নকল হচ্ছে করোনাসহ নামিদামি ওষুধ

চলছে অভিযান

অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা করোনা মহামারীতে ব্যবহৃত ওষুধসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল করছে। বেশি দামে বিক্রির জন্য মরফিন ও প্যাথেডিন অবৈধভাবে দোকানে বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেট ও যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ উদ্ধার করেছে।

গতকাল এ ঘটনায় জড়িত এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ ওষুধ ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ওষুধের নকল মোড়ক ও প্যাকেট তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে বলে র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান ও র‌্যাব-১০-এর একটি টিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের নামিদামি ওষুধের নকল মোড়ক ও প্যাকেট তৈরির অনুমোদনহীন কাওয়ান এন্টারপ্রাইজ কোম্পানিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও দেশ ল্যাবরেটরিজ (ভেষজ) কোম্পানিকে ১ লাখ টাকাসহ মোট ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।

অভিযানের সময় নকল মোড়ক ও প্যাকেট তৈরি করার ৭০টি ডাইস জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাবের তথ্যে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ নিরাময়ে ব্যবহৃত ওষুধের পাশাপাশি অন্য ওষুধসমূহের নকল মোড়ক ও প্যাকেট সরবরাহ করছিল এ চক্র।

র‌্যাব-১০-এর সহকারী পরিচালক এনায়েত কবির সোহেবের দেয়া তথ্যমতে, গত শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পুরান ঢাকার মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটের একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে ৪৫ পিস প্যাথেডিন, ২৩ অ্যাম্পল জি মরফিন, ৩৭৬৪ পিস বিক্রয় নিষিদ্ধ বিদেশি ওষুধসহ কালোবাজারি চক্রের সদস্য মো. নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত নাসির র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সে পেশাদার ওষুধ চোরাকারবারি চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্যাথেডিন, বিক্রয় নিষিদ্ধ বিদেশি কোম্পানির ওষুধ কালোবাজারি ও চোরাচালানির মাধ্যমে সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ওষুধের দোকানে সরবরাহ করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃত নাসিরের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওষুধ ব্যবসায়ী নেতা জানান, ওষুধ অহরহ নকল হচ্ছে। কেউ গ্রেপ্তার হলে কিছুদিন সাজা খেটে বেরিয়ে এসে আবার ওষুধ নকল করছে। মিটফোর্ড পাইকারি কেমিক্যাল মার্কেট থেকে ওষুধের কাঁচামাল কিনে নকল ভেজাল ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে খোঁজখবর নিয়ে এর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নকলবাজদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক সংবাদকে বলেন, নকল ওষুধ রোগীর চিকিৎসায় কাজ করবে না বরং বিষ সৃষ্টি করে রোগীর জীবন-মরণ সমস্যাও হতে পারে। নতুন করে করোনার ওষুধ ও ওষুধের মোড়ক নকল করাও বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যারা নকল করে তাদের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন কারাদন্ড) হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন, যেসব দুর্নীতিবাজ ওষুধ ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ নকল করে বিক্রি করছে। তাদের কঠিন সাজা হওয়া উচিত আর নকল কারখানায় সিলগালা ও কমপক্ষে দুই বছর জেল ও জরিমানা হওয়া দরকার।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

নকল হচ্ছে করোনাসহ নামিদামি ওষুধ

চলছে অভিযান

বাকী বিল্লাহ

অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা করোনা মহামারীতে ব্যবহৃত ওষুধসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল করছে। বেশি দামে বিক্রির জন্য মরফিন ও প্যাথেডিন অবৈধভাবে দোকানে বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেট ও যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ উদ্ধার করেছে।

গতকাল এ ঘটনায় জড়িত এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ ওষুধ ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ওষুধের নকল মোড়ক ও প্যাকেট তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে বলে র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান ও র‌্যাব-১০-এর একটি টিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের নামিদামি ওষুধের নকল মোড়ক ও প্যাকেট তৈরির অনুমোদনহীন কাওয়ান এন্টারপ্রাইজ কোম্পানিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও দেশ ল্যাবরেটরিজ (ভেষজ) কোম্পানিকে ১ লাখ টাকাসহ মোট ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।

অভিযানের সময় নকল মোড়ক ও প্যাকেট তৈরি করার ৭০টি ডাইস জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাবের তথ্যে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ নিরাময়ে ব্যবহৃত ওষুধের পাশাপাশি অন্য ওষুধসমূহের নকল মোড়ক ও প্যাকেট সরবরাহ করছিল এ চক্র।

র‌্যাব-১০-এর সহকারী পরিচালক এনায়েত কবির সোহেবের দেয়া তথ্যমতে, গত শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পুরান ঢাকার মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটের একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে ৪৫ পিস প্যাথেডিন, ২৩ অ্যাম্পল জি মরফিন, ৩৭৬৪ পিস বিক্রয় নিষিদ্ধ বিদেশি ওষুধসহ কালোবাজারি চক্রের সদস্য মো. নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত নাসির র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সে পেশাদার ওষুধ চোরাকারবারি চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্যাথেডিন, বিক্রয় নিষিদ্ধ বিদেশি কোম্পানির ওষুধ কালোবাজারি ও চোরাচালানির মাধ্যমে সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ওষুধের দোকানে সরবরাহ করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃত নাসিরের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওষুধ ব্যবসায়ী নেতা জানান, ওষুধ অহরহ নকল হচ্ছে। কেউ গ্রেপ্তার হলে কিছুদিন সাজা খেটে বেরিয়ে এসে আবার ওষুধ নকল করছে। মিটফোর্ড পাইকারি কেমিক্যাল মার্কেট থেকে ওষুধের কাঁচামাল কিনে নকল ভেজাল ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে খোঁজখবর নিয়ে এর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নকলবাজদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক সংবাদকে বলেন, নকল ওষুধ রোগীর চিকিৎসায় কাজ করবে না বরং বিষ সৃষ্টি করে রোগীর জীবন-মরণ সমস্যাও হতে পারে। নতুন করে করোনার ওষুধ ও ওষুধের মোড়ক নকল করাও বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যারা নকল করে তাদের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন কারাদন্ড) হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন, যেসব দুর্নীতিবাজ ওষুধ ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ নকল করে বিক্রি করছে। তাদের কঠিন সাজা হওয়া উচিত আর নকল কারখানায় সিলগালা ও কমপক্ষে দুই বছর জেল ও জরিমানা হওয়া দরকার।