সাড়ে ১০ বছর পরে লেনদেনের রেকর্ড গড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে ২ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ৭১০ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল ডিএসইতে। গতকাল লেনদেনের শুরুর বিক্রয় চাপে সূচকের বড় পতনের আশঙ্কা ছিল। তবে, বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর লেনদেনের উত্থানের কারণে দিনশেষে সূচকের বড় পতন রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকার লেনদেনের রেকর্ড হয়েছিল। এরপর থেকে অব্যাহত বিক্রয় চাপে ধস নামে পুঁজিবাজারে। এ সময় বিনিয়োগ হারিয়ে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছিলেন।
এদিকে, করোনা মহামারীর মধ্যেই গতবছরের আগস্ট থেকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের লেনদেনে ব্যাপক উল্লম্ফন থাকলেও এদিন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫.১৩ পয়েন্ট। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বাড়তি কোন প্রণোদনা না থাকলেও বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ শুরু করার পাশাপাশি অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসবে এমন বেশ কিছু ইস্যুর কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেনে চাঙ্গা ভাব দেখা যাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, লেনদেনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক। নতুবা পুঁজি হারানোর ভয় রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৬৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে ২০১টির, দর বেড়েছে ১৪৫টির ও দর অপরিবর্তিত ছিল ২০ কোম্পানির শেয়ার। এ সময়, ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৫.১৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময় শরীয়াহ্ ও ডিএস-৩০ সূচক যথাক্রমে ১৮.৯৬ পয়েন্ট বেড়েছে।
ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের
শেয়ারের দরপতন
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৫৪.৯১ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে। এ সময় ব্যাংকিং খাতের ৯৬.৪৩ শতাংশ, বীমা খাতের ৮৯.৪৭ শতাংশ ও আর্থিক খাতের ৮১.৮২ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ৩০ কোম্পানির দরপতন
করোনা মহামারীতে ধস ঠেকাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এদিন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ৩০টি কোম্পানির দরই কমেছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া কোম্পানিগুলো হলোÑ রেনউয়িক যজ্ঞেশ্বর, মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ, বাটা সু, কহিনূর কেমিক্যাল, নর্দার্ন জুট, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ওয়াটা কেমিক্যাল, সোনালী পেপার, এপেক্স ফুটওয়্যার, কেএন্ডকিউ, বিডি অটোকার, স্টাইল ক্রাফট, জেমিনি সী ফুডস, ইস্টার্ন কেবলস, এপেক্স স্পিনিং, মুন্নু সিরামিক, বঙ্গজ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, এটলাস বাংলাদেশ, এপেক্স ট্যানারি, সমতা লেদার, ন্যাশনাল টিউবস, আজিজ পাইপস, সী পার্ল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার, ওরিয়ন ইনফিউশনস, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, এসকে ট্রিমস, ন্যাশনাল পলিমার এবং ডেফোডিল কম্পিউটার্স।
বড় পতন রুখে দিয়েছে ৫ কোম্পানি
লেনদেন রেকর্ডের দিনেও ডিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক কমেছিল ১৫ পয়েন্ট। পক্ষান্তরে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর মূল্যসূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮.৯৬ পয়েন্ট। মূলত, বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকায় ডিএসইএক্স সূচকে বড় পতন হয়নি।
এ সময় বাজারের সূচকের পতন রুখে দিয়েছে বড় মূলধনী কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, আইসিবি ও লাফার্জ হলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।
লেনদেনের রেকর্ডের দিনেও পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকের পতনের কারণ জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন কিছু নাই। গতবছর কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল, তাও এবছর নাই।
এছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমিয়েছে, তা সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একই। তাই, বাজারের লেনদেনে বাজেট কোন ভূমিকা রেখেছে আমি মনে করি না। তবে, বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘এখন খাতভিত্তিক বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে বাজার বাড়ছে। এটা ইতিবাচক না। প্রত্যেকটি খাতের শেয়ারের ওপর নির্ভর করে বাজার বাড়লে তা দীর্ঘস্থায়ী হতো। বাজারের বর্তমান অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা এখনই বোঝা যাবে না। আগামী ১৫ দিন বাজারের অবস্থা একই থাকলে পরে বাজারের গতিবিধি বোঝা যাবে।’
সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২
জাহিদুল ইসলাম সুজন
সাড়ে ১০ বছর পরে লেনদেনের রেকর্ড গড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে ২ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ৭১০ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল ডিএসইতে। গতকাল লেনদেনের শুরুর বিক্রয় চাপে সূচকের বড় পতনের আশঙ্কা ছিল। তবে, বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর লেনদেনের উত্থানের কারণে দিনশেষে সূচকের বড় পতন রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকার লেনদেনের রেকর্ড হয়েছিল। এরপর থেকে অব্যাহত বিক্রয় চাপে ধস নামে পুঁজিবাজারে। এ সময় বিনিয়োগ হারিয়ে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছিলেন।
এদিকে, করোনা মহামারীর মধ্যেই গতবছরের আগস্ট থেকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের লেনদেনে ব্যাপক উল্লম্ফন থাকলেও এদিন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫.১৩ পয়েন্ট। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বাড়তি কোন প্রণোদনা না থাকলেও বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ শুরু করার পাশাপাশি অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসবে এমন বেশ কিছু ইস্যুর কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেনে চাঙ্গা ভাব দেখা যাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, লেনদেনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক। নতুবা পুঁজি হারানোর ভয় রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৬৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে ২০১টির, দর বেড়েছে ১৪৫টির ও দর অপরিবর্তিত ছিল ২০ কোম্পানির শেয়ার। এ সময়, ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৫.১৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময় শরীয়াহ্ ও ডিএস-৩০ সূচক যথাক্রমে ১৮.৯৬ পয়েন্ট বেড়েছে।
ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের
শেয়ারের দরপতন
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৫৪.৯১ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে। এ সময় ব্যাংকিং খাতের ৯৬.৪৩ শতাংশ, বীমা খাতের ৮৯.৪৭ শতাংশ ও আর্থিক খাতের ৮১.৮২ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ৩০ কোম্পানির দরপতন
করোনা মহামারীতে ধস ঠেকাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এদিন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া ৩০টি কোম্পানির দরই কমেছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া কোম্পানিগুলো হলোÑ রেনউয়িক যজ্ঞেশ্বর, মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ, বাটা সু, কহিনূর কেমিক্যাল, নর্দার্ন জুট, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ওয়াটা কেমিক্যাল, সোনালী পেপার, এপেক্স ফুটওয়্যার, কেএন্ডকিউ, বিডি অটোকার, স্টাইল ক্রাফট, জেমিনি সী ফুডস, ইস্টার্ন কেবলস, এপেক্স স্পিনিং, মুন্নু সিরামিক, বঙ্গজ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, এটলাস বাংলাদেশ, এপেক্স ট্যানারি, সমতা লেদার, ন্যাশনাল টিউবস, আজিজ পাইপস, সী পার্ল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার, ওরিয়ন ইনফিউশনস, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, এসকে ট্রিমস, ন্যাশনাল পলিমার এবং ডেফোডিল কম্পিউটার্স।
বড় পতন রুখে দিয়েছে ৫ কোম্পানি
লেনদেন রেকর্ডের দিনেও ডিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক কমেছিল ১৫ পয়েন্ট। পক্ষান্তরে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর মূল্যসূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮.৯৬ পয়েন্ট। মূলত, বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকায় ডিএসইএক্স সূচকে বড় পতন হয়নি।
এ সময় বাজারের সূচকের পতন রুখে দিয়েছে বড় মূলধনী কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, আইসিবি ও লাফার্জ হলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।
লেনদেনের রেকর্ডের দিনেও পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকের পতনের কারণ জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন কিছু নাই। গতবছর কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল, তাও এবছর নাই।
এছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমিয়েছে, তা সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একই। তাই, বাজারের লেনদেনে বাজেট কোন ভূমিকা রেখেছে আমি মনে করি না। তবে, বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘এখন খাতভিত্তিক বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে বাজার বাড়ছে। এটা ইতিবাচক না। প্রত্যেকটি খাতের শেয়ারের ওপর নির্ভর করে বাজার বাড়লে তা দীর্ঘস্থায়ী হতো। বাজারের বর্তমান অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা এখনই বোঝা যাবে না। আগামী ১৫ দিন বাজারের অবস্থা একই থাকলে পরে বাজারের গতিবিধি বোঝা যাবে।’