হত্যার দায় স্বীকার স্ত্রী শিল্পী ৫ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর মহাখালীতে খ-িত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত ময়না মিয়ার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন শিল্পীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনাই পুলিশের কাছে তুলে ধরেছেন তিনি। তবে স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যার পরেও কোন অনুশোচনা কাজ করছে না তার মধ্যে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ময়না মিয়ার ৬ টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় ফাতেমা খাতুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বনানী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে আসামি ফাতেমার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরি তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ বলেন, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরেই এ নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। এর আগে বনানী ৪ নম্বর থানা রোডের ১৮ নম্বর বাসার একটি ইলেক্ট্রনিক কোম্পানির অফিস থেকে শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাশের টুকরোগুলো গুম করার পর শিল্পী আবারও স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিল্পী জানিয়েছেন, গত ২৩ মে থেকে ময়না মিয়া কড়াইল বস্তিতে শিল্পীর বাসায় ছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বন্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য আরও চরম আকার ধারণ করে। পরে ময়না মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফাতেমা। সে মোতাবেক দুই পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে এনে বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট জুসের সঙ্গে মিশিয়ে ময়না মিয়াকে খাওয়ানো হয় শুক্রবার রাতে। এতে ভিকটিম সারারাত ও পরের দিন অচেতন থাকার পর শনিবার সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পান। ঘুম থেকে উঠে আবার স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গেলে নিজেই বিছানায় লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় ময়না মিয়া পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমার ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তার মুখে ঢেলে দেন। এক পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে ময়নার দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। পরে ময়না মিয়ার বুকের উপরে বসে চাকু দিয়ে গলা কাটা শুরু করেন শিল্পী। কিছুটা গলা কাটার পর ময়না মিয়া ধস্তাধস্তি করে ফাতেমার হাতে খামছি ও কামড় বসিয়ে দেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা দু’জনই খাট থেকে নিচে পড়ে গেলে, ফাতেমা আবার ময়না মিয়ার বুকের উপর বসে গলার বাকি অংশ কেটে দেয়। এরপর ওইদিন সারারাত এবং পরদিন রোববার সারাদিন লাশ ওভাবেই ফ্লোরে পড়ে ছিল।

হারুন অর রশিদ আরও বলেন, হত্যার ২৪ ঘণ্টা পর রোববার রাতে ধারালো দা দিয়ে লাশ ৬ টুকরো করেন ফাতেমা। একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি রঙ্গের ড্রামে ও দুই হাত দুই পা একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। পরে ১৩০০ টাকা দিয়ে একটি রিকশা ভাড়া করে প্রথমে শরীরের মূল অংশ রাখা ড্রামটি ফেলা হয় মহাখালী কাঁচাবাজারসংলগ্ন এলাকায়, এরপর মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে দুই হাত দুই পা ভর্তি ব্যাগ ফেলে বাসায় চলে আসেন ফাতেমা। পরে খ-িত মস্তকটি একটি লাল ব্যাগে ভরে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের গুলশান লেকে ফেলে দেন। পরে তিনি বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন। ধারণা ছিল ময়না মিয়ার লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। সেও সন্দেহের বাইরে থাকবেন।

হত্যার বিচার চাইলেন ২য় স্ত্রী

স্বামীর লাশ বুঝে নিতে গতকাল ঢামেক মর্গে গিয়ে ময়না মিয়ার ২য় স্ত্রী নাসরিন আক্তার বলেন, ৮ বছর আগে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তখন ময়না ময়মনসিংহ এলাকায় সিএনজি চালাতো। রিহান (১৬ মাস) নামে তাদের একটি ছেলে রয়েছে। ২৩ মে কিশোরগঞ্জ থেকে সিলেটে গ্রামের বাড়ি যাওয়া কথা বলে সেখান থেকে চলে আসে ময়না। ওই দিন রাত থেকে মোবাইলে অনেকবার কল করেও ময়না মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। এরপর পুলিশের মাধ্যমে খবর পাই ময়না মিয়া ১ম স্ত্রীর হাতে খুন হয়েছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই বলেও জানান নাসরিন আক্তার। প্রসঙ্গত, গত রোববার দিবাগত রাতে মহাখালী আমতলী সড়ক থেকে ময়না মিয়ার মাথা, হাত, পা ছাড়া গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। পরে একইদিন রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে কাটা দুই হাত ও পা উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে মহাখালীর ওয়ারলেস এলাকার টিএনটি মাঠসংলগ্ন ঝিল থেকে ময়না মিয়ার খ-িত মরদেহের মস্তক উদ্ধার করা হয়। সর্বমোট ৬ অংশে ভাগ ছিল ময়না মিয়ার পুরো শরীর।

বুধবার, ০২ জুন ২০২১ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২০ শাওয়াল ১৪৪২

মহাখালীতে খণ্ডিত লাশ

হত্যার দায় স্বীকার স্ত্রী শিল্পী ৫ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর মহাখালীতে খ-িত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত ময়না মিয়ার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন শিল্পীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনাই পুলিশের কাছে তুলে ধরেছেন তিনি। তবে স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যার পরেও কোন অনুশোচনা কাজ করছে না তার মধ্যে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ময়না মিয়ার ৬ টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় ফাতেমা খাতুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বনানী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে আসামি ফাতেমার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরি তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ বলেন, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরেই এ নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। এর আগে বনানী ৪ নম্বর থানা রোডের ১৮ নম্বর বাসার একটি ইলেক্ট্রনিক কোম্পানির অফিস থেকে শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাশের টুকরোগুলো গুম করার পর শিল্পী আবারও স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিল্পী জানিয়েছেন, গত ২৩ মে থেকে ময়না মিয়া কড়াইল বস্তিতে শিল্পীর বাসায় ছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বন্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য আরও চরম আকার ধারণ করে। পরে ময়না মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফাতেমা। সে মোতাবেক দুই পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে এনে বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট জুসের সঙ্গে মিশিয়ে ময়না মিয়াকে খাওয়ানো হয় শুক্রবার রাতে। এতে ভিকটিম সারারাত ও পরের দিন অচেতন থাকার পর শনিবার সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পান। ঘুম থেকে উঠে আবার স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গেলে নিজেই বিছানায় লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় ময়না মিয়া পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমার ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তার মুখে ঢেলে দেন। এক পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে ময়নার দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। পরে ময়না মিয়ার বুকের উপরে বসে চাকু দিয়ে গলা কাটা শুরু করেন শিল্পী। কিছুটা গলা কাটার পর ময়না মিয়া ধস্তাধস্তি করে ফাতেমার হাতে খামছি ও কামড় বসিয়ে দেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা দু’জনই খাট থেকে নিচে পড়ে গেলে, ফাতেমা আবার ময়না মিয়ার বুকের উপর বসে গলার বাকি অংশ কেটে দেয়। এরপর ওইদিন সারারাত এবং পরদিন রোববার সারাদিন লাশ ওভাবেই ফ্লোরে পড়ে ছিল।

হারুন অর রশিদ আরও বলেন, হত্যার ২৪ ঘণ্টা পর রোববার রাতে ধারালো দা দিয়ে লাশ ৬ টুকরো করেন ফাতেমা। একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি রঙ্গের ড্রামে ও দুই হাত দুই পা একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। পরে ১৩০০ টাকা দিয়ে একটি রিকশা ভাড়া করে প্রথমে শরীরের মূল অংশ রাখা ড্রামটি ফেলা হয় মহাখালী কাঁচাবাজারসংলগ্ন এলাকায়, এরপর মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে দুই হাত দুই পা ভর্তি ব্যাগ ফেলে বাসায় চলে আসেন ফাতেমা। পরে খ-িত মস্তকটি একটি লাল ব্যাগে ভরে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের গুলশান লেকে ফেলে দেন। পরে তিনি বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন। ধারণা ছিল ময়না মিয়ার লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। সেও সন্দেহের বাইরে থাকবেন।

হত্যার বিচার চাইলেন ২য় স্ত্রী

স্বামীর লাশ বুঝে নিতে গতকাল ঢামেক মর্গে গিয়ে ময়না মিয়ার ২য় স্ত্রী নাসরিন আক্তার বলেন, ৮ বছর আগে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তখন ময়না ময়মনসিংহ এলাকায় সিএনজি চালাতো। রিহান (১৬ মাস) নামে তাদের একটি ছেলে রয়েছে। ২৩ মে কিশোরগঞ্জ থেকে সিলেটে গ্রামের বাড়ি যাওয়া কথা বলে সেখান থেকে চলে আসে ময়না। ওই দিন রাত থেকে মোবাইলে অনেকবার কল করেও ময়না মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। এরপর পুলিশের মাধ্যমে খবর পাই ময়না মিয়া ১ম স্ত্রীর হাতে খুন হয়েছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই বলেও জানান নাসরিন আক্তার। প্রসঙ্গত, গত রোববার দিবাগত রাতে মহাখালী আমতলী সড়ক থেকে ময়না মিয়ার মাথা, হাত, পা ছাড়া গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। পরে একইদিন রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে কাটা দুই হাত ও পা উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে মহাখালীর ওয়ারলেস এলাকার টিএনটি মাঠসংলগ্ন ঝিল থেকে ময়না মিয়ার খ-িত মরদেহের মস্তক উদ্ধার করা হয়। সর্বমোট ৬ অংশে ভাগ ছিল ময়না মিয়ার পুরো শরীর।