রেমিট্যান্সের ১০ শতাংশ অভিবাসীদের উন্নয়ন বাজেট হিসেবে বরাদ্দের দাবি

অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো বার্ষিক রেমিট্যান্সের উপর শতকরা ১০ শতাংশ উন্নয়ন বাজেট হিসেবে অভিবাসীদের উন্নয়ন, কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় ওকাপ।

ওকাপ জানায়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শ্রম অভিবাসন এবং অভিবাসী কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব মতে, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ কর্মক্ষম মানুষ সরকারি প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরে সরকারিভাবে অভিবাসন করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ (৫,৯৮৪,৯৪৩)। একই সময়ে অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১০ লাখ ৮১ হাজার ৯৯২.৪৬ কোটি টাকা। করোনা আক্রান্ত অর্থবছরেও (২০১৯-২০) বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা করোনা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ গুণ বেশি।

ওকাপ মনে করে, অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে যা বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়ন মডেল হিসেবে তৈরি করেছে। অভিবাসী কর্মীদের যথেষ্ট অবদান সত্ত্বেও অভিবাসী কর্মীর অধিকার, কল্যাণ ও সুরক্ষার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। গত কয়েক বছরের জাতীয় বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অভিবাসী কর্মীদের জন্য বরাদ্দকৃত উন্নয়ন বাজেটের পরিমাণ এক শতাংশেরও কম।

সংগঠনটি জানায়, অনিরাপদ ও অস্বচ্ছ নিয়োগ-প্রক্রিয়ার কারণে অনেক অভিবাসী কর্মী বিদেশে গিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ বা বেতন কোনটাই পায় না এবং শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। অনেক নারী অভিবাসী গৃহকর্মী বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসে। বেশিরভাগ অসুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মী টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারে না। অভিবাসনের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারা কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেক ফেরত অভিবাসী কর্মী সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে কাজ হারিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে। এদের প্রায় ৬৩ শতাংশ অভিবাসী কর্মীকে পাওনা বেতন, বোনাস বা গ্র্যাচুইটি না দিয়েই সম্পূর্ণ শূন্যহাতে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এমতাবস্থায়, আসন্ন ২০২১-২২ জাতীয় বাজেটে অভিবাসী কর্মীদের উন্নয়ন, কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল অভিবাসী সংগঠন ‘ওকাপ’র পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে আছে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মী বিশেষ করে নারী অভিবাসী কর্মীদের জাতীয় ‘সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীতে’ অন্তর্ভুক্ত করে মাসিক ভাতা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য ‘সোশ্যাল বেনিফিট’ নিশ্চিত করতে ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড’ চালু করতে হবে এবং এ জন্য আসন্ন অর্থ বছরে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রদেয় প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

রবিবার, ৩০ মে ২০২১ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪২

রেমিট্যান্সের ১০ শতাংশ অভিবাসীদের উন্নয়ন বাজেট হিসেবে বরাদ্দের দাবি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো বার্ষিক রেমিট্যান্সের উপর শতকরা ১০ শতাংশ উন্নয়ন বাজেট হিসেবে অভিবাসীদের উন্নয়ন, কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় ওকাপ।

ওকাপ জানায়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শ্রম অভিবাসন এবং অভিবাসী কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব মতে, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ কর্মক্ষম মানুষ সরকারি প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরে সরকারিভাবে অভিবাসন করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ (৫,৯৮৪,৯৪৩)। একই সময়ে অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১০ লাখ ৮১ হাজার ৯৯২.৪৬ কোটি টাকা। করোনা আক্রান্ত অর্থবছরেও (২০১৯-২০) বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা করোনা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ গুণ বেশি।

ওকাপ মনে করে, অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে যা বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়ন মডেল হিসেবে তৈরি করেছে। অভিবাসী কর্মীদের যথেষ্ট অবদান সত্ত্বেও অভিবাসী কর্মীর অধিকার, কল্যাণ ও সুরক্ষার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। গত কয়েক বছরের জাতীয় বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অভিবাসী কর্মীদের জন্য বরাদ্দকৃত উন্নয়ন বাজেটের পরিমাণ এক শতাংশেরও কম।

সংগঠনটি জানায়, অনিরাপদ ও অস্বচ্ছ নিয়োগ-প্রক্রিয়ার কারণে অনেক অভিবাসী কর্মী বিদেশে গিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ বা বেতন কোনটাই পায় না এবং শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। অনেক নারী অভিবাসী গৃহকর্মী বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসে। বেশিরভাগ অসুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মী টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারে না। অভিবাসনের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারা কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেক ফেরত অভিবাসী কর্মী সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে কাজ হারিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে। এদের প্রায় ৬৩ শতাংশ অভিবাসী কর্মীকে পাওনা বেতন, বোনাস বা গ্র্যাচুইটি না দিয়েই সম্পূর্ণ শূন্যহাতে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এমতাবস্থায়, আসন্ন ২০২১-২২ জাতীয় বাজেটে অভিবাসী কর্মীদের উন্নয়ন, কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল অভিবাসী সংগঠন ‘ওকাপ’র পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে আছে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মী বিশেষ করে নারী অভিবাসী কর্মীদের জাতীয় ‘সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীতে’ অন্তর্ভুক্ত করে মাসিক ভাতা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য ‘সোশ্যাল বেনিফিট’ নিশ্চিত করতে ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড’ চালু করতে হবে এবং এ জন্য আসন্ন অর্থ বছরে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রদেয় প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।