কালো টাকা সাদা বহাল রাখা কার স্বার্থে

প্রশ্ন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের

বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হবে। এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কিন্তু এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘যতদিন অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন তা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখবে সরকার।’

ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও বলছে, এ ধরনের বিধান অনন্তকাল চলতে পারে না। যদিও প্রতিবারই কয়েকটি বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বাজেটে এ ধরনের সুবিধা চাওয়া হয়। এমসিসিআইও প্রতিবছর এই ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলে আসছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবনায়ও সংগঠনটি এই ব্যবস্থা বাতিলের প্রস্তাব করেছে।

বর্তমানে যে ব্যবস্থা চালু আছে তাতে কোন ব্যক্তি বৈধ বা অবৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে সরকার কোন প্রশ্ন করবে না।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী অপ্রদর্শিত আয় জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড বা অন্য কোন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। শুধু ১০ শতাংশ হারে কর দিলেই হবে। এতে কোন জরিমানাও থাকবে না।

এখন অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, কার স্বার্থে এই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে এবং এতে দেশের অর্থনীতির আদৌ কোন লাভ হচ্ছে কিনা? যদি কালো টাকা মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই সাদা করা যায়, তাহলে মানুষ কেন সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ কর দিবেন? অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগের কথা বলে সরকার দুর্নীতিবাজদের প্রশয় দিচ্ছে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করা হয়েছে। আর ব্যক্তির সংখ্যায় সেটা ৭ হাজার ৬৫০ জন। এতে ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কর পেয়েছে এনবিআর যা কালো টাকা সাদা করার ইতিহাসে রেকর্ড।

গত ১৯ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ক্রয় মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ থাকবে। দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। এসব অর্থ যদি প্রদর্শন করার সুযোগ দেয়া না হয়, অর্থনীতির মূলধারায় না আনা হয়, তাহলে অর্থনীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না।’

তবে কালো টাকার লালন অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও চরম ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থার আসল কারণ হলো, দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি দমনের জাল থেকে পালানোর একটি পথ খুলে দেয়া। তাহলে দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি কি নেহাতই রাজনৈতিক স্ট্যান্ট? আমাদের নীতিপ্রণেতারা কি জানেন না, সামান্য কিছু অর্থ এসব দুর্নীতিবাজ ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করে নিলে দুর্নীতি করতে তারা আরও উৎসাহ পাবেন?’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস গত বছর ঘুষ লেনদেনের ঝুঁকি নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় দেখা যায়, ঘুষবাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৬ নম্বরে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুষবাণিজ্য হয় বাংলাদেশে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশ নিয়ে এ জরিপ চালানো হয়।

এছাড়াও বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’-এর প্রতিবেদনে সিপিআই-২০২০ অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে যা গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ অবনমন হয়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থও অপ্রদর্শিত আয় হলেও এর বড় অংক আসে এসব অবৈধ্য উপায়ে। তাই অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থকে বৈধ করার সহজ রাস্তা থাকলে, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে উৎসাহিত করা হবে বলে মনে করে অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদকে বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে আমি তিনটি শব্দ ব্যবহার করি। প্রথমত, এটা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক, নৈতিকতার দিক দিয়ে গর্হিত এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনুপকারী।

এটা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক, কারণ এই সুযোগ থাকলে যারা সৎ করদাতা রয়েছেন, তারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। নৈতিকতার দিক দিয়ে গর্হিত, কারণ সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের যে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে, তা এর মাধ্যমে নষ্ট করা হচ্ছে। আর রাজনৈতিকভাবে অনুপকারী, কারণ এই সুযোগ আওয়ামী লীগের জন্য কোন সুনাম বয়ে আনেনি। সব সরকারের আমলেই এই সুযোগ থাকলেও এটাকে কেউ-ই ভালো চোখে দেখে না।’

কালো টাকা সাদা করার ইতিহাস অনেক আগের। দেশে প্রথম এ সুবিধা দেয়া হয় ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক আইনের আওতায়। এরপর এ পর্যন্ত ১৭ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে সাদা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

২০০৭ ও ২০০৮ সালে তৎকালীন জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও সবচেয়ে বেশি মানুষ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছিলেন। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা সাদা করেছিলেন।

‘যতদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে ততদিন তা সাদা করার সুযোগ’ দেয়ার নীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করছেন না ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে মানুষের অর্থ অপ্রদর্শিত থাকতে পারে। তবে তা প্রদর্শনের একটা সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেটা ১ বছর হতে পারে বা তার বেশিও হতে পারে। সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যেন সেই অর্থ কোন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয়। সময় নির্ধারণ না করলে কেউ ৩০/৩২ শতাংশ কর দিবে না, পরের বছর ১০ শতাংশ দিয়ে তা সাদা করে নিবে।’

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরও কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টিকে অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর নয় বলে জানিয়েছেন।

তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘এটা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। যারা সাধারণভাবে ট্যাক্স দিচ্ছে তারা ট্যাক্স দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। যাদের কালো টাকা আছে তারা যদি সেই টাকা সাদা করতে চায় তাহলে অর্থের উৎস কী তা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। এমন বিষয় কল্যাণকর নয়।’

শনিবার, ২৯ মে ২০২১ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৬ শাওয়াল ১৪৪২

কালো টাকা সাদা বহাল রাখা কার স্বার্থে

প্রশ্ন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের

রেজাউল করিম

image

বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হবে। এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কিন্তু এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘যতদিন অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন তা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখবে সরকার।’

ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও বলছে, এ ধরনের বিধান অনন্তকাল চলতে পারে না। যদিও প্রতিবারই কয়েকটি বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বাজেটে এ ধরনের সুবিধা চাওয়া হয়। এমসিসিআইও প্রতিবছর এই ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলে আসছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবনায়ও সংগঠনটি এই ব্যবস্থা বাতিলের প্রস্তাব করেছে।

বর্তমানে যে ব্যবস্থা চালু আছে তাতে কোন ব্যক্তি বৈধ বা অবৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে সরকার কোন প্রশ্ন করবে না।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী অপ্রদর্শিত আয় জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড বা অন্য কোন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। শুধু ১০ শতাংশ হারে কর দিলেই হবে। এতে কোন জরিমানাও থাকবে না।

এখন অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, কার স্বার্থে এই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে এবং এতে দেশের অর্থনীতির আদৌ কোন লাভ হচ্ছে কিনা? যদি কালো টাকা মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই সাদা করা যায়, তাহলে মানুষ কেন সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ কর দিবেন? অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগের কথা বলে সরকার দুর্নীতিবাজদের প্রশয় দিচ্ছে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করা হয়েছে। আর ব্যক্তির সংখ্যায় সেটা ৭ হাজার ৬৫০ জন। এতে ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা কর পেয়েছে এনবিআর যা কালো টাকা সাদা করার ইতিহাসে রেকর্ড।

গত ১৯ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ক্রয় মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ থাকবে। দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। এসব অর্থ যদি প্রদর্শন করার সুযোগ দেয়া না হয়, অর্থনীতির মূলধারায় না আনা হয়, তাহলে অর্থনীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না।’

তবে কালো টাকার লালন অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও চরম ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থার আসল কারণ হলো, দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি দমনের জাল থেকে পালানোর একটি পথ খুলে দেয়া। তাহলে দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি কি নেহাতই রাজনৈতিক স্ট্যান্ট? আমাদের নীতিপ্রণেতারা কি জানেন না, সামান্য কিছু অর্থ এসব দুর্নীতিবাজ ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করে নিলে দুর্নীতি করতে তারা আরও উৎসাহ পাবেন?’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস গত বছর ঘুষ লেনদেনের ঝুঁকি নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় দেখা যায়, ঘুষবাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৬ নম্বরে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুষবাণিজ্য হয় বাংলাদেশে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশ নিয়ে এ জরিপ চালানো হয়।

এছাড়াও বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’-এর প্রতিবেদনে সিপিআই-২০২০ অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে যা গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ অবনমন হয়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থও অপ্রদর্শিত আয় হলেও এর বড় অংক আসে এসব অবৈধ্য উপায়ে। তাই অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থকে বৈধ করার সহজ রাস্তা থাকলে, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে উৎসাহিত করা হবে বলে মনে করে অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সংবাদকে বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে আমি তিনটি শব্দ ব্যবহার করি। প্রথমত, এটা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক, নৈতিকতার দিক দিয়ে গর্হিত এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনুপকারী।

এটা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক, কারণ এই সুযোগ থাকলে যারা সৎ করদাতা রয়েছেন, তারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। নৈতিকতার দিক দিয়ে গর্হিত, কারণ সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের যে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে, তা এর মাধ্যমে নষ্ট করা হচ্ছে। আর রাজনৈতিকভাবে অনুপকারী, কারণ এই সুযোগ আওয়ামী লীগের জন্য কোন সুনাম বয়ে আনেনি। সব সরকারের আমলেই এই সুযোগ থাকলেও এটাকে কেউ-ই ভালো চোখে দেখে না।’

কালো টাকা সাদা করার ইতিহাস অনেক আগের। দেশে প্রথম এ সুবিধা দেয়া হয় ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক আইনের আওতায়। এরপর এ পর্যন্ত ১৭ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে সাদা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

২০০৭ ও ২০০৮ সালে তৎকালীন জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও সবচেয়ে বেশি মানুষ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছিলেন। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা সাদা করেছিলেন।

‘যতদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে ততদিন তা সাদা করার সুযোগ’ দেয়ার নীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করছেন না ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে মানুষের অর্থ অপ্রদর্শিত থাকতে পারে। তবে তা প্রদর্শনের একটা সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেটা ১ বছর হতে পারে বা তার বেশিও হতে পারে। সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যেন সেই অর্থ কোন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয়। সময় নির্ধারণ না করলে কেউ ৩০/৩২ শতাংশ কর দিবে না, পরের বছর ১০ শতাংশ দিয়ে তা সাদা করে নিবে।’

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরও কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টিকে অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর নয় বলে জানিয়েছেন।

তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘এটা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। যারা সাধারণভাবে ট্যাক্স দিচ্ছে তারা ট্যাক্স দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। যাদের কালো টাকা আছে তারা যদি সেই টাকা সাদা করতে চায় তাহলে অর্থের উৎস কী তা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। এমন বিষয় কল্যাণকর নয়।’