বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

রুকাইয়া মিজান মিমি

বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ। তামাক পাতায় থাকা নিকোটিন মানব শরীরে সরাসরি আঘাত হেনে নানাবিধ জটিল রোগ তৈরি করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ১৯৫৪ সালে ‘ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি’র গবেষণা মতে ‘ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।’ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তামাক পণ্যের এই ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রচার থাকলেও দিন দিন বেড়েই চলছে তামাক সেবনকারীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, পৃথিবীতে তামাকজনিত কারণে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয় এবং এক বছরে ৭০ লাখেরও অধিক মানুষ প্রাণ হারায়। তামাকের এ ক্ষতিকর দিক থেকে মানবজাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ৩১ মে আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালন করে আসছে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’।

বাংলাদেশেও তামাক এক আতঙ্কের নাম। পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষার যথার্থ অভাব, তামাকজাত পণ্যের সহজলভ্যতা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা, অনুকরণপ্রিয়তা, হতাশা-বেকারত্ব-মানসিক চাপ ও বন্ধুদের প্ররোচনাসহ নানা কারণে একের পর এক বেড়েই চলছে তামাক সেবনকারী মাত্রা। তাদের অধিকাংশই কিশোর ও তরুণ। তামাক সেবনের ফলে যেমন বেড়ে যাচ্ছে ফুসফুস, মুখ ও গলায় ক্যান্সার, হার্ট-ডিজিজ, স্ট্রোক, অ্যাথেরোসক্লেরেসিস, প্রান্তীয় রক্তনালির রোগের সম্ভাবনা, অকাল মৃত্যুর হার, ঠিক তেমনি বাড়ছে পারিবারিক কলহ ও অশান্তি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এসব রোগের চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। প্রতি বছর দেশে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

যে ধূমপান করে শুধু সেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তার আশপাশের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এর পরোক্ষ প্রভাব অনেক। তাদের শ্বাসনালি অপরিণত হওয়ায় সহজেই সেখানে ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, নিউমোনিয়াসহ নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, এর পরোক্ষ প্রভাবে প্রতি বছর বিশ্বে ৫ লাখ লোক মারা যাচ্ছেন। তামাক পণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্কহার বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন, পরিবহণ ও বিজ্ঞাপনে নিরুৎসাহিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরপরও দেশের পথে-প্রান্তে বিক্রি হচ্ছে তামাকজাত পণ্য। এসব পণ্যের সংকটাপন্ন ব্যবহার নির্মূলে সরকার, স্বেচ্ছাসেবী ও তরুণ সমাজকে একসঙ্গে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি কৌশলে তামাক পণ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচারও বন্ধ করা জরুরি।

[ লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ]

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

রুকাইয়া মিজান মিমি

বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ। তামাক পাতায় থাকা নিকোটিন মানব শরীরে সরাসরি আঘাত হেনে নানাবিধ জটিল রোগ তৈরি করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ১৯৫৪ সালে ‘ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি’র গবেষণা মতে ‘ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।’ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তামাক পণ্যের এই ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রচার থাকলেও দিন দিন বেড়েই চলছে তামাক সেবনকারীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, পৃথিবীতে তামাকজনিত কারণে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয় এবং এক বছরে ৭০ লাখেরও অধিক মানুষ প্রাণ হারায়। তামাকের এ ক্ষতিকর দিক থেকে মানবজাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ৩১ মে আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালন করে আসছে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’।

বাংলাদেশেও তামাক এক আতঙ্কের নাম। পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষার যথার্থ অভাব, তামাকজাত পণ্যের সহজলভ্যতা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা, অনুকরণপ্রিয়তা, হতাশা-বেকারত্ব-মানসিক চাপ ও বন্ধুদের প্ররোচনাসহ নানা কারণে একের পর এক বেড়েই চলছে তামাক সেবনকারী মাত্রা। তাদের অধিকাংশই কিশোর ও তরুণ। তামাক সেবনের ফলে যেমন বেড়ে যাচ্ছে ফুসফুস, মুখ ও গলায় ক্যান্সার, হার্ট-ডিজিজ, স্ট্রোক, অ্যাথেরোসক্লেরেসিস, প্রান্তীয় রক্তনালির রোগের সম্ভাবনা, অকাল মৃত্যুর হার, ঠিক তেমনি বাড়ছে পারিবারিক কলহ ও অশান্তি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এসব রোগের চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। প্রতি বছর দেশে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

যে ধূমপান করে শুধু সেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তার আশপাশের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এর পরোক্ষ প্রভাব অনেক। তাদের শ্বাসনালি অপরিণত হওয়ায় সহজেই সেখানে ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, নিউমোনিয়াসহ নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, এর পরোক্ষ প্রভাবে প্রতি বছর বিশ্বে ৫ লাখ লোক মারা যাচ্ছেন। তামাক পণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্কহার বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন, পরিবহণ ও বিজ্ঞাপনে নিরুৎসাহিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরপরও দেশের পথে-প্রান্তে বিক্রি হচ্ছে তামাকজাত পণ্য। এসব পণ্যের সংকটাপন্ন ব্যবহার নির্মূলে সরকার, স্বেচ্ছাসেবী ও তরুণ সমাজকে একসঙ্গে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি কৌশলে তামাক পণ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচারও বন্ধ করা জরুরি।

[ লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ]