করোনা-লকডাউনে

১৫শ’র বেশি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকশূন্য

করোনা মহামারী সময়ে দফায় দফায় লকডাউনের কারণে সারাদেশে ১৫শ’র বেশি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকশূন্য। পর্যটন স্পটের হোটেলে-মোটেল-দোকানগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে পর্যটন স্পটগুলোতে বিভিন্ন কাজে জড়িত ৪০ লাখ পর্যটন কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে গত বছরের প্রথম চার মাসে ক্ষতি প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা। নতুন করে ক্ষতি নিরূপণে একটি সংস্থা কাজ করছেন বলে ট্যুরিজম বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বন্ধ পর্যটন স্পটগুলোতে নির্জন পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্মেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ করছে। জাফলংয়ের পর্যটন স্পটে পাথর ও বালির মধ্যে জন্মেছে গাছ, ফুটেছে নানা জাতের ফুল।

পর্যটন এলাকা বন্ধ থাকা এবং সেখানকার হোটেল-মোটেল- দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা সম্পর্কে সংবাদ কথা বলেছে একাধিক পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে।

কক্সবাজার কলাতলী এলাকার হোটেল সি পয়েন্টের মালিক ফজলুল কাদের জানান, কক্সবাজারে তাদের তিনটি আবাসিক হোটেল আছে। লকডাউনের কারণে কোন হোটেলেই পর্যটক নেই। অন্যদিকে তিনটি হোটেলে প্রায় ২শ’জন কর্মচারী আছে। লকডাউনের কারণে প্রতিমাসে প্রতিটি হোটেলে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে গড়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এভাবে তিনটি হোটেলে মাসে ক্ষতি কমপক্ষে ৪৫ লাখ টাকা। এ লোকসান কীভাবে কাটিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না। তার মতো পুরো কক্সবাজারে ৪শ’র বেশি হোটেল-মোটেলে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। তিনি জানান, শুধু কক্সবাজার এলাকায় পর্যটন খাতে ক্ষতি এক হাজার কোটি টাকার বেশি হবে। দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তবে প্রধান শহরে মার্কেট ও দোকান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে। পর্যটক না থাকায় ব্যবসা মন্দাভাব চলছে। এখন যদি সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল জোন খুলে না দেয় তবে অনেকেরই আর এসব হোটেল চালানোর মতো পুঁজি হাতে থাকবে না। সবাইকে পথে বসতে হবে। কক্সবাজারের পাইকারি শুঁটকি বিক্রেতা আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, তার তিনটি দোকানে পাইকারি ও খুচরা শুঁটকি বিক্রি করে ভালোভাবে তার দিন চলছিল। প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার শুঁটকি বেচাকেনা হতো। লকডাউনের কারণে কোন পর্যটক আসছেন না, শুঁটকি কিনবেন কারা? তাই এখন লাভ তো দূরের কথা লোকসান হচ্ছে। তার মতো অন্যান্য শুঁটকি ব্যবসায়ী এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজার সৈকতের ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি জাকির হোসেন সংবাদকে বলেন, কক্সবাজারে সৈকতে ঝিনুকের দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ৩শ’র বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কর্মচারীসহ প্রায় দেড় হাজার লোক কাজ করে কোনমতে সংসার চালাত। এখন লকডাউনের কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। দোকানপাট বন্ধ থাকায় দোকানে থেকে যাওয়া ঝিনুকসহ অন্যান্য পণ্য সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দোকানিরা ব্যবসা করতে না পেরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

ট্যুরিজম বোর্ড থেকে জানা গেছে, করোনার কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সের্ন্টমাটিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ৪০ লাখের মতো পর্যটন কর্মী এখন কর্মহীন। তাদের পরিবার-পরিজন মিলে এ সংখ্যা দেড় কোটির মতো হবে। তারা চরম আর্থিক সংকটে আছেন।

এদিকে সারাদেশে পর্যটকশূন্য স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন এলাকায় জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ এবং মাইকিং করছে। করা হচ্ছে সতর্কও। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুরিজম বোর্ড থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখার এসপি ইব্রাহিম খলিল সংবাদকে জানান, সারাদেশে ১৫৭৮টি ছোট-বড় পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব পর্যটন স্পটের মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুন্দরবনসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় ১০৪টি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। এসব স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। তারা পর্যটন এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মাইকিং করে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মোর্শেদুল আনোয়ার খান সংবাদকে জানান, দেশের ১০৪টি পর্যটন স্পটে লকডাউনের মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। পর্যটক না থাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণামূলক কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটন স্পটগুলোকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এতে পর্যটকের আকর্ষণ বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে হেল্প ডেস্ক চালু করলে সেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করতে পারে বলে তিনি জানান।

শনিবার, ২৯ মে ২০২১ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৬ শাওয়াল ১৪৪২

করোনা-লকডাউনে

১৫শ’র বেশি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকশূন্য

বাকী বিল্লাহ

image

করোনা মহামারী সময়ে দফায় দফায় লকডাউনের কারণে সারাদেশে ১৫শ’র বেশি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকশূন্য। পর্যটন স্পটের হোটেলে-মোটেল-দোকানগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে পর্যটন স্পটগুলোতে বিভিন্ন কাজে জড়িত ৪০ লাখ পর্যটন কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে গত বছরের প্রথম চার মাসে ক্ষতি প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা। নতুন করে ক্ষতি নিরূপণে একটি সংস্থা কাজ করছেন বলে ট্যুরিজম বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বন্ধ পর্যটন স্পটগুলোতে নির্জন পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্মেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ করছে। জাফলংয়ের পর্যটন স্পটে পাথর ও বালির মধ্যে জন্মেছে গাছ, ফুটেছে নানা জাতের ফুল।

পর্যটন এলাকা বন্ধ থাকা এবং সেখানকার হোটেল-মোটেল- দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা সম্পর্কে সংবাদ কথা বলেছে একাধিক পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে।

কক্সবাজার কলাতলী এলাকার হোটেল সি পয়েন্টের মালিক ফজলুল কাদের জানান, কক্সবাজারে তাদের তিনটি আবাসিক হোটেল আছে। লকডাউনের কারণে কোন হোটেলেই পর্যটক নেই। অন্যদিকে তিনটি হোটেলে প্রায় ২শ’জন কর্মচারী আছে। লকডাউনের কারণে প্রতিমাসে প্রতিটি হোটেলে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে গড়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এভাবে তিনটি হোটেলে মাসে ক্ষতি কমপক্ষে ৪৫ লাখ টাকা। এ লোকসান কীভাবে কাটিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না। তার মতো পুরো কক্সবাজারে ৪শ’র বেশি হোটেল-মোটেলে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। তিনি জানান, শুধু কক্সবাজার এলাকায় পর্যটন খাতে ক্ষতি এক হাজার কোটি টাকার বেশি হবে। দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তবে প্রধান শহরে মার্কেট ও দোকান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে। পর্যটক না থাকায় ব্যবসা মন্দাভাব চলছে। এখন যদি সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল জোন খুলে না দেয় তবে অনেকেরই আর এসব হোটেল চালানোর মতো পুঁজি হাতে থাকবে না। সবাইকে পথে বসতে হবে। কক্সবাজারের পাইকারি শুঁটকি বিক্রেতা আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, তার তিনটি দোকানে পাইকারি ও খুচরা শুঁটকি বিক্রি করে ভালোভাবে তার দিন চলছিল। প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার শুঁটকি বেচাকেনা হতো। লকডাউনের কারণে কোন পর্যটক আসছেন না, শুঁটকি কিনবেন কারা? তাই এখন লাভ তো দূরের কথা লোকসান হচ্ছে। তার মতো অন্যান্য শুঁটকি ব্যবসায়ী এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজার সৈকতের ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি জাকির হোসেন সংবাদকে বলেন, কক্সবাজারে সৈকতে ঝিনুকের দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ৩শ’র বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কর্মচারীসহ প্রায় দেড় হাজার লোক কাজ করে কোনমতে সংসার চালাত। এখন লকডাউনের কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। দোকানপাট বন্ধ থাকায় দোকানে থেকে যাওয়া ঝিনুকসহ অন্যান্য পণ্য সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দোকানিরা ব্যবসা করতে না পেরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

ট্যুরিজম বোর্ড থেকে জানা গেছে, করোনার কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সের্ন্টমাটিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ৪০ লাখের মতো পর্যটন কর্মী এখন কর্মহীন। তাদের পরিবার-পরিজন মিলে এ সংখ্যা দেড় কোটির মতো হবে। তারা চরম আর্থিক সংকটে আছেন।

এদিকে সারাদেশে পর্যটকশূন্য স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন এলাকায় জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ এবং মাইকিং করছে। করা হচ্ছে সতর্কও। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুরিজম বোর্ড থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখার এসপি ইব্রাহিম খলিল সংবাদকে জানান, সারাদেশে ১৫৭৮টি ছোট-বড় পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব পর্যটন স্পটের মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুন্দরবনসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় ১০৪টি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। এসব স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। তারা পর্যটন এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মাইকিং করে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মোর্শেদুল আনোয়ার খান সংবাদকে জানান, দেশের ১০৪টি পর্যটন স্পটে লকডাউনের মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। পর্যটক না থাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণামূলক কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটন স্পটগুলোকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এতে পর্যটকের আকর্ষণ বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে হেল্প ডেস্ক চালু করলে সেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করতে পারে বলে তিনি জানান।