ভারতে ইয়াস-এর তাণ্ডবে উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে নিহত ৫

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল রূপে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় উড়িষ্যায় মূল আঘাত হানার আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে উড়িষ্যায়। এতে এই প্রদেশে অন্তত ২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উড়িষ্যার কিওনঝর জেলার পঞ্চপল্লী গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে গাছপালা পড়ে আরও ১ জনের মৃত্যু হয়। আল-জাজিরা

ইয়াসের প্রাথমিক আঘাতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। একই প্রদেশের ময়ুরভাঞ্জ জেলার জগন্নাথ খুন্তা গ্রামের একটি পুকুর থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) ইয়াসকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠেছে, তীব্র বাতাস এবং ভারি বর্ষণ হচ্ছে উড়িষ্যায়। ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত বাড়িঘর।

আইএমডির মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মুখপাত্র বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবের প্রক্রিয়া সকাল ৯টার দিকে শুরু হয়েছে। এটি আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে অব্যাহত থাকে। বিকেলের দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে ঘূর্ণিঝড় তওকতের আঘাতে ১৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ইয়াসের প্রভাবে উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে ভারি বর্ষণ এবং তীব্র বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের আগেই এক টর্নেডোতে ৫ জন নিহত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ গতকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ইয়াসের তাণ্ডবের আশঙ্কায় উড়িষ্যায় রাজধানী ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, রাজ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের আরেক মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেছেন, আমি অতীতে এমন ঝড় দেখিনি। ঝড়ের তাণ্ডবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রাজ্যের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগর এক টুইট বার্তায় বলেছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস দুর্বল হয়ে প্রবল রূপ ধারণ করেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যার বালাসোর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপূর্ব উপকূল থেকে উত্তরের দিকে এগিয়ে আসছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বালাশোর ও ধামারার মাঝামাঝি এলাকা হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ আছড়ে পড়তে আরও প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে। দুপুরের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উড়িষ্যার স্থলভাগে পুরোপুরি আছড়ে পড়বে। সেই সময় ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বালেশ্বর উপকূলেও একই গতির বাতাস তাণ্ডব চালাতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব উড়িষ্যার উপকূলের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিধি থাকবে। এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

এদিকে ইয়াসের প্রভাবে কলকাতায় প্রচণ্ড টর্নেডো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যে কারণে দুপুরের দিকে কলকাতার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মমতা বলেছেন, উপকূলবর্তী এলাকায় গ্রামগুলোতে পানির স্রোত ঢুকে পড়েছে। পানির তোড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি নদীবাঁধ ভেঙে গেছে। গোসাবার গ্রাম প্লাবিত ও ২০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিঘা, শংকরপুর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নন্দীগ্রামে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

ভারতে ইয়াস-এর তাণ্ডবে উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে নিহত ৫

সংবাদ ডেস্ক

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল রূপে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় উড়িষ্যায় মূল আঘাত হানার আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে উড়িষ্যায়। এতে এই প্রদেশে অন্তত ২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উড়িষ্যার কিওনঝর জেলার পঞ্চপল্লী গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে গাছপালা পড়ে আরও ১ জনের মৃত্যু হয়। আল-জাজিরা

ইয়াসের প্রাথমিক আঘাতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। একই প্রদেশের ময়ুরভাঞ্জ জেলার জগন্নাথ খুন্তা গ্রামের একটি পুকুর থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) ইয়াসকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠেছে, তীব্র বাতাস এবং ভারি বর্ষণ হচ্ছে উড়িষ্যায়। ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত বাড়িঘর।

আইএমডির মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মুখপাত্র বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবের প্রক্রিয়া সকাল ৯টার দিকে শুরু হয়েছে। এটি আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে অব্যাহত থাকে। বিকেলের দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে ঘূর্ণিঝড় তওকতের আঘাতে ১৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ইয়াসের প্রভাবে উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে ভারি বর্ষণ এবং তীব্র বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের আগেই এক টর্নেডোতে ৫ জন নিহত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ গতকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ইয়াসের তাণ্ডবের আশঙ্কায় উড়িষ্যায় রাজধানী ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, রাজ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের আরেক মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেছেন, আমি অতীতে এমন ঝড় দেখিনি। ঝড়ের তাণ্ডবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রাজ্যের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগর এক টুইট বার্তায় বলেছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস দুর্বল হয়ে প্রবল রূপ ধারণ করেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যার বালাসোর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপূর্ব উপকূল থেকে উত্তরের দিকে এগিয়ে আসছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বালাশোর ও ধামারার মাঝামাঝি এলাকা হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ আছড়ে পড়তে আরও প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে। দুপুরের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উড়িষ্যার স্থলভাগে পুরোপুরি আছড়ে পড়বে। সেই সময় ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বালেশ্বর উপকূলেও একই গতির বাতাস তাণ্ডব চালাতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব উড়িষ্যার উপকূলের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিধি থাকবে। এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

এদিকে ইয়াসের প্রভাবে কলকাতায় প্রচণ্ড টর্নেডো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যে কারণে দুপুরের দিকে কলকাতার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মমতা বলেছেন, উপকূলবর্তী এলাকায় গ্রামগুলোতে পানির স্রোত ঢুকে পড়েছে। পানির তোড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি নদীবাঁধ ভেঙে গেছে। গোসাবার গ্রাম প্লাবিত ও ২০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিঘা, শংকরপুর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নন্দীগ্রামে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে।