চিঠিপত্রে প্রামাণ্য ডি. এইচ. লরেন্স

আদনান সৈয়দ

http://print.thesangbad.net/images/2021/June/02Jun21/news/d-h-lorence1.jpg

ডি. এইচ. লরেন্স (১৮৮৫-১৯৩০)

ব্যক্তিগত চিঠিপত্র পাঠে একজন মানুষকে খুব সহজেই আবিষ্কার করা যায়। কারণ ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে ফুটে ওঠে সেই মানুষটিকে ঘিরে একটি সময়, একটি সমাজ আর একই সঙ্গে সেই মানুষটির একান্ত ভাবনার জগত। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত ডিয়ানা ট্রিলিং সম্পাদিত The Selected Letters of D. H. Lawrence গ্রন্থটিতে খুঁজে পেয়েছি নানা স্বাদের সেই বিচিত্র সম্ভার! ৩২২ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির পাতায় পাতায় ডি. এইচ. লরেন্সের প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষক চিঠিপত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। সেই চিঠিপত্রের ভাষা খুঁড়ে খুঁড়ে লেখকের জীবনের নানা দিক উন্মোচন করার আনন্দই আলাদা!

একজন লেখক কি শুধুই তাঁর নিজস্ব সম্পদ! একজন লেখককে তাঁর যাপিত জীবনের মধ্য থেকে চেনা যায়। একজন লেখক বা শিল্পীর রয়েছে ভালোলাগার মানুষ দিয়ে গড়া নিজস্ব একটি পরিম-ল, রয়েছে সমাজ-সংসার, রাষ্ট্র, প্রকাশক, পাঠক, পত্রিকার সম্পাদক আরো কত কী! আর এই সম্পর্ক রক্ষার মূল শক্তিই হলো চিঠিপত্র! অতএব চিঠিপত্র পাঠে লেখককে গভীরভাবে চেনার যেমন যথেষ্ট সুযোগ থাকে; পাশাপাশি তাঁর মনোজগতের কাছাকাছিও যাওয়ার কিঞ্চিৎ একটি সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দেয়। কথাসাহিত্যিক ডি. এইচ. লরেন্সেও এই হিসাব নিকাশ থেকে ব্যতিক্রম নন।

ডায়ানা ট্রিলিং সম্পাদিত গ্রন্থটিতে স্থান পাওয়া চিঠিপত্রগুলোর উপর চোখ রাখলে আমরা একজন পূর্ণাঙ্গ ডি. এইচ. লরেন্সকেই যেন দেখতে পাই।

চিঠিপত্র পাঠে লেখককে গভীরভাবে চেনার যেমন যথেষ্ট সুযোগ থাকে; পাশাপাশি তাঁর মনোজগতের কাছাকাছিও যাওয়ার কিঞ্চিৎ একটি সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দেয়। কথাসাহিত্যিক ডি. এইচ. লরেন্সেও এই হিসাব নিকাশ থেকে ব্যতিক্রম নন

প্রয় ফ্রিয়েদা,

মে ১৫, ১৯১২

তোমার তিনটি চিঠিই আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। এখন বলো আর্নেস্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা কী? তুমি দেখে নিয়ো সে খুব শিগগিরই বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যে আবেদন করবে; কারণ তিনি ভালো করেই জানেন যে, তোমার সঙ্গেই আমার বিয়েটা হচ্ছে। আর ছয় মাসের মধ্যেই আমরা বিয়ে করে ফেলবো। তুমি কী বলো? খুব শিগগিরই আমরা দু’জনে মিউনিখে বেড়াতে যাব। তবে তার আগে আমাকে কিছুটা সময় দাও। সংসার শুরু করার আগে চল নিজেদের আগেই একটু গুছিয়ে নেই।

http://print.thesangbad.net/images/2021/June/02Jun21/news/d-h-lorence2.jpg

তুমি নিশ্চয়ই অনুভব করতে পার তোমাকে কত গভীরভাবে আমি ভালোবাসি এবং কত দ্রুত আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি? সব কিছু ঠিক হতে শুধু অল্প কিছু সময়ের অপেক্ষায় আমাদের দিন গনতে হবে। ভয় আর শংকা দিয়ে কোনো কিছু শুরু করা হবে বোকামি। তারচেয়ে আমি ভাবছি খুব শিগগিরই আমি আর্নেস্টকে চিঠি লিখবো। তার উচিৎ হবে এখন থেকে সে যেন আমার সঙ্গেই সব রকম পত্র যোগাযোগ রক্ষা করে।

কিছুদিন অপেক্ষা করাই ঢের ভালো, কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। অথবা জানতে চাচ্ছি এই অপেক্ষা কি তোমাকে বিব্রত করছে? -না না আমাদের মিলন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

জেনে রেখো, আজীবন আমি তোমাকে ভালোবাসবো। এই নতুন ভাবনায় এখন আমি অবিচল হয়ে আছি। তবে এটাই সত্য।

তোমার

ডি.এইচ.লরেন্স

তাদের গভীর ভালোবাসার শেষ পর্যন্ত জয় হয়। ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে তারা বিয়ে করলেন। বিয়ের কিছুদিন পরই ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয় লরেন্সের উপন্যাস ‘দি রেইনবো’। কিন্তু ততদিনে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক আবহাওয়া গরম হতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঢেউয়ের উষ্ণ হাওয়া ইংল্যান্ডের বুকেও ধাক্কা খায়। মাত্র তিন দিনের নোটিশে ডি. এইচ. লরেন্স কর্নওয়াল শহর ছাড়তে বাধ্য হন। যুদ্ধের এই ভয়াবহ ছাপ এই দম্পত্তির উপর ধীরে ধীরেও পড়তে শুরু করে। যুদ্ধের পর লরেন্সের শুরু হয় নতুন এক জীবন। অনেকটা বলা যায় নিজ স্বেচ্ছা নির্বাসন! তিনি ইংল্যান্ড থেকে নিজেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে নেমে গেলেন। অবশ্যই ফ্রিয়েদাকে সঙ্গে নিয়েই। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকা, আমেরিকা, ম্যাক্সিকো, ফ্রান্সসহ নানা দেশ ভ্রমণ করে লরেন্স তার আত্মার খোঁজে নেমে পড়লেন। লরেন্সের ছেলেবেলা থেকেই শ^াসকষ্টের সমস্যা ছিল। এই বিশাল আর ব্যাপক আকারে ভ্রমণের কারনে তার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর মধ্যেও লরেন্স তার লেখালেখি থেকে কলম তুলে নেননি। ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ওমেন ইন লাভ’ উপন্যাসটি। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস’ Mornings in Mexico| 1928 mv‡j cÖKvwkZ nq The Woman Who Rode Away and Other Stories (1928), Lady Chatterley’s Lover (1928) এবং আরো ডজন খানেক প্রবন্ধ আর ছোটগল্প The Man Who Loved Islands তার ভ্রমণ নিয়েও একটি অসাধারণ গ্রন্থ Etruscan Places যা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে লরেন্সের Lady Chatterley’s Lover ততদিনে বিখ্যাত এবং একই সঙ্গে রক্ষণশীল সমাজে সমালোচিত।

লেডি চ্যাটার্লিস লাভার উপন্যাসটি নিয়ে কিছু কথা বলা এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করি। গোটা বিশ্বে এই উপন্যাসটির জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গুরুগম্ভীর পাঠকের হাতে তখন লেডি চ্যাটার্লিস শোভা পাচ্ছে। বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল সমাজকে প্রবলভাবে এই উপন্যাসটি আঘাত করেছিল। কোনো কোনো সাহিত্য সমালেচকগণ উপন্যাসটিকে সস্তা, চটুল এবং পর্নোগ্রাফিতে ঠাসা বলে আখ্যায়িত করেন। সন্দেহ নেই উপন্যাসটি সমাজের উচ্চ তথাকথিত এলিট শ্রেণির অহংকার এবং শ্রেণি বিভাজনকে ভেংগে চুরমার করে দেয়। সমাজে সুকৌশলে লালিত বৈষম্যকে এই উপন্যাস দিয়ে প্রবলভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপন্যাসটি নিয়ে গোটা পৃথিবীর রক্ষণশীল সমাজে প্রবল আপত্তি দেখা দেয়। উপন্যাসটি প্রকাশ এবং প্রচারে বাধাগ্রস্ত হয়। ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গোটা ইংল্যান্ডে যখন উপন্যাসটি নিয়ে হৈচৈ, যখন কোনো প্রকাশকই উপন্যাসটি ছাপতে রাজি হলো না তখন বিলেতের কিছু প্রকাশক লরেন্সের কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে এল। তারা উপন্যাসটি থেকে ‘চার শব্দের’ আপত্তিজনক অংশটি বাদ দিতে লরেন্সকে অনুরোধ জানায়। লরেন্স প্রকাশকদের সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন এবং বলেন,

“আমি বরং কাচি দিয়ে আমার নিজের নাক কেটে ফেলে দিতে পারি। কিন্তু উপন্যাসের কোনো শব্দ কাটা যাবে না। নিষিদ্ধ হোক তাতেও কোনো আপত্তি নেই।”

লরেন্স আরো বলেন, “নরনারীর শারীরিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সম্পর্কটি লজ্জার নয় বরং ঐশ্বর্যের”। উপন্যাসটিতে আবার যখন আমি প্রবেশ করি সেখানে সুন্দরকেই আমি খুঁজে পাই। আমার কাছে সেখানে সুন্দর আর ননীনতা ছোঁয়া ধরা পড়েছে।”

বলার অপেক্ষা রাখে না, ডি.এইচ.লরেন্স নিজেই উদ্যোগী হয়ে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রচারের কাজে হাত দিয়েছিলেন।

এরই মধ্যে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, পণ্ডিত অলডাস হাক্সলির সঙ্গে তাঁর নিয়মিত পত্র যোগাযোগ হতে থাকে। হাক্সলির সঙ্গে লরেন্সের সম্পর্ক ছিল মধুর। তাঁরা পরস্পরের মধ্যে পত্র চালাচালি করতেন এবং সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। নিচের চিঠিটি দেখুন।

“প্রিয় অলডাস

আনন্দঘন শিহরন নিয়ে আপনার Point Counter Point’ লেখাটি পড়েছি এবং আপনার প্রতি প্রশংসা মাথা নত করছি। আমি বিশ্বাস করি যে আপনি সত্যকে তুলে এনেছেন, আপনার প্রজন্ম এবং পরবর্তী প্রজন্মদের জন্যে সম্ভবত চূড়ান্ত সত্যটি সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। আমার মনে হয় আমার লেডি সি লেখার চেয়ে আপনার পি কাউন্টার পি লিখতে দশ গুণ সাহসের প্রয়োজন। যদি আমজনতা জানতে পারে এই লেখায় কী মশলা আছে তাহলে তারা আপনাকে একশতটি পাথর ছুড়ে মারবে আর আমাকে মারবে মাত্র একটি পাথর।”

তবে লেডি চ্যাটার্লিস লাভার উপন্যাসটির এত নেতিবাচক সমালোচনার পরেও লরেন্সকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে দিয়েছিল। লরেন্সের সাহিত্যিক বন্ধু কথাসাহিত্যিক রিচার্ড এলডিংটন উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেনÑ “বিংশ শতাব্দির টুপিতে এক অসমান্য পালক”। শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকায় কিছু সাহিত্য সমালোচকদের তির্যক মন্তব্যের পাশাপাশি অনেকেই বলতে শুরু করেনÑ কথাসাহিত্যের ইতিহাসে জীবন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে এমন উপন্যাস অন্যতম উদ্দীপক হিসাবে কাজ করবে।”

ডি. এইচ. লরেন্স তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার বন্ধুদের সঙ্গে তর্ক করতে ভালোবাসতেন। তবে সবসময় যে যুক্তিতর্কে তিনি জিততে পারতেন, তাও কিন্তু নয়। কিছু কিছু চিঠিতে তার অসহায়ত্ব নানাভাবে ফুটে উঠেছে। কিন্তু সর্বোপরি লরেন্সের চিঠিপত্রের ভাষায় তাঁর উন্নত দৃঢ় ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষটিই যেন ফুটে উঠেছে। শিল্প সাহিত্য নিয়ে মতামত দিতে লরেন্স সবসময় নৈর্ব্যক্তিক থাকার চেষ্টা করতেন। তাঁর ভাষায়Ñ “চিঠির কোনো ভাষায় আপনার প্রতি যখন আমি রুষ্ট হয়ে উত্তর দেই তখন বিষয়টিকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে না নিলেই ভালো করবেন। কারণ বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত নয়। আমার নিজের অন্তরে বাস করা লেখকসত্তাটি আমাকে সবসময় শাসন করে বেড়ায়।”

জীবনের প্রথম দিন থেকেই ডি.এইচ. লরেন্স আর্থিক দৈন্যে ভুগেছেন। বিভিন্ন রকম চাকরির জন্যে তিনি চেষ্টা করেছেন। তাঁর ১৬ বছর বয়সের একটি চিঠির দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। ১৯০১ সালে একটি ব্যাংকের কেরানীর পদের চাকরির জন্যে তিনি এই চিঠিটি লিখেছিলেন।

“আমি লরেন্স নটিংহামে অবস্থিত জুনিয়র কেরানির পদে চাকরির জন্যে আবেদন করছি: আমার বয়স ১৬ এবং তিন বছরের নটিংহাম হাইস্কুলের তিন বছর সদ্য সমাপ্ত করেছি। যদিও একাউন্ট সম্পর্কে আমার কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই; তথাপি আমি বুক কিপিং নিয়ে পড়াশোনা করেছি এবং গণিত ধাঁধার উপর দুটো পুরস্কার অর্জন করেছি। এই পুরস্কার আমি ফ্রান্স এবং জার্মান সাহিত্যেও লাভ করেছি।”

একজন শিল্পীর সঙ্গে চিঠিপত্রে রঙ্গ-তামাশা করতেও ভুলতেন না ডি. এইচ. লরেন্স। অবশ্য কারো কারো মতে লরেন্স এই খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে খুব গুরুত্ব দিতেন। বিশেষ করে কোনো ভুল তথ্য দেয়া বা কোনো দুরভিসন্ধির ঘ্রাণ পেলে ডি. এইচ. লরেন্স চিঠিপত্রে সে বিষয়গুলো তুলে আনতে ভুলতেন না। একবার ভুল করে আর্নেষ্ট নামের এক চিত্রশিল্পী ডি. এইচ. লরেন্সকে নারী মনে করে চিঠিতে ‘মিসেস’ সম্বোধন করায় তিনি হালকা রসিকতা করে চিঠির উত্তর দেন।

প্রিয় আর্নেস্ট কলিংস

নভেম্বও ১৪, ১৯১২, লাগো ডে গারদা, ইতালি

যদি আপনি চান আমাকে অনায়াসে ‘স্যার’ সম্বোধন করতে পারেন। আমি আপনাকে নিশ্চিত করে জানাচ্ছি যে আমি একজন পুরুষ। আমার নাম ডেভিড হার্বাট লরেন্স। আমার বয়স ৩৭ বছর। আমি আর এখন স্কুলের শিক্ষক নই। গতরাতে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে আমি একটা স্কুলে পড়াচ্ছি। এই দুঃস্বপ্নটি আজ দিনরাত আমাকে পীড়া দিচ্ছে।”

কিন্তু যা হয়। কিছুদিনের মধ্যে এই নবিন শিল্পীর সঙ্গে ডি. এইচ. লরেন্সের একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় মত্ত হয়ে ওঠেন। নিচের চিঠিতে সে চিত্রটি ধরা পড়ে।

জানুয়ারি ১৭, ১৯১৩

প্রিয় কলিংস,

বাড়িতে ভালো কোনো মেহমান আসার মতোই সুমিষ্ট আপনার চিঠি। আমি এই ধরনের লোকদের ভালোবাসি যারা দিস্তার পর দিস্তা নিজের সম্পর্কে লিখতে পারে। খুব স্বাভাবিক। আপনার বিষয়গুলোও খুব কৌতূহল দীপ্ত। আপনি কি নারী বিষয়ে উন্নাসিক? নারী বা বিবাহে কোনো আসক্তি নেই? (উত্তর দিতে না চাইলে কোনো সমস্যা নেই, আমিও বিবাহিত পুরুষ বা হতে যাচ্ছি)। আপনার চিত্রগুলো খুব খুব একপেশে মনে হচ্ছিল। (খুব সামান্যই ভালো কিছু আমি খুঁজে পেয়েছি। আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি আপনাকে কী বলতে চেয়েছি)। আপনার কাজ দেখে মনে হয়েছে আপনি সবসময়ই খুব ভয়ে থাকেন, যদি-না কোনো নারীবিষয়ক চিত্র আপনার শিল্পে ধরা দেয়!”

আরেকটি চিঠির প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আগেই উল্লেখ করেছি লরেন্স যদি বুঝতে পারতেন তাকে কেউ ব্যবহার করছে বা তার সঙ্গে আর্থিক কোনো অনিয়মে দুরভিসন্ধি আঁটছে তখন তিনি সে-নিয়েও কলম তুলতে ভুলতেন না। এমি লোয়েল একজন শিল্পী, প্রকাশক, এজেন্ট, লরেন্সের এবং ব্যক্তিগত বন্ধু। তাঁর চিঠিতেও তেমন একটি আভাস আমরা খুঁজে পাই।

ফেব্রুয়ারি ১৩, ১৯২০

প্রিয় এমি

১৩ শ’ লিরা চেকসহ আপনার চিঠি হাতে এসেছে। নিউ ইয়ারে এভাবে আমাদের মনে রাখার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব ভালো হতো যদি বলতে পারতাম এই টাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই, কিন্তু তা বলতে পারছি না। প্রশ্ন হলো আমার দিক থেকে সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করার পরেও আমি কেন যথেষ্ট পরিমাণ টাকা রোজগার করতে পারছি না! আর যাই হোক, আপনি তো জানেন এই ধরনের অনুদান হাতে এলে খুব রাগ হয়। না, আপনার কাছ থেকে নয় নিশ্চয়ই। আপনি একজন শিল্পী এবং আপনার সঙ্গে সবসময় একটি অংশীদারিত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমার বজায় থাকবে। কিন্তু যখন ক্যানন (কথাসাহিত্যিক) আমাকে লিখে জানান এবং বলতে চান যে তিনি আমার লেখালেখির সম্মানী বাবদ কিছু ডলার জোগার করেছেন এবং যা আমি এখনো হাতে পাইনি তখনই মনে খটকা লাগে। ক্যাননের এই পয়সা রোজগারের বিষয়গুলো দেখে আমি খুব বিরক্ত। সে আমার সম্পর্কে আমেরিকার পত্রপত্রিকায় খুব বাজে কিছু কথাও বলে বেড়াচ্ছে। তাহলে আমি একজন সাহিত্যের চেরিটি বয়!”

আমেরিকার বিখ্যাত ‘পোয়েট্রি’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক হ্যারিয়েট মনরোর সঙ্গে ডি.এইচ. লরেন্সের ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। তাঁরা প্রায় সময়ই পরস্পর চিঠি লিখতেন। সেই চিঠিতে লেখক-সম্পাদকের সঙ্গে যে কী মধুর এবং আত্মিক একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে সেই আভাস পাওয়া যায়। পাশাপাশি শিল্প সাহিত্য নিয়ে দুজনের মধ্যে নানা রকম তর্ক-বিতর্কও ধরা পড়ে। চিঠিটি পড়ুন।

“প্রিয় হ্যারিয়েট মনরো

গতকাল আপনার পাঠানো লেখক সম্মানী বাবদ ৮ পাউন্ড হাতে পেয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ দেখতে পেলাম যুদ্ধের উপর আমার কবিতাগুলো পোয়েট্রিতে ছাপা হয়েছে। এর জন্যেও আপনাকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পত্রিকায় একজন নারী লেখকের লেখা Metal checks পড়েছি। তাঁর কল্পনা এবং ভাবনা আমার পছন্দ হয়েছে কিন্তু তাঁর কবিতা খুবই বাজে মনে হয়েছে। আমি বরং মারিয়ান রিমির Face I shall neversee-man I shall never see এবং Unser Gott এর লেখাটি ঢের ভালো লেগেছে।”

ডি. এইচ. লরেন্স মৃত্যুর এক মাস আগেও অসুস্থ শরীর নিয়ে চিঠি লিখেছেন। তাঁর চিঠিতে ফুটে উঠেছিল বিষাদময় এক জীবন চিত্র। বন্ধু অলডাক্স হাক্সলির স্ত্রী মারিয়া হাক্সলিকে চিঠিটি এখানে তুলে দিচ্ছি।

“প্রিয় মারিয়া,

আপনার পাঠানো দুটো পার্সেল আমার ঠিকানায় এসেছে। পার্সেলটি দেখে মনে হচ্ছে খুবই বিলাসি কিছু। ফ্রিয়েদা তো আপনার প্রশংসায় সবসময় ডুবে থাকে। আর সব কিছুর জন্যে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

এখানে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। কাশি, অঘুম আর হার্টের ব্যাথা আমাকে কাবু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু এখানকার সবার ধারণা আমার জ্বর হয়নি। জায়গাটি ভালো নয়। এখানে বেশিদিন থাকা নিরাপদ বোধ করছি না-বাড়িতেই আমি বেশ ভালো থাকিÑ আমি এখন অসহনীয় অবস্থায় আছি। ফ্রিয়েদা তার কন্যা বারবি (বারবারা লরেন্স) এবং ইডা রুথকে নিয়ে আছে। আপনি কবে আসবেন বলে ভাবছেন?

জায়গাটি ভালো নয়।

ডি.এইচ.এল”

জীবনকে তিনি দেখতে পেরেছিলেন জীবনের কঠিন বাস্তবতার চোখ দিয়ে। যে কারণে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়েছেন, সাহিত্যেও ভাষায় নতুনত্ব এনেছেন এবং পাশাপাশি নিজের জীবন দর্শনটিকেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। একজন কথাসাহিত্যিক এ কারণেই হয়তো এত জোর দিয়ে এই কথাগুলো বলতে পারেন,

“নিজের একাকিত্বকে বিসর্জন দেয়ার মধ্যে ভালো কিছু নেই। এই একাকিত্বকে আজীবনের জন্যে সঙ্গী করা চাই। সময়ের স্রোতেই শূন্যস্থানগুলো পূরণ হয়ে যাবে। সময়! কিন্তু সেই সময়ের অপেক্ষাই করতে হবে। নিজের একাকিত্বকে গ্রহণ করে নাও এবং আজীবনের জন্যে সঙ্গী করে নাও। এবং যখন শূন্যস্থানগুলো পূরণ হবে তখন সেই সময়কেও গ্রহণ কর। কিন্তু সেই মোক্ষম ক্ষণটি তোমার কাছে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসতে হবে। সেখানে কোনো জোর জবরদস্তি চলে না।” (লেডি চ্যাটার্লিস লাভার”)

মেবেল স্টার্ন-এর (নিউইয়র্কের বিখ্যাত শিল্পী, উপস্থাপিকা এবং অভিনেত্রি) সঙ্গে ডি. এইচ. লরেন্সের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের। মৃত্যুর এক মাস আগে লেখেনÑ

প্রিয় মেবেল,

আশা করি আপনি ভালো আছেন এবং শান্তিতেই আছেন। আপনার গল্পটি আমি পেয়েছি। আমি আপনার জীবনের গল্পটা জানি। অবশ্যই এই গল্পটি শুধু একান্ত আপনাকে নিয়েই। সেখানে শুধুই আপনি। কিন্তু আমি মনে করি যখন আপনি একা থাকবেন তখন আপনি সেই একাকিত্ব থেকেও নিজেকে মুক্ত হতে পারবেন না।

যাই হোক, সামনেই বসন্তের আগমন! সেই সঙ্গে জাগছে নতুন আশা আর স্বপ্ন। আশা করি আবার নতুন করে জীবন শুরু হবে।

ডি. এইচ. এল

হায়! সেই অনাগত বসন্তের রোদ আর গায়ে মাখার সুযোগ পেলেন না ডি. এইচ. লরেন্স। ১৯৩০ সালের ২ মার্চ মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি যক্ষায় তাঁকে খুব অবেলায় চলে যেতে হলো।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

চিঠিপত্রে প্রামাণ্য ডি. এইচ. লরেন্স

আদনান সৈয়দ

image

http://print.thesangbad.net/images/2021/June/02Jun21/news/d-h-lorence1.jpg

ডি. এইচ. লরেন্স (১৮৮৫-১৯৩০)

ব্যক্তিগত চিঠিপত্র পাঠে একজন মানুষকে খুব সহজেই আবিষ্কার করা যায়। কারণ ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে ফুটে ওঠে সেই মানুষটিকে ঘিরে একটি সময়, একটি সমাজ আর একই সঙ্গে সেই মানুষটির একান্ত ভাবনার জগত। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত ডিয়ানা ট্রিলিং সম্পাদিত The Selected Letters of D. H. Lawrence গ্রন্থটিতে খুঁজে পেয়েছি নানা স্বাদের সেই বিচিত্র সম্ভার! ৩২২ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির পাতায় পাতায় ডি. এইচ. লরেন্সের প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষক চিঠিপত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। সেই চিঠিপত্রের ভাষা খুঁড়ে খুঁড়ে লেখকের জীবনের নানা দিক উন্মোচন করার আনন্দই আলাদা!

একজন লেখক কি শুধুই তাঁর নিজস্ব সম্পদ! একজন লেখককে তাঁর যাপিত জীবনের মধ্য থেকে চেনা যায়। একজন লেখক বা শিল্পীর রয়েছে ভালোলাগার মানুষ দিয়ে গড়া নিজস্ব একটি পরিম-ল, রয়েছে সমাজ-সংসার, রাষ্ট্র, প্রকাশক, পাঠক, পত্রিকার সম্পাদক আরো কত কী! আর এই সম্পর্ক রক্ষার মূল শক্তিই হলো চিঠিপত্র! অতএব চিঠিপত্র পাঠে লেখককে গভীরভাবে চেনার যেমন যথেষ্ট সুযোগ থাকে; পাশাপাশি তাঁর মনোজগতের কাছাকাছিও যাওয়ার কিঞ্চিৎ একটি সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দেয়। কথাসাহিত্যিক ডি. এইচ. লরেন্সেও এই হিসাব নিকাশ থেকে ব্যতিক্রম নন।

ডায়ানা ট্রিলিং সম্পাদিত গ্রন্থটিতে স্থান পাওয়া চিঠিপত্রগুলোর উপর চোখ রাখলে আমরা একজন পূর্ণাঙ্গ ডি. এইচ. লরেন্সকেই যেন দেখতে পাই।

চিঠিপত্র পাঠে লেখককে গভীরভাবে চেনার যেমন যথেষ্ট সুযোগ থাকে; পাশাপাশি তাঁর মনোজগতের কাছাকাছিও যাওয়ার কিঞ্চিৎ একটি সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি দেয়। কথাসাহিত্যিক ডি. এইচ. লরেন্সেও এই হিসাব নিকাশ থেকে ব্যতিক্রম নন

প্রয় ফ্রিয়েদা,

মে ১৫, ১৯১২

তোমার তিনটি চিঠিই আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। এখন বলো আর্নেস্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা কী? তুমি দেখে নিয়ো সে খুব শিগগিরই বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যে আবেদন করবে; কারণ তিনি ভালো করেই জানেন যে, তোমার সঙ্গেই আমার বিয়েটা হচ্ছে। আর ছয় মাসের মধ্যেই আমরা বিয়ে করে ফেলবো। তুমি কী বলো? খুব শিগগিরই আমরা দু’জনে মিউনিখে বেড়াতে যাব। তবে তার আগে আমাকে কিছুটা সময় দাও। সংসার শুরু করার আগে চল নিজেদের আগেই একটু গুছিয়ে নেই।

http://print.thesangbad.net/images/2021/June/02Jun21/news/d-h-lorence2.jpg

তুমি নিশ্চয়ই অনুভব করতে পার তোমাকে কত গভীরভাবে আমি ভালোবাসি এবং কত দ্রুত আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি? সব কিছু ঠিক হতে শুধু অল্প কিছু সময়ের অপেক্ষায় আমাদের দিন গনতে হবে। ভয় আর শংকা দিয়ে কোনো কিছু শুরু করা হবে বোকামি। তারচেয়ে আমি ভাবছি খুব শিগগিরই আমি আর্নেস্টকে চিঠি লিখবো। তার উচিৎ হবে এখন থেকে সে যেন আমার সঙ্গেই সব রকম পত্র যোগাযোগ রক্ষা করে।

কিছুদিন অপেক্ষা করাই ঢের ভালো, কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। অথবা জানতে চাচ্ছি এই অপেক্ষা কি তোমাকে বিব্রত করছে? -না না আমাদের মিলন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

জেনে রেখো, আজীবন আমি তোমাকে ভালোবাসবো। এই নতুন ভাবনায় এখন আমি অবিচল হয়ে আছি। তবে এটাই সত্য।

তোমার

ডি.এইচ.লরেন্স

তাদের গভীর ভালোবাসার শেষ পর্যন্ত জয় হয়। ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে তারা বিয়ে করলেন। বিয়ের কিছুদিন পরই ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয় লরেন্সের উপন্যাস ‘দি রেইনবো’। কিন্তু ততদিনে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক আবহাওয়া গরম হতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঢেউয়ের উষ্ণ হাওয়া ইংল্যান্ডের বুকেও ধাক্কা খায়। মাত্র তিন দিনের নোটিশে ডি. এইচ. লরেন্স কর্নওয়াল শহর ছাড়তে বাধ্য হন। যুদ্ধের এই ভয়াবহ ছাপ এই দম্পত্তির উপর ধীরে ধীরেও পড়তে শুরু করে। যুদ্ধের পর লরেন্সের শুরু হয় নতুন এক জীবন। অনেকটা বলা যায় নিজ স্বেচ্ছা নির্বাসন! তিনি ইংল্যান্ড থেকে নিজেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে নেমে গেলেন। অবশ্যই ফ্রিয়েদাকে সঙ্গে নিয়েই। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকা, আমেরিকা, ম্যাক্সিকো, ফ্রান্সসহ নানা দেশ ভ্রমণ করে লরেন্স তার আত্মার খোঁজে নেমে পড়লেন। লরেন্সের ছেলেবেলা থেকেই শ^াসকষ্টের সমস্যা ছিল। এই বিশাল আর ব্যাপক আকারে ভ্রমণের কারনে তার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর মধ্যেও লরেন্স তার লেখালেখি থেকে কলম তুলে নেননি। ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ওমেন ইন লাভ’ উপন্যাসটি। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস’ Mornings in Mexico| 1928 mv‡j cÖKvwkZ nq The Woman Who Rode Away and Other Stories (1928), Lady Chatterley’s Lover (1928) এবং আরো ডজন খানেক প্রবন্ধ আর ছোটগল্প The Man Who Loved Islands তার ভ্রমণ নিয়েও একটি অসাধারণ গ্রন্থ Etruscan Places যা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে লরেন্সের Lady Chatterley’s Lover ততদিনে বিখ্যাত এবং একই সঙ্গে রক্ষণশীল সমাজে সমালোচিত।

লেডি চ্যাটার্লিস লাভার উপন্যাসটি নিয়ে কিছু কথা বলা এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করি। গোটা বিশ্বে এই উপন্যাসটির জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গুরুগম্ভীর পাঠকের হাতে তখন লেডি চ্যাটার্লিস শোভা পাচ্ছে। বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল সমাজকে প্রবলভাবে এই উপন্যাসটি আঘাত করেছিল। কোনো কোনো সাহিত্য সমালেচকগণ উপন্যাসটিকে সস্তা, চটুল এবং পর্নোগ্রাফিতে ঠাসা বলে আখ্যায়িত করেন। সন্দেহ নেই উপন্যাসটি সমাজের উচ্চ তথাকথিত এলিট শ্রেণির অহংকার এবং শ্রেণি বিভাজনকে ভেংগে চুরমার করে দেয়। সমাজে সুকৌশলে লালিত বৈষম্যকে এই উপন্যাস দিয়ে প্রবলভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপন্যাসটি নিয়ে গোটা পৃথিবীর রক্ষণশীল সমাজে প্রবল আপত্তি দেখা দেয়। উপন্যাসটি প্রকাশ এবং প্রচারে বাধাগ্রস্ত হয়। ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গোটা ইংল্যান্ডে যখন উপন্যাসটি নিয়ে হৈচৈ, যখন কোনো প্রকাশকই উপন্যাসটি ছাপতে রাজি হলো না তখন বিলেতের কিছু প্রকাশক লরেন্সের কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে এল। তারা উপন্যাসটি থেকে ‘চার শব্দের’ আপত্তিজনক অংশটি বাদ দিতে লরেন্সকে অনুরোধ জানায়। লরেন্স প্রকাশকদের সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন এবং বলেন,

“আমি বরং কাচি দিয়ে আমার নিজের নাক কেটে ফেলে দিতে পারি। কিন্তু উপন্যাসের কোনো শব্দ কাটা যাবে না। নিষিদ্ধ হোক তাতেও কোনো আপত্তি নেই।”

লরেন্স আরো বলেন, “নরনারীর শারীরিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সম্পর্কটি লজ্জার নয় বরং ঐশ্বর্যের”। উপন্যাসটিতে আবার যখন আমি প্রবেশ করি সেখানে সুন্দরকেই আমি খুঁজে পাই। আমার কাছে সেখানে সুন্দর আর ননীনতা ছোঁয়া ধরা পড়েছে।”

বলার অপেক্ষা রাখে না, ডি.এইচ.লরেন্স নিজেই উদ্যোগী হয়ে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রচারের কাজে হাত দিয়েছিলেন।

এরই মধ্যে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, পণ্ডিত অলডাস হাক্সলির সঙ্গে তাঁর নিয়মিত পত্র যোগাযোগ হতে থাকে। হাক্সলির সঙ্গে লরেন্সের সম্পর্ক ছিল মধুর। তাঁরা পরস্পরের মধ্যে পত্র চালাচালি করতেন এবং সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। নিচের চিঠিটি দেখুন।

“প্রিয় অলডাস

আনন্দঘন শিহরন নিয়ে আপনার Point Counter Point’ লেখাটি পড়েছি এবং আপনার প্রতি প্রশংসা মাথা নত করছি। আমি বিশ্বাস করি যে আপনি সত্যকে তুলে এনেছেন, আপনার প্রজন্ম এবং পরবর্তী প্রজন্মদের জন্যে সম্ভবত চূড়ান্ত সত্যটি সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। আমার মনে হয় আমার লেডি সি লেখার চেয়ে আপনার পি কাউন্টার পি লিখতে দশ গুণ সাহসের প্রয়োজন। যদি আমজনতা জানতে পারে এই লেখায় কী মশলা আছে তাহলে তারা আপনাকে একশতটি পাথর ছুড়ে মারবে আর আমাকে মারবে মাত্র একটি পাথর।”

তবে লেডি চ্যাটার্লিস লাভার উপন্যাসটির এত নেতিবাচক সমালোচনার পরেও লরেন্সকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে দিয়েছিল। লরেন্সের সাহিত্যিক বন্ধু কথাসাহিত্যিক রিচার্ড এলডিংটন উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেনÑ “বিংশ শতাব্দির টুপিতে এক অসমান্য পালক”। শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকায় কিছু সাহিত্য সমালোচকদের তির্যক মন্তব্যের পাশাপাশি অনেকেই বলতে শুরু করেনÑ কথাসাহিত্যের ইতিহাসে জীবন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে এমন উপন্যাস অন্যতম উদ্দীপক হিসাবে কাজ করবে।”

ডি. এইচ. লরেন্স তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার বন্ধুদের সঙ্গে তর্ক করতে ভালোবাসতেন। তবে সবসময় যে যুক্তিতর্কে তিনি জিততে পারতেন, তাও কিন্তু নয়। কিছু কিছু চিঠিতে তার অসহায়ত্ব নানাভাবে ফুটে উঠেছে। কিন্তু সর্বোপরি লরেন্সের চিঠিপত্রের ভাষায় তাঁর উন্নত দৃঢ় ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষটিই যেন ফুটে উঠেছে। শিল্প সাহিত্য নিয়ে মতামত দিতে লরেন্স সবসময় নৈর্ব্যক্তিক থাকার চেষ্টা করতেন। তাঁর ভাষায়Ñ “চিঠির কোনো ভাষায় আপনার প্রতি যখন আমি রুষ্ট হয়ে উত্তর দেই তখন বিষয়টিকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে না নিলেই ভালো করবেন। কারণ বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত নয়। আমার নিজের অন্তরে বাস করা লেখকসত্তাটি আমাকে সবসময় শাসন করে বেড়ায়।”

জীবনের প্রথম দিন থেকেই ডি.এইচ. লরেন্স আর্থিক দৈন্যে ভুগেছেন। বিভিন্ন রকম চাকরির জন্যে তিনি চেষ্টা করেছেন। তাঁর ১৬ বছর বয়সের একটি চিঠির দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। ১৯০১ সালে একটি ব্যাংকের কেরানীর পদের চাকরির জন্যে তিনি এই চিঠিটি লিখেছিলেন।

“আমি লরেন্স নটিংহামে অবস্থিত জুনিয়র কেরানির পদে চাকরির জন্যে আবেদন করছি: আমার বয়স ১৬ এবং তিন বছরের নটিংহাম হাইস্কুলের তিন বছর সদ্য সমাপ্ত করেছি। যদিও একাউন্ট সম্পর্কে আমার কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই; তথাপি আমি বুক কিপিং নিয়ে পড়াশোনা করেছি এবং গণিত ধাঁধার উপর দুটো পুরস্কার অর্জন করেছি। এই পুরস্কার আমি ফ্রান্স এবং জার্মান সাহিত্যেও লাভ করেছি।”

একজন শিল্পীর সঙ্গে চিঠিপত্রে রঙ্গ-তামাশা করতেও ভুলতেন না ডি. এইচ. লরেন্স। অবশ্য কারো কারো মতে লরেন্স এই খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে খুব গুরুত্ব দিতেন। বিশেষ করে কোনো ভুল তথ্য দেয়া বা কোনো দুরভিসন্ধির ঘ্রাণ পেলে ডি. এইচ. লরেন্স চিঠিপত্রে সে বিষয়গুলো তুলে আনতে ভুলতেন না। একবার ভুল করে আর্নেষ্ট নামের এক চিত্রশিল্পী ডি. এইচ. লরেন্সকে নারী মনে করে চিঠিতে ‘মিসেস’ সম্বোধন করায় তিনি হালকা রসিকতা করে চিঠির উত্তর দেন।

প্রিয় আর্নেস্ট কলিংস

নভেম্বও ১৪, ১৯১২, লাগো ডে গারদা, ইতালি

যদি আপনি চান আমাকে অনায়াসে ‘স্যার’ সম্বোধন করতে পারেন। আমি আপনাকে নিশ্চিত করে জানাচ্ছি যে আমি একজন পুরুষ। আমার নাম ডেভিড হার্বাট লরেন্স। আমার বয়স ৩৭ বছর। আমি আর এখন স্কুলের শিক্ষক নই। গতরাতে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে আমি একটা স্কুলে পড়াচ্ছি। এই দুঃস্বপ্নটি আজ দিনরাত আমাকে পীড়া দিচ্ছে।”

কিন্তু যা হয়। কিছুদিনের মধ্যে এই নবিন শিল্পীর সঙ্গে ডি. এইচ. লরেন্সের একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় মত্ত হয়ে ওঠেন। নিচের চিঠিতে সে চিত্রটি ধরা পড়ে।

জানুয়ারি ১৭, ১৯১৩

প্রিয় কলিংস,

বাড়িতে ভালো কোনো মেহমান আসার মতোই সুমিষ্ট আপনার চিঠি। আমি এই ধরনের লোকদের ভালোবাসি যারা দিস্তার পর দিস্তা নিজের সম্পর্কে লিখতে পারে। খুব স্বাভাবিক। আপনার বিষয়গুলোও খুব কৌতূহল দীপ্ত। আপনি কি নারী বিষয়ে উন্নাসিক? নারী বা বিবাহে কোনো আসক্তি নেই? (উত্তর দিতে না চাইলে কোনো সমস্যা নেই, আমিও বিবাহিত পুরুষ বা হতে যাচ্ছি)। আপনার চিত্রগুলো খুব খুব একপেশে মনে হচ্ছিল। (খুব সামান্যই ভালো কিছু আমি খুঁজে পেয়েছি। আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি আপনাকে কী বলতে চেয়েছি)। আপনার কাজ দেখে মনে হয়েছে আপনি সবসময়ই খুব ভয়ে থাকেন, যদি-না কোনো নারীবিষয়ক চিত্র আপনার শিল্পে ধরা দেয়!”

আরেকটি চিঠির প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আগেই উল্লেখ করেছি লরেন্স যদি বুঝতে পারতেন তাকে কেউ ব্যবহার করছে বা তার সঙ্গে আর্থিক কোনো অনিয়মে দুরভিসন্ধি আঁটছে তখন তিনি সে-নিয়েও কলম তুলতে ভুলতেন না। এমি লোয়েল একজন শিল্পী, প্রকাশক, এজেন্ট, লরেন্সের এবং ব্যক্তিগত বন্ধু। তাঁর চিঠিতেও তেমন একটি আভাস আমরা খুঁজে পাই।

ফেব্রুয়ারি ১৩, ১৯২০

প্রিয় এমি

১৩ শ’ লিরা চেকসহ আপনার চিঠি হাতে এসেছে। নিউ ইয়ারে এভাবে আমাদের মনে রাখার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব ভালো হতো যদি বলতে পারতাম এই টাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই, কিন্তু তা বলতে পারছি না। প্রশ্ন হলো আমার দিক থেকে সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করার পরেও আমি কেন যথেষ্ট পরিমাণ টাকা রোজগার করতে পারছি না! আর যাই হোক, আপনি তো জানেন এই ধরনের অনুদান হাতে এলে খুব রাগ হয়। না, আপনার কাছ থেকে নয় নিশ্চয়ই। আপনি একজন শিল্পী এবং আপনার সঙ্গে সবসময় একটি অংশীদারিত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমার বজায় থাকবে। কিন্তু যখন ক্যানন (কথাসাহিত্যিক) আমাকে লিখে জানান এবং বলতে চান যে তিনি আমার লেখালেখির সম্মানী বাবদ কিছু ডলার জোগার করেছেন এবং যা আমি এখনো হাতে পাইনি তখনই মনে খটকা লাগে। ক্যাননের এই পয়সা রোজগারের বিষয়গুলো দেখে আমি খুব বিরক্ত। সে আমার সম্পর্কে আমেরিকার পত্রপত্রিকায় খুব বাজে কিছু কথাও বলে বেড়াচ্ছে। তাহলে আমি একজন সাহিত্যের চেরিটি বয়!”

আমেরিকার বিখ্যাত ‘পোয়েট্রি’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক হ্যারিয়েট মনরোর সঙ্গে ডি.এইচ. লরেন্সের ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। তাঁরা প্রায় সময়ই পরস্পর চিঠি লিখতেন। সেই চিঠিতে লেখক-সম্পাদকের সঙ্গে যে কী মধুর এবং আত্মিক একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে সেই আভাস পাওয়া যায়। পাশাপাশি শিল্প সাহিত্য নিয়ে দুজনের মধ্যে নানা রকম তর্ক-বিতর্কও ধরা পড়ে। চিঠিটি পড়ুন।

“প্রিয় হ্যারিয়েট মনরো

গতকাল আপনার পাঠানো লেখক সম্মানী বাবদ ৮ পাউন্ড হাতে পেয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ দেখতে পেলাম যুদ্ধের উপর আমার কবিতাগুলো পোয়েট্রিতে ছাপা হয়েছে। এর জন্যেও আপনাকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পত্রিকায় একজন নারী লেখকের লেখা Metal checks পড়েছি। তাঁর কল্পনা এবং ভাবনা আমার পছন্দ হয়েছে কিন্তু তাঁর কবিতা খুবই বাজে মনে হয়েছে। আমি বরং মারিয়ান রিমির Face I shall neversee-man I shall never see এবং Unser Gott এর লেখাটি ঢের ভালো লেগেছে।”

ডি. এইচ. লরেন্স মৃত্যুর এক মাস আগেও অসুস্থ শরীর নিয়ে চিঠি লিখেছেন। তাঁর চিঠিতে ফুটে উঠেছিল বিষাদময় এক জীবন চিত্র। বন্ধু অলডাক্স হাক্সলির স্ত্রী মারিয়া হাক্সলিকে চিঠিটি এখানে তুলে দিচ্ছি।

“প্রিয় মারিয়া,

আপনার পাঠানো দুটো পার্সেল আমার ঠিকানায় এসেছে। পার্সেলটি দেখে মনে হচ্ছে খুবই বিলাসি কিছু। ফ্রিয়েদা তো আপনার প্রশংসায় সবসময় ডুবে থাকে। আর সব কিছুর জন্যে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

এখানে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। কাশি, অঘুম আর হার্টের ব্যাথা আমাকে কাবু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু এখানকার সবার ধারণা আমার জ্বর হয়নি। জায়গাটি ভালো নয়। এখানে বেশিদিন থাকা নিরাপদ বোধ করছি না-বাড়িতেই আমি বেশ ভালো থাকিÑ আমি এখন অসহনীয় অবস্থায় আছি। ফ্রিয়েদা তার কন্যা বারবি (বারবারা লরেন্স) এবং ইডা রুথকে নিয়ে আছে। আপনি কবে আসবেন বলে ভাবছেন?

জায়গাটি ভালো নয়।

ডি.এইচ.এল”

জীবনকে তিনি দেখতে পেরেছিলেন জীবনের কঠিন বাস্তবতার চোখ দিয়ে। যে কারণে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়েছেন, সাহিত্যেও ভাষায় নতুনত্ব এনেছেন এবং পাশাপাশি নিজের জীবন দর্শনটিকেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। একজন কথাসাহিত্যিক এ কারণেই হয়তো এত জোর দিয়ে এই কথাগুলো বলতে পারেন,

“নিজের একাকিত্বকে বিসর্জন দেয়ার মধ্যে ভালো কিছু নেই। এই একাকিত্বকে আজীবনের জন্যে সঙ্গী করা চাই। সময়ের স্রোতেই শূন্যস্থানগুলো পূরণ হয়ে যাবে। সময়! কিন্তু সেই সময়ের অপেক্ষাই করতে হবে। নিজের একাকিত্বকে গ্রহণ করে নাও এবং আজীবনের জন্যে সঙ্গী করে নাও। এবং যখন শূন্যস্থানগুলো পূরণ হবে তখন সেই সময়কেও গ্রহণ কর। কিন্তু সেই মোক্ষম ক্ষণটি তোমার কাছে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসতে হবে। সেখানে কোনো জোর জবরদস্তি চলে না।” (লেডি চ্যাটার্লিস লাভার”)

মেবেল স্টার্ন-এর (নিউইয়র্কের বিখ্যাত শিল্পী, উপস্থাপিকা এবং অভিনেত্রি) সঙ্গে ডি. এইচ. লরেন্সের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের। মৃত্যুর এক মাস আগে লেখেনÑ

প্রিয় মেবেল,

আশা করি আপনি ভালো আছেন এবং শান্তিতেই আছেন। আপনার গল্পটি আমি পেয়েছি। আমি আপনার জীবনের গল্পটা জানি। অবশ্যই এই গল্পটি শুধু একান্ত আপনাকে নিয়েই। সেখানে শুধুই আপনি। কিন্তু আমি মনে করি যখন আপনি একা থাকবেন তখন আপনি সেই একাকিত্ব থেকেও নিজেকে মুক্ত হতে পারবেন না।

যাই হোক, সামনেই বসন্তের আগমন! সেই সঙ্গে জাগছে নতুন আশা আর স্বপ্ন। আশা করি আবার নতুন করে জীবন শুরু হবে।

ডি. এইচ. এল

হায়! সেই অনাগত বসন্তের রোদ আর গায়ে মাখার সুযোগ পেলেন না ডি. এইচ. লরেন্স। ১৯৩০ সালের ২ মার্চ মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি যক্ষায় তাঁকে খুব অবেলায় চলে যেতে হলো।