কবি চার্লস বুকোওস্কি

জ্বলছি জলে, ডুবছি আগুনে অপ্রতিরোধ্য শিহরণে

অশোক কর

২০২০ সালে, কবিতার অপ্রতিরোধ্য শিহরন জাগানিয়া কবি চার্লস বুকোওস্কির জন্মশতবর্ষে নতুন প্রজন্মের শিল্প-পাঠকদের জন্য তাঁকে নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রচেষ্টা। যদিও শ্রদ্ধা, ভালবাসায় তাঁকে ‘কবি’ সম্মননায় আত্মতৃপ্ত অনুভব করছি, তবে নিঃসঙ্কচিত্তে আপামর আমরা তাঁকে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, সম্পাদক, প্রকাশক, সংগঠক, প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব বলেই জানি। সর্বপরি তিনি বৈচিত্র্যময় আম-জনতার কবি, মূলধারা সাহিত্যের বিপরীতে মুক্তধারা সাহিত্যের (আন্ডারগ্রাউন্ড লিটারেচার) এর সফল প্রবক্তা। নির্মোহ এই মানুষটি অর্থ, মোহ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি; সবকিছু উপেক্ষা করে, আজীবন সরল, সাধারণ জীবনযাপন করে গেছেন। শিল্প-সাহিত্যই তাঁর একমাত্র চাওয়া এবং বাঁচার প্রেরণা।

চার্লস বুকোওস্কির প্রপিতামহ হাঙ্গেরিয়া থেকে আসা জার্মান, পরবর্তিতে আমেরিকার অভিবাসী। বাবা হাইনরিশ হাইনে, বুকোওস্কির জন্ম আমেরিকায়, প্রথম মহাযুদ্ধে আমেরিকান সৈন্য হিসাবে তাঁকে যুদ্ধে পাঠানো হয় জার্মানিতে। তাঁর বাবা যুদ্ধশেষে জার্মানিতেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন, ব্যাবসা শুরু করেন। সেখানেই ক্যাথরিনার সাথে তাঁর পরিচয়, একসঙ্গে বসবাস এবং শতবর্ষ আগে, ১৯২০ সালের ২০শে আগস্ট চার্লস (হাইনরিশ কার্লস) বুকোওস্কির জন্ম হয়, জার্মানির এ্যানডারনাসে। যদিও বুকোওস্কির আজীবন দাবি সে তার বাবা-মায়ের বিবাহবর্হিভূত সন্তান, কিন্তু জার্মানির বিবাহ নথিপত্রে জানা যায় ১৯২০ সালের জুলাই মাসে (বুকোওস্কির জন্মের এক মাস আগে) তাঁদের বিবাহ হয়। যদিও আমেরিকার নাগরিক চার্লস বুকোওস্কি, কিন্তু জার্মানির রক্তের আত্মীয়তা তাঁকে এক অপার অনুভূতির জন্ম দেয়! লিখেছেন: “যখনই জার্মানিতে আসি, আত্মা দিয়ে জার্মানির আত্মীয়তা অনুভব করি; দুরন্ত ছুটছে আমার রক্ত, আমি তা অনুভব করতে পারি!”

জীবনের অর্থহীনতার বিবর্ণ অস্তিত্বময় বৈশিষ্ট্যগুলিই বুকোওস্কির ক্লাসিক। ক্লাসিক সেই বৈশিষ্ট্যময় স্যাটায়ারে কৌতূহল নিরসনের অন্তর্দৃষ্টি দেয়। তার কবিতায়, মৃত্যুর অনিবার্যতা মানবতার অনুসন্ধানকে অর্থময় করে তোলে

ইতঃমধ্যে বাবার ব্যবসায় ব্যর্থতা, দেউলিয়াত্ব, শিশু বুকোওস্কির জন্ম এবং আর্থিক সমস্যা জর্জরিত বুকোওস্কি পরিবার ফের আমেরিকায় লস্ এ্যাঞ্জেলসে পাড়ি জমান আড়াই বছর বয়সি সন্তানের সাথে। আমেরিকার ‘গ্রেট ডিপ্রেশান’কালীন অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের মধ্যে বুকোওস্কি পরিবার নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত, চরম দারিদ্র্যে জীবনযাপনকে আর কোনোভাবেই অতিক্রম করতে পারেনি। পুরো পরিবারটি আর্থিক-মানসিক অবক্ষয়ের ভিতর দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করেছে। বেকার, হতদরিদ্র পরিবারটি মানসিক ভারসাম্য হারাবার প্রান্তমুহূর্ত অবদমনের জন্য একমাত্র সন্তানটি নজিরবিহীন যন্ত্রণা আর শারীরিক নির্যাতনের পথ বেছে নেয়! চার্লস বুকোওস্কি তাঁর বাড়িকে বর্ণনা করেছেন “the house of horrors” লিখেছেন: অভাবের তাড়নায় তাঁকে পড়ানো হতো জার্মান থেকে নিয়ে আসা উদ্ভট পোশাক, স্কুলের বন্ধুরা তাঁকে পরিহাস করতো, বিদ্রুপ পোহাতে হলো, আর তাঁর মা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সারাটা পথ মারতে মারতে নিয়ে যেতো আর নিয়ে আসতো: “কাপড় কিনতে, কাপড় ধুতে পয়সায় লাগে তা জানো না?” যে কোনো অজুহাতে বাবা-মা দু’জনেই তাঁকে মারতে মারতে ‘হাগিয়ে’ (চার্লস বুকোওস্কির ভাষায়) ফেলতো। তাঁকে যখনই চিৎকার করে খেতে আসতে ডাকা হতো, ভয়ে আতঙ্কে শিউড়ে উঠতো বালক বুকোওস্কি; তাঁর জানা ছিলো এখনই প্রতি পদক্ষেপে, প্রতিটি কথায়, তাঁকে অসহনীয় শারীরিক নির্যাতন করা হবে।

তারপরেও বুকোওস্কি বলেছেন: “My father was a great literary teacher, he taught me the meaning of pain-pain without reason.” কিশোর জীবন থেকেই বুকোওস্কির অন্তর্দৃষ্টি, প্রজ্ঞা আর বিজ্ঞতা, সৌজন্যতা আর বিচক্ষণতা অতুলনীয়। তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা বক্তৃতায় কাউকে কখনো কোনো কিছুর জন্য দায়ী বা দোষারোপ করেননি, কাউকে বিদ্রুপ, অশালীন মন্তব্য করেননি, একমাত্র নিজেকে ছাড়া। সেজন্য তার কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চিত্রনাট্য, বক্তৃতা, সবকিছু ‘আমি’ উত্তমপুরুষে লেখা, যাতে ভুলক্রমেও যেন কাউকে অযাচিত বিব্রত করতে না হয়। কিশোর বুকোওস্কি প্রতিবাদের বদলে, বরং বাবার সাথে দিনমজুরের (ডেইলি লেবার) কাজে গেছেন ৮৮ সেন্ট/ঘন্টার শ্রমে, ২২ সেন্টের একটা বার্গারে সারাদিনের ক্ষুণিœবৃত্তি মিটিয়ে বাকি শ্রমের দাম সংসারে বাবা-মাকে দিয়েছেন। ১৪ বছর পর্যন্ত হাইস্কুলের দিনগুলিতে মজুরি, নির্যাতন, শ্রম আর লেখাপড়ার ভিতর দিয়ে জীবন ও পরিপার্শ্ব, বাস্তবতা, সামাজিকতা, মূল্যবোধকে আত্মার ভিতরে শুষে নিয়েছেন বুকোওস্কি, মানুষের গোটা জীবনাচারণকে আত্মস্থ করেছেন স্যাটেয়ারে। পক্ষান্তরে, মানুষের প্রতি, জীবনের প্রতি তার শ্রদ্ধা, মহত্ত্ব, সততা তুলনাহীন রকমের বাস্তবিক। বুকোওস্কি বলেছেন, “আমার জীবনে এই সব পাশবিক নির্যাতন সহ্য করার প্রয়োজন ছিলো, যার মধ্যে সংবেদনশীলতার ছিঁটেফোঁটাও অবশিষ্ট ছিলো না, যা পরবর্তিতে আমার লেখার আব্রুহীন রূঢ় সাহিত্য স্টাইল তৈরির ক্ষেত্রে অপরিহার্য মনে হয়েছিলো। যখন আপনি নিয়মিত পাশবিক নির্যাতিত হবেন, তা থেকে আপনি যে শিক্ষা পাবেন, সেভাবেই তো লিখে বা বলে বোঝাবেন!”

কিশোর বুকোওস্কির জীবনে আরো এক বিপর্যয় নেমে আসে ১৪ বছরের জীবনে। বুকোওস্কি হঠাৎ ব্রনের (Acne Vulgaris) মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তাঁকে হাসপাতালে এনে, মুখভর্তি গভীর ক্ষতগুলোকে ইলেকট্রিক ড্রিল দিয়ে ফাটিয়ে এন্টিবায়োটিক চিকিৎসায় রাখা হয়। ৮৫ বছর আগে এটাই ছিলো ব্রনের (Acne Vulgaris) যুগান্তকারী চিকিৎসা। তার ক্ষত মুখভর্তি ছড়িয়ে পড়েছিলো, আর তাঁর মুখাবয়র কদাকার বীভৎস হয়ে পড়ে সারাজীবনের জন্য। বুকোওস্কির বর্নণায়: “বিষাক্ত জীবন অবশেষে আমার মধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে উঠলো। যে অপরিণতি বয়সে একজন কিশোরের জীবন সম্পর্কে বোঝার কথা নয়, সেই বয়সে অসহায় যন্ত্রণার মাধ্যমে জীবন আমাকে অনেক কিছু চিনিয়ে দিলো; চেনালো অবর্নণীয় যন্ত্রণা আর বাস্তবতার পাশবিকতা!” এই বিপর্যয়ের ভিতর থেকেই বুকোওস্কি খুঁজে নিলেন তাঁর বাকি জীবনের পথ চলার অঙ্গীকার-, “হাসপাতালেই আমার জীবনে কবিতা লেখার হাতেখড়ি, কবিতায় আত্মনিবেদনের মাধ্যমে আমি ব্যথা, যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার শিক্ষা পেলাম!”

জীবনের অর্থহীনতার বিবর্ণ অস্তিত্বময় বৈশিষ্ট্যগুলিই বুকোওস্কির ক্লাসিক। ক্লাসিক সেই বৈশিষ্ট্যময় স্যাটায়ারে কৌতূহল নিরসনের অন্তর্দৃষ্টি দেয়। তার কবিতায়, মৃত্যুর অনিবার্যতা মানবতার অনুসন্ধানকে অর্থময় করে তোলে। তাঁর লেখায় প্রথাগত অশ্লীলতা আসে একটি গভীর দুঃখ, সংবেদনশীলতার ভারসাম্য হিসাবে। প্রথাগত ধারায় কখনই কোনো কিছু লেখেননি বুকোওস্কি, গভীর অন্তদৃষ্টি আর দারুণ বুদ্ধিমত্তায় গতানুগতিকতাকে তিনি আবর্জনার মতো বর্জন করেছেন। ফলত তার লেখা “Underground Literature” বা “Clandestine Literature” হিসাবে প্রকাশিত হতে থাকে, আর তাঁর সুবিশাল আন্ডারগ্রাউন্ড পাঠকচক্র গড়ে ওঠে। আন্ডারগ্রাউন্ড বা ক্লেন্ডাস্টাইন সাহিত্য, যা সম্পাদকীয় ও প্রকাশনা রীতিমালা বা প্রক্রিয়া, মূলধারা বা প্রচলিত আইনী প্রকাশনা নীতিমালার সাথে বৈপরীত্যযুক্ত, যা নিজস্ব বা স্বগোষ্ঠি নিয়ন্ত্রিত প্রকাশনার সাথে জড়িত। আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্য প্রায়শই সেন্সরশিপ, প্রসিকিউশন বা আইনী দমনকে (সরকার অনুমোদিত, গোঁড়া প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ আইন) দূরে রাখার একটি প্রচেষ্টা। ফলে দ্রুত বুকোওস্কি ঋইও এর অনুসন্ধানের আওতায় পড়েন।

স্বাভাবতই FBI তাঁকে Draft Law আইনের ফাঁদে ফৌজদারী মামলায় গ্রেফতার করে ২৪ বছর বয়সে। Draft Law হলো যে কোনও জাতির সামরিক বাহিনীতে কাজ করার জন্য সরকার কর্তৃক আরোপিত বাধ্যবাধকতা রোধ করার প্রচেষ্টা, যা ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নাগরিককে সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ছিলো এবং তাদেরকে ভিয়েতনামে যুদ্ধে পাঠানো হতো। ১৭ দিন আটক থাকার পরে জেলে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় সামরিক বাহিনীতে ভর্তির অযোগ্য প্রমাণিত হবার পর জেল থেকে ছাড়া পান বুকোওস্কি। ঘটনাটি নিজের ও পারিবারের আর্থিক প্রশান্তির পরিপন্থী মনে হবার কারণে বুকোওস্কি লেখালেখি বাদ দিয়ে একের পর এক নি¤œরুজির কাজ শুরু করেন, অবশেষে পোস্ট অফিসে একটি স্থায়ী কাজ খুঁজে পান।

একটানা দশ বছর পোস্ট অফিসে কাজ করার সময়ে বুকোওস্কি অতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন, এবং তার মাসুল দিতে হয় দুর্ভাগ্যজনকভাবে। ৩৫ বছর বয়সে পাকস্থলীর প্রদাহের কারণে নাক-মুখ-পায়ু-মূত্রনালি দিয়ে যুগপৎ রক্তপাত শুরু হয়। তাঁকে হাসপাতালের চ্যারিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাহীন ফেলে রাখা হয় সপ্তাহের অধিক, ব্যাপক রক্তপাতের ফলে মরে যাবার পক্ষে তা ছিলো যথেষ্ট সময়। সৌভাগ্যবশত তেমন বিয়োগান্তক কোনো ঘটনা ঘটেনি, বুকোওস্কি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। দীর্ঘ দশ বছর পর আবার লেখালেখি শুরু করেন বুকোওস্কি। কাকতালীয় ব্যাপার হলো; তার জীবনে দু’বারই গুরুতর অসুস্থতার পর হাসপাতালে তাঁর লেখালেখির সূত্রপাত ঘটে। এবং এবারো, সেই আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যেই। মূলত তাঁর সাহিত্যজীবন আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যেকেন্দ্রিক! এ পর্যায়ে বুকোওস্কি তাঁর লেখায় একাডেমিক ফর্মালিজমের (Academic Formalism) অন্তঃসারশূন্যতাকে স্যাটেয়ারে আর তাঁর নিরেট সাবলীল স্বকীয় স্টাইলে প্রকাশ করা শুরু করেন, এবং স্বদেশ আমেরিকা ও পুরো ইউরোপে পাঠক সমাদৃত হয়ে ওঠে তার সাহিত্যকর্ম।

এরপর বুকোওস্কির জীবন শুধুই এগিয়ে চলার গল্প! একাধারে তাঁর সাহিত্যরচনা চলতে থাকে আর প্রায় প্রতিদিন সেই লেখা ও কবিতার পড়ে শোনাবার অনুষ্ঠান। অসংখ্য পাঠক ও শ্রোতার উপস্থিতিতে বুকোওস্কি উদাত্ত কণ্ঠে আর সাবলীল বর্ণনায় নিজস্ব স্টাইলে নিজস্ব দর্শন বিলিয়ে দিতে থাকেন। তার কাব্য প্রকরণ এতটাই সাবলীল, নিরেট আর জীবন অভিজ্ঞতার মর্মমূল থেকে উঠে আসা যে, দৈনন্দিন জীবনের গভীর মুহূর্তগুলো পাঠক/শ্রোতাদের বদ্ধ-মননের প্রাচীর ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে আত্মদৃষ্টিকে চোখের সামনে মেলে ধরে। এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, নতুন অন্তর্দৃষ্টি, জীবনকে দেখা, জানা, উপলব্ধি করার স্বরোপিত অভিজ্ঞান; একাডেমিক ফর্মালিজমের বা যাবতীয় সাহিত্যিক-নন্দনতত্ত্বের বাইরে নিজস্ব এক আত্মোপলব্ধি, বুকোওস্কির একান্ত নিজস্ব অভিজ্ঞতাজাত। বুকোওস্কি বলেছেন: only dedication won’t give you anything in life, you have to be intelligent. বুকোওস্কি সেই বুদ্ধিমত্তাকে পাঠক ও শ্রোতার মধ্যে সঞ্চার করতে চেয়েছেন তার লেখার মাধ্যমে, কথা, কাজের মাধ্যমে; বুঝিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধিমত্তা শুধু কবি বা লেখকের নিজের জন্য নয়, বুদ্ধিমত্তাকে পাঠক ও শ্রোতার মননে জাগিয়ে তোলার নামই মানবিকতা।

বুকোওস্কি জীবিকার জন্য ট্রাক চালকের কাজ নেন আর কবিতা লিখতে শুরুতে থাকেন অকাতরে। কবিতা পাঠাবার নির্দ্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচিত ছিলো না তখন তাঁর। তাই একদিন লটারির মতো একটা ম্যাগাজিন তুলে নিয়ে সেখানে তার কটি কবিতা পাঠিয়ে দিলেন। বুকোওস্কি স্মৃতিচারণে বলেছেন: “আমি ভেবেছিলাম ম্যাগাজিনটার কোনো এক বৃদ্ধা কর্মী আমার কবিতা পড়ে বিরক্ত হয়ে লেখা ফেরত পাঠাবেন। পরিবর্তে, আমি এক মহিলার প্রশংশাপত্র পেলাম, তাতে আমাকে ‘এক প্রতিভা’ বলা হয়েছে। আরো আশ্চর্যের: সেই সুন্দরী মহিলা (বারবারা ফ্রেই, Harlequin Magazine কবিতা পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক) আমার সাথে পরিচিত হতে এলেন। আমার মতো কদাকার, দুর্বিনীত মাতালের সাথে কোনো সুন্দরী যুবতি মহিলা দু- কথা বলতে পারে, তা আমার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায়নি। তিনি আমার সাথে দেখা করতে এলেন, আমরা একে অপরকে জানলাম, এবং আমাদের বিয়ে হয়ে গেল! তারপরে জানলাম, আমার স্ত্রী একজন মিলিয়নিয়ার এবং বিষয়টি আমার জন্য ভীতিকর মনে হলো। দু’বছর পরে, আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে আমার নিজস্ব বোহেমিয়ান জীবনে ফিরে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছি। এরপর আমি ‘ফ্রান্সেস স্মিথ’এর সাথে ‘লিভিং টুগেদার’ শুরু করি, আমার কন্যা মেরিনা লুইস বুকোওস্ক’ এর জন্ম হয়, এখন ও একজন প্রতিভাবান স্নাতক।”

বুকোওস্কি আবার তাঁর পোস্ট অফিসের কাজে ফিরে আসেন আর তাঁর লেখালিখির সবটুকুই আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যে নিয়োজিত রাখেন। এই সময় “ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেস” (বর্তমানে Harper Collins Publications) প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা জন মার্টিন এর কাছ থেকে “ব্ল্যাক স্প্যারো” প্রেস পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেবার প্রস্তাব আসে। আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যের অস্পষ্টতা প্রকৃতপক্ষে বুকোওস্কির সাহিত্য প্রতিভার আত্মগত বিষয়। বুকোওস্কি কবিস্বীকৃতির স্বতন্ত্রতার প্রতিশ্রুতি ‘জীবনের চেয়েও বৃহত্তর জীবন’-এর অবলম্বন হিসাবেই পরিচর্যা করেছেন আজীবন, নিজের কাছে সৎ থেকে, সততাকে সবকিছুর উপরে স্থান দিয়ে। বুকোভস্কির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তের পর জন মার্টিন প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেন যে “বুকোওস্কি মূলধারার লেখক নন এবং তিনি কখনই মূলধারার ব্যক্তিত্ব হবেন না।” এরপর বুকোওস্কি “ব্ল্যাক স্প্যারো”র দ্বায়িত্ব নেন এবং অবসরের আগ-পর্যন্ত সুচারুভাবে সেই দ্বায়িত্ব পালন করেন।

একইভাবে জন মার্টিন বুকোভস্কির ক্যারিয়ার শুরুর দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই যার লক্ষাধিক বই পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে এবং এক ডজনেরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে;- তবুও মূলধারার অংশ না হওয়ার সিদ্ধান্ত, সংজ্ঞায়িত করেছে বুকোওস্কি তাঁর প্রেরণার সাথে কতটা অবিচ্ছেদ্য। তিনি সেই সমস্ত লেখকদের একজন, যাঁর প্রত্যেকটি নতুন পাঠক সীমাবদ্ধ।

যদিও মূলধারার অংশ না হওয়ার সিদ্ধান্ত, আর মুক্তধারার সাহিত্যে (Underground Literature) ওতপ্রোত সংলগ্ন থাকার প্রেরণা বুকোওস্কিকে ক্ষুদ্র গ-িতে আবদ্ধ রাখার সম্ভাব্যতাকে প্রকট করে তুলেছিলো মূলধারার আলোচকদের মধ্যে; কিন্তু বুকোওস্কির ক্ষেত্রে তা অমূলক প্রমাণিত হলো। তাঁর প্রতিভা আর প্রখ্যাতি মার্কিন গণ্ডি অতিক্রম করে পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়লো। ১৯৮৬ সালে “Time” ম্যাগাজিন তাঁকে ‘The Laureate of American lowlife.’ আখ্যায়িত করে, যদিও মূলধারার সাহিত্যের প্রশস্তি বা উপেক্ষা, কিছুই তখন আর বুকোওস্কিকে মাতায় না; তিনি তাঁর নিজস্ব দর্শন, রচনাশৈলী আর নিজস্ব পাঠক গোষ্ঠির সন্ধান পেয়ে গেছেন। যদিও তাঁর স্বদেশ আমেরিকার যে কোনো কবির পাঠকগোষ্ঠীর তুলনায় তাঁর লেখা বিপুল জনপ্রিয়, প্রশংসিত, কিন্তু ইউরোপে তার পাঠকগোষ্ঠী ও জনপ্রিয়তা দেশের তুলনায় কল্পনাতীত; শতগুণেরও বেশি! তার যে কোনো কবিতাপাঠের আয়োজন করার জন্য প্রয়োজন হয় বিশাল স্টেডিয়াম, ৭০-৮০ হাজার থেকে লক্ষাধিক পাঠক-শ্রোতার সামনে বুকোওস্কি নিয়মিত কবিতা পড়ে শোনান, সেজন্য তাঁর বিন্দুমাত্র অহঙ্কার দেখা যায়নি। নিজেকে ‘জনতার কবি’ বিবেচনা করে জনতার কাতারেই থাকতে ভালবাসতেন তিঁনি!

ফ্রান্সের দার্শনিক জ্যাঁ জেনে ও জ্যাঁ পল সার্ত্র বুকোওস্কিকে ‘আমেরিকার বিশিষ্ট কবি’ আখ্যায়িত করে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু বুকোওস্কি সবিনয়ে সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন নি, মূলধারার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখবার জন্য। Dirty Realism সাহিত্যধারাকে আমেরিকার সাহিত্য আন্দোলন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা নেন এGranta Magazine-এর সাংবাদিক বিল বুফর্ড, তাতে বুকোওস্কির নামও অন্তর্ভুক্ত হয়, বুকোওস্কি তার সমর্থন বা প্রতিবাদ জানান নি। ডার্টি রিয়েলিজম যদি আমেরিকান লেখকদের নতুন প্রজন্মের কথাসাহিত্য বলা হয়, তবে তারা সমসাময়িক জীবনের বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে লিখেছেন- একজন নির্জন স্বামী, একটি অচেতন মা, একটি গাড়ি চোর, একটি পকেটমার, একজন মাদকাসক্ত- বুকোওস্কিকে তা লিখছেন বহু আগে থেকেই। তিনি জীবনের কোনো একটি বিরক্তিকর বিচ্ছিন্নতাকে উপজীব্য করে লিখেছেন, কখনও কখনও স্যাটায়ারকে তীক্ষ্ণ তরবারির মতো ব্যবহার করেছেন তার লেখায়। তার লেখা ও বলার প্রকৃতি বোধগম্য, বিদ্রূপাত্মক, কখনও অসংযত, কর্কশ কিন্তু মানবিক, গভীর সহানুভূতিশীল। এই লেখাগুলি কথাসাহিত্যে একটি নতুন ধারা তৈরিতে অবদান রেখেছে তার লেখনী কৌশলে, কিন্তু বুকোওস্কি এ থেকে কোনো সুবিধা বা স্বীকৃতি পাবার চেষ্টা করেননি। “American Who’s Who In America” প্রতিষ্ঠান যখন তাঁর কাছে জানতে চাইলো ‘আপনার জীবনের আদর্শ কি?’- বুকোওস্কি এক কথায় উত্তর দিলেন: ‘Don’t Try!’ শব্দবন্ধটি তার কবিতা “So You Want To Be A Writer?” থেকে নেয়া:

“তাহলে, লেখক হতে চাও তুমি?

যদি বিস্ফোরণ তোমার ভিতর থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে সব সত্ত্বেও

‘চেষ্টা করো না...’

এটাই বুকোওস্কির জীবন দর্শন!

মার্চ ৯, ১৯৯৪, চার্লস বুকোওস্কি ক্যান্সারে মারা গেলেন! তাঁর সমাধির এপিটাফে খোদাই করা রইলো তাঁর জীবনাদর্শন।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

কবি চার্লস বুকোওস্কি

জ্বলছি জলে, ডুবছি আগুনে অপ্রতিরোধ্য শিহরণে

অশোক কর

image

২০২০ সালে, কবিতার অপ্রতিরোধ্য শিহরন জাগানিয়া কবি চার্লস বুকোওস্কির জন্মশতবর্ষে নতুন প্রজন্মের শিল্প-পাঠকদের জন্য তাঁকে নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রচেষ্টা। যদিও শ্রদ্ধা, ভালবাসায় তাঁকে ‘কবি’ সম্মননায় আত্মতৃপ্ত অনুভব করছি, তবে নিঃসঙ্কচিত্তে আপামর আমরা তাঁকে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, সম্পাদক, প্রকাশক, সংগঠক, প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব বলেই জানি। সর্বপরি তিনি বৈচিত্র্যময় আম-জনতার কবি, মূলধারা সাহিত্যের বিপরীতে মুক্তধারা সাহিত্যের (আন্ডারগ্রাউন্ড লিটারেচার) এর সফল প্রবক্তা। নির্মোহ এই মানুষটি অর্থ, মোহ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি; সবকিছু উপেক্ষা করে, আজীবন সরল, সাধারণ জীবনযাপন করে গেছেন। শিল্প-সাহিত্যই তাঁর একমাত্র চাওয়া এবং বাঁচার প্রেরণা।

চার্লস বুকোওস্কির প্রপিতামহ হাঙ্গেরিয়া থেকে আসা জার্মান, পরবর্তিতে আমেরিকার অভিবাসী। বাবা হাইনরিশ হাইনে, বুকোওস্কির জন্ম আমেরিকায়, প্রথম মহাযুদ্ধে আমেরিকান সৈন্য হিসাবে তাঁকে যুদ্ধে পাঠানো হয় জার্মানিতে। তাঁর বাবা যুদ্ধশেষে জার্মানিতেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন, ব্যাবসা শুরু করেন। সেখানেই ক্যাথরিনার সাথে তাঁর পরিচয়, একসঙ্গে বসবাস এবং শতবর্ষ আগে, ১৯২০ সালের ২০শে আগস্ট চার্লস (হাইনরিশ কার্লস) বুকোওস্কির জন্ম হয়, জার্মানির এ্যানডারনাসে। যদিও বুকোওস্কির আজীবন দাবি সে তার বাবা-মায়ের বিবাহবর্হিভূত সন্তান, কিন্তু জার্মানির বিবাহ নথিপত্রে জানা যায় ১৯২০ সালের জুলাই মাসে (বুকোওস্কির জন্মের এক মাস আগে) তাঁদের বিবাহ হয়। যদিও আমেরিকার নাগরিক চার্লস বুকোওস্কি, কিন্তু জার্মানির রক্তের আত্মীয়তা তাঁকে এক অপার অনুভূতির জন্ম দেয়! লিখেছেন: “যখনই জার্মানিতে আসি, আত্মা দিয়ে জার্মানির আত্মীয়তা অনুভব করি; দুরন্ত ছুটছে আমার রক্ত, আমি তা অনুভব করতে পারি!”

জীবনের অর্থহীনতার বিবর্ণ অস্তিত্বময় বৈশিষ্ট্যগুলিই বুকোওস্কির ক্লাসিক। ক্লাসিক সেই বৈশিষ্ট্যময় স্যাটায়ারে কৌতূহল নিরসনের অন্তর্দৃষ্টি দেয়। তার কবিতায়, মৃত্যুর অনিবার্যতা মানবতার অনুসন্ধানকে অর্থময় করে তোলে

ইতঃমধ্যে বাবার ব্যবসায় ব্যর্থতা, দেউলিয়াত্ব, শিশু বুকোওস্কির জন্ম এবং আর্থিক সমস্যা জর্জরিত বুকোওস্কি পরিবার ফের আমেরিকায় লস্ এ্যাঞ্জেলসে পাড়ি জমান আড়াই বছর বয়সি সন্তানের সাথে। আমেরিকার ‘গ্রেট ডিপ্রেশান’কালীন অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের মধ্যে বুকোওস্কি পরিবার নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত, চরম দারিদ্র্যে জীবনযাপনকে আর কোনোভাবেই অতিক্রম করতে পারেনি। পুরো পরিবারটি আর্থিক-মানসিক অবক্ষয়ের ভিতর দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করেছে। বেকার, হতদরিদ্র পরিবারটি মানসিক ভারসাম্য হারাবার প্রান্তমুহূর্ত অবদমনের জন্য একমাত্র সন্তানটি নজিরবিহীন যন্ত্রণা আর শারীরিক নির্যাতনের পথ বেছে নেয়! চার্লস বুকোওস্কি তাঁর বাড়িকে বর্ণনা করেছেন “the house of horrors” লিখেছেন: অভাবের তাড়নায় তাঁকে পড়ানো হতো জার্মান থেকে নিয়ে আসা উদ্ভট পোশাক, স্কুলের বন্ধুরা তাঁকে পরিহাস করতো, বিদ্রুপ পোহাতে হলো, আর তাঁর মা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সারাটা পথ মারতে মারতে নিয়ে যেতো আর নিয়ে আসতো: “কাপড় কিনতে, কাপড় ধুতে পয়সায় লাগে তা জানো না?” যে কোনো অজুহাতে বাবা-মা দু’জনেই তাঁকে মারতে মারতে ‘হাগিয়ে’ (চার্লস বুকোওস্কির ভাষায়) ফেলতো। তাঁকে যখনই চিৎকার করে খেতে আসতে ডাকা হতো, ভয়ে আতঙ্কে শিউড়ে উঠতো বালক বুকোওস্কি; তাঁর জানা ছিলো এখনই প্রতি পদক্ষেপে, প্রতিটি কথায়, তাঁকে অসহনীয় শারীরিক নির্যাতন করা হবে।

তারপরেও বুকোওস্কি বলেছেন: “My father was a great literary teacher, he taught me the meaning of pain-pain without reason.” কিশোর জীবন থেকেই বুকোওস্কির অন্তর্দৃষ্টি, প্রজ্ঞা আর বিজ্ঞতা, সৌজন্যতা আর বিচক্ষণতা অতুলনীয়। তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা বক্তৃতায় কাউকে কখনো কোনো কিছুর জন্য দায়ী বা দোষারোপ করেননি, কাউকে বিদ্রুপ, অশালীন মন্তব্য করেননি, একমাত্র নিজেকে ছাড়া। সেজন্য তার কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চিত্রনাট্য, বক্তৃতা, সবকিছু ‘আমি’ উত্তমপুরুষে লেখা, যাতে ভুলক্রমেও যেন কাউকে অযাচিত বিব্রত করতে না হয়। কিশোর বুকোওস্কি প্রতিবাদের বদলে, বরং বাবার সাথে দিনমজুরের (ডেইলি লেবার) কাজে গেছেন ৮৮ সেন্ট/ঘন্টার শ্রমে, ২২ সেন্টের একটা বার্গারে সারাদিনের ক্ষুণিœবৃত্তি মিটিয়ে বাকি শ্রমের দাম সংসারে বাবা-মাকে দিয়েছেন। ১৪ বছর পর্যন্ত হাইস্কুলের দিনগুলিতে মজুরি, নির্যাতন, শ্রম আর লেখাপড়ার ভিতর দিয়ে জীবন ও পরিপার্শ্ব, বাস্তবতা, সামাজিকতা, মূল্যবোধকে আত্মার ভিতরে শুষে নিয়েছেন বুকোওস্কি, মানুষের গোটা জীবনাচারণকে আত্মস্থ করেছেন স্যাটেয়ারে। পক্ষান্তরে, মানুষের প্রতি, জীবনের প্রতি তার শ্রদ্ধা, মহত্ত্ব, সততা তুলনাহীন রকমের বাস্তবিক। বুকোওস্কি বলেছেন, “আমার জীবনে এই সব পাশবিক নির্যাতন সহ্য করার প্রয়োজন ছিলো, যার মধ্যে সংবেদনশীলতার ছিঁটেফোঁটাও অবশিষ্ট ছিলো না, যা পরবর্তিতে আমার লেখার আব্রুহীন রূঢ় সাহিত্য স্টাইল তৈরির ক্ষেত্রে অপরিহার্য মনে হয়েছিলো। যখন আপনি নিয়মিত পাশবিক নির্যাতিত হবেন, তা থেকে আপনি যে শিক্ষা পাবেন, সেভাবেই তো লিখে বা বলে বোঝাবেন!”

কিশোর বুকোওস্কির জীবনে আরো এক বিপর্যয় নেমে আসে ১৪ বছরের জীবনে। বুকোওস্কি হঠাৎ ব্রনের (Acne Vulgaris) মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তাঁকে হাসপাতালে এনে, মুখভর্তি গভীর ক্ষতগুলোকে ইলেকট্রিক ড্রিল দিয়ে ফাটিয়ে এন্টিবায়োটিক চিকিৎসায় রাখা হয়। ৮৫ বছর আগে এটাই ছিলো ব্রনের (Acne Vulgaris) যুগান্তকারী চিকিৎসা। তার ক্ষত মুখভর্তি ছড়িয়ে পড়েছিলো, আর তাঁর মুখাবয়র কদাকার বীভৎস হয়ে পড়ে সারাজীবনের জন্য। বুকোওস্কির বর্নণায়: “বিষাক্ত জীবন অবশেষে আমার মধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে উঠলো। যে অপরিণতি বয়সে একজন কিশোরের জীবন সম্পর্কে বোঝার কথা নয়, সেই বয়সে অসহায় যন্ত্রণার মাধ্যমে জীবন আমাকে অনেক কিছু চিনিয়ে দিলো; চেনালো অবর্নণীয় যন্ত্রণা আর বাস্তবতার পাশবিকতা!” এই বিপর্যয়ের ভিতর থেকেই বুকোওস্কি খুঁজে নিলেন তাঁর বাকি জীবনের পথ চলার অঙ্গীকার-, “হাসপাতালেই আমার জীবনে কবিতা লেখার হাতেখড়ি, কবিতায় আত্মনিবেদনের মাধ্যমে আমি ব্যথা, যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার শিক্ষা পেলাম!”

জীবনের অর্থহীনতার বিবর্ণ অস্তিত্বময় বৈশিষ্ট্যগুলিই বুকোওস্কির ক্লাসিক। ক্লাসিক সেই বৈশিষ্ট্যময় স্যাটায়ারে কৌতূহল নিরসনের অন্তর্দৃষ্টি দেয়। তার কবিতায়, মৃত্যুর অনিবার্যতা মানবতার অনুসন্ধানকে অর্থময় করে তোলে। তাঁর লেখায় প্রথাগত অশ্লীলতা আসে একটি গভীর দুঃখ, সংবেদনশীলতার ভারসাম্য হিসাবে। প্রথাগত ধারায় কখনই কোনো কিছু লেখেননি বুকোওস্কি, গভীর অন্তদৃষ্টি আর দারুণ বুদ্ধিমত্তায় গতানুগতিকতাকে তিনি আবর্জনার মতো বর্জন করেছেন। ফলত তার লেখা “Underground Literature” বা “Clandestine Literature” হিসাবে প্রকাশিত হতে থাকে, আর তাঁর সুবিশাল আন্ডারগ্রাউন্ড পাঠকচক্র গড়ে ওঠে। আন্ডারগ্রাউন্ড বা ক্লেন্ডাস্টাইন সাহিত্য, যা সম্পাদকীয় ও প্রকাশনা রীতিমালা বা প্রক্রিয়া, মূলধারা বা প্রচলিত আইনী প্রকাশনা নীতিমালার সাথে বৈপরীত্যযুক্ত, যা নিজস্ব বা স্বগোষ্ঠি নিয়ন্ত্রিত প্রকাশনার সাথে জড়িত। আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্য প্রায়শই সেন্সরশিপ, প্রসিকিউশন বা আইনী দমনকে (সরকার অনুমোদিত, গোঁড়া প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ আইন) দূরে রাখার একটি প্রচেষ্টা। ফলে দ্রুত বুকোওস্কি ঋইও এর অনুসন্ধানের আওতায় পড়েন।

স্বাভাবতই FBI তাঁকে Draft Law আইনের ফাঁদে ফৌজদারী মামলায় গ্রেফতার করে ২৪ বছর বয়সে। Draft Law হলো যে কোনও জাতির সামরিক বাহিনীতে কাজ করার জন্য সরকার কর্তৃক আরোপিত বাধ্যবাধকতা রোধ করার প্রচেষ্টা, যা ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নাগরিককে সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ছিলো এবং তাদেরকে ভিয়েতনামে যুদ্ধে পাঠানো হতো। ১৭ দিন আটক থাকার পরে জেলে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় সামরিক বাহিনীতে ভর্তির অযোগ্য প্রমাণিত হবার পর জেল থেকে ছাড়া পান বুকোওস্কি। ঘটনাটি নিজের ও পারিবারের আর্থিক প্রশান্তির পরিপন্থী মনে হবার কারণে বুকোওস্কি লেখালেখি বাদ দিয়ে একের পর এক নি¤œরুজির কাজ শুরু করেন, অবশেষে পোস্ট অফিসে একটি স্থায়ী কাজ খুঁজে পান।

একটানা দশ বছর পোস্ট অফিসে কাজ করার সময়ে বুকোওস্কি অতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন, এবং তার মাসুল দিতে হয় দুর্ভাগ্যজনকভাবে। ৩৫ বছর বয়সে পাকস্থলীর প্রদাহের কারণে নাক-মুখ-পায়ু-মূত্রনালি দিয়ে যুগপৎ রক্তপাত শুরু হয়। তাঁকে হাসপাতালের চ্যারিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাহীন ফেলে রাখা হয় সপ্তাহের অধিক, ব্যাপক রক্তপাতের ফলে মরে যাবার পক্ষে তা ছিলো যথেষ্ট সময়। সৌভাগ্যবশত তেমন বিয়োগান্তক কোনো ঘটনা ঘটেনি, বুকোওস্কি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। দীর্ঘ দশ বছর পর আবার লেখালেখি শুরু করেন বুকোওস্কি। কাকতালীয় ব্যাপার হলো; তার জীবনে দু’বারই গুরুতর অসুস্থতার পর হাসপাতালে তাঁর লেখালেখির সূত্রপাত ঘটে। এবং এবারো, সেই আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যেই। মূলত তাঁর সাহিত্যজীবন আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যেকেন্দ্রিক! এ পর্যায়ে বুকোওস্কি তাঁর লেখায় একাডেমিক ফর্মালিজমের (Academic Formalism) অন্তঃসারশূন্যতাকে স্যাটেয়ারে আর তাঁর নিরেট সাবলীল স্বকীয় স্টাইলে প্রকাশ করা শুরু করেন, এবং স্বদেশ আমেরিকা ও পুরো ইউরোপে পাঠক সমাদৃত হয়ে ওঠে তার সাহিত্যকর্ম।

এরপর বুকোওস্কির জীবন শুধুই এগিয়ে চলার গল্প! একাধারে তাঁর সাহিত্যরচনা চলতে থাকে আর প্রায় প্রতিদিন সেই লেখা ও কবিতার পড়ে শোনাবার অনুষ্ঠান। অসংখ্য পাঠক ও শ্রোতার উপস্থিতিতে বুকোওস্কি উদাত্ত কণ্ঠে আর সাবলীল বর্ণনায় নিজস্ব স্টাইলে নিজস্ব দর্শন বিলিয়ে দিতে থাকেন। তার কাব্য প্রকরণ এতটাই সাবলীল, নিরেট আর জীবন অভিজ্ঞতার মর্মমূল থেকে উঠে আসা যে, দৈনন্দিন জীবনের গভীর মুহূর্তগুলো পাঠক/শ্রোতাদের বদ্ধ-মননের প্রাচীর ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে আত্মদৃষ্টিকে চোখের সামনে মেলে ধরে। এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, নতুন অন্তর্দৃষ্টি, জীবনকে দেখা, জানা, উপলব্ধি করার স্বরোপিত অভিজ্ঞান; একাডেমিক ফর্মালিজমের বা যাবতীয় সাহিত্যিক-নন্দনতত্ত্বের বাইরে নিজস্ব এক আত্মোপলব্ধি, বুকোওস্কির একান্ত নিজস্ব অভিজ্ঞতাজাত। বুকোওস্কি বলেছেন: only dedication won’t give you anything in life, you have to be intelligent. বুকোওস্কি সেই বুদ্ধিমত্তাকে পাঠক ও শ্রোতার মধ্যে সঞ্চার করতে চেয়েছেন তার লেখার মাধ্যমে, কথা, কাজের মাধ্যমে; বুঝিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধিমত্তা শুধু কবি বা লেখকের নিজের জন্য নয়, বুদ্ধিমত্তাকে পাঠক ও শ্রোতার মননে জাগিয়ে তোলার নামই মানবিকতা।

বুকোওস্কি জীবিকার জন্য ট্রাক চালকের কাজ নেন আর কবিতা লিখতে শুরুতে থাকেন অকাতরে। কবিতা পাঠাবার নির্দ্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচিত ছিলো না তখন তাঁর। তাই একদিন লটারির মতো একটা ম্যাগাজিন তুলে নিয়ে সেখানে তার কটি কবিতা পাঠিয়ে দিলেন। বুকোওস্কি স্মৃতিচারণে বলেছেন: “আমি ভেবেছিলাম ম্যাগাজিনটার কোনো এক বৃদ্ধা কর্মী আমার কবিতা পড়ে বিরক্ত হয়ে লেখা ফেরত পাঠাবেন। পরিবর্তে, আমি এক মহিলার প্রশংশাপত্র পেলাম, তাতে আমাকে ‘এক প্রতিভা’ বলা হয়েছে। আরো আশ্চর্যের: সেই সুন্দরী মহিলা (বারবারা ফ্রেই, Harlequin Magazine কবিতা পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক) আমার সাথে পরিচিত হতে এলেন। আমার মতো কদাকার, দুর্বিনীত মাতালের সাথে কোনো সুন্দরী যুবতি মহিলা দু- কথা বলতে পারে, তা আমার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায়নি। তিনি আমার সাথে দেখা করতে এলেন, আমরা একে অপরকে জানলাম, এবং আমাদের বিয়ে হয়ে গেল! তারপরে জানলাম, আমার স্ত্রী একজন মিলিয়নিয়ার এবং বিষয়টি আমার জন্য ভীতিকর মনে হলো। দু’বছর পরে, আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে আমার নিজস্ব বোহেমিয়ান জীবনে ফিরে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছি। এরপর আমি ‘ফ্রান্সেস স্মিথ’এর সাথে ‘লিভিং টুগেদার’ শুরু করি, আমার কন্যা মেরিনা লুইস বুকোওস্ক’ এর জন্ম হয়, এখন ও একজন প্রতিভাবান স্নাতক।”

বুকোওস্কি আবার তাঁর পোস্ট অফিসের কাজে ফিরে আসেন আর তাঁর লেখালিখির সবটুকুই আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যে নিয়োজিত রাখেন। এই সময় “ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেস” (বর্তমানে Harper Collins Publications) প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা জন মার্টিন এর কাছ থেকে “ব্ল্যাক স্প্যারো” প্রেস পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেবার প্রস্তাব আসে। আন্ডারগ্রাউন্ড সাহিত্যের অস্পষ্টতা প্রকৃতপক্ষে বুকোওস্কির সাহিত্য প্রতিভার আত্মগত বিষয়। বুকোওস্কি কবিস্বীকৃতির স্বতন্ত্রতার প্রতিশ্রুতি ‘জীবনের চেয়েও বৃহত্তর জীবন’-এর অবলম্বন হিসাবেই পরিচর্যা করেছেন আজীবন, নিজের কাছে সৎ থেকে, সততাকে সবকিছুর উপরে স্থান দিয়ে। বুকোভস্কির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তের পর জন মার্টিন প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেন যে “বুকোওস্কি মূলধারার লেখক নন এবং তিনি কখনই মূলধারার ব্যক্তিত্ব হবেন না।” এরপর বুকোওস্কি “ব্ল্যাক স্প্যারো”র দ্বায়িত্ব নেন এবং অবসরের আগ-পর্যন্ত সুচারুভাবে সেই দ্বায়িত্ব পালন করেন।

একইভাবে জন মার্টিন বুকোভস্কির ক্যারিয়ার শুরুর দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই যার লক্ষাধিক বই পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে এবং এক ডজনেরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে;- তবুও মূলধারার অংশ না হওয়ার সিদ্ধান্ত, সংজ্ঞায়িত করেছে বুকোওস্কি তাঁর প্রেরণার সাথে কতটা অবিচ্ছেদ্য। তিনি সেই সমস্ত লেখকদের একজন, যাঁর প্রত্যেকটি নতুন পাঠক সীমাবদ্ধ।

যদিও মূলধারার অংশ না হওয়ার সিদ্ধান্ত, আর মুক্তধারার সাহিত্যে (Underground Literature) ওতপ্রোত সংলগ্ন থাকার প্রেরণা বুকোওস্কিকে ক্ষুদ্র গ-িতে আবদ্ধ রাখার সম্ভাব্যতাকে প্রকট করে তুলেছিলো মূলধারার আলোচকদের মধ্যে; কিন্তু বুকোওস্কির ক্ষেত্রে তা অমূলক প্রমাণিত হলো। তাঁর প্রতিভা আর প্রখ্যাতি মার্কিন গণ্ডি অতিক্রম করে পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়লো। ১৯৮৬ সালে “Time” ম্যাগাজিন তাঁকে ‘The Laureate of American lowlife.’ আখ্যায়িত করে, যদিও মূলধারার সাহিত্যের প্রশস্তি বা উপেক্ষা, কিছুই তখন আর বুকোওস্কিকে মাতায় না; তিনি তাঁর নিজস্ব দর্শন, রচনাশৈলী আর নিজস্ব পাঠক গোষ্ঠির সন্ধান পেয়ে গেছেন। যদিও তাঁর স্বদেশ আমেরিকার যে কোনো কবির পাঠকগোষ্ঠীর তুলনায় তাঁর লেখা বিপুল জনপ্রিয়, প্রশংসিত, কিন্তু ইউরোপে তার পাঠকগোষ্ঠী ও জনপ্রিয়তা দেশের তুলনায় কল্পনাতীত; শতগুণেরও বেশি! তার যে কোনো কবিতাপাঠের আয়োজন করার জন্য প্রয়োজন হয় বিশাল স্টেডিয়াম, ৭০-৮০ হাজার থেকে লক্ষাধিক পাঠক-শ্রোতার সামনে বুকোওস্কি নিয়মিত কবিতা পড়ে শোনান, সেজন্য তাঁর বিন্দুমাত্র অহঙ্কার দেখা যায়নি। নিজেকে ‘জনতার কবি’ বিবেচনা করে জনতার কাতারেই থাকতে ভালবাসতেন তিঁনি!

ফ্রান্সের দার্শনিক জ্যাঁ জেনে ও জ্যাঁ পল সার্ত্র বুকোওস্কিকে ‘আমেরিকার বিশিষ্ট কবি’ আখ্যায়িত করে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু বুকোওস্কি সবিনয়ে সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন নি, মূলধারার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখবার জন্য। Dirty Realism সাহিত্যধারাকে আমেরিকার সাহিত্য আন্দোলন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা নেন এGranta Magazine-এর সাংবাদিক বিল বুফর্ড, তাতে বুকোওস্কির নামও অন্তর্ভুক্ত হয়, বুকোওস্কি তার সমর্থন বা প্রতিবাদ জানান নি। ডার্টি রিয়েলিজম যদি আমেরিকান লেখকদের নতুন প্রজন্মের কথাসাহিত্য বলা হয়, তবে তারা সমসাময়িক জীবনের বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে লিখেছেন- একজন নির্জন স্বামী, একটি অচেতন মা, একটি গাড়ি চোর, একটি পকেটমার, একজন মাদকাসক্ত- বুকোওস্কিকে তা লিখছেন বহু আগে থেকেই। তিনি জীবনের কোনো একটি বিরক্তিকর বিচ্ছিন্নতাকে উপজীব্য করে লিখেছেন, কখনও কখনও স্যাটায়ারকে তীক্ষ্ণ তরবারির মতো ব্যবহার করেছেন তার লেখায়। তার লেখা ও বলার প্রকৃতি বোধগম্য, বিদ্রূপাত্মক, কখনও অসংযত, কর্কশ কিন্তু মানবিক, গভীর সহানুভূতিশীল। এই লেখাগুলি কথাসাহিত্যে একটি নতুন ধারা তৈরিতে অবদান রেখেছে তার লেখনী কৌশলে, কিন্তু বুকোওস্কি এ থেকে কোনো সুবিধা বা স্বীকৃতি পাবার চেষ্টা করেননি। “American Who’s Who In America” প্রতিষ্ঠান যখন তাঁর কাছে জানতে চাইলো ‘আপনার জীবনের আদর্শ কি?’- বুকোওস্কি এক কথায় উত্তর দিলেন: ‘Don’t Try!’ শব্দবন্ধটি তার কবিতা “So You Want To Be A Writer?” থেকে নেয়া:

“তাহলে, লেখক হতে চাও তুমি?

যদি বিস্ফোরণ তোমার ভিতর থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে সব সত্ত্বেও

‘চেষ্টা করো না...’

এটাই বুকোওস্কির জীবন দর্শন!

মার্চ ৯, ১৯৯৪, চার্লস বুকোওস্কি ক্যান্সারে মারা গেলেন! তাঁর সমাধির এপিটাফে খোদাই করা রইলো তাঁর জীবনাদর্শন।