ভ্যাটের গোয়েন্দা অভিযান বন্ধের দাবি দোকান মালিক সমিতির

যতদিন সব প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপন করা না হচ্ছে ততদিন ভ্যাট গোয়েন্দার জরিপ সংক্রান্ত অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা সেল গঠনের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।

গতকাল রাজধানীর মগবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, আবুল কাইয়ুম তালুকদার, কামরুল হাসান বাবু, রেজাউল ইসলাম মন্টু, যুগ্ম-মহাসচিব হারুন আর রশিদ প্রমুখ।

সম্প্রতি চারটি জরিপ টিম গঠন করে রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারের বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অভিযানে বেরিয়ে এসেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। সর্বশেষ ২৭ মে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ৮টি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা দল তথ্য পায় এসব মার্কেটের এক হাজার ২৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০৪টিই ভ্যাট দেয় না।

চলমান এই অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট সংগ্রহে প্রতিষ্ঠান ও দোকানে ইএফডি মেশিন স্থান করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেও ইএফডি মেশিন স্থান করা সম্ভব হয়নি। ইএফডি মেশিনবিহীন দোকান থেকে ভ্যাট সংগ্রহে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও দোকানিদের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানে অনেক অর্থনৈতিক অনিয়ম সংগঠিত হচ্ছে, যা সরকার ও ব্যবসায়ী কারও জন্য কল্যাণকর নয়।

তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত যতটুকু দেখতে পেয়েছি, সব দোকান ও প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করে সমভাবে ভ্যাট সংগ্রহ করা অনেক সময়ের ব্যাপার। আমাদের আশঙ্কা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ইএফডি মেশিন কোন এক সময় তার কার্যকারিতা হারাবে, যে রূপ হারিয়েছে ইসিআর মেশিন। এ অবস্থায় ভ্যাট সংগ্রহ আইন বাস্তবায়নে অসম ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিরসনে যতদিন সব দোকানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা না হয়, ততদিন ভ্যাট উৎসে আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সময় ভ্যাট গোয়েন্দার চলমান অভিযান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন সব দোকানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা না হচ্ছে, ততদিন ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান বন্ধ রাখতে হবে। আমরা ভ্যাট দিতে চাই। ভ্যাট দিতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কারণ ভ্যাট মূলত দেন ভোক্তারা।

হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় এক বছর ছয় মাস ধরে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। এ সময়ের মধ্যে তিনটি ঈদ, দুইটি পহেলা বৈশাখ এবং একটি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৬০ শতাংশ পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। এমন অবস্থায় ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা এবং মূলধন সংকট দেখা দিয়েছে। ৬০ শতাংশ পুঁজি হারানোর পর অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ পুঁজি নিয়ে কোন অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব না। দিনে দিনে পুঁজি হারানোর পরিমাণ বাড়তে থাকবে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে মূলধন সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। সরকার এসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণ ঘোষণা করেছিল। বিভিন্ন ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মাত্র পাঁচ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।’

এ সময় দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি তুলে ধরেন হেলাল উদ্দিন। এগুলো হলো- এসএমই খাতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণের মধ্যে অবিতরণ করা ১৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকার সঙ্গে নতুন আরও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ করা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা শাখা (সেল) গঠন ও বাস্তবভিত্তিক নীতি প্রণয়ন করা এবং নতুন ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নে অসম ব্যবস্থা দূর করা ও ভ্যাট সংগ্রহে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আগামী ১-২ বছর পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আরোপ করা সব ভ্যাট স্থগিত করে উৎসে আদায়ের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে দুই বছরের মধ্যে সব দোকান ও প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

ভ্যাটের গোয়েন্দা অভিযান বন্ধের দাবি দোকান মালিক সমিতির

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

যতদিন সব প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপন করা না হচ্ছে ততদিন ভ্যাট গোয়েন্দার জরিপ সংক্রান্ত অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা সেল গঠনের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।

গতকাল রাজধানীর মগবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, আবুল কাইয়ুম তালুকদার, কামরুল হাসান বাবু, রেজাউল ইসলাম মন্টু, যুগ্ম-মহাসচিব হারুন আর রশিদ প্রমুখ।

সম্প্রতি চারটি জরিপ টিম গঠন করে রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারের বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অভিযানে বেরিয়ে এসেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। সর্বশেষ ২৭ মে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের ৮টি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা দল তথ্য পায় এসব মার্কেটের এক হাজার ২৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০৪টিই ভ্যাট দেয় না।

চলমান এই অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট সংগ্রহে প্রতিষ্ঠান ও দোকানে ইএফডি মেশিন স্থান করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেও ইএফডি মেশিন স্থান করা সম্ভব হয়নি। ইএফডি মেশিনবিহীন দোকান থেকে ভ্যাট সংগ্রহে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও দোকানিদের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানে অনেক অর্থনৈতিক অনিয়ম সংগঠিত হচ্ছে, যা সরকার ও ব্যবসায়ী কারও জন্য কল্যাণকর নয়।

তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত যতটুকু দেখতে পেয়েছি, সব দোকান ও প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করে সমভাবে ভ্যাট সংগ্রহ করা অনেক সময়ের ব্যাপার। আমাদের আশঙ্কা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ইএফডি মেশিন কোন এক সময় তার কার্যকারিতা হারাবে, যে রূপ হারিয়েছে ইসিআর মেশিন। এ অবস্থায় ভ্যাট সংগ্রহ আইন বাস্তবায়নে অসম ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিরসনে যতদিন সব দোকানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা না হয়, ততদিন ভ্যাট উৎসে আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সময় ভ্যাট গোয়েন্দার চলমান অভিযান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন সব দোকানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা না হচ্ছে, ততদিন ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান বন্ধ রাখতে হবে। আমরা ভ্যাট দিতে চাই। ভ্যাট দিতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কারণ ভ্যাট মূলত দেন ভোক্তারা।

হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় এক বছর ছয় মাস ধরে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। এ সময়ের মধ্যে তিনটি ঈদ, দুইটি পহেলা বৈশাখ এবং একটি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৬০ শতাংশ পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। এমন অবস্থায় ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা এবং মূলধন সংকট দেখা দিয়েছে। ৬০ শতাংশ পুঁজি হারানোর পর অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ পুঁজি নিয়ে কোন অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব না। দিনে দিনে পুঁজি হারানোর পরিমাণ বাড়তে থাকবে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে মূলধন সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। সরকার এসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণ ঘোষণা করেছিল। বিভিন্ন ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মাত্র পাঁচ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।’

এ সময় দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি তুলে ধরেন হেলাল উদ্দিন। এগুলো হলো- এসএমই খাতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণের মধ্যে অবিতরণ করা ১৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকার সঙ্গে নতুন আরও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ করা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা শাখা (সেল) গঠন ও বাস্তবভিত্তিক নীতি প্রণয়ন করা এবং নতুন ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নে অসম ব্যবস্থা দূর করা ও ভ্যাট সংগ্রহে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আগামী ১-২ বছর পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আরোপ করা সব ভ্যাট স্থগিত করে উৎসে আদায়ের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে দুই বছরের মধ্যে সব দোকান ও প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা।