কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে বরাদ্দ চায় যশোরবাসী

আগামী বাজেটে যশোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চায় এখানকার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত যশোরকে এগিয়ে নিতে হলে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে নতুন নতুন শিল্প করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ কারণে বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

যশোর ঐতিহ্যবাহী জেলা। প্রাচীন এ জেলায় সেইভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। অথচ এই জেলায় ব্যাপক পরিমাণ সবজি, ফুল, রেণুপোনাসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন হয়। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এসব ফসলের বেশিরভাগ নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। একইসঙ্গে যথাযথ মূল্য পাচ্ছেন না। এখানকার উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানোর উপযোগী। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে যশোর।

দীর্ঘদিন ধরে যশোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল, সবজি ও ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার দাবি রয়েছে, কিন্তু এই দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কথা বলেছেন যশোরের বিশিষ্টজনরা। তারা আসন্ন বাজেটে যশোরের জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন। কথা বলেছেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘যশোরের উন্নয়নে শিল্পের সম্প্রসারণ করা জরুরি। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করতে হবে। আর এজন্য আগামী বাজেটে শিল্প স্থাপনে বরাদ্দ দিতে হবে। এখানে কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরি করতে হবে। করতে হবে বিসিকের সম্প্রসারণ। যশোরে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করতে হবে।’

মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘যশোরে শিল্প শহর দেখতে চাই। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকা দরকার। করোনায় ব্যবসায়ীদের ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ সহজলভ্য করে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অনুদাননির্ভর বাজেট না করে অভ্যন্তরীণ বাজেটে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে হবে। ইপিজেড হচ্ছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত ধীরগতির। এটির দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যশোর শিল্পের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। এখানে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে, আর এটি করতে হলে বাজেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ থাকতে হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘সবজি প্রধান যশোরে অবিলম্বে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। চালু করতে হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মেডিকেল কলেজ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে হবে। এখানে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও আরও বেশি করে উন্নয়ন করতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার জন্য পৃথকভাবে উন্নয়নমূলক বাজেট হওয়া জরুরি। ভবদহ এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুর্দশার কারণ। ভবদহ সমস্যা সমাধানে আসন্ন বাজেটে আলাদা বরাদ্দ থাকতে হবে। যশোরের জন্য টেকসই উন্নয়নশীল বাজেট থাকতে হবে।’ এখানকার মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান অ্যাডভোকেট ফরিদ। তিনি যশোর-বেনাপোল রোডটি অবিলম্বে চার লেন করারও দাবি জানান।

নারী নেত্রী সুরাইয়া শরীফ বলেন, যশোর সীমান্তবর্তী জেলা। এখানকার মানুষ করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে। যশোরের যেসব মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের চিকিৎসার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানান এই নারী নেত্রী। তিনি করোনার টিকা বিনামূল্যে প্রদানে বাজেটে ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যশোর দরিদ্রপ্রবণ জেলার একটি। এখানকার অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। সরকার অনলাইনে পড়ালেখার ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু এখানকার গরিব মানুষের সন্তানদের অধিকাংশের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। যে কারণে তারা অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারছে না। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কিনে দেয়ার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানান সুরাইয়া শরীফ।

তিনি বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যে শিক্ষকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে। তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সুরাইয়া শরীফের বক্তব্য, ‘সরকার ভৈরব নদ খননে বরাদ্দ দিয়েছে। যার কিছু অংশ খনন হয়েছে। পুরো নদ খনন করে প্রবাহ তৈরি করতে না পারলে খননকৃত অংশ ফের ভরাট হয়ে যাবে। এ কারণে আগামী বাজেটে ভৈরব নদ খননে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।’

মঙ্গলবার, ০১ জুন ২০২১ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৯ শাওয়াল ১৪৪২

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে বরাদ্দ চায় যশোরবাসী

রুকুনউদ্দৌলাহ

আগামী বাজেটে যশোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চায় এখানকার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত যশোরকে এগিয়ে নিতে হলে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে নতুন নতুন শিল্প করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ কারণে বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

যশোর ঐতিহ্যবাহী জেলা। প্রাচীন এ জেলায় সেইভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। অথচ এই জেলায় ব্যাপক পরিমাণ সবজি, ফুল, রেণুপোনাসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন হয়। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এসব ফসলের বেশিরভাগ নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। একইসঙ্গে যথাযথ মূল্য পাচ্ছেন না। এখানকার উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানোর উপযোগী। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে যশোর।

দীর্ঘদিন ধরে যশোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল, সবজি ও ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার দাবি রয়েছে, কিন্তু এই দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কথা বলেছেন যশোরের বিশিষ্টজনরা। তারা আসন্ন বাজেটে যশোরের জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন। কথা বলেছেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘যশোরের উন্নয়নে শিল্পের সম্প্রসারণ করা জরুরি। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করতে হবে। আর এজন্য আগামী বাজেটে শিল্প স্থাপনে বরাদ্দ দিতে হবে। এখানে কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরি করতে হবে। করতে হবে বিসিকের সম্প্রসারণ। যশোরে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করতে হবে।’

মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘যশোরে শিল্প শহর দেখতে চাই। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকা দরকার। করোনায় ব্যবসায়ীদের ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ সহজলভ্য করে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অনুদাননির্ভর বাজেট না করে অভ্যন্তরীণ বাজেটে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে হবে। ইপিজেড হচ্ছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত ধীরগতির। এটির দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যশোর শিল্পের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। এখানে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে, আর এটি করতে হলে বাজেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ থাকতে হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘সবজি প্রধান যশোরে অবিলম্বে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। চালু করতে হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মেডিকেল কলেজ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে হবে। এখানে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও আরও বেশি করে উন্নয়ন করতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার জন্য পৃথকভাবে উন্নয়নমূলক বাজেট হওয়া জরুরি। ভবদহ এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুর্দশার কারণ। ভবদহ সমস্যা সমাধানে আসন্ন বাজেটে আলাদা বরাদ্দ থাকতে হবে। যশোরের জন্য টেকসই উন্নয়নশীল বাজেট থাকতে হবে।’ এখানকার মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান অ্যাডভোকেট ফরিদ। তিনি যশোর-বেনাপোল রোডটি অবিলম্বে চার লেন করারও দাবি জানান।

নারী নেত্রী সুরাইয়া শরীফ বলেন, যশোর সীমান্তবর্তী জেলা। এখানকার মানুষ করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে। যশোরের যেসব মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের চিকিৎসার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানান এই নারী নেত্রী। তিনি করোনার টিকা বিনামূল্যে প্রদানে বাজেটে ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যশোর দরিদ্রপ্রবণ জেলার একটি। এখানকার অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। সরকার অনলাইনে পড়ালেখার ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু এখানকার গরিব মানুষের সন্তানদের অধিকাংশের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। যে কারণে তারা অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারছে না। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কিনে দেয়ার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানান সুরাইয়া শরীফ।

তিনি বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যে শিক্ষকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে। তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সুরাইয়া শরীফের বক্তব্য, ‘সরকার ভৈরব নদ খননে বরাদ্দ দিয়েছে। যার কিছু অংশ খনন হয়েছে। পুরো নদ খনন করে প্রবাহ তৈরি করতে না পারলে খননকৃত অংশ ফের ভরাট হয়ে যাবে। এ কারণে আগামী বাজেটে ভৈরব নদ খননে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।’