বহু বছরের পুরনো বাঁধ ঠেকাতে পারছে না প্লাবন-জলোচ্ছ্বাস

৫০-৬০ বছরের আগে নির্মাণ করা দেশের উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে ৮ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সারাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১৩৯টি পোল্ডারে ১০ হাজার কিলোমিটার বেশি বেড়িবাঁধ রয়েছে। সমুদ্র ও নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রতিরোধে জিওব্যাগ ও মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয় এসব বাঁধ। এগুলো এত দুর্বল যে, সমুদ্রের স্বাভাবিক ঢেউয়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বড় কোন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে সক্ষম নয় এ বাঁধগুলো। প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অস্বাভাবিক জোয়ারে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধগুলো ভেঙে লোকালয়ে লবণ-পানি প্রবেশ করে বলে স্থানীয়রা জানান।

গত বুধবারও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে খুলনা-সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় ১৪ জেলায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। গত বছর বন্যায় ৯১২টি বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে প্লাবিত বিস্তীর্ণ গ্রাম। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপকূল এলাকার এসব বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল কিন্তু তার বড় অংশ এখনও যথাযথভাবে মেরামত করা হয়নি স্থানীয়রা জানান। তাই বাঁধগুলো স্থায়ী মেরামতের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এ জন্য এলাকা বিবেচনা করে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প তৈরি করা প্রয়োজন। তা না হলে উপকূলবাসীর রক্ষা করা কঠিন হবে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে বুয়েটের পানি গবেষণা পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান সংবাদকে বলেন, উপকূলীয় এলাকা সাগরের সমতল থেকে বেশি উঁচু থাকে না। তাই সাতক্ষীরা, খুলনা ও ভোলাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের পানি থেকে রক্ষার জন্য এসব বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়। ১৯৬০-৭০ সালে এসব বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এ বাঁধগুলো মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের এই বাঁধ খুবই দুর্বল ও নিচ। তাই অনেক সময় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। কারণ বাঁধগুলো জলোচ্ছ্বাস ও সুনামি ঠেকানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশে সমুদ্রের তীরে ৩০-৪০ ফুট লম্বা দেয়াল তৈরি করা হয়। তাই উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় সমাধানের জন্য নদী শাসন করে মজবুত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এর জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে উকূলীয় ১৪ জেলায় ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ

গত বুধবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় ১৪ জেলায় নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৭ ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লাখ মানুষ। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী, ভোলার, নোয়াখালীর হাতিয়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিভিন্ন নদী পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে। এতে খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় অর্ধশত স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এতে প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম সংবাদকে বলেন, খুলনা জেলায় ৩টি পোল্ডারে ৮৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধের ৯টি স্থান পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এছাড়া ৫০টির বেশি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গত বছর আম্ফানে এসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে ভালোভাবে মেরামত করা যায়নি। ওই সব স্থানে এবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সব বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবনসংলগ্ন শ্যামনগর ও আশাশুনিসহ ছয়টি উপজেলার শতাধিক গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে পড়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপুলসংখ্যক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ছয়টি উপজেলার কয়েকশ’ চিংড়ি ঘের ও ফসলি খেত। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির আধারগুলো। পানির তোড়ে সাতক্ষীরার সঙ্গে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামে বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট, পাতাখালির দুটি পয়েন্ট, রমজাননগরের দুটি পয়েন্ট, গাবুরার তিনটি পয়েন্ট, কৈখালির দুটি পয়েন্ট, ভেটখালি জামে মসজিদের সামনে একটি পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনীর তিনটি পয়েন্ট ও নূরনগর ইউনিয়নের একটি পয়েন্টসহ মোট ১৭টি স্থানে পানি বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামে প্রবেশ করে।

কালিগঞ্জের পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের জব্বারের মাছের ঘের সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা হাসপাতাল, আব্দুস সামাদ স্মৃতি মাঠ, বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁকশিয়ালী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ সোহরাওয়ার্দী পার্কের পাশে কাঁকশিয়ালী নদীর পানি উপচে উপজেলা সদরের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের কাছে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত স্লুইস গেটের পাটাতন বন্ধ থাকায় সেখান থেকে পানি উপচে নাজিমগঞ্জ বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

উপজেলার ঘোজাডাঙা এলাকায় কাঁকশিয়ালী নদীর বাঁধ উপচে উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ শ্রীপুরসহ তিনটি গ্রাম প্লাবিত। ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষের পানিতে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাট, হরিশখালি, রুইয়ার বিল, সুভদ্রকাটিসহ কয়েকটি গ্রাম সয়লাব হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার খাজরা ইরুনিয়নের পিরোজপুরের রাজবংশীপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনির দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ উপচে পানি এলাকায় ঢুকে কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গাবুরার জেলেখালি, নেবুবুনিয়া, চাঁদনীমুখা, গাগড়ামারি, পদ্মপুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাতাখালি, কামালকাটি, ঝাঁপা ও সোনাখালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। গতকালও অনেক এলাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী দীপঙ্কর কুমার দাশ সংবাদকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবারও অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। তাই পুরোপুরি তালিকা তৈরি করতে দুই-একদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫৩টি বাঁধ

২০২০ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও গৃহীত ব্যবস্থা সংক্রান্ত বাপাউবোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ফরিদপুর, রাজশাহী ও রংপুরসহ মোট ৯টি আঞ্চলিক এলাকায় সর্বমোট ৭১২ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ কিলোমিটার বা ১৫৩টি বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, ১২৬ কিলোমিটার বা ৭৫৯টি বাঁধ আংশিক ভেঙে গেছে। এছাড়া সারাদেশের ৭১২টি স্থানে নদী ভাঙনে ২৯২ কিলোমিটার এলাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোসহ দেশের বিভিন্ন নদীতীরের ২৫০টি স্থানের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে রাজশাহীসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। এই অঞ্চলের বাঁধ ও নদী ভাঙনসহ ৪৬৩টি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রাথমিক মেরামতের জন্য ৫০৮টি প্যাকেজে ১৯০ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৯২ কোটি টাকার কাজ বর্তমানে চলমান বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর বন্যায় বাঁধের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় সে অনুপাতে আমাদের বরাদ্দ কম থাকে। ৩ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দেয়া হলে পাওয়া যায় ৮০০ কোটি টাকা। বরাদ্দ অনুযায়ী আমাদের ব্যয় করতে হয়। তাই অনেক সময় স্থায়ী মেরামত করা সম্ভব হয় না। তখন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। এ বছর ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় খুলনা, সাতক্ষীরা এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আম্ফানে ১৮ জেলায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

পাউবোর সূত্র জানায়, গত বছর আম্ফানে উপকূলীয় জেলার ১৫২ স্থানে ৫০ দশমিক ৪৭৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়েছে। ৫৮৩ স্থানে ২০৯ দশমিক ৬৭৮ কিলোমিটার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৮টি নদীর তীর ভাঙনে ১৩ দশমিক ২০৮ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে এবং ৩৭টি নদীর তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ক্ষতি হয়েছে ১২ দশমিক ৮০০ কিলোটার। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে উপকূলের বিস্তীর্ণ জেলাগুলো। চট্টগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো। নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে দিন-রাত দু’দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে বসতভিটা, গ্রামীণ জনপথ, মাছের পুকুর-ঘের, উৎপাদিত ফসল ৬-৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। আম্ফানের সেই ধকল কাটতে না কাটতে আবারও জোয়ারের পানিতে বন্যার শিকার হতে হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আম্ফানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলার বাঁধগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো নির্মাণের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প শুরু করার মধ্যে আবার নতুন করে জোয়ারের পানি দেখা দিয়েছে। এতে অনেক জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবং বিলীন হয়েছে। এভাবে বাঁধ মেরামত করার আগেই আবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় বাঁধ।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

বহু বছরের পুরনো বাঁধ ঠেকাতে পারছে না প্লাবন-জলোচ্ছ্বাস

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

খুলনা : ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। মানুষ উঁচু কোন ডাঙায় জিনিসপত্র নিয়ে দুর্ভোগে রাত-দিন কাটাচ্ছেন সংবাদ

৫০-৬০ বছরের আগে নির্মাণ করা দেশের উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে ৮ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সারাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১৩৯টি পোল্ডারে ১০ হাজার কিলোমিটার বেশি বেড়িবাঁধ রয়েছে। সমুদ্র ও নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রতিরোধে জিওব্যাগ ও মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয় এসব বাঁধ। এগুলো এত দুর্বল যে, সমুদ্রের স্বাভাবিক ঢেউয়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বড় কোন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে সক্ষম নয় এ বাঁধগুলো। প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অস্বাভাবিক জোয়ারে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধগুলো ভেঙে লোকালয়ে লবণ-পানি প্রবেশ করে বলে স্থানীয়রা জানান।

গত বুধবারও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে খুলনা-সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় ১৪ জেলায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। গত বছর বন্যায় ৯১২টি বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে প্লাবিত বিস্তীর্ণ গ্রাম। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর উপকূল এলাকার এসব বাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল, অনেক জায়গা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল কিন্তু তার বড় অংশ এখনও যথাযথভাবে মেরামত করা হয়নি স্থানীয়রা জানান। তাই বাঁধগুলো স্থায়ী মেরামতের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এ জন্য এলাকা বিবেচনা করে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প তৈরি করা প্রয়োজন। তা না হলে উপকূলবাসীর রক্ষা করা কঠিন হবে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে বুয়েটের পানি গবেষণা পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান সংবাদকে বলেন, উপকূলীয় এলাকা সাগরের সমতল থেকে বেশি উঁচু থাকে না। তাই সাতক্ষীরা, খুলনা ও ভোলাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের পানি থেকে রক্ষার জন্য এসব বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়। ১৯৬০-৭০ সালে এসব বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এ বাঁধগুলো মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের এই বাঁধ খুবই দুর্বল ও নিচ। তাই অনেক সময় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। কারণ বাঁধগুলো জলোচ্ছ্বাস ও সুনামি ঠেকানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশে সমুদ্রের তীরে ৩০-৪০ ফুট লম্বা দেয়াল তৈরি করা হয়। তাই উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় সমাধানের জন্য নদী শাসন করে মজবুত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এর জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে উকূলীয় ১৪ জেলায় ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ

গত বুধবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় ১৪ জেলায় নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৭ ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লাখ মানুষ। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী, ভোলার, নোয়াখালীর হাতিয়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিভিন্ন নদী পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে। এতে খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় অর্ধশত স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এতে প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম সংবাদকে বলেন, খুলনা জেলায় ৩টি পোল্ডারে ৮৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধের ৯টি স্থান পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এছাড়া ৫০টির বেশি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গত বছর আম্ফানে এসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে ভালোভাবে মেরামত করা যায়নি। ওই সব স্থানে এবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সব বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবনসংলগ্ন শ্যামনগর ও আশাশুনিসহ ছয়টি উপজেলার শতাধিক গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে পড়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপুলসংখ্যক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ছয়টি উপজেলার কয়েকশ’ চিংড়ি ঘের ও ফসলি খেত। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির আধারগুলো। পানির তোড়ে সাতক্ষীরার সঙ্গে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামে বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট, পাতাখালির দুটি পয়েন্ট, রমজাননগরের দুটি পয়েন্ট, গাবুরার তিনটি পয়েন্ট, কৈখালির দুটি পয়েন্ট, ভেটখালি জামে মসজিদের সামনে একটি পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনীর তিনটি পয়েন্ট ও নূরনগর ইউনিয়নের একটি পয়েন্টসহ মোট ১৭টি স্থানে পানি বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামে প্রবেশ করে।

কালিগঞ্জের পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের জব্বারের মাছের ঘের সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা হাসপাতাল, আব্দুস সামাদ স্মৃতি মাঠ, বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁকশিয়ালী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ সোহরাওয়ার্দী পার্কের পাশে কাঁকশিয়ালী নদীর পানি উপচে উপজেলা সদরের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের কাছে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত স্লুইস গেটের পাটাতন বন্ধ থাকায় সেখান থেকে পানি উপচে নাজিমগঞ্জ বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

উপজেলার ঘোজাডাঙা এলাকায় কাঁকশিয়ালী নদীর বাঁধ উপচে উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ শ্রীপুরসহ তিনটি গ্রাম প্লাবিত। ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষের পানিতে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাট, হরিশখালি, রুইয়ার বিল, সুভদ্রকাটিসহ কয়েকটি গ্রাম সয়লাব হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার খাজরা ইরুনিয়নের পিরোজপুরের রাজবংশীপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনির দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ উপচে পানি এলাকায় ঢুকে কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গাবুরার জেলেখালি, নেবুবুনিয়া, চাঁদনীমুখা, গাগড়ামারি, পদ্মপুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাতাখালি, কামালকাটি, ঝাঁপা ও সোনাখালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। গতকালও অনেক এলাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী দীপঙ্কর কুমার দাশ সংবাদকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবারও অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। তাই পুরোপুরি তালিকা তৈরি করতে দুই-একদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫৩টি বাঁধ

২০২০ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও গৃহীত ব্যবস্থা সংক্রান্ত বাপাউবোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ফরিদপুর, রাজশাহী ও রংপুরসহ মোট ৯টি আঞ্চলিক এলাকায় সর্বমোট ৭১২ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ কিলোমিটার বা ১৫৩টি বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, ১২৬ কিলোমিটার বা ৭৫৯টি বাঁধ আংশিক ভেঙে গেছে। এছাড়া সারাদেশের ৭১২টি স্থানে নদী ভাঙনে ২৯২ কিলোমিটার এলাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোসহ দেশের বিভিন্ন নদীতীরের ২৫০টি স্থানের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে রাজশাহীসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। এই অঞ্চলের বাঁধ ও নদী ভাঙনসহ ৪৬৩টি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রাথমিক মেরামতের জন্য ৫০৮টি প্যাকেজে ১৯০ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৯২ কোটি টাকার কাজ বর্তমানে চলমান বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর বন্যায় বাঁধের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় সে অনুপাতে আমাদের বরাদ্দ কম থাকে। ৩ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দেয়া হলে পাওয়া যায় ৮০০ কোটি টাকা। বরাদ্দ অনুযায়ী আমাদের ব্যয় করতে হয়। তাই অনেক সময় স্থায়ী মেরামত করা সম্ভব হয় না। তখন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। এ বছর ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় খুলনা, সাতক্ষীরা এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আম্ফানে ১৮ জেলায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

পাউবোর সূত্র জানায়, গত বছর আম্ফানে উপকূলীয় জেলার ১৫২ স্থানে ৫০ দশমিক ৪৭৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়েছে। ৫৮৩ স্থানে ২০৯ দশমিক ৬৭৮ কিলোমিটার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৮টি নদীর তীর ভাঙনে ১৩ দশমিক ২০৮ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে এবং ৩৭টি নদীর তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ক্ষতি হয়েছে ১২ দশমিক ৮০০ কিলোটার। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে উপকূলের বিস্তীর্ণ জেলাগুলো। চট্টগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো। নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ৬০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে দিন-রাত দু’দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে বসতভিটা, গ্রামীণ জনপথ, মাছের পুকুর-ঘের, উৎপাদিত ফসল ৬-৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। আম্ফানের সেই ধকল কাটতে না কাটতে আবারও জোয়ারের পানিতে বন্যার শিকার হতে হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আম্ফানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলার বাঁধগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো নির্মাণের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প শুরু করার মধ্যে আবার নতুন করে জোয়ারের পানি দেখা দিয়েছে। এতে অনেক জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবং বিলীন হয়েছে। এভাবে বাঁধ মেরামত করার আগেই আবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় বাঁধ।