্যার জন্য সুমন ৫ হাজার টাকায় ৪ জন পেশাদার খুনিকে ভাড়া করে। এ ৪ জনের মধ্যে শরীফ নামে একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য ৩ জন এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থান কিশোরগঞ্জে আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ওই ৪ ভাড়াটে খুনিসহ ১০ থেকে ১২ জন সক্রিয়ভাবে সাহিনুদ্দীন হত্যায় অংশ নিয়েছে।

সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসহান খান জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সুমন ব্যাপারীসহ মোট ৪ আসামি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগ থাকা সাবেক এমপি আউয়ালকে রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গতকাল শেষ হয়েছে।

সাহিনুদ্দীনকে হত্যার পর কিলার গ্রুপকে স্কট দিয়ে পার করে দেয় সুমন

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাহিনুদ্দীনের কাছ থেকে ইট কেনার কথা বলে ডেকে নেয় সুমন। সুমন যখন সাহিনুদ্দীনকে ফোন করে তখন সাহিনুদ্দীন বুড়িরটেক তার বাসায় ছিল। কোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর ৭ বছরের ছেলেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন। বুড়িরটেক থেকে মোটরসাইকেলে সিরামিক কারখানা পার হয়ে রাস্তার এ পাশে সুমনের এলাকায় ঢোকে। পল্লবীর ডি ব্লকের ৩১ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাড়ির সামনে এলে ওই বাড়ির গ্যারেজে সুমন, শরীফসহ ৪ থেকে ৫ জন গ্যারেজের মধ্যেই সাহিনুদ্দীনকে কোপাতে থাকে। ওই বাড়িতে আগে ভাড়া ছিল সুমন। গ্যারেজে সাহিনুদ্দীনকে কোপানো নিরাপদ মনে করেছিল সুমন কিন্তু গ্যারেজ থেকে রাস্তায় জীবন বাঁচানোর জন্য সাহিনুদ্দীন বের হয়ে এলে রাস্তার ওপর অন্যরা কোপাতে থাকে। ১০ থেকে ১২ জনের মধ্যে মনির এবং মানিক সাহিনুদ্দীনকে শেষ ২৩ সেকেন্ডে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মনির ২৩ সেকেন্ডে একাই ৩০ কোপ একাধারে দিয়ে সাহিনুদ্দীনের ঘাড় আলাদা করে ফেলে আর মনির পায়ের অংশে কোপাতে থাকে। হত্যার পর সুমন সবাইকে সামনে রেখে পেছন দিক থেকে নিজের মোটরসাইকেলে স্কট দিয়ে এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে সহযোগিতা করে। আশপাশের লোকজন ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মোবাইলে তা ভিডিও করে রাখে।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সুমন এক সময় বাসের হেলপারি করত। তার বাবা তরিতরকারি বিক্রেতা। বাসের হেলপার থেকে ছাত্রলীগ পল্লবী থানা উত্তরা শাখার সভাপতি হওয়ার পর সুমনের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। প্রথমে এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এরপর এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, যাকে তাকে কথায় কথায় কুপিয়ে জখম করা, গুলি করা, বাড়ি দখল, জমি দখলÑ সবই করত। আউয়াল তার দখলের প্রয়োজনে সুমনকে হ্যাভেলি প্রোপার্টিতে সাইট সুপার ভাইজারের চাকরি দেয়। সেই সুবাধে সুমন তার দলবল নিয়ে বুড়িরটেক এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করত। মাঝে মধ্যে সিরামিক কারখানার মধ্যে আড্ডাও দিত। এলাকাবাসীও সুমনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিল।