বজ্রপাত : সচেতন থাকুন

একদিকে যেখানে সারাদেশের মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে জর্জরিত, আরেকদিকে অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ( বজ্রপাত) আগমন। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। কৃষকরা বজ্রপাতের শিকার হয় বেশি। তারা বৃষ্টিতে ভিজে কৃষিজমিতে কাজ করে। যখন বজ্রপাত হয় তখন আর নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় থাকে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, উচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম এ ফারুখ বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর থেকে আসা গরম আর আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে উত্তর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত গত ১০ বছরে বজ্রপাতে ২ হাজার ৭৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৫২৬, নারী ৪০১ ও পুরুষ ১ হাজার ৮৪৭ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১০ সালে সবচেয়ে কম মোট ১২৩ জন আর ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫০ জন নিহত হন। বাকি বছরগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে এই সংখ্যা ওঠানামা করে।

গত এক দশকে ঝড়, বন্যা বা অন্য কোন দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ-ই দুর্যোগ থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বজ্রপাতের ঘটনা প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে তালগাছের চারা লাগানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ।

বজ্রপাতের সময় ইলেকট্রিক পোল, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। বাড়ির ছাদ, খোলা মাঠে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া বেশি নিরাপদ। তবে পাকাবাড়ি সুউচ্চ হলে সেক্ষেত্রে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনো ধাতববস্তুর যেমন সিঁড়ির বা বারান্দার রেলিং এবং পানির কলের স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ে থাকা নিরাপদ নয়। বজ্রপাতে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেগুলো ইলেকট্রিক সংযোগ বা ডিসের সংযোগ থাকে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা ভালো। নতুবা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া এগুলো বন্ধ থাকলেও স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় থাকলে যদি বজ্রপাত হওয়ার অবস্থা তৈরি হয় তাহলে কানে আঙ্গুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে বসে থাকতে হবে। তবে মাটিতে শোয়া যাবে না, কেননা মটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

প্রসেনজিৎ কুমার রোহিত

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

বজ্রপাত : সচেতন থাকুন

image

একদিকে যেখানে সারাদেশের মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে জর্জরিত, আরেকদিকে অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ( বজ্রপাত) আগমন। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। কৃষকরা বজ্রপাতের শিকার হয় বেশি। তারা বৃষ্টিতে ভিজে কৃষিজমিতে কাজ করে। যখন বজ্রপাত হয় তখন আর নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় থাকে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, উচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম এ ফারুখ বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর থেকে আসা গরম আর আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে উত্তর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত গত ১০ বছরে বজ্রপাতে ২ হাজার ৭৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৫২৬, নারী ৪০১ ও পুরুষ ১ হাজার ৮৪৭ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১০ সালে সবচেয়ে কম মোট ১২৩ জন আর ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫০ জন নিহত হন। বাকি বছরগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে এই সংখ্যা ওঠানামা করে।

গত এক দশকে ঝড়, বন্যা বা অন্য কোন দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ-ই দুর্যোগ থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বজ্রপাতের ঘটনা প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে তালগাছের চারা লাগানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ।

বজ্রপাতের সময় ইলেকট্রিক পোল, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। বাড়ির ছাদ, খোলা মাঠে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া বেশি নিরাপদ। তবে পাকাবাড়ি সুউচ্চ হলে সেক্ষেত্রে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনো ধাতববস্তুর যেমন সিঁড়ির বা বারান্দার রেলিং এবং পানির কলের স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ে থাকা নিরাপদ নয়। বজ্রপাতে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেগুলো ইলেকট্রিক সংযোগ বা ডিসের সংযোগ থাকে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা ভালো। নতুবা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া এগুলো বন্ধ থাকলেও স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় থাকলে যদি বজ্রপাত হওয়ার অবস্থা তৈরি হয় তাহলে কানে আঙ্গুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে বসে থাকতে হবে। তবে মাটিতে শোয়া যাবে না, কেননা মটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

প্রসেনজিৎ কুমার রোহিত