আরও ১৬ লাখ টিকা উপহার দিতে চায় চীন

বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দফায় উপহারের জন্য যে ছয় লাখ টিকা দেয়ার কথা, তা ১৩ জুনের মধ্যে হস্তান্তরের জন্য তৈরি রয়েছে চীন। তবে বাংলাদেশ কখন চীনের উপহারের টিকা নেবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গতকাল দুপুরে ঢাকায় চীন দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘চীন সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে আরও ছয় লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ১৩ জুনের মধ্যে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত ২০ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপের সময় ছয় লাখ টিকা উপহার হিসেবে দেয়ার কথা জানান। দুই মন্ত্রীর ফোনালাপের পর ঢাকায় চীনের দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ওপর চীনের নজর রয়েছে।

বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে টিকার বিপুল চাহিদার প্রেক্ষাপটে সরবরাহের ঘাটতির বিষয়ে চীন উদ্বিগ্ন। ফলে দ্বিতীয় দফায় টিকা উপহারের ঘোষণা বাংলাদেশের প্রতি চীনের বন্ধুত্বের নিদর্শন। এর আগে ১২ মে বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছিল চীন। সিনোফার্মের তৈরি ওই টিকার ৩০ হাজার অবশ্য বাংলাদেশে কর্মরত চীনের নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যে ছয় লাখ টিকা বাংলাদেশকে চীন দিচ্ছে, সেটাও সিনোফার্মের তৈরি।

উপহারের ছয় লাখ টিকা কবে আসবে, জানতে চাইলে হুয়ালং ইয়ান বলেন, ‘জুনের ১৩ তারিখের মধ্যে ওই টিকা হস্তান্তরের জন্য আমরা তৈরি রয়েছি। তবে বাংলাদেশ কখন তা নেবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এ টিকা দেশে আনার বিষয়ে গত নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। অগ্রিম টাকাও পরিশোধ করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে ৩ কোটি ডোজের প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা এসেছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সেরাম। শেষ পর্যন্ত টিকা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় দেশের টিকাদান কর্মসূচি। আর সেরাম থেকে কেনা টিকা না পেয়ে চীন, রাশিয়া থেকে টিকা কিনতে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ। ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার বলেছিলেন, ‘চীন থেকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ করোনা টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক ডোজ টিকা ১০ ডলার ধরে হিসাব করলে দেড় কোটি ডোজ আনতে সরকারের খরচ হবে ১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ টিকা কেনা হবে।’ চুক্তি হওয়ার আগেই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে চীনকে চিঠি দেয়া হয়।

রবিবার, ০৬ জুন ২০২১ , ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৪ শাওয়াল ১৪৪২

১৩ জুনের মধ্যে

আরও ১৬ লাখ টিকা উপহার দিতে চায় চীন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দফায় উপহারের জন্য যে ছয় লাখ টিকা দেয়ার কথা, তা ১৩ জুনের মধ্যে হস্তান্তরের জন্য তৈরি রয়েছে চীন। তবে বাংলাদেশ কখন চীনের উপহারের টিকা নেবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গতকাল দুপুরে ঢাকায় চীন দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘চীন সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে আরও ছয় লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ১৩ জুনের মধ্যে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত ২০ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপের সময় ছয় লাখ টিকা উপহার হিসেবে দেয়ার কথা জানান। দুই মন্ত্রীর ফোনালাপের পর ঢাকায় চীনের দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ওপর চীনের নজর রয়েছে।

বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে টিকার বিপুল চাহিদার প্রেক্ষাপটে সরবরাহের ঘাটতির বিষয়ে চীন উদ্বিগ্ন। ফলে দ্বিতীয় দফায় টিকা উপহারের ঘোষণা বাংলাদেশের প্রতি চীনের বন্ধুত্বের নিদর্শন। এর আগে ১২ মে বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছিল চীন। সিনোফার্মের তৈরি ওই টিকার ৩০ হাজার অবশ্য বাংলাদেশে কর্মরত চীনের নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যে ছয় লাখ টিকা বাংলাদেশকে চীন দিচ্ছে, সেটাও সিনোফার্মের তৈরি।

উপহারের ছয় লাখ টিকা কবে আসবে, জানতে চাইলে হুয়ালং ইয়ান বলেন, ‘জুনের ১৩ তারিখের মধ্যে ওই টিকা হস্তান্তরের জন্য আমরা তৈরি রয়েছি। তবে বাংলাদেশ কখন তা নেবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এ টিকা দেশে আনার বিষয়ে গত নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। অগ্রিম টাকাও পরিশোধ করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে ৩ কোটি ডোজের প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা এসেছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সেরাম। শেষ পর্যন্ত টিকা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় দেশের টিকাদান কর্মসূচি। আর সেরাম থেকে কেনা টিকা না পেয়ে চীন, রাশিয়া থেকে টিকা কিনতে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ। ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার বলেছিলেন, ‘চীন থেকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ করোনা টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক ডোজ টিকা ১০ ডলার ধরে হিসাব করলে দেড় কোটি ডোজ আনতে সরকারের খরচ হবে ১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ টিকা কেনা হবে।’ চুক্তি হওয়ার আগেই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে চীনকে চিঠি দেয়া হয়।