বরাদ্দ ব্যয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে

প্রয়োজনের তুলনায় দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এমনিতেই কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন অনুযায়ী, একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ অথব মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয় সেটা জিডিপির এক শতাংশের নিচে বা মোট বাজেটের ৫ শতাংশেরও কম।

বরাদ্দ কম- এটা স্বাস্থ্য খাতের একটা সমস্যা। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই কম বরাদ্দও ব্যয় করতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ৯ মাসে মাত্র দুই হাজার ৫১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বাকি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরের বাকি এক মাসে যে তা ব্যয় করা সম্ভব হবে না সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ চলছে। এই মহামারির বছরেও স্বাস্থ্য খাত তাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কাজে লাগাতে পারেনি। বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করতে না পারার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। অতীতেও বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা অব্যয়িত থেকে গিয়েছে। আবার বরাদ্দের টাকা যতটুক ব্যয় করে সেখানে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের পেছনে সরকার খরচ করে মাত্র ৩০ ভাগ। বাকি ৭০ ভাগই খরচ হয় নাগরিকদের পকেট থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হলে রোগীদের খরচের বোঝা হয়তো কমানো সম্ভব হতো।

প্রশ্ন হচ্ছে, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না কেন। অভিযোগ আছে অর্থবছরের শেষভাগে গিয়ে পুরো বরাদ্দ ছাড় করা হয়। যে টাকা ব্যয় করার কথা বছরজুড়ে সেই টাকা অল্প সময়ে ব্যয় করা দূরূহ হয়ে পড়ে। বরাদ্দকৃত টাকা ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো জরুরি।

মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা মাঠপর্যায়ে বরাদ্দ ব্যয় করার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ব্যয় করার সক্ষমতাই যদি না থাকে তাহলে টাকা যথা সময়ে হাতে পেলেও কাজের কাজ কিছুই হবে না। আগে স্বাস্থ্য বিভাগকে ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল ঘাটতির কথা শোনা যায়। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।

আমরা চাই, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত টাকার পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার হোক। তাতে দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান আরও একটু উন্নত হবে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় ও ভোগান্তি কমবে বলে আশা করা যায়।

মঙ্গলবার, ০১ জুন ২০২১ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৯ শাওয়াল ১৪৪২

বরাদ্দ ব্যয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে

প্রয়োজনের তুলনায় দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এমনিতেই কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন অনুযায়ী, একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ অথব মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয় সেটা জিডিপির এক শতাংশের নিচে বা মোট বাজেটের ৫ শতাংশেরও কম।

বরাদ্দ কম- এটা স্বাস্থ্য খাতের একটা সমস্যা। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই কম বরাদ্দও ব্যয় করতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ৯ মাসে মাত্র দুই হাজার ৫১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বাকি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরের বাকি এক মাসে যে তা ব্যয় করা সম্ভব হবে না সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ চলছে। এই মহামারির বছরেও স্বাস্থ্য খাত তাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কাজে লাগাতে পারেনি। বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করতে না পারার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। অতীতেও বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা অব্যয়িত থেকে গিয়েছে। আবার বরাদ্দের টাকা যতটুক ব্যয় করে সেখানে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের পেছনে সরকার খরচ করে মাত্র ৩০ ভাগ। বাকি ৭০ ভাগই খরচ হয় নাগরিকদের পকেট থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হলে রোগীদের খরচের বোঝা হয়তো কমানো সম্ভব হতো।

প্রশ্ন হচ্ছে, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না কেন। অভিযোগ আছে অর্থবছরের শেষভাগে গিয়ে পুরো বরাদ্দ ছাড় করা হয়। যে টাকা ব্যয় করার কথা বছরজুড়ে সেই টাকা অল্প সময়ে ব্যয় করা দূরূহ হয়ে পড়ে। বরাদ্দকৃত টাকা ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো জরুরি।

মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা মাঠপর্যায়ে বরাদ্দ ব্যয় করার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ব্যয় করার সক্ষমতাই যদি না থাকে তাহলে টাকা যথা সময়ে হাতে পেলেও কাজের কাজ কিছুই হবে না। আগে স্বাস্থ্য বিভাগকে ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল ঘাটতির কথা শোনা যায়। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।

আমরা চাই, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত টাকার পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার হোক। তাতে দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান আরও একটু উন্নত হবে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় ও ভোগান্তি কমবে বলে আশা করা যায়।