ভারতে তরুণী নির্যাতন

গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সদস্য : পুলিশ

ভারত-মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত

ভারতে তরুণীকে নির্যাতন করে ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত। স্কুল-কলেজপড়–য়া বখে যাওয়া তরুণী থেকে গৃহিনী পর্যন্ত সবাই এ চক্রের টার্গেট। শুধু তাই নয়, চক্রটি অবৈধভাবে ভারত ও বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করে আসছিল। এদিকে ভারতে গ্রেপ্তার টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী আলামিনের বাড়ি যশোরে। গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ভারতে তরুণী নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’সহ সবাই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সমন্বয়ক। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধী মিলে এই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন সময় এরা আরও বেশ কয়েকজন নারী পাচার করেছে। এদের কাছে ভ্রমণ সংক্রান্ত কোন বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ। টিকটক হৃদয়সহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সহায়তায় অবৈধভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করত।

এদের মধ্যে চিহ্নিত ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। নির্যাতিত মেয়েটির বাবার বাসাও মগবাজার এলাকায়। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা একটি ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়। গ্রুপটির মূল পৃষ্টপোষক মূলত আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রটি। এই গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০/৮০০ জন তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়। ওই পার্টির অন্যতম সমন্বয়কারী ছিল রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু। গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কয়েকজন সদস্য আছে, যারা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে।

ডিসি বলেন, টিকটক ভিডিওর জন্য তাদের একত্রিত করে এক পর্যায়ে পাচারের কাজ করা হয়। এ চক্রের মূল আস্তানা বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। পাচারের উদ্দেশ হচ্ছে পতিতাবৃত্তি। চক্রটি ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। যে হোটেলগুলোতে চাহিদা মাফিক বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের পাঠানোর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মেয়েদের বেঙ্গালুরুর নেয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। পরে পাচার করা এসব নারীকে সব সময় হুমকি দেয়া হয়, অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এই ভিডিও তাদের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মো. শহিদুল্লাহ বলেন, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ভারত এবং বাংলাদেশে পৃথকভাবে মামলা হয়েছে। ভারত ভারতের মতো করে মামলার তদন্ত করবে এবং আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত করব। তবে অপরাধীরা যেহেতু বাংলাদেশি, তাই দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা। হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই ভিডিওর উৎস খুঁজতে গিয়ে আসাম পুলিশ জানতে পারে, নির্যাতনে জড়িতরা আছে বেঙ্গালুরুতে। তারপর সেই তথ্য কর্ণাটক পুলিশকে সরবরাহ করে তারা। পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। তাদের মধ্যে দু’জন পালাতে গিয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশের গুলিতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

টিকটক হৃদয়ের সহযোগী

যশোরের আলামিন ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী যশোরের এক যুবকও রয়েছে। আলামিন নামের ওই যুবকের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়। ভিডিও প্রচারের পর আলামিনের বাড়ি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করলেও তাদের দাবি, আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আলামিনের বাবা মনু মিয়া বলেন, ‘আলামিন ও তার বউ শারমনি (২য় স্ত্রী) ভালো না। বাড়ি বসে কিসব (ইয়াবা) খেতো, বাইরের লোক আসত, তাই আট মাস আগে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনিছি, আলামিন ইন্ডিয়া গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কি করছে জানি না, তার সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই বেপরোয়া আলামিন দেশে দুটি বিয়ে করেছে। দুই সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের ফেলে সে ভারতে চলে যায়। ভিডিওতে সে গোলাপী ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের ব্যান্ড রয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। এই তানিয়ার বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। তানিয়াকে আলামিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। আলামিন বা তানিয়ার কেউই এখনও আটক হয়নি। তারা ওই এলাকায় পালিয়ে রয়েছে।

ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকটক হৃদয় বাবু, আলামিনসহ এ চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরু’র কোর্টলোর এলাকায় থাকে। সেখানে ‘রাফি’ নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করে। সূত্রটি আরও জানায়, গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আলামিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। যাওয়ার আগে সে চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। ‘অরিজিনাল মাল’ হিসেবে ইয়াবা আসক্ত ‘রাফিকে’ উপহার দেয়ার জন্য এই ইয়াবা সে বেঙ্গালুরু নিয়ে গেছে। ভারতের সূত্রটি আরও জানায়, নির্যাতনে জড়িত আলামিন ও তানিয়া গা ঢাকা দিয়েছে। এছাড়া ডালিম ও সবুজ নামে আরও দুই যুবক ছিল, তারাও পালিয়ে গেছে। তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে।

ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কথা হয় চাঁচড়া মধ্যপাড়ার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় এটি জানাজানি হওয়ার পর অনেকে আলামিনের পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন। এটি নিয়ে বাড়ির লোকজনও চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ-খবর করছে। তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানান। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন বলেন, ভারতের তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা তিনি জানেন। ওই ঘটনায় জড়িত কারও বাড়ি যশোরে এমন তথ্য এখন তারা পাননি। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

রবিবার, ৩০ মে ২০২১ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪২

ভারতে তরুণী নির্যাতন

গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সদস্য : পুলিশ

ভারত-মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

ভারতে তরুণীকে নির্যাতন করে ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত। স্কুল-কলেজপড়–য়া বখে যাওয়া তরুণী থেকে গৃহিনী পর্যন্ত সবাই এ চক্রের টার্গেট। শুধু তাই নয়, চক্রটি অবৈধভাবে ভারত ও বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করে আসছিল। এদিকে ভারতে গ্রেপ্তার টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী আলামিনের বাড়ি যশোরে। গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ভারতে তরুণী নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’সহ সবাই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সমন্বয়ক। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধী মিলে এই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন সময় এরা আরও বেশ কয়েকজন নারী পাচার করেছে। এদের কাছে ভ্রমণ সংক্রান্ত কোন বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ। টিকটক হৃদয়সহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সহায়তায় অবৈধভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করত।

এদের মধ্যে চিহ্নিত ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। নির্যাতিত মেয়েটির বাবার বাসাও মগবাজার এলাকায়। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা একটি ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়। গ্রুপটির মূল পৃষ্টপোষক মূলত আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রটি। এই গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০/৮০০ জন তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়। ওই পার্টির অন্যতম সমন্বয়কারী ছিল রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু। গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কয়েকজন সদস্য আছে, যারা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে।

ডিসি বলেন, টিকটক ভিডিওর জন্য তাদের একত্রিত করে এক পর্যায়ে পাচারের কাজ করা হয়। এ চক্রের মূল আস্তানা বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। পাচারের উদ্দেশ হচ্ছে পতিতাবৃত্তি। চক্রটি ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। যে হোটেলগুলোতে চাহিদা মাফিক বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের পাঠানোর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মেয়েদের বেঙ্গালুরুর নেয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। পরে পাচার করা এসব নারীকে সব সময় হুমকি দেয়া হয়, অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এই ভিডিও তাদের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মো. শহিদুল্লাহ বলেন, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ভারত এবং বাংলাদেশে পৃথকভাবে মামলা হয়েছে। ভারত ভারতের মতো করে মামলার তদন্ত করবে এবং আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত করব। তবে অপরাধীরা যেহেতু বাংলাদেশি, তাই দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা। হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই ভিডিওর উৎস খুঁজতে গিয়ে আসাম পুলিশ জানতে পারে, নির্যাতনে জড়িতরা আছে বেঙ্গালুরুতে। তারপর সেই তথ্য কর্ণাটক পুলিশকে সরবরাহ করে তারা। পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। তাদের মধ্যে দু’জন পালাতে গিয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশের গুলিতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

টিকটক হৃদয়ের সহযোগী

যশোরের আলামিন ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী যশোরের এক যুবকও রয়েছে। আলামিন নামের ওই যুবকের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়। ভিডিও প্রচারের পর আলামিনের বাড়ি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করলেও তাদের দাবি, আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আলামিনের বাবা মনু মিয়া বলেন, ‘আলামিন ও তার বউ শারমনি (২য় স্ত্রী) ভালো না। বাড়ি বসে কিসব (ইয়াবা) খেতো, বাইরের লোক আসত, তাই আট মাস আগে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনিছি, আলামিন ইন্ডিয়া গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কি করছে জানি না, তার সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই বেপরোয়া আলামিন দেশে দুটি বিয়ে করেছে। দুই সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের ফেলে সে ভারতে চলে যায়। ভিডিওতে সে গোলাপী ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের ব্যান্ড রয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। এই তানিয়ার বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। তানিয়াকে আলামিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। আলামিন বা তানিয়ার কেউই এখনও আটক হয়নি। তারা ওই এলাকায় পালিয়ে রয়েছে।

ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকটক হৃদয় বাবু, আলামিনসহ এ চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরু’র কোর্টলোর এলাকায় থাকে। সেখানে ‘রাফি’ নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করে। সূত্রটি আরও জানায়, গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আলামিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। যাওয়ার আগে সে চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। ‘অরিজিনাল মাল’ হিসেবে ইয়াবা আসক্ত ‘রাফিকে’ উপহার দেয়ার জন্য এই ইয়াবা সে বেঙ্গালুরু নিয়ে গেছে। ভারতের সূত্রটি আরও জানায়, নির্যাতনে জড়িত আলামিন ও তানিয়া গা ঢাকা দিয়েছে। এছাড়া ডালিম ও সবুজ নামে আরও দুই যুবক ছিল, তারাও পালিয়ে গেছে। তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে।

ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কথা হয় চাঁচড়া মধ্যপাড়ার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় এটি জানাজানি হওয়ার পর অনেকে আলামিনের পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন। এটি নিয়ে বাড়ির লোকজনও চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ-খবর করছে। তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানান। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন বলেন, ভারতের তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা তিনি জানেন। ওই ঘটনায় জড়িত কারও বাড়ি যশোরে এমন তথ্য এখন তারা পাননি। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।