এমসি কলেজে দলবদ্ধ ধর্ষণ

অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে বরখাস্তের নির্দেশ

দায়িত্বে অবহেলা করেছেন তারা : হাইকোর্ট

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে দলবেঁধে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কমরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এক রিটের শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে বরখাস্ত বা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন। আগামী সাত কার্যদিবসে এই আদেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। এর আগে মঙ্গলবার সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় জারি করা রুলের রায়ের জন্য গতকাল দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে দেশব্যাপী আলোড়িত এই ধর্ষণকান্ডের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।

একই সঙ্গে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অনুসন্ধানে যৌথ কমিটি গঠন করেন হাইকোর্ট। চার সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিতে ছিলেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা। পরে অনুসন্ধান কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সেখানে বলা হয়, ঘটনার সময় কলেজ বন্ধ থাকার পরও কয়েকজন ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করছিল। একজন প্রাক্তন ছাত্র ৫ নম্বর ব্লকের হোস্টেল সুপারের বাসভবন দখল করে ছিল। প্রাক্তন ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে কলেজে হোস্টেলের সিট দখল করে থাকার কারণে এবং প্রাক্তন ছাত্র সাইফুর রহমান হোস্টেল সুপারের বাসভবন জোর করে দখল করে থাকার কারণেই কলেজ হোস্টেল এলাকায় ‘গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ’ করার সাহস পেয়েছে।

‘ফলে ঘটনার তারিখে হোস্টেল ক্যাম্পাসে ওই ঘটনার নেপথ্যে মূলত হোস্টেল সুপারদের তদারকির ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের ওপরও এ দায়ভার চলে আসে।’ ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে বুধবার রায় দিল আদালত।

শাহপরান থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য গতবছর ৩ ডিসেম্বর ওই ধর্ষণ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক এ বছর ১৭ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে যান এক গৃহবধূ। এ সময় ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন ছাত্র ওই গৃহবধূকে স্বামীসহ কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা স্বামীকে বেঁধে মারধর করে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী ঘটনার দিন (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয় ৬ জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র। এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

এমসি কলেজে দলবদ্ধ ধর্ষণ

অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে বরখাস্তের নির্দেশ

দায়িত্বে অবহেলা করেছেন তারা : হাইকোর্ট

বিশেষ প্রতিনিধি

image

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে দলবেঁধে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কমরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এক রিটের শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে বরখাস্ত বা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন। আগামী সাত কার্যদিবসে এই আদেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। এর আগে মঙ্গলবার সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় জারি করা রুলের রায়ের জন্য গতকাল দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে দেশব্যাপী আলোড়িত এই ধর্ষণকান্ডের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।

একই সঙ্গে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অনুসন্ধানে যৌথ কমিটি গঠন করেন হাইকোর্ট। চার সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিতে ছিলেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা। পরে অনুসন্ধান কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সেখানে বলা হয়, ঘটনার সময় কলেজ বন্ধ থাকার পরও কয়েকজন ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করছিল। একজন প্রাক্তন ছাত্র ৫ নম্বর ব্লকের হোস্টেল সুপারের বাসভবন দখল করে ছিল। প্রাক্তন ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে কলেজে হোস্টেলের সিট দখল করে থাকার কারণে এবং প্রাক্তন ছাত্র সাইফুর রহমান হোস্টেল সুপারের বাসভবন জোর করে দখল করে থাকার কারণেই কলেজ হোস্টেল এলাকায় ‘গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ’ করার সাহস পেয়েছে।

‘ফলে ঘটনার তারিখে হোস্টেল ক্যাম্পাসে ওই ঘটনার নেপথ্যে মূলত হোস্টেল সুপারদের তদারকির ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের ওপরও এ দায়ভার চলে আসে।’ ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে বুধবার রায় দিল আদালত।

শাহপরান থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য গতবছর ৩ ডিসেম্বর ওই ধর্ষণ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক এ বছর ১৭ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে যান এক গৃহবধূ। এ সময় ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন ছাত্র ওই গৃহবধূকে স্বামীসহ কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা স্বামীকে বেঁধে মারধর করে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী ঘটনার দিন (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয় ৬ জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র। এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।