আজ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম

আজ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ দেশে শান্তি রক্ষায় ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতিসংঘে যেসব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন তাদের প্রত্যেকেই পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছেন নিজ বাহিনীকে। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা প্রথম স্থানে আছে। এমন অবস্থানকে দেশের জন্য ও স্ব স্ব বাহিনীর জন্য মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে গত ৩৩ বছরে সন্ত্রাসী হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে ১৫৯ জন শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৪০ জন। সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ অথবা অভ্যন্তরীণ সহিসংতায় বিপর্যন্ত দেশগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে গিয়ে আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর শান্তিরক্ষীরা। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রতি বছরই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত হন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীদের চেয়ে পেশাদারিত্ব, মানবিক গুণাবলী এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণ থাকায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের কাছে প্রসংসিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম স্থানে আছে। ইতোমধ্যে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করার স্বীকৃতি সরুপ বাংলাদেশ একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও অর্জন করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশ সশন্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন মিশন সফলভাবে শেষ করেছে। এর মধ্যে সশন্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৩ জন আর পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা ২০ হাজার ৩১৬ জন। বর্তমানে ১০ দেশে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ৭৪২ জন কর্মকর্তা ও সদস্য শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত আছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৪১ জন আর পুলিশ আছে ৫০১ জন।

পুরুষ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পাশাপাশি সশন্ত্র এবং পুলিশ বাহিনীর নারী কর্মকর্তা এবং সদস্যরাও কম নেই। বিভিন্ন বাহিনী থেকে শান্তিরক্ষী হিসেবে নারী কর্মকর্তা এবং সদস্যরাও পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫৫৬ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে মিশন শেষ করেছে। আর পুলিশের ১৬২৩ জন শান্তিরক্ষী মিশন শেষ করেছে। সব মিলিয়ে ২১৮৪ জন মিশন শেষ করেছে। বর্তমানে ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১৩৪ জন এবং পুলিশের ১৫০ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ইরাক ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে লোক পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে প্রথম ছিল। ১৯৯৩ সালে শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হয় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। তবে পুলিশ বাহিনী প্রথমবারের মতো শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হয় ১৯৮৯ সালে। পুলিশের ওই মিশনটি ছিল নামিবিয়াতে।

এদিকে ১৯৮৮ সাল থেকে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ১৫৯ জন প্রাণ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে যা শাহাদাত বরণকারী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১২৪ জন, নৌবাহিনীর ৪ জন এবং বিমানবাহিনীর ৯ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর মারা গেছেন ১৩৭ জন। আর পুলিশ বাহিনীর মধ্যে মারা গেছেন ২২ জন। বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলা, পেশাগত দায়িত্ব পালণ করার সময় দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৪০ জন। এর মধ্যে সশন্ত্র বাহিনীর ২২৮ জন। আর পুলিশের ১২ জন সশন্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ২২ জন, নৌবাহিনীর ১ জন এবং বিমানবাহিনীর ৫ জন আহত হয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে রয়েছে। যেসব দেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী নেয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেয়া হয় বাংলাদেশ থেকে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা ও সদস্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হয়েছে তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা এবং মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে মিশন সফলভাবে শেষ করেছে।

লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা এবং সদস্যরা শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক এবং মানবিক দায়িত্ববোধও পালন করেন। যখন যে দেশেই মিশন ছিল সংশ্লিষ্ট মিশনে থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যরা শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের চিকিৎসা, খাদ্য সহয়তা, নিরক্ষতা দূর করার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নানারকম কার্যক্রমের মাধ্যমে খুব সহজে জনগণের সঙ্গে মিশে যেতেন। উচ্চতর প্রশিক্ষণ থাকায় বাংলাদেশ সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষী হিসেবে অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীর চেয়ে দক্ষতায় ও পেশাদারিত্বে অনেক এগিয়ে ছিলেন। এসব কারণে বিভিণœ সময়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের প্রশংসাও অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনালের আজিজ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সেখানে তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি করে শান্তিরক্ষী নিয়োজিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। সেনাপ্রধানের এ প্রচেষ্টার কারণে অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের সদর দপ্তরে শান্তিরক্ষী হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি হায়দার আলী (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) সংবাদকে জানান, বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে শান্তিরক্ষী হিসেবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে তাদের মিশন সফলভাবে শেষ করেছে। শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বও পালন করার মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে এনেছে। এ ধারা ভবিৎষতে অব্যাহত থাকবে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, জাতিসংঘের মিশনে ফরমেড পুলিশ ইউনিট জাতিসংঘের অধীনে কর্মরত ব্যক্তি সম্পদ এবং স্থাপনার নিরাপত্তায় কাজ করে। সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের সুরক্ষায় কাজ করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন এলাকায় মিশন সদর দপ্তর, আঞ্চলিক সদর দপ্তর এবং মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বসবাসের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। জাতিসংঘের নির্দেশিত আন্তজার্তিক এবং স্থানীয় ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত অপরাধ নজরদারিতে রাখে। জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। একক পুলিশ কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ বাস্ত্যুচ্যুত জনগণের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিং ক্রার্যক্রম, স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নারী পুলিশ কর্মকর্তারা শান্তিরক্ষা মিশন এলাকায় নারী ও শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, নারী ও শিশু সংক্রান্ত অপরাধ উদ্ঘাটন, তাদের রক্ষায় ভূমিকা পালন করেন।

image

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা কঙ্গোতে কোডেকো মিলিশিয়াদের হামলায় আহত স্থানীয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন

আরও খবর
করোনায় পূর্ণাঙ্গ নয়, ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট চায় বিএনপি
দিনাজপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
১৫শ’র বেশি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকশূন্য
এসএসসি এইচএসসির সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রকাশ

শনিবার, ২৯ মে ২০২১ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৬ শাওয়াল ১৪৪২

আজ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম

সাইফ বাবলু

image

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা কঙ্গোতে কোডেকো মিলিশিয়াদের হামলায় আহত স্থানীয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন

আজ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ দেশে শান্তি রক্ষায় ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতিসংঘে যেসব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন তাদের প্রত্যেকেই পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছেন নিজ বাহিনীকে। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা প্রথম স্থানে আছে। এমন অবস্থানকে দেশের জন্য ও স্ব স্ব বাহিনীর জন্য মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে গত ৩৩ বছরে সন্ত্রাসী হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে ১৫৯ জন শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৪০ জন। সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ অথবা অভ্যন্তরীণ সহিসংতায় বিপর্যন্ত দেশগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে গিয়ে আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর শান্তিরক্ষীরা। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রতি বছরই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত হন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীদের চেয়ে পেশাদারিত্ব, মানবিক গুণাবলী এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণ থাকায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের কাছে প্রসংসিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম স্থানে আছে। ইতোমধ্যে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করার স্বীকৃতি সরুপ বাংলাদেশ একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও অর্জন করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশ সশন্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন মিশন সফলভাবে শেষ করেছে। এর মধ্যে সশন্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৩ জন আর পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা ২০ হাজার ৩১৬ জন। বর্তমানে ১০ দেশে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ৭৪২ জন কর্মকর্তা ও সদস্য শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত আছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৪১ জন আর পুলিশ আছে ৫০১ জন।

পুরুষ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পাশাপাশি সশন্ত্র এবং পুলিশ বাহিনীর নারী কর্মকর্তা এবং সদস্যরাও কম নেই। বিভিন্ন বাহিনী থেকে শান্তিরক্ষী হিসেবে নারী কর্মকর্তা এবং সদস্যরাও পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫৫৬ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে মিশন শেষ করেছে। আর পুলিশের ১৬২৩ জন শান্তিরক্ষী মিশন শেষ করেছে। সব মিলিয়ে ২১৮৪ জন মিশন শেষ করেছে। বর্তমানে ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১৩৪ জন এবং পুলিশের ১৫০ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ইরাক ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে লোক পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে প্রথম ছিল। ১৯৯৩ সালে শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হয় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। তবে পুলিশ বাহিনী প্রথমবারের মতো শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হয় ১৯৮৯ সালে। পুলিশের ওই মিশনটি ছিল নামিবিয়াতে।

এদিকে ১৯৮৮ সাল থেকে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ১৫৯ জন প্রাণ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে যা শাহাদাত বরণকারী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১২৪ জন, নৌবাহিনীর ৪ জন এবং বিমানবাহিনীর ৯ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর মারা গেছেন ১৩৭ জন। আর পুলিশ বাহিনীর মধ্যে মারা গেছেন ২২ জন। বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলা, পেশাগত দায়িত্ব পালণ করার সময় দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৪০ জন। এর মধ্যে সশন্ত্র বাহিনীর ২২৮ জন। আর পুলিশের ১২ জন সশন্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ২২ জন, নৌবাহিনীর ১ জন এবং বিমানবাহিনীর ৫ জন আহত হয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে রয়েছে। যেসব দেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী নেয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেয়া হয় বাংলাদেশ থেকে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা ও সদস্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হয়েছে তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা এবং মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে মিশন সফলভাবে শেষ করেছে।

লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা এবং সদস্যরা শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক এবং মানবিক দায়িত্ববোধও পালন করেন। যখন যে দেশেই মিশন ছিল সংশ্লিষ্ট মিশনে থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যরা শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের চিকিৎসা, খাদ্য সহয়তা, নিরক্ষতা দূর করার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নানারকম কার্যক্রমের মাধ্যমে খুব সহজে জনগণের সঙ্গে মিশে যেতেন। উচ্চতর প্রশিক্ষণ থাকায় বাংলাদেশ সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষী হিসেবে অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীর চেয়ে দক্ষতায় ও পেশাদারিত্বে অনেক এগিয়ে ছিলেন। এসব কারণে বিভিণœ সময়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের প্রশংসাও অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনালের আজিজ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সেখানে তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি করে শান্তিরক্ষী নিয়োজিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। সেনাপ্রধানের এ প্রচেষ্টার কারণে অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের সদর দপ্তরে শান্তিরক্ষী হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি হায়দার আলী (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) সংবাদকে জানান, বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে শান্তিরক্ষী হিসেবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে তাদের মিশন সফলভাবে শেষ করেছে। শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বও পালন করার মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে এনেছে। এ ধারা ভবিৎষতে অব্যাহত থাকবে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, জাতিসংঘের মিশনে ফরমেড পুলিশ ইউনিট জাতিসংঘের অধীনে কর্মরত ব্যক্তি সম্পদ এবং স্থাপনার নিরাপত্তায় কাজ করে। সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের সুরক্ষায় কাজ করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন এলাকায় মিশন সদর দপ্তর, আঞ্চলিক সদর দপ্তর এবং মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বসবাসের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। জাতিসংঘের নির্দেশিত আন্তজার্তিক এবং স্থানীয় ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত অপরাধ নজরদারিতে রাখে। জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। একক পুলিশ কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ বাস্ত্যুচ্যুত জনগণের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিং ক্রার্যক্রম, স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নারী পুলিশ কর্মকর্তারা শান্তিরক্ষা মিশন এলাকায় নারী ও শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, নারী ও শিশু সংক্রান্ত অপরাধ উদ্ঘাটন, তাদের রক্ষায় ভূমিকা পালন করেন।