ইয়াসে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ লবণাক্ততার শঙ্কায় কৃষক

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পুর্ণিমার অতিরিক্ত জোয়ারের প্রভাবে ভেরিবাঁধ ভেঙ্গে তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম এখন হুমকির মুখে লবণ পানি প্রবেশের আশঙ্কায় রয়েছে সাধারণ কৃষক। জমির জটিলতায় সরকারিভাবে সংস্কারের বরাদ্দ করা টাকা চলে গেছে ফেরত। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে মাথা ব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। জমি অধিগ্রহণ একোয়ারের দাবি স্থানীয়দের। অধিক গুরুপূর্ণ স্থানে বাঁধ সংস্কারের সমস্যা এখন রয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পঞ্চকরণ ইউনিয়নের দেবরাজ এলাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ৬শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পড়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব কেটে গেলেও রয়ে গেছে ছাপ। দরগাবাড়ি, আমুরডাঙ্গা, রাস্তা আলী বাড়িসহ ৭-৮টি স্থানে ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন সময় জোয়ারের অতিরিক্ত লবণ পানি প্রবেশ করে ফসলের ক্ষতিস্বাধনের আশঙ্কায় কৃষক। দেবরাজ কুমারিয়া জোলা, পঞ্চকরণ একইভাবে সিমান্তবর্তী তেলিগাতি ইউনিয়নের মিস্ত্রীডাঙ্গা, হেড়মা বাজার স্লুইজগেট এলাকা ও হরগাতি স্লুইজগেট এলাকায় ৬টি স্থানে ভেরিবাঁধ ভেঙ্গে ইট সোলিং রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। খানাখন্দে পরিণত হয়ে চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে রাস্ত ঘাট ভোগান্তিতে গ্রামবাসী।

হুমকির মুখেও রয়েছে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন লবণাক্ততার আশঙ্কায়। পঞ্চকরণ দেবরাজ কুমারিয়াজোলা মহিষচরনী, খারইখালী, তেলিগাতি, ঢুলিগাতি, হেড়মা বাজার, মিস্ত্রীডাঙ্গা, চাপড়ী মালমগাছাসহ ২০টি গ্রামের সাধারণ কৃষক রয়েছে আতঙ্কে। লবণ পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙন কবলিত দেবরাজে ওয়াপদা ভেরিবাঁধে গিয়ে দেখা গেছে মাটি কেটে মেরামত করছে স্থানীয়রা।

কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ভেরিবাঁধের এ জমির মালিক পার্শ্বর্তী রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তালুকদার নামজুল কবির জিলাম। তার অর্থায়নে শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে। সরকারিভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নয়।

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান তালুকদার নামজুল কবির জিলাম বলেন, ইতোপূর্বে ২ বারে ১৫ বিঘা জমি স্বেচ্ছায় দেয়া হয়েছে তা নদীগর্ভে ভেঙ্গে গেছে। গতবছরে জেলা প্রশাসক পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা প্রকৌশলী জমি পরিমাপ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ফাইল প্রেরণের নির্দেশনা থাকলেও সেটির কোন হদিস নেই। তিনিসহ স্থানীয় জমি মালিকরা একোয়ারের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ৬শ’ মিটার ভেরিবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেনসহ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। স্থায়ীভাবে দেবরাজ বাজার হয়ে সোনাখালী বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটার স্থায়ী ভেরিবাঁধের জোর দাবি জানান তিনি।

এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ইয়াসের প্রভাবে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে ক্ষতির নিরুপণ তালিকা করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ঝড়ের পূর্ব থেকেই সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে বলইবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রেণীখালী এলাকায়। দেবরাজে ৬শ’ মিটার ভেরিবাঁধাদের একটি অংশ ব্যক্তি মালিকানা জমি।

গতবছরে সংস্কারের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও জমির জটিলার জন্য কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, নিবাহী কর্মকর্তা অবহিত রয়েছে। ছোলমবাড়িয়া হয়ে দেবরাজ পর্যন্ত কোথাও কোথাও ভেঙ্গে পড়া ও দুর্বল হয়ে যাওয়া বাঁধ সংস্কারের ১০ কিলোমিটারের কাজ নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

ইয়াসে নড়বড়ে বেড়িবাঁধ লবণাক্ততার শঙ্কায় কৃষক

প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

image

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : পাউবোর বেড়িবাঁধ মেরামতে ব্যস্ত স্থানীয়রা -সংবাদ

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পুর্ণিমার অতিরিক্ত জোয়ারের প্রভাবে ভেরিবাঁধ ভেঙ্গে তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম এখন হুমকির মুখে লবণ পানি প্রবেশের আশঙ্কায় রয়েছে সাধারণ কৃষক। জমির জটিলতায় সরকারিভাবে সংস্কারের বরাদ্দ করা টাকা চলে গেছে ফেরত। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে মাথা ব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। জমি অধিগ্রহণ একোয়ারের দাবি স্থানীয়দের। অধিক গুরুপূর্ণ স্থানে বাঁধ সংস্কারের সমস্যা এখন রয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পঞ্চকরণ ইউনিয়নের দেবরাজ এলাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ৬শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পড়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব কেটে গেলেও রয়ে গেছে ছাপ। দরগাবাড়ি, আমুরডাঙ্গা, রাস্তা আলী বাড়িসহ ৭-৮টি স্থানে ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন সময় জোয়ারের অতিরিক্ত লবণ পানি প্রবেশ করে ফসলের ক্ষতিস্বাধনের আশঙ্কায় কৃষক। দেবরাজ কুমারিয়া জোলা, পঞ্চকরণ একইভাবে সিমান্তবর্তী তেলিগাতি ইউনিয়নের মিস্ত্রীডাঙ্গা, হেড়মা বাজার স্লুইজগেট এলাকা ও হরগাতি স্লুইজগেট এলাকায় ৬টি স্থানে ভেরিবাঁধ ভেঙ্গে ইট সোলিং রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। খানাখন্দে পরিণত হয়ে চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে রাস্ত ঘাট ভোগান্তিতে গ্রামবাসী।

হুমকির মুখেও রয়েছে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন লবণাক্ততার আশঙ্কায়। পঞ্চকরণ দেবরাজ কুমারিয়াজোলা মহিষচরনী, খারইখালী, তেলিগাতি, ঢুলিগাতি, হেড়মা বাজার, মিস্ত্রীডাঙ্গা, চাপড়ী মালমগাছাসহ ২০টি গ্রামের সাধারণ কৃষক রয়েছে আতঙ্কে। লবণ পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙন কবলিত দেবরাজে ওয়াপদা ভেরিবাঁধে গিয়ে দেখা গেছে মাটি কেটে মেরামত করছে স্থানীয়রা।

কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ভেরিবাঁধের এ জমির মালিক পার্শ্বর্তী রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তালুকদার নামজুল কবির জিলাম। তার অর্থায়নে শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে। সরকারিভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নয়।

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান তালুকদার নামজুল কবির জিলাম বলেন, ইতোপূর্বে ২ বারে ১৫ বিঘা জমি স্বেচ্ছায় দেয়া হয়েছে তা নদীগর্ভে ভেঙ্গে গেছে। গতবছরে জেলা প্রশাসক পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা প্রকৌশলী জমি পরিমাপ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ফাইল প্রেরণের নির্দেশনা থাকলেও সেটির কোন হদিস নেই। তিনিসহ স্থানীয় জমি মালিকরা একোয়ারের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ৬শ’ মিটার ভেরিবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেনসহ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। স্থায়ীভাবে দেবরাজ বাজার হয়ে সোনাখালী বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটার স্থায়ী ভেরিবাঁধের জোর দাবি জানান তিনি।

এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ইয়াসের প্রভাবে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে ক্ষতির নিরুপণ তালিকা করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ঝড়ের পূর্ব থেকেই সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে বলইবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রেণীখালী এলাকায়। দেবরাজে ৬শ’ মিটার ভেরিবাঁধাদের একটি অংশ ব্যক্তি মালিকানা জমি।

গতবছরে সংস্কারের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও জমির জটিলার জন্য কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, নিবাহী কর্মকর্তা অবহিত রয়েছে। ছোলমবাড়িয়া হয়ে দেবরাজ পর্যন্ত কোথাও কোথাও ভেঙ্গে পড়া ও দুর্বল হয়ে যাওয়া বাঁধ সংস্কারের ১০ কিলোমিটারের কাজ নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।