পাহাড়ি ঢলে ধসে পড়া গুলিয়াখালী জলকপাট সংস্কার হয়নি ৫ বছরেও

ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক দুর্যোগ পার হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় এখনও নির্মাণ হয়নি সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় অবস্থিত স্লুইচ গেইট ও জীবন রক্ষাকারী বাঁধটি। ফলে চলতি বর্ষার মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে ঘুম নেই বেড়িবাঁধ এলাকার উপকূলবাসী ও এ ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে চার হাজার কৃষক পরিবারের। পূর্বে পাহাড় এবং পশ্চিমে সাগরের জীবন রক্ষা বেড়িবাঁধ। কিন্তু ২০১৭ সালে বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৪নং মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট ধসে পড়ে। পাহাড়ি ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি চলাচলের রাস্তাটি একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে। সাগরের সাথে সংযুক্ত খাল ও ছড়াগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে এবং পানি নিস্কাশনের সু-ব্যাবস্থা না থাকায় বর্ষার মৌসুমে কৃষকদের সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে করে পানিতে তলিয়ে যায় কৃষকদের অতি পরিশ্রমের স্বপ্নের ফসল এবং পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যও। এছাড়া সাগরের জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি এক হয়ে গ্রামে প্রবেশ করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে গতবছর ২০২০ সালে পাহাড়ি ঢলে কৃষকদের সদ্য রোপণ করা সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানান একই এলাকার প্রবীণ কৃষক আয়ুব আলী ও মো. আবু তাহের। তারা বলেন, ২০১৭ সালে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট ধসে স্লুইচ গেইটি অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে এখানকার কৃষকদের সবজি ক্ষেত পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্রমশই তলিয়ে যায়। চলতি ২০২১ সালেও অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা ধান চাষসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চাষ করেছি। মুরাদপুর গুলিয়াখালী স্লুইচ গেইটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ার কারণে এখানকার কৃষকের রোপন করা হাজার হাজার একর জমির রোপা ধান ও সবজি ক্ষেত আবারও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের বেড়িবাঁধ ও সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত খাল, গুলিয়াখালী স্লুইচ গেইটি চরম অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে ধসে পড়ে আছে। চলতি বর্ষার মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে অসংখ্য কৃষক পরিবারের লোকজন এখন জমিতে চাষ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রাত কাটছে বলে জানা গেছে।

মুরাদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী(বাবু)বলেন, ২০১৭ সালে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গুলিয়াখালী স্লুইচ গেটটি ধসে পড়ে গিয়েছিল। তখন ৫ কোটি টাকার বেশি পুকুরের মাছ ও সবজি পানির ভেসে যায়। তিনি আরও বলেন, খাল ও স্লুইচ গেইট সংস্কার বিষয়ে একটি ফাইল তিন বছর পর্যন্ত পানি মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে। আমি বার বার চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্ল্ইুচ গেইট নির্মাণের বিষয়ে জানিয়ে আসছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খাল ও স্লুইচ গেট দ্রুত সংস্কার করা না গেলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কৃষক ও মৎস্য চাষিরা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হবেন। এছাড়াট জীবন ঝুঁকিতেও রয়েছে উপকূলবাসীরা।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে বলে আমাকে জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনিস হায়দার খাঁন বলেন, গত তিন বছর ধরে বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরাদ্দ আসা মাত্রই স্লুইচ গেইট নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২

পাহাড়ি ঢলে ধসে পড়া গুলিয়াখালী জলকপাট সংস্কার হয়নি ৫ বছরেও

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

image

সীতাকু- : ধ্বসে পড়া গুলিয়াখালী জলকপাট -সংবাদ

ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক দুর্যোগ পার হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় এখনও নির্মাণ হয়নি সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় অবস্থিত স্লুইচ গেইট ও জীবন রক্ষাকারী বাঁধটি। ফলে চলতি বর্ষার মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে ঘুম নেই বেড়িবাঁধ এলাকার উপকূলবাসী ও এ ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে চার হাজার কৃষক পরিবারের। পূর্বে পাহাড় এবং পশ্চিমে সাগরের জীবন রক্ষা বেড়িবাঁধ। কিন্তু ২০১৭ সালে বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৪নং মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট ধসে পড়ে। পাহাড়ি ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি চলাচলের রাস্তাটি একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে। সাগরের সাথে সংযুক্ত খাল ও ছড়াগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে এবং পানি নিস্কাশনের সু-ব্যাবস্থা না থাকায় বর্ষার মৌসুমে কৃষকদের সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে করে পানিতে তলিয়ে যায় কৃষকদের অতি পরিশ্রমের স্বপ্নের ফসল এবং পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যও। এছাড়া সাগরের জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি এক হয়ে গ্রামে প্রবেশ করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে গতবছর ২০২০ সালে পাহাড়ি ঢলে কৃষকদের সদ্য রোপণ করা সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানান একই এলাকার প্রবীণ কৃষক আয়ুব আলী ও মো. আবু তাহের। তারা বলেন, ২০১৭ সালে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট ধসে স্লুইচ গেইটি অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে এখানকার কৃষকদের সবজি ক্ষেত পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্রমশই তলিয়ে যায়। চলতি ২০২১ সালেও অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা ধান চাষসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চাষ করেছি। মুরাদপুর গুলিয়াখালী স্লুইচ গেইটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ার কারণে এখানকার কৃষকের রোপন করা হাজার হাজার একর জমির রোপা ধান ও সবজি ক্ষেত আবারও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের বেড়িবাঁধ ও সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত খাল, গুলিয়াখালী স্লুইচ গেইটি চরম অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে ধসে পড়ে আছে। চলতি বর্ষার মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে অসংখ্য কৃষক পরিবারের লোকজন এখন জমিতে চাষ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রাত কাটছে বলে জানা গেছে।

মুরাদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী(বাবু)বলেন, ২০১৭ সালে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গুলিয়াখালী স্লুইচ গেটটি ধসে পড়ে গিয়েছিল। তখন ৫ কোটি টাকার বেশি পুকুরের মাছ ও সবজি পানির ভেসে যায়। তিনি আরও বলেন, খাল ও স্লুইচ গেইট সংস্কার বিষয়ে একটি ফাইল তিন বছর পর্যন্ত পানি মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে। আমি বার বার চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্ল্ইুচ গেইট নির্মাণের বিষয়ে জানিয়ে আসছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খাল ও স্লুইচ গেট দ্রুত সংস্কার করা না গেলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কৃষক ও মৎস্য চাষিরা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হবেন। এছাড়াট জীবন ঝুঁকিতেও রয়েছে উপকূলবাসীরা।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে বলে আমাকে জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনিস হায়দার খাঁন বলেন, গত তিন বছর ধরে বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরাদ্দ আসা মাত্রই স্লুইচ গেইট নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।