৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার

পাভেল পার্থ

আয়তনে ছোট কিন্তু বৈচিত্র্য-বৈভবে অনন্য দক্ষিণ এশিয়ার এক ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ। উত্তর-পূর্বের হিমালয় পাহাড় ও উজান থেকে নেমে আসা অসংখ্য নদ-নদী ও স্রোতধারার বয়ে আনা পলিমাটিতে গঠিত হয়েছে এই ব-দ্বীপ। নদীবিধৌত সমতলভূমি, চরাঞ্চল, প্রবালদ্বীপ, বরেন্দ্র, গড়, টিলা, পাহাড়, হাওর, বিল, ঝরনা, ঝিরি, ছড়া, গুহা, বাঁওড়, পত্রঝরা বন, বর্ষারণ্য, ম্যানগ্রোভ বন, গর্জন বন, দ্বীপ সব মিলিয়ে বাস্তুতন্ত্রের এমন বৈচিত্র্য বিরল। শুধু প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র নয়, জনজীবনের বৈচিত্র্যও এখানে অনন্য। পৃথিবীর সবচে’ বেশি ইরাবতী ডলফিনের বাস আমাদের সুন্দরবন উপকূলে। পৃথিবীর জীবিত একমাত্র তালিপাম গাছটি বাংলাদেশে। চামচ ঠুঁটো বাটান পাখি, চামড়াঝোলা ব্যাঙ বা রক্তচোখা কালো ব্যাঙের বৃহৎ বিচরণ অঞ্চল এই দেশ। একসময় এদেশে চাষ হতো ২০ হাজার জাতের ধান। উষ্ণমণ্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ুর এ দেশে ষড়ঋতুর বিস্ময়কর সমাহার। কিন্তু দেশের এই বৈচিত্র্য, প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র আজ দীর্ণ। অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বন উজাড়, জলাভূমি ভরাট, বৃহৎ খনন, রাসায়নিক কৃষি নানাভাবে দেশের প্রাণ-প্রকৃতির বিকাশকে রুদ্ধ করছে। করোনা মহামারিকালে দুনিয়াব্যাপী এই উপলব্ধি আবার চাঙ্গা হয়েছে যে, প্রাণ-প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা ছাড়া এই গ্রহে সবার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। মানুষসহ সব প্রাণসত্তার জীবনবিকাশে স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র প্রতিনিয়ত যে অবদান রাখছে আমরা এর হিসাব কষে দেখছি না। অথচ পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের এই বিনামূল্যের অক্লান্ত সেবার জন্যই আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু অকৃতজ্ঞের মতো মানুষই আবার বৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র নিদারুণভাবে বিনাশ করছে। দেশের নদী, মাটি, পাহাড়, অরণ্য, পাখি, বন্যপ্রাণ, জলাভূমি, উদ্যান সব খানেতেই হাহাকার। জবরদস্ত মুনাফামুখী উন্নয়নের ক্ষত। এই ক্ষত মানুষকেই সারাতে হবে। নিজের বাঁচার প্রয়োজনে। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সেবা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ একা কোনভাবেই বেঁচে থাকতে পারবে না। প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়। ২০২১ সনের প্রতিপাদ্য হলো ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার’। শুধু দেশ নয়, দুনিয়াজুড়ে বাস্তুতন্ত্র আজ মুর্মূষু ও বিক্ষত। বাস্তুতন্ত্রের সুচিকিৎসা, নিরাময়, সুরক্ষা, বিকাশসহ সামগ্রিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় আজ আমাদের সবাইকেই অংশ নিতে হবে। সমতল থেকে পাহাড়, বিল থেকে বরেন্দ্র, অরণ্য থেকে হাওর, উপকূল থেকে চর, গ্রাম থেকে শহর সব শ্রেণী-পেশা-বর্গের নাগরিকদের।

প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ধারা

সাধারণভাবে পরিবেশ হলো, কোনো একটি জীবের অস্তিত্ব বা বিকাশের ওপর ক্রিয়াশীল সামগ্রিক পারিপার্শ্বিকতা, যেমন চারপাশের ভৌত অবস্থা, জলবায়ু ও প্রভাব বিস্তারকারী অনন্য প্রাণসত্তা ও জৈব উপাদান। ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’ অনুযায়ী, ‘পরিবেশ’ মানে পানি, বাতাস, ভূমি ও অন্যান্য ভৌত সম্পদ এবং এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা ও অণূজীবসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক। উক্ত আইনে, পরিবেশ সংরক্ষণ বলতে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়ন এবং সেগুলোর মানের ঘাটতি রোধ করার প্রসঙ্গ উল্লেখিত রয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (১৯৯২)’ অনুযায়ী বাস্তুতন্ত্র বলতে বোঝায় উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীব এবং পরিবেশের প্রাণহীন অংশের সমন্বয়ে গঠিত একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা সামগ্রিকভাবে একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করে। পরিবেশের পাশাপাশি ‘প্রতিবেশও’ যাপিত জীবনের এক ভিত্তি প্রত্যয়। খুব সহজে ‘প্রতিবেশ’ মানে হলো প্রাণ ও প্রকৃতির চলমান সম্পর্ক ও রূপান্তরের চলমান প্রক্রিয়া ও তার ধরণ।

বাংলাদেশের এক উঁচু গ্রাম বান্দরবানের ছ্যইকতপাড়া আবার নিচু গ্রাম সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের লামাগাও। ছ্যইকতপাড়া আর লামাগাওয়ের বাস্তুতন্ত্র এক নয়। এমনকি সেখানকার জনজীবনধারাও এক নয়। আর বাস্তুতন্ত্রের এই ভিন্নতাই স্থানীয় জীবনধারা ও উৎপাদনে তৈরি করে বিশেষ সম্পর্ক এবং রীতি। হাওরাঞ্চলে জন্মে টেপী, রাতা, সমুদ্রফেনা, লাখাই, বোরোর মতো গভীর পানির ধান। পাহাড়ে জন্মে লংকাপোড়াবিনি, খবরক, গ্যাল্লং এর মতো জুম ধান। বাস্তুতন্ত্রের ভিন্নতাকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ৩০টি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল, ১৭টি হাইড্রলজিক্যাল অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুসংস্থানকে বোঝার জন্য আবারও আমরা শৈশবের এক পুকুরের উদাহরণ টেনে আনবো। একটি পুকুরে নানা জাতের মাছ থাকে। যেমন, ছোট মাছদের ভেতর পুঁটি মাছ, টেংরা মাছ। আবার বড় মাছদের ভেতর রুই মাছ, বোয়াল মাছ। পুকুরে শ্যাওলা, শামুক, কীট, ব্যাঙাচি, ক্ষুদিপানা, শাপলা এসবও থাকে। পুকুরপাড়ে ব্যাঙ, পতঙ্গ, মেছোবাঘ থাকে। পুকুরের ধারে মানুষের ঘরবাড়ি থাকে। যদি পুকুরে সব শ্যাওলা মরে যায় বা যদি পুকুরপাড় থেকে ব্যাঙেরা কোথাও চলে যায় তবে কী হতে পারে? এমন ঘটলে পুকুরে খাদ্যসংকট দেখা দিবে, পরিবেশ বিনষ্ট হবে। সর্বোপরি এটি পুকুরধারের মানুষের পরিবারেও সংকট তৈরি করবে।

কেন এমন ঘটে? কারণ প্রকৃতিতে গাছপালা, পশুপাখি, প্রাণহীন পরিবেশ ও মানুষের ভেতর নানামুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। এরা প্রত্যেকই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারণ সূর্যালোক ব্যবহার করে পুকুরের শ্যাওলাগুল্ম নিজেরাই নিজেদের খাবার উৎপাদন করে। এই শ্যাওলা পতঙ্গ, কীট, ক্ষুদে মাছের খাবার। আবার এদের খেয়ে বাঁচে বড় মাছ। বড় মাছ খায় মেছোবাঘ। মানুষও মাছ ধরে। আবার মানুষসহ নানা প্রাণী মারা গেলে তাদের শরীর ব্যাক্টেরিয়াসহ অণুজীবের মাধ্যমে পচনপ্রক্রিয়ায় আবারও মাটি ও পানিতে ফিরে আসে। এভাবেই এক জটিল খাদ্যচক্র। এটি প্রকৃতির একটি প্রজাতির সঙ্গে অন্য প্রজাতির এক অনবদ্য খাদ্যশৃঙ্খল। প্রকৃতিতে মানুষের সঙ্গে অন্যান্য উপাদানের এই পরস্পর-নির্ভরশীল সম্পর্কের ভেতর দিয়ে তৈরি হয় এক একটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুসংস্থান। মানুষ হিসেবে আমাদের ভাবা দরকার আমরা কোন ধরনের বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মিশে আছে, এই বাস্তুতন্ত্র কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় সেবা দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু মানুষ প্রতিদিন নিজের ভোগ আর মুনাফার জন্য বাস্তুতন্ত্রের এই ছন্দময় ব্যাকরণ চুরমার করে ফেলছে। আর এর প্রভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা দুর্যোগ কী করোনার মতো ভয়াবহ মহামারি সামাল দিতে হচ্ছে মানুষকে। বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক সুরতহাল নিয়ে আজ আমাদের বসা দরকার। কে কীভাবে ক্ষতি করছে আর এর পুনরুদ্ধারে কে কীভাবে ভূমিকা রাখবে তা নির্ধারণ করাও জরুরি।

পরিবেশ দিবসের ডাক

পরিবেশ সংক্রান্ত রয়েছে অনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, নীতি, সনদ ও ঘোষণা। বিশ্ব পরিবেশের উন্নয়ন সংরক্ষণ বিষয়ে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ‘জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত সম্মেলন’ থেকে ঘোষিত হয় ‘পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত রিও ঘোষণা ১৯৯২’। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সনে ‘পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ’ গঠন করে এবং ১৯৭৭ সনে ‘পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ জারি করে। ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ বনবিভাগ ও নতুন প্রতিষ্ঠিত পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণলায়’ গঠিত হয়। ১৯৯০ সনকে পরিবেশ বর্ষ ও ১৯৯০-২০০১ সনকে পরিবেশ দশক ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৯২ সনে ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি’ এবং ১৯৯৫ সনে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন করে। ২০১১ সনে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘পরিবেশ সংরক্ষণকে’ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ পরিবেশবাদীতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ১৮ এর পর ‘পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের’ উক্ত নতুন অনুচ্ছেদ ১৮ক হিসেবে সন্নিবেশ করে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বিধান করিবেন।

‘পরিবেশ’ আজ শুধু সংরক্ষণ বা পাবলিক ক্যাম্পেইনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো স্বতন্ত্র বিভাগ গুলি পরিবেশের তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মীয় দিকগুলোকেও শক্তিশালী করে তুলছে। প্রতি বছর পরিবেশ দিবস এক বৈশ্বিক আহ্বান জানায়, এ বছর বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে। নাগরিক হিসেবে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা কতটা প্রস্তুত? রাষ্ট্র হিসেবে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় আমাদের অবস্থান কতখানি সক্রিয় ও সংবেদনশীল? এসব প্রশ্ন ও তর্কের রাজনৈতিক সুরাহা দরকার। কারণ বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ না থামালে প্রিয় জন্মভূমি কী সবুজ গ্রহ কোনোটাই আর আমাদের জন্য বসবাস উপযোগী থাকবে না। নিশ্চিতভাবে জলবায়ু বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব এখন থেকেই আমরা অনুভব করছি। তীব্র গরম, খরা, লাগাতার ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা বেড়েই চলছে। আর এর ফলে দুর্ভোগ ও দুঃসহ যন্ত্রণা কিন্তু এখনও বেশি পোহাতে হচ্ছে দেশের গরিব মানুষকে যারা বাস্তুতন্ত্রকে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাস্তুতন্ত্রের ন্যায্যতা পূরণে আজ পরিবেশপ্রশ্নকেও শ্রেণিকাঠামোর ভেতর থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে।

দায়িত্ববোধ ও সংহতি

আমাদের চোখের সামনে আমাদের ভেতর দিয়েই বদলে যাচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ, প্রতিবেশ। দেশের দুটি রামসার অঞ্চল সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ও সুন্দরবন আজ বিপন্ন। উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে উপুর্যপরি করপোরেট কয়লা, পাথর ও ইউরেনিয়াম খনির ফলে টাঙ্গুয়ার হাওর ক্রমান্বয়ে এক প্রতœতাত্ত্বিক জলাভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পসহ সুন্দরবনের চারধারে গড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বহুজাতিক খননে বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে। রাতারগুল কী চিম্বুক পাহাড় বিপন্ন পর্যটনের চাপে। মধুপুর জাতীয় উদ্যান আগ্রাসি বাগান কী ইকোপার্কের আঘাতে ক্ষয়িষ্ণু অংশ নিয়ে টিকে আছে। উজানে বাঁধ আর ভাটিতে দখল ও দূষণের মাধ্যমে আজ দেশের সব নদী আজ মরণ যন্ত্রণায় অস্থির। প্রতিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও বৈচিত্র্য সুরক্ষার কোন কার্যকর রাজনৈতিক দায় ও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়নি রাষ্ট্রে।

পরিবেশ কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ আজ নয়া উদারবাদী ব্যবস্থার বাণিজ্যিক পণ্য। কিন্তু তারপরও গ্রাম থেকে শহর এখনও বহু মানুষ পরিবেশ রক্ষায় জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছেন। গ্রাম ও শহরের প্ররিবেশগত সমস্যা কী বাস্তুতন্ত্রের সংকট এক নয়। নগর কী গ্রাম পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাই আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধকে চাঙ্গা করা জরুরি। বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আসুন গড়ে তুলি সক্রিয় নাগরিক সংহতি।

[লেখক : গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ]

animistbangla@gmail.com

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার

পাভেল পার্থ

আয়তনে ছোট কিন্তু বৈচিত্র্য-বৈভবে অনন্য দক্ষিণ এশিয়ার এক ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ। উত্তর-পূর্বের হিমালয় পাহাড় ও উজান থেকে নেমে আসা অসংখ্য নদ-নদী ও স্রোতধারার বয়ে আনা পলিমাটিতে গঠিত হয়েছে এই ব-দ্বীপ। নদীবিধৌত সমতলভূমি, চরাঞ্চল, প্রবালদ্বীপ, বরেন্দ্র, গড়, টিলা, পাহাড়, হাওর, বিল, ঝরনা, ঝিরি, ছড়া, গুহা, বাঁওড়, পত্রঝরা বন, বর্ষারণ্য, ম্যানগ্রোভ বন, গর্জন বন, দ্বীপ সব মিলিয়ে বাস্তুতন্ত্রের এমন বৈচিত্র্য বিরল। শুধু প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র নয়, জনজীবনের বৈচিত্র্যও এখানে অনন্য। পৃথিবীর সবচে’ বেশি ইরাবতী ডলফিনের বাস আমাদের সুন্দরবন উপকূলে। পৃথিবীর জীবিত একমাত্র তালিপাম গাছটি বাংলাদেশে। চামচ ঠুঁটো বাটান পাখি, চামড়াঝোলা ব্যাঙ বা রক্তচোখা কালো ব্যাঙের বৃহৎ বিচরণ অঞ্চল এই দেশ। একসময় এদেশে চাষ হতো ২০ হাজার জাতের ধান। উষ্ণমণ্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ুর এ দেশে ষড়ঋতুর বিস্ময়কর সমাহার। কিন্তু দেশের এই বৈচিত্র্য, প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র আজ দীর্ণ। অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বন উজাড়, জলাভূমি ভরাট, বৃহৎ খনন, রাসায়নিক কৃষি নানাভাবে দেশের প্রাণ-প্রকৃতির বিকাশকে রুদ্ধ করছে। করোনা মহামারিকালে দুনিয়াব্যাপী এই উপলব্ধি আবার চাঙ্গা হয়েছে যে, প্রাণ-প্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা ছাড়া এই গ্রহে সবার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। মানুষসহ সব প্রাণসত্তার জীবনবিকাশে স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র প্রতিনিয়ত যে অবদান রাখছে আমরা এর হিসাব কষে দেখছি না। অথচ পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের এই বিনামূল্যের অক্লান্ত সেবার জন্যই আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু অকৃতজ্ঞের মতো মানুষই আবার বৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র নিদারুণভাবে বিনাশ করছে। দেশের নদী, মাটি, পাহাড়, অরণ্য, পাখি, বন্যপ্রাণ, জলাভূমি, উদ্যান সব খানেতেই হাহাকার। জবরদস্ত মুনাফামুখী উন্নয়নের ক্ষত। এই ক্ষত মানুষকেই সারাতে হবে। নিজের বাঁচার প্রয়োজনে। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সেবা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ একা কোনভাবেই বেঁচে থাকতে পারবে না। প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়। ২০২১ সনের প্রতিপাদ্য হলো ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার’। শুধু দেশ নয়, দুনিয়াজুড়ে বাস্তুতন্ত্র আজ মুর্মূষু ও বিক্ষত। বাস্তুতন্ত্রের সুচিকিৎসা, নিরাময়, সুরক্ষা, বিকাশসহ সামগ্রিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় আজ আমাদের সবাইকেই অংশ নিতে হবে। সমতল থেকে পাহাড়, বিল থেকে বরেন্দ্র, অরণ্য থেকে হাওর, উপকূল থেকে চর, গ্রাম থেকে শহর সব শ্রেণী-পেশা-বর্গের নাগরিকদের।

প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ধারা

সাধারণভাবে পরিবেশ হলো, কোনো একটি জীবের অস্তিত্ব বা বিকাশের ওপর ক্রিয়াশীল সামগ্রিক পারিপার্শ্বিকতা, যেমন চারপাশের ভৌত অবস্থা, জলবায়ু ও প্রভাব বিস্তারকারী অনন্য প্রাণসত্তা ও জৈব উপাদান। ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’ অনুযায়ী, ‘পরিবেশ’ মানে পানি, বাতাস, ভূমি ও অন্যান্য ভৌত সম্পদ এবং এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা ও অণূজীবসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক। উক্ত আইনে, পরিবেশ সংরক্ষণ বলতে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়ন এবং সেগুলোর মানের ঘাটতি রোধ করার প্রসঙ্গ উল্লেখিত রয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (১৯৯২)’ অনুযায়ী বাস্তুতন্ত্র বলতে বোঝায় উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীব এবং পরিবেশের প্রাণহীন অংশের সমন্বয়ে গঠিত একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা সামগ্রিকভাবে একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করে। পরিবেশের পাশাপাশি ‘প্রতিবেশও’ যাপিত জীবনের এক ভিত্তি প্রত্যয়। খুব সহজে ‘প্রতিবেশ’ মানে হলো প্রাণ ও প্রকৃতির চলমান সম্পর্ক ও রূপান্তরের চলমান প্রক্রিয়া ও তার ধরণ।

বাংলাদেশের এক উঁচু গ্রাম বান্দরবানের ছ্যইকতপাড়া আবার নিচু গ্রাম সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের লামাগাও। ছ্যইকতপাড়া আর লামাগাওয়ের বাস্তুতন্ত্র এক নয়। এমনকি সেখানকার জনজীবনধারাও এক নয়। আর বাস্তুতন্ত্রের এই ভিন্নতাই স্থানীয় জীবনধারা ও উৎপাদনে তৈরি করে বিশেষ সম্পর্ক এবং রীতি। হাওরাঞ্চলে জন্মে টেপী, রাতা, সমুদ্রফেনা, লাখাই, বোরোর মতো গভীর পানির ধান। পাহাড়ে জন্মে লংকাপোড়াবিনি, খবরক, গ্যাল্লং এর মতো জুম ধান। বাস্তুতন্ত্রের ভিন্নতাকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ৩০টি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল, ১৭টি হাইড্রলজিক্যাল অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুসংস্থানকে বোঝার জন্য আবারও আমরা শৈশবের এক পুকুরের উদাহরণ টেনে আনবো। একটি পুকুরে নানা জাতের মাছ থাকে। যেমন, ছোট মাছদের ভেতর পুঁটি মাছ, টেংরা মাছ। আবার বড় মাছদের ভেতর রুই মাছ, বোয়াল মাছ। পুকুরে শ্যাওলা, শামুক, কীট, ব্যাঙাচি, ক্ষুদিপানা, শাপলা এসবও থাকে। পুকুরপাড়ে ব্যাঙ, পতঙ্গ, মেছোবাঘ থাকে। পুকুরের ধারে মানুষের ঘরবাড়ি থাকে। যদি পুকুরে সব শ্যাওলা মরে যায় বা যদি পুকুরপাড় থেকে ব্যাঙেরা কোথাও চলে যায় তবে কী হতে পারে? এমন ঘটলে পুকুরে খাদ্যসংকট দেখা দিবে, পরিবেশ বিনষ্ট হবে। সর্বোপরি এটি পুকুরধারের মানুষের পরিবারেও সংকট তৈরি করবে।

কেন এমন ঘটে? কারণ প্রকৃতিতে গাছপালা, পশুপাখি, প্রাণহীন পরিবেশ ও মানুষের ভেতর নানামুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। এরা প্রত্যেকই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারণ সূর্যালোক ব্যবহার করে পুকুরের শ্যাওলাগুল্ম নিজেরাই নিজেদের খাবার উৎপাদন করে। এই শ্যাওলা পতঙ্গ, কীট, ক্ষুদে মাছের খাবার। আবার এদের খেয়ে বাঁচে বড় মাছ। বড় মাছ খায় মেছোবাঘ। মানুষও মাছ ধরে। আবার মানুষসহ নানা প্রাণী মারা গেলে তাদের শরীর ব্যাক্টেরিয়াসহ অণুজীবের মাধ্যমে পচনপ্রক্রিয়ায় আবারও মাটি ও পানিতে ফিরে আসে। এভাবেই এক জটিল খাদ্যচক্র। এটি প্রকৃতির একটি প্রজাতির সঙ্গে অন্য প্রজাতির এক অনবদ্য খাদ্যশৃঙ্খল। প্রকৃতিতে মানুষের সঙ্গে অন্যান্য উপাদানের এই পরস্পর-নির্ভরশীল সম্পর্কের ভেতর দিয়ে তৈরি হয় এক একটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র বা বাস্তুসংস্থান। মানুষ হিসেবে আমাদের ভাবা দরকার আমরা কোন ধরনের বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মিশে আছে, এই বাস্তুতন্ত্র কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় সেবা দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু মানুষ প্রতিদিন নিজের ভোগ আর মুনাফার জন্য বাস্তুতন্ত্রের এই ছন্দময় ব্যাকরণ চুরমার করে ফেলছে। আর এর প্রভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা দুর্যোগ কী করোনার মতো ভয়াবহ মহামারি সামাল দিতে হচ্ছে মানুষকে। বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক সুরতহাল নিয়ে আজ আমাদের বসা দরকার। কে কীভাবে ক্ষতি করছে আর এর পুনরুদ্ধারে কে কীভাবে ভূমিকা রাখবে তা নির্ধারণ করাও জরুরি।

পরিবেশ দিবসের ডাক

পরিবেশ সংক্রান্ত রয়েছে অনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, নীতি, সনদ ও ঘোষণা। বিশ্ব পরিবেশের উন্নয়ন সংরক্ষণ বিষয়ে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ‘জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত সম্মেলন’ থেকে ঘোষিত হয় ‘পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত রিও ঘোষণা ১৯৯২’। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সনে ‘পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ’ গঠন করে এবং ১৯৭৭ সনে ‘পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ জারি করে। ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ বনবিভাগ ও নতুন প্রতিষ্ঠিত পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণলায়’ গঠিত হয়। ১৯৯০ সনকে পরিবেশ বর্ষ ও ১৯৯০-২০০১ সনকে পরিবেশ দশক ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৯২ সনে ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি’ এবং ১৯৯৫ সনে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন করে। ২০১১ সনে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘পরিবেশ সংরক্ষণকে’ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ পরিবেশবাদীতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ১৮ এর পর ‘পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের’ উক্ত নতুন অনুচ্ছেদ ১৮ক হিসেবে সন্নিবেশ করে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বিধান করিবেন।

‘পরিবেশ’ আজ শুধু সংরক্ষণ বা পাবলিক ক্যাম্পেইনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো স্বতন্ত্র বিভাগ গুলি পরিবেশের তাত্ত্বিক ও গবেষণাধর্মীয় দিকগুলোকেও শক্তিশালী করে তুলছে। প্রতি বছর পরিবেশ দিবস এক বৈশ্বিক আহ্বান জানায়, এ বছর বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে। নাগরিক হিসেবে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা কতটা প্রস্তুত? রাষ্ট্র হিসেবে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় আমাদের অবস্থান কতখানি সক্রিয় ও সংবেদনশীল? এসব প্রশ্ন ও তর্কের রাজনৈতিক সুরাহা দরকার। কারণ বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ না থামালে প্রিয় জন্মভূমি কী সবুজ গ্রহ কোনোটাই আর আমাদের জন্য বসবাস উপযোগী থাকবে না। নিশ্চিতভাবে জলবায়ু বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব এখন থেকেই আমরা অনুভব করছি। তীব্র গরম, খরা, লাগাতার ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা বেড়েই চলছে। আর এর ফলে দুর্ভোগ ও দুঃসহ যন্ত্রণা কিন্তু এখনও বেশি পোহাতে হচ্ছে দেশের গরিব মানুষকে যারা বাস্তুতন্ত্রকে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাস্তুতন্ত্রের ন্যায্যতা পূরণে আজ পরিবেশপ্রশ্নকেও শ্রেণিকাঠামোর ভেতর থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে।

দায়িত্ববোধ ও সংহতি

আমাদের চোখের সামনে আমাদের ভেতর দিয়েই বদলে যাচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ, প্রতিবেশ। দেশের দুটি রামসার অঞ্চল সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ও সুন্দরবন আজ বিপন্ন। উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে উপুর্যপরি করপোরেট কয়লা, পাথর ও ইউরেনিয়াম খনির ফলে টাঙ্গুয়ার হাওর ক্রমান্বয়ে এক প্রতœতাত্ত্বিক জলাভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পসহ সুন্দরবনের চারধারে গড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বহুজাতিক খননে বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে। রাতারগুল কী চিম্বুক পাহাড় বিপন্ন পর্যটনের চাপে। মধুপুর জাতীয় উদ্যান আগ্রাসি বাগান কী ইকোপার্কের আঘাতে ক্ষয়িষ্ণু অংশ নিয়ে টিকে আছে। উজানে বাঁধ আর ভাটিতে দখল ও দূষণের মাধ্যমে আজ দেশের সব নদী আজ মরণ যন্ত্রণায় অস্থির। প্রতিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও বৈচিত্র্য সুরক্ষার কোন কার্যকর রাজনৈতিক দায় ও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়নি রাষ্ট্রে।

পরিবেশ কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ আজ নয়া উদারবাদী ব্যবস্থার বাণিজ্যিক পণ্য। কিন্তু তারপরও গ্রাম থেকে শহর এখনও বহু মানুষ পরিবেশ রক্ষায় জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছেন। গ্রাম ও শহরের প্ররিবেশগত সমস্যা কী বাস্তুতন্ত্রের সংকট এক নয়। নগর কী গ্রাম পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাই আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধকে চাঙ্গা করা জরুরি। বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আসুন গড়ে তুলি সক্রিয় নাগরিক সংহতি।

[লেখক : গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ]

animistbangla@gmail.com