সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে

শাহরিয়ার কবির রিমন

আজ ২৮ মে, জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হলেও মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব ও এর কার্যকারিতা অনুধাবন করে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে থাকে। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণই হলো নিরাপদ মাতৃত্ব। গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং ২৬ লাখ মৃত-জন্মসহ ৩০ লাখ নবজাতক অকাল মৃত্যুবরণ করে।

একজন নারীর গর্ভাবস্থা, প্রসবাবস্থা কিংবা প্রসবোত্তর ৪২ দিনের মধ্যে শারীরিক জটিলতার কারণে বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার, স্ট্রোক, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস কিংবা দুর্ঘটনা ব্যতীত মৃত্যু ঘটলে, তাকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ অসচেতনতা। গর্ভকালীন অবস্থায় মা? ও পরিবারের সচেতনতা মা ও শিশুর নিরাপদ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহরের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলে অসচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তুলনামূলক অনুন্নত। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় (চর, হাওড়, পাহাড়ি এলাকা) পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারণে সহজে গর্ভকালীন সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিহীনতা, প্রসবকালীন সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত , অনিরাপদ সন্তান প্রসব ইত্যাদি মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাল্যবিবাহ মাতৃমৃত্যু রোধের অন্যতম অন্তরায়। বাল্যবিবাহের কারণে অল্প বয়সেই একজন নারীকে গর্ভধারণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের রিপোর্ট বলছে, বিয়ের পর কিশোরী বয়সে মা হচ্ছেন ২৮ ভাগ নারী। কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যা মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গর্ভাবস্থায় তথা সন্তান জন্ম দেয়ার পূর্বে একজন নারীকে অন্তত আটবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিজের শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে। এর ফলে গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। অর্থাৎ নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভধারণকালে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে মাতৃত্বকালীন সেবা না নেয়ার কারণে অনেক মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাতৃ মৃত্যুর আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে জরুরি চিকিৎসার অভাবেও মাতৃমৃত্যু ঘটছে। মাতৃমৃত্যু রোধে মা, পরিবার ও সমাজের সব স্তরের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে হবে সেই সঙ্গে দক্ষ চিকিৎসা কর্মীর অভাব পূরণ করতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ]

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে

শাহরিয়ার কবির রিমন

আজ ২৮ মে, জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হলেও মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব ও এর কার্যকারিতা অনুধাবন করে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে থাকে। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণই হলো নিরাপদ মাতৃত্ব। গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং ২৬ লাখ মৃত-জন্মসহ ৩০ লাখ নবজাতক অকাল মৃত্যুবরণ করে।

একজন নারীর গর্ভাবস্থা, প্রসবাবস্থা কিংবা প্রসবোত্তর ৪২ দিনের মধ্যে শারীরিক জটিলতার কারণে বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার, স্ট্রোক, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস কিংবা দুর্ঘটনা ব্যতীত মৃত্যু ঘটলে, তাকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ অসচেতনতা। গর্ভকালীন অবস্থায় মা? ও পরিবারের সচেতনতা মা ও শিশুর নিরাপদ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহরের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলে অসচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তুলনামূলক অনুন্নত। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় (চর, হাওড়, পাহাড়ি এলাকা) পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারণে সহজে গর্ভকালীন সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিহীনতা, প্রসবকালীন সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত , অনিরাপদ সন্তান প্রসব ইত্যাদি মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাল্যবিবাহ মাতৃমৃত্যু রোধের অন্যতম অন্তরায়। বাল্যবিবাহের কারণে অল্প বয়সেই একজন নারীকে গর্ভধারণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের রিপোর্ট বলছে, বিয়ের পর কিশোরী বয়সে মা হচ্ছেন ২৮ ভাগ নারী। কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যা মাতৃ মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গর্ভাবস্থায় তথা সন্তান জন্ম দেয়ার পূর্বে একজন নারীকে অন্তত আটবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিজের শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে। এর ফলে গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। অর্থাৎ নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভধারণকালে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে মাতৃত্বকালীন সেবা না নেয়ার কারণে অনেক মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাতৃ মৃত্যুর আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে জরুরি চিকিৎসার অভাবেও মাতৃমৃত্যু ঘটছে। মাতৃমৃত্যু রোধে মা, পরিবার ও সমাজের সব স্তরের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে হবে সেই সঙ্গে দক্ষ চিকিৎসা কর্মীর অভাব পূরণ করতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ]