প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

মিসর, কাতার ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতির পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা এবং তাদের পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ থেমে গেছে। ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী নিজেদের এলাকা থেকে গাজায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও পূর্বের অন্যান্য যুদ্ধের মতো ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করার চেষ্টা তারা করেনি। ফিলিস্তিনের দুটি অংশ- জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা, মধ্যখানে ইসরায়েল। এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের ওপর দিয়ে দুই এলাকার লোকদের চলাচল করতে হয়, তবে ইসরায়েলি পুলিশের শারীরিক তল্লাশি ছাড়া নয়। জর্ডান নদী ও ডেড সী’র পশ্চিম তীরের বিস্তীর্ণ এলাকাটি শাসন করছে ফিলিস্তিনের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল ফাতাহ বা পিএলও গোষ্ঠী। ইয়াসির আরাফাতের এই রাজনৈতিক দলটি সশস্ত্র সংগ্রাম পরিহার করে ১৯৯৩ সনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে। ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরের বিস্তৃর্ণ এলাকা শাসন করছেন, পৃথিবীর শতাধিক দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশেও তাদের দূতাবাস রয়েছে। কিন্তু গাজার ফিলিস্তিন দল হামাস এই শান্তি চুক্তি মানে না। অতি সম্প্রতি এই হামাসই ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।

চমকপ্রদ বিষয় হলো-বর্তমান ফিলিস্তিন এলাকায় জেরুজালেম শহরটি মুসলমান, খ্রিস্টান এবং ইহুদি- এই তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছেই পবিত্র। নবী ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমান- এই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পিতা। ইরাকে জন্মগ্রহণকারী ইব্রাহীম (আ.) ইরাক থেকে কেনান বা জেরুজালেমে হিজরত করেন এবং কেনানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নবী ইব্রাহীম (আ.) ও স্ত্রী সারার পুত্র হযরত ইসহাক (আ.) এবং তাঁর পুত্র ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধর হচ্ছে বনি ইসরায়েল বা ইহুদিরা; ইমরান, মুসা, হারুন, দাঊদ, সুলায়মান, ঈসা প্রমুখ নবীগণ ছিলেন ইবরাহীমের পুত্র ইসহাকের বংশধর। অপরপক্ষে ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশে জন্ম নেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ইসমাঈল (আ.) জন্ম কেনানে হলেও মা হাজেরাসহ তাঁকে মক্কায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।

কেনান বা জেরুজালেমে যে আল আকসা মসজিদ বা উপসনালয় নিয়ে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ তা প্রথম নির্মাণ করেন ফেরেস্তাগণ, পরে আদম (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। নূহ (আ.)-এর প্লাবনে উপসনালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইব্রাহীম (আ.) আবার তা পুনর্নির্মাণ করেন। তবে ইহুদিদের মতে দাউদ (আ.)-এর পুত্র নবী সুলায়মান (আ.) ইহুদিদের জন্য প্রথম এই উপাসনালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন; পরবর্তীতে এই উপসনালয়ের ধ্বংস এবং পুনর্নির্মাণ চলতেই থাকে। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম মুসলমানদের অধীনে এলে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ইহুদিদের উপসনালয়ের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি মসজিদ তৈরি করেন। এই মসজিদটি পরবর্তীতে ভূমিকম্পে দুইবার ধ্বংস হয়ে গেলেও তৎকালীন মুসলিম শাসকরা তা পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৯৯ সনে খ্রিস্টান ক্রুসেডার বাহিনী জয়ী হলে তারা মসজিদসহ পুরো এলাকাকে প্রাসাদ এবং গির্জা হিসেবে ব্যবহার করেন। ১১৮৭ সনে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (র.) পুনরায় জেরুজালেম দখল করেন এবং গির্জাকে মসজিদে পরিবর্তন করেন। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা জেরুজালমসহ ফিলিস্তিন এলাকা দখল করে নেয় এবং ১৯১৭ সন পর্যন্ত তা নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর ব্রিটেন ‘লিগ অব নেশস’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।

মন্দির, গির্জা, মসজিদ যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন এই স্থানে শুক্রবারে মুসলমান, শনিবারে ইহুদি এবং রোববারে খ্রিস্টানেরা সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করে থাকে। ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানগণ এই পবিত্র স্থানটি সম্পূর্ণভাবে নিজেদের জন্য এককভাবে পেতে চায়। কারণ আল আকসা মসজিদ মুসলমানদের প্রথম কেবলা এবং এখানে মুসলমানদের কুব্বাত আস সাখরা বা ইহুদিদের ডোম অফ দ্য রকের নিচে যে পাথরটি রয়েছে তাতে ভর রেখে হযরত মুহাম্মদ (সা.) উর্ধারোহন করেছিলেন। অন্যদিকে এই পাথরটিই ইহুদিদের মূল কিবলা; হযরত ওমর (রা.)-এর মসজিদ নির্মাণের পূর্বে সেখানে যে উপসনালয়টি ছিল সেই উপসনালয়টি ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানেরা ধ্বংস করলেও তার একটি দেয়াল এখনও অবশিষ্ট রয়েছে এবং এই দেয়ালটিই এখন ইহুদিদের উপসনার একমাত্র স্থান। এছাড়াও ইহুদি, খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত নবী মুসা (আ.) সহ বহু নবীর কবর এই শহরে; এই শহরেই খ্রিস্টানদের যীশু খ্রিস্ট বা মুসলমানদের ঈসা নবী (আ.)’র জন্ম এবং এখানেই তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের নির্বিচারে হত্যার পর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র করার দাবি উঠে। এই দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিন এলাকাটি দুই ভাগ করে ফিলিস্তিন ও ইহুদিদের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্র করার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ফিলিস্তিন ও আরব মুসলমানরা এই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানালেও ইহুদিরা জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫৫% ভূমিতে ১৯৪৮ সনের ১৪ মে তারিখে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬৪টি দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, তাদের পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম এবং তাঁর বংশধরদের জন্য তোরাহ ধর্মগ্রন্থে যে পবিত্রভূমির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেই পবিত্র ভূমিতেই ইহুদিরা তাদের ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জেরুজালেম এখন ইসরায়েলের দখলে থাকলেও উপসনালয়ের স্থানটি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিজেদের হাতে রাখেনি, মুসলমানদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। এইজন্য এখনও মুসলমানরা আল-আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।

সারা পৃথিবীর সাধারণ মুসলমানের অনুভূতি হচ্ছে, সব মুসলিম দেশ এক হয়ে ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে দিক। এই চেষ্টাও কয়েকবার হয়েছে। ১৯৪৮ সনের ১৪ মে তারিখে মাত্র ৭ লাখ অধিবাসী নিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা দেয়ার পরদিন ৫টি মুসলিম দেশ মিসর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে, কিন্তু হেরে যায়, ইসরায়েল আরও ভূমি দখল করে নেয়। ১৯৫৬ সনে মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের ক্ষমতায় এসেই ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলের জন্য সুয়েজ খাল বন্ধ ঘোষণা করলে ইসরায়েল মিশর আক্রমণ করে মিসরের ভেতরে ঢুকে যায়। আন্তর্জাতিক চাপে ইসরায়েল যুদ্ধ থামিয়ে দখল করা মিশরের ভূমি ছেড়ে দেয়। ১৯৬৭ সনে মিসর, সিরিয়া, ইরাক এবং জর্ডান পুনরায় ইসরায়েল আক্রমণ করে, কিন্তু তারা মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে পরাজিত হয়, ইসরায়েল গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডানের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। ১৯৭৩ সনে সিরিয়া এবং মিসর আবার একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে; মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত যুদ্ধে হেরে গিয়ে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি, কিন্তু আমেরিকার বিরুদ্ধে নয়’।

কোন মুসলিম দেশ আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে বলে মনে হয় না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ানকে নিয়ে অনেক মুসলমান নতুন করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু ১৯৪৯ সনে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম মুসলিম দেশ হচ্ছে তুরস্ক। ২০০৫ সনে এরদোয়ান ব্যবসায়ীদের এক বিরাট বহর নিয়ে ইসরায়েল সফর করেন। ২০১৮ সনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেও ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের এখনও ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন আঁতাত নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। মালয়েশীয়া দূর থেকে কড়া কড়া বিবৃতি দিলেও তাদের যুদ্ধ করার সুযোগ নেই। ইরান কিছুটা সক্রিয় হলেও ইসরায়েলের সঙ্গে এককভাবে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামার আর্থিক ও সামরিক শক্তি তাদের নেই। পাকিস্তানের ভাড়াটে সেনারা ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ নামে এক অপারেশনে জর্ডানে শত শত ফিলিস্তিনকে গুলি করে মেরেছে, পিটিয়ে জর্ডান থেকে তাড়ানোর পুরস্কার হিসেবে ভাড়াটে সেনাদলের প্রধান জিয়াউল হক জর্ডান থেকে খেতাব পেয়েছিলেন। জিয়াউল হককে পাকিস্তানে ‘ফিলিস্তিন হন্তারক’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরায়েলের গোলার আঘাতে আহত ফিলিস্তিনরা এবার কোন চিকিৎসা পায়নি, কারণ মিসরের জান্তা সরকার তাদের দেশে ফিলিস্তিনদের প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। সিভিল ওয়ারে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ইসরায়েলকে তাদের নিজ স্বার্থে ফিলিস্তিনদের সঙ্গে সমঝোতায় আসা উচিত। কারণ যে ফিলিস্তিনরা শুধু পাথর ছুড়ে এক সময় ইসরায়েলি সেনাদের মোকাবিলা করত, তারা আজ হাজার হাজার রকেট ছুড়ছে, তাদের হামলার ভয় ইসরায়েলকে সব সময় আতঙ্কিত রাখে। এছাড়াও ফিলিস্তিনদের হামলা রুখতে ইসরায়েলকে সর্বদা যুদ্ধাবস্থায় থাকতে হয়, প্রতিরক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফিলিস্তিদের রকেট হামলা রোধ করতে ইসরায়েল যে ‘আয়রন ডোম’ তৈরি করেছে তা দিয়ে প্রতিটি নিক্ষিপ্ত গোলা আকাশে ধ্বংস করতে প্রায় ৮০ হাজার ডলার বা ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। সর্বোপরি ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ২০% লোক ফিলিস্তিন মুসলমান, বাইরের ফিলিস্তিনিরা আক্রান্ত হলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিন মুসলমান ও কট্টর ইহুদিদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়; বর্তমানে এই সংঘাত ইসরায়েলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তিশালী ইসরায়েলকে তাদের স্বস্তি এবং শান্তির জন্য তাই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতা করে ১৯৬৭ সনের পূর্বের সীমানায় ফেরত যাওয়া সমীচীন হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিন ও মুসলিম দেশগুলোর সমঝোতাই এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ ফিলিস্তিনদের দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে গঠিত পিএলও ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে লড়াই থামিয়ে দিয়ে ২৩৯০ বর্গকিলোমিটারের পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন সরকার গঠন করেছে। অন্যদল হামাস শান্তিচুক্তি না মানলেও তাদের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রিত মাত্র ৩৬০ বর্গকিলোমিটারের গাজা উপত্যকা অনেকটা ইসরায়েল দ্বারা অবরুদ্ধ, ইসরায়েলের বাধার কারণে হামাসকে কেউ প্রকাশ্যে অস্ত্র সরবরাহ করতেও পারে না। জর্ডান এবং মিসর বহু বছর আগেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি আরও কয়েকটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে, আরও কয়েকটি দেশ গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।

এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যোদ্ধা শুধু পৃথিবীর সাধারণ মুসলমান ও হামাস। পৃথিবীব্যাপী সাধারণ মুসলমানরা বিগত ৭৩ বছর যাবত প্রতিদিন নামাজের মোনাজাতে, প্রতি শুক্রবারে, ইদের নামাজে ইহুদিদের ধ্বংস আর ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই ‘অভিশপ্ত’ ইহুদি জাতির রাষ্ট্র ইসরায়েলের অস্তিত্ব মুছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ইসরায়েল রাষ্ট্র ও ইহুদিদের ভূমধ্যসাগরে ডুবানোর অবাস্তব স্বপ্ন বাদ দেয়াই শ্রেয়। আর যদি ইসরায়েলের অস্তিত্ব মুছে দিতে হয় তাহলে মুসলমানদের আধুনিক জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ হতে হবে, অস্ত্র তৈরির কৌশল জানতে হবে, অথবা ঈসা নবী ও ইমাম মেহেদীর আসা পর্যন্ত মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com

রবিবার, ৩০ মে ২০২১ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪২

প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

মিসর, কাতার ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতির পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা এবং তাদের পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ থেমে গেছে। ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী নিজেদের এলাকা থেকে গাজায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেও পূর্বের অন্যান্য যুদ্ধের মতো ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করার চেষ্টা তারা করেনি। ফিলিস্তিনের দুটি অংশ- জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা, মধ্যখানে ইসরায়েল। এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের ওপর দিয়ে দুই এলাকার লোকদের চলাচল করতে হয়, তবে ইসরায়েলি পুলিশের শারীরিক তল্লাশি ছাড়া নয়। জর্ডান নদী ও ডেড সী’র পশ্চিম তীরের বিস্তীর্ণ এলাকাটি শাসন করছে ফিলিস্তিনের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল ফাতাহ বা পিএলও গোষ্ঠী। ইয়াসির আরাফাতের এই রাজনৈতিক দলটি সশস্ত্র সংগ্রাম পরিহার করে ১৯৯৩ সনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে। ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরের বিস্তৃর্ণ এলাকা শাসন করছেন, পৃথিবীর শতাধিক দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশেও তাদের দূতাবাস রয়েছে। কিন্তু গাজার ফিলিস্তিন দল হামাস এই শান্তি চুক্তি মানে না। অতি সম্প্রতি এই হামাসই ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।

চমকপ্রদ বিষয় হলো-বর্তমান ফিলিস্তিন এলাকায় জেরুজালেম শহরটি মুসলমান, খ্রিস্টান এবং ইহুদি- এই তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছেই পবিত্র। নবী ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমান- এই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পিতা। ইরাকে জন্মগ্রহণকারী ইব্রাহীম (আ.) ইরাক থেকে কেনান বা জেরুজালেমে হিজরত করেন এবং কেনানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নবী ইব্রাহীম (আ.) ও স্ত্রী সারার পুত্র হযরত ইসহাক (আ.) এবং তাঁর পুত্র ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধর হচ্ছে বনি ইসরায়েল বা ইহুদিরা; ইমরান, মুসা, হারুন, দাঊদ, সুলায়মান, ঈসা প্রমুখ নবীগণ ছিলেন ইবরাহীমের পুত্র ইসহাকের বংশধর। অপরপক্ষে ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশে জন্ম নেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ইসমাঈল (আ.) জন্ম কেনানে হলেও মা হাজেরাসহ তাঁকে মক্কায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।

কেনান বা জেরুজালেমে যে আল আকসা মসজিদ বা উপসনালয় নিয়ে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ তা প্রথম নির্মাণ করেন ফেরেস্তাগণ, পরে আদম (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। নূহ (আ.)-এর প্লাবনে উপসনালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইব্রাহীম (আ.) আবার তা পুনর্নির্মাণ করেন। তবে ইহুদিদের মতে দাউদ (আ.)-এর পুত্র নবী সুলায়মান (আ.) ইহুদিদের জন্য প্রথম এই উপাসনালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন; পরবর্তীতে এই উপসনালয়ের ধ্বংস এবং পুনর্নির্মাণ চলতেই থাকে। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম মুসলমানদের অধীনে এলে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ইহুদিদের উপসনালয়ের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি মসজিদ তৈরি করেন। এই মসজিদটি পরবর্তীতে ভূমিকম্পে দুইবার ধ্বংস হয়ে গেলেও তৎকালীন মুসলিম শাসকরা তা পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৯৯ সনে খ্রিস্টান ক্রুসেডার বাহিনী জয়ী হলে তারা মসজিদসহ পুরো এলাকাকে প্রাসাদ এবং গির্জা হিসেবে ব্যবহার করেন। ১১৮৭ সনে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (র.) পুনরায় জেরুজালেম দখল করেন এবং গির্জাকে মসজিদে পরিবর্তন করেন। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা জেরুজালমসহ ফিলিস্তিন এলাকা দখল করে নেয় এবং ১৯১৭ সন পর্যন্ত তা নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর ব্রিটেন ‘লিগ অব নেশস’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।

মন্দির, গির্জা, মসজিদ যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন এই স্থানে শুক্রবারে মুসলমান, শনিবারে ইহুদি এবং রোববারে খ্রিস্টানেরা সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করে থাকে। ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানগণ এই পবিত্র স্থানটি সম্পূর্ণভাবে নিজেদের জন্য এককভাবে পেতে চায়। কারণ আল আকসা মসজিদ মুসলমানদের প্রথম কেবলা এবং এখানে মুসলমানদের কুব্বাত আস সাখরা বা ইহুদিদের ডোম অফ দ্য রকের নিচে যে পাথরটি রয়েছে তাতে ভর রেখে হযরত মুহাম্মদ (সা.) উর্ধারোহন করেছিলেন। অন্যদিকে এই পাথরটিই ইহুদিদের মূল কিবলা; হযরত ওমর (রা.)-এর মসজিদ নির্মাণের পূর্বে সেখানে যে উপসনালয়টি ছিল সেই উপসনালয়টি ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানেরা ধ্বংস করলেও তার একটি দেয়াল এখনও অবশিষ্ট রয়েছে এবং এই দেয়ালটিই এখন ইহুদিদের উপসনার একমাত্র স্থান। এছাড়াও ইহুদি, খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত নবী মুসা (আ.) সহ বহু নবীর কবর এই শহরে; এই শহরেই খ্রিস্টানদের যীশু খ্রিস্ট বা মুসলমানদের ঈসা নবী (আ.)’র জন্ম এবং এখানেই তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের নির্বিচারে হত্যার পর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র করার দাবি উঠে। এই দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিন এলাকাটি দুই ভাগ করে ফিলিস্তিন ও ইহুদিদের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্র করার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ফিলিস্তিন ও আরব মুসলমানরা এই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানালেও ইহুদিরা জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫৫% ভূমিতে ১৯৪৮ সনের ১৪ মে তারিখে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬৪টি দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, তাদের পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম এবং তাঁর বংশধরদের জন্য তোরাহ ধর্মগ্রন্থে যে পবিত্রভূমির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেই পবিত্র ভূমিতেই ইহুদিরা তাদের ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জেরুজালেম এখন ইসরায়েলের দখলে থাকলেও উপসনালয়ের স্থানটি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিজেদের হাতে রাখেনি, মুসলমানদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। এইজন্য এখনও মুসলমানরা আল-আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।

সারা পৃথিবীর সাধারণ মুসলমানের অনুভূতি হচ্ছে, সব মুসলিম দেশ এক হয়ে ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে দিক। এই চেষ্টাও কয়েকবার হয়েছে। ১৯৪৮ সনের ১৪ মে তারিখে মাত্র ৭ লাখ অধিবাসী নিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা দেয়ার পরদিন ৫টি মুসলিম দেশ মিসর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে, কিন্তু হেরে যায়, ইসরায়েল আরও ভূমি দখল করে নেয়। ১৯৫৬ সনে মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের ক্ষমতায় এসেই ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলের জন্য সুয়েজ খাল বন্ধ ঘোষণা করলে ইসরায়েল মিশর আক্রমণ করে মিসরের ভেতরে ঢুকে যায়। আন্তর্জাতিক চাপে ইসরায়েল যুদ্ধ থামিয়ে দখল করা মিশরের ভূমি ছেড়ে দেয়। ১৯৬৭ সনে মিসর, সিরিয়া, ইরাক এবং জর্ডান পুনরায় ইসরায়েল আক্রমণ করে, কিন্তু তারা মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে পরাজিত হয়, ইসরায়েল গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডানের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। ১৯৭৩ সনে সিরিয়া এবং মিসর আবার একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে; মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত যুদ্ধে হেরে গিয়ে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি, কিন্তু আমেরিকার বিরুদ্ধে নয়’।

কোন মুসলিম দেশ আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে বলে মনে হয় না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ানকে নিয়ে অনেক মুসলমান নতুন করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু ১৯৪৯ সনে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম মুসলিম দেশ হচ্ছে তুরস্ক। ২০০৫ সনে এরদোয়ান ব্যবসায়ীদের এক বিরাট বহর নিয়ে ইসরায়েল সফর করেন। ২০১৮ সনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেও ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের এখনও ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন আঁতাত নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। মালয়েশীয়া দূর থেকে কড়া কড়া বিবৃতি দিলেও তাদের যুদ্ধ করার সুযোগ নেই। ইরান কিছুটা সক্রিয় হলেও ইসরায়েলের সঙ্গে এককভাবে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামার আর্থিক ও সামরিক শক্তি তাদের নেই। পাকিস্তানের ভাড়াটে সেনারা ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ নামে এক অপারেশনে জর্ডানে শত শত ফিলিস্তিনকে গুলি করে মেরেছে, পিটিয়ে জর্ডান থেকে তাড়ানোর পুরস্কার হিসেবে ভাড়াটে সেনাদলের প্রধান জিয়াউল হক জর্ডান থেকে খেতাব পেয়েছিলেন। জিয়াউল হককে পাকিস্তানে ‘ফিলিস্তিন হন্তারক’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরায়েলের গোলার আঘাতে আহত ফিলিস্তিনরা এবার কোন চিকিৎসা পায়নি, কারণ মিসরের জান্তা সরকার তাদের দেশে ফিলিস্তিনদের প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। সিভিল ওয়ারে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ইসরায়েলকে তাদের নিজ স্বার্থে ফিলিস্তিনদের সঙ্গে সমঝোতায় আসা উচিত। কারণ যে ফিলিস্তিনরা শুধু পাথর ছুড়ে এক সময় ইসরায়েলি সেনাদের মোকাবিলা করত, তারা আজ হাজার হাজার রকেট ছুড়ছে, তাদের হামলার ভয় ইসরায়েলকে সব সময় আতঙ্কিত রাখে। এছাড়াও ফিলিস্তিনদের হামলা রুখতে ইসরায়েলকে সর্বদা যুদ্ধাবস্থায় থাকতে হয়, প্রতিরক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফিলিস্তিদের রকেট হামলা রোধ করতে ইসরায়েল যে ‘আয়রন ডোম’ তৈরি করেছে তা দিয়ে প্রতিটি নিক্ষিপ্ত গোলা আকাশে ধ্বংস করতে প্রায় ৮০ হাজার ডলার বা ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। সর্বোপরি ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ২০% লোক ফিলিস্তিন মুসলমান, বাইরের ফিলিস্তিনিরা আক্রান্ত হলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিন মুসলমান ও কট্টর ইহুদিদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়; বর্তমানে এই সংঘাত ইসরায়েলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তিশালী ইসরায়েলকে তাদের স্বস্তি এবং শান্তির জন্য তাই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতা করে ১৯৬৭ সনের পূর্বের সীমানায় ফেরত যাওয়া সমীচীন হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিন ও মুসলিম দেশগুলোর সমঝোতাই এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ ফিলিস্তিনদের দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে গঠিত পিএলও ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে লড়াই থামিয়ে দিয়ে ২৩৯০ বর্গকিলোমিটারের পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন সরকার গঠন করেছে। অন্যদল হামাস শান্তিচুক্তি না মানলেও তাদের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রিত মাত্র ৩৬০ বর্গকিলোমিটারের গাজা উপত্যকা অনেকটা ইসরায়েল দ্বারা অবরুদ্ধ, ইসরায়েলের বাধার কারণে হামাসকে কেউ প্রকাশ্যে অস্ত্র সরবরাহ করতেও পারে না। জর্ডান এবং মিসর বহু বছর আগেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি আরও কয়েকটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে, আরও কয়েকটি দেশ গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।

এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যোদ্ধা শুধু পৃথিবীর সাধারণ মুসলমান ও হামাস। পৃথিবীব্যাপী সাধারণ মুসলমানরা বিগত ৭৩ বছর যাবত প্রতিদিন নামাজের মোনাজাতে, প্রতি শুক্রবারে, ইদের নামাজে ইহুদিদের ধ্বংস আর ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই ‘অভিশপ্ত’ ইহুদি জাতির রাষ্ট্র ইসরায়েলের অস্তিত্ব মুছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ইসরায়েল রাষ্ট্র ও ইহুদিদের ভূমধ্যসাগরে ডুবানোর অবাস্তব স্বপ্ন বাদ দেয়াই শ্রেয়। আর যদি ইসরায়েলের অস্তিত্ব মুছে দিতে হয় তাহলে মুসলমানদের আধুনিক জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ হতে হবে, অস্ত্র তৈরির কৌশল জানতে হবে, অথবা ঈসা নবী ও ইমাম মেহেদীর আসা পর্যন্ত মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com