পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ী আবদুস সালাম এ বছর তিনটি বাগান কেনেন। তিনটি বাগানে প্রায় দেড়শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে, যার বেশিরভাগই হাইব্রিড বোম্বে জাতের লিচু। এছাড়া রয়েছে দেশি প্রজাতির আটি লিচুর গাছ। বোম্বে লিচু এখনও পুরোপুরি না পাকলেও আটি লিচু বাজারজাত করা শুরু করেছেন। ভালো দাম পেয়ে তিনি খুশি হলেও লিচুর ফলন বিপর্যয়ে আশানুরূপ লাভ হবে না বলে জানান তিনি।
লিচু ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, প্রতিবছর একটি বড় গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লিচু পাওয়া গেলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এ বছর বড় গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি লিচু পাচ্ছেন না। ফলন বিপর্যয় হয়েছে ছোট গাছগুলোতেও। ১ থেকে ১.৫ হাজারের বেশি লিচু এ বছর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনটি লিচু বাগান কিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রির টার্গেট থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এখন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সালামের মতো একই অবস্থা লিচুর রাজধানী বলে পরিচিত ঈশ্বরদী উপজেলার প্রতিটি লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীর। ফলন বিপর্যয়ের কারণে কাক্সিক্ষত ফলন না পাওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদনকারী এলাকা ঈশ্বরদী ও পাবনার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী মো. দুলাল বলেন, এ বছর তীব্র খড়ার কারণে লিচুর বেশিরভাগ মুকুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত খরার কারণে লিচুগুলো বড় হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় অনেক লিচু গাছে ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। লিচু ফলনের সময় ঝড়ের কারণে ক্ষতি না হলেও খরার কারণে এ বছর গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশিরভাগ লিচু।
অধিকাংশ এলাকায় লিচু বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লিচুর ফলন হয়েছে আর বাকিটা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা সার কীটনাশক দিয়ে আবাদের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতি অনুকূলে না থাকায় এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে জানান দুলাল হোসেন। আর কাক্সিক্ষত ফলন না পেয়ে হতাশ হয়ে পরেছে এ এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল লিচুর সঙ্গে জড়িত চাষি, ব্যবসায়ী আর সাধারণ শ্রমিকরা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, এ বছর পাবনায় ৩ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন। তবে খরার কারণে এ বছর কিছুটা ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বীকার করলেও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
খরার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষকরা দাবি করলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুল কাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।
ঈদের পর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী ও আশপাশের এলাকার লিচুভাঙার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান লিচু ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে আটি লিচুগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে বলে জানান তারা। আরও সপ্তাহখানেক এই লিচু ভাঙা হবে বলে জানান তারা। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসবে উচ্চ ফলনশীল বোম্বে লিচু।
ঈশ্বরদীর দিঘা এলাকার লিচু ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান শামিম জানান, প্রথম থেকেই এবার লিচুর ভালো দাম পাচ্ছে কৃষকরা। বাগান থেকে প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ টাকা ’শ আটি লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। এরকম বাজার চড়া থাকলে বোম্বে লিচু বাজারজাত করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে জানান লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী শামিম।
তিনি আরও জানান, এখনও ২৫ শতাংশ লিচু ভাঙা হয়নি, প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। পুরোপুরি লিচু ভাঙা শুরু হলে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো যাবে বলে জানান তিনি।
তবে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি লিচুর ফলন পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিন ঈশ্বরদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু পাড়া, লিচু বাছাই করা, লিচু প্যাকেট করা, ট্রাকে লিচু লোড করাসহ পুরো এলাকাজুড়ে এখন লিচু নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ ব্যস্ততা থাকবে বলে জানান লিচুর সঙ্গে জড়িত বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ী আবদুস সালাম এ বছর তিনটি বাগান কেনেন। তিনটি বাগানে প্রায় দেড়শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে, যার বেশিরভাগই হাইব্রিড বোম্বে জাতের লিচু। এছাড়া রয়েছে দেশি প্রজাতির আটি লিচুর গাছ। বোম্বে লিচু এখনও পুরোপুরি না পাকলেও আটি লিচু বাজারজাত করা শুরু করেছেন। ভালো দাম পেয়ে তিনি খুশি হলেও লিচুর ফলন বিপর্যয়ে আশানুরূপ লাভ হবে না বলে জানান তিনি।
লিচু ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, প্রতিবছর একটি বড় গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লিচু পাওয়া গেলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এ বছর বড় গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি লিচু পাচ্ছেন না। ফলন বিপর্যয় হয়েছে ছোট গাছগুলোতেও। ১ থেকে ১.৫ হাজারের বেশি লিচু এ বছর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনটি লিচু বাগান কিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রির টার্গেট থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এখন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সালামের মতো একই অবস্থা লিচুর রাজধানী বলে পরিচিত ঈশ্বরদী উপজেলার প্রতিটি লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীর। ফলন বিপর্যয়ের কারণে কাক্সিক্ষত ফলন না পাওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদনকারী এলাকা ঈশ্বরদী ও পাবনার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী মো. দুলাল বলেন, এ বছর তীব্র খড়ার কারণে লিচুর বেশিরভাগ মুকুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত খরার কারণে লিচুগুলো বড় হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় অনেক লিচু গাছে ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। লিচু ফলনের সময় ঝড়ের কারণে ক্ষতি না হলেও খরার কারণে এ বছর গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশিরভাগ লিচু।
অধিকাংশ এলাকায় লিচু বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লিচুর ফলন হয়েছে আর বাকিটা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা সার কীটনাশক দিয়ে আবাদের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতি অনুকূলে না থাকায় এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে জানান দুলাল হোসেন। আর কাক্সিক্ষত ফলন না পেয়ে হতাশ হয়ে পরেছে এ এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল লিচুর সঙ্গে জড়িত চাষি, ব্যবসায়ী আর সাধারণ শ্রমিকরা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, এ বছর পাবনায় ৩ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন। তবে খরার কারণে এ বছর কিছুটা ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বীকার করলেও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
খরার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষকরা দাবি করলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুল কাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।
ঈদের পর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী ও আশপাশের এলাকার লিচুভাঙার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান লিচু ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে আটি লিচুগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে বলে জানান তারা। আরও সপ্তাহখানেক এই লিচু ভাঙা হবে বলে জানান তারা। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসবে উচ্চ ফলনশীল বোম্বে লিচু।
ঈশ্বরদীর দিঘা এলাকার লিচু ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান শামিম জানান, প্রথম থেকেই এবার লিচুর ভালো দাম পাচ্ছে কৃষকরা। বাগান থেকে প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ টাকা ’শ আটি লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। এরকম বাজার চড়া থাকলে বোম্বে লিচু বাজারজাত করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে জানান লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী শামিম।
তিনি আরও জানান, এখনও ২৫ শতাংশ লিচু ভাঙা হয়নি, প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। পুরোপুরি লিচু ভাঙা শুরু হলে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো যাবে বলে জানান তিনি।
তবে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি লিচুর ফলন পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিন ঈশ্বরদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু পাড়া, লিচু বাছাই করা, লিচু প্যাকেট করা, ট্রাকে লিচু লোড করাসহ পুরো এলাকাজুড়ে এখন লিচু নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ ব্যস্ততা থাকবে বলে জানান লিচুর সঙ্গে জড়িত বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।