একাধিক প্রকল্পে কাজ শেষ না করে হাতিয়ে নেয় বরাদ্দের টাকা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক ইউপি সদসস্যের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়মী লীগ নেতা সেলিম মিয়ার একের পর এক অনিয়ম এবং একই সড়কে একাধিক প্রকল্প দিয়ে কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে নেন। এতে ক্ষোভে ফুসে ওঠেছে গ্রামবাসী। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের সব মহলে চলছে তাকে নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।

জানাগেছে, চলতি বছরে ভবানীপুর মোল্লা বাড়ির মক্তব হতে সুলাইমানপুর ভায়া বাউসমারা কবরস্থান পর্যন্ত কাঁচা সড়ক নির্মাণে অর্থাৎ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এমপি বরাদ্দ হিসেবে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শ্রমিক দিয়ে এই সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও ভেকোর সাহায্যে সুলাইমানপুর থেকে সড়কটির কাজ শুরু করা হয়।

কিন্তু ভবানীপুর মোল্লা বাড়ি মক্তব থেকে সুলাইমানপুর পর্যন্ত কাজ না করেই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হয়। আর অর্ধেক কাজ করেই বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিয়েছেন ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া। শুধু তাই নয়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরেও সুলাইমানপুর আক্তার মিয়ার বাড়ি হতে মসজিদ পর্যন্ত এবং মসজিদ থেকে কবরস্থান পর্যন্ত একই সড়কে দুইটি প্রকল্পের নামে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ নেয়া হয়।

তখনও একটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন তিনি। আর এ সুযোগে ফায়দা লুটেন ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে গ্রামের অসহায় নারীদের কাছ থেকে ভিজিডি কার্ড দেবার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া ইউপি সদস্য সেলিম মিয়ার বড় ছেলে খলিল মিয়া ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির একজন ডিলার। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে ওজনে কম দেয়া এবং নানা অনিয়মসহ চাল না দিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ। এছাড়াও ইউপি সদস্য সেলিম মিয়ার স্বজনপ্রীতির কারণে হতদরিদ্রদের নামের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ভিজিএফ কার্ডসহ সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে গ্রামের অসহায় ও সাধারণ মানুষ হচ্ছেন বঞ্চিত। ফলে ইউপি সদসস্যের এমন কা-ে ক্ষুব্ধ ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

ইউপি সদস্যকে নিয়ে কথা হলে সুলাইমানপুর গ্রামের মেরাজ মিয়া জানান, ভবানীপুর মোল্লা বাড়ির মক্তব হতে সুলাইমানপুর ভায়া বাউসমারা কবরস্থান পর্যন্ত যে কাঁচা সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। এর বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু দুটি ভেকো দিয়ে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মাটি কাটা হয়েছে। এখনও সড়কের অর্ধেক কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে টাকা তুলে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই সড়কের নাম দিয়ে আরও টাকা আনছেন তিনি। মেরাজ মিয়া আরও জানান, এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া এবং তার ছেলেরা জানায়, মন চাইলে কাজ করলে করুম, না করলে নাই।

নেতারা টেহা দিছে আমরারে খাইবার লাই¹া। ভবানীপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকেই তিনি একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অব.) মো. তাহের জানান, ইউপি সদস্য সেলিম মিয়ার কৃতকর্মে আমরা লজ্জিত। সে তার মতই চলছে। পেছনে কে কখন কি বলছে? তার কিছুই আসে যায় না।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য সেলিম জানান, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সমাজে আমার মান-সম্মান নষ্ট করার জন্য তারা পাঁয়তারা করছে। সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, সব সময় আমি পকেট থেকে টাকা দিয়ে কাজ করছি। আর কত ভর্তুকি দিব। মোল্লা বাড়ির মক্তব থেকে সুলাইমানপুর পর্যন্ত কাজ করতে গেলেও আরও টাকা লাগবে। আমি চেষ্টা করছি, কিভাবে কাজটি করা যায়।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান রাসেদ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এখন জেনেছি, খোঁজ নিয়ে দেখছি। কি করা যায়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

ভৈরবে ইউপি সদস্য সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ

একাধিক প্রকল্পে কাজ শেষ না করে হাতিয়ে নেয় বরাদ্দের টাকা

সোহেল সাশ্রু, ভৈরব

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক ইউপি সদসস্যের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়মী লীগ নেতা সেলিম মিয়ার একের পর এক অনিয়ম এবং একই সড়কে একাধিক প্রকল্প দিয়ে কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে নেন। এতে ক্ষোভে ফুসে ওঠেছে গ্রামবাসী। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের সব মহলে চলছে তাকে নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।

জানাগেছে, চলতি বছরে ভবানীপুর মোল্লা বাড়ির মক্তব হতে সুলাইমানপুর ভায়া বাউসমারা কবরস্থান পর্যন্ত কাঁচা সড়ক নির্মাণে অর্থাৎ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এমপি বরাদ্দ হিসেবে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শ্রমিক দিয়ে এই সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও ভেকোর সাহায্যে সুলাইমানপুর থেকে সড়কটির কাজ শুরু করা হয়।

কিন্তু ভবানীপুর মোল্লা বাড়ি মক্তব থেকে সুলাইমানপুর পর্যন্ত কাজ না করেই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হয়। আর অর্ধেক কাজ করেই বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিয়েছেন ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া। শুধু তাই নয়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরেও সুলাইমানপুর আক্তার মিয়ার বাড়ি হতে মসজিদ পর্যন্ত এবং মসজিদ থেকে কবরস্থান পর্যন্ত একই সড়কে দুইটি প্রকল্পের নামে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ নেয়া হয়।

তখনও একটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন তিনি। আর এ সুযোগে ফায়দা লুটেন ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে গ্রামের অসহায় নারীদের কাছ থেকে ভিজিডি কার্ড দেবার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া ইউপি সদস্য সেলিম মিয়ার বড় ছেলে খলিল মিয়া ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির একজন ডিলার। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে ওজনে কম দেয়া এবং নানা অনিয়মসহ চাল না দিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ। এছাড়াও ইউপি সদস্য সেলিম মিয়ার স্বজনপ্রীতির কারণে হতদরিদ্রদের নামের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ভিজিএফ কার্ডসহ সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে গ্রামের অসহায় ও সাধারণ মানুষ হচ্ছেন বঞ্চিত। ফলে ইউপি সদসস্যের এমন কা-ে ক্ষুব্ধ ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

ইউপি সদস্যকে নিয়ে কথা হলে সুলাইমানপুর গ্রামের মেরাজ মিয়া জানান, ভবানীপুর মোল্লা বাড়ির মক্তব হতে সুলাইমানপুর ভায়া বাউসমারা কবরস্থান পর্যন্ত যে কাঁচা সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। এর বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু দুটি ভেকো দিয়ে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মাটি কাটা হয়েছে। এখনও সড়কের অর্ধেক কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে টাকা তুলে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই সড়কের নাম দিয়ে আরও টাকা আনছেন তিনি। মেরাজ মিয়া আরও জানান, এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া এবং তার ছেলেরা জানায়, মন চাইলে কাজ করলে করুম, না করলে নাই।

নেতারা টেহা দিছে আমরারে খাইবার লাই¹া। ভবানীপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকেই তিনি একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অব.) মো. তাহের জানান, ইউপি সদস্য সেলিম মিয়ার কৃতকর্মে আমরা লজ্জিত। সে তার মতই চলছে। পেছনে কে কখন কি বলছে? তার কিছুই আসে যায় না।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য সেলিম জানান, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সমাজে আমার মান-সম্মান নষ্ট করার জন্য তারা পাঁয়তারা করছে। সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, সব সময় আমি পকেট থেকে টাকা দিয়ে কাজ করছি। আর কত ভর্তুকি দিব। মোল্লা বাড়ির মক্তব থেকে সুলাইমানপুর পর্যন্ত কাজ করতে গেলেও আরও টাকা লাগবে। আমি চেষ্টা করছি, কিভাবে কাজটি করা যায়।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান রাসেদ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এখন জেনেছি, খোঁজ নিয়ে দেখছি। কি করা যায়।