টেক্সটাইল খাতের অনেক প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়নি

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টেক্সটাইল খাতের অনেক প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়নি বলে মনে করেন টেক্সটাইল খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন বিটিএমএ। গতকাল বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব তথ্য জানানো হয়। বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন লিখিত বক্তব্যে এই প্রতিক্রিয়া জানান।

লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘২০২১-২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তবানার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও কাঁচামালের আমদানি শুল্ক হ্রাস ও শুল্কমুক্তভাবে আমদানির সুবিধা প্রদান, স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব, আগাম কর ৪ থেকে ৩ শতাংশে ধার্য্যরে প্রস্তাব যার মধ্যে তৈরী পোশাক ও বস্ত্র খাতের বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির শুল্ক হার ১ শতাংশ বহাল ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে মূসক বিভাগীয় কর্মকর্তা থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহের বিধানটি বাতিল এবং একই সঙ্গে, বস্ত্র খাতের ‘প্রটোসেনসিটিভ রোটারি স্ক্রিণ অ্যান্ড টেম্পারেচার প্রব’ আইটেম দুটি অন্তর্ভুক্ত করে রেয়াতি শুল্কে আমদানির সুবিধা প্রদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঘোষিত বাজেট প্রস্তাবনার, পাবলিকলি ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর হার হ্রাস করে ২২ দশমিক ৫ ও ৩০ শতাংশ ধার্য্যসহ এক ব্যক্তি কোম্পানি কর হার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে দেশীয় শিল্পের জন্য কাঁচামাল তৈরী উৎসাহিত করার জন্য মূসক অব্যাহতির মেয়াদ আরও বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে বাজেট প্রস্তাবনায় বিটিএমএ কর্তৃক প্রদত্ত প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব যেমন সব ধরনের সুতার ওপর মূল্য সংযোজন কর ৩ টাকা ধার্য্য, কৃত্রিম আঁশের সুতায় তৈরী ফেব্রিকের মূসক প্রত্যাহারসহ সব ধরণের ফাইবারকে শুল্ক ও করমুক্তভাবে আমদানির বিষয়টিকে বিবেচনায় না নেয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর গৃহীত উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করি।’

প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, কৃত্রিম আঁশের দ্বারা তৈরী পোশাকে ডিজাইন ও ফ্যাশনে ভিন্নতা আনা তুলনামূলকভাবে সহজ। এছাড়া টেকনোলজির কারণে এর দ্বারা তৈরী পোশাক সামগ্রী তুলনামূলক কম দাম ও পরনেও আরামদায়ক। তাই আমরা উক্ত প্রস্তাবটি পণ্যের বহুমুখীকরণ তথা প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের বিষয়টিকে আরও উৎসাহিত করার মাধ্যমে কৃত্রিম আঁশের সুতার ব্যাপক আমদানি নিরুৎসাহিতসহ স্থানীয়ভাবে তা তৈরীর স্বার্থেই প্রদান করেছিলাম। কেননা টেক্সটাইল এখন শুধুমাত্র কাঁচা তুলা দ্বারা তৈরী সুতা ও তার দ্বারা প্রস্তুতকৃত ফেব্রিক ও গার্মেন্টসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। টেক্সটাইল প্রোডাক্ট তৈরীতে এখন শুধুমাত্র কাঁচা তুলা, পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার, ভিএসএফ বা ফ্লাক্স ফাইবারই ব্যবহারই হয়না, তৈরী পোশাকের ক্রেতার চাহিদা বা রপ্তানি আদেশের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে আমাদের জানামতে আরও অনেক নাম না জানা ফাইবার সুতা তৈরীর জন্য ব্যবহার হয়।’ ‘কিন্তু দুঃখজনক বিষয় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় এর কোন প্রতিফলন নেই। সরকার তৈরী পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি একই সঙ্গে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির রপ্তানিতে যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিতের বিষয়টি প্রাধান্য দিলেও সামগ্রীক বাজেটটি বিশ্লেষণে টেক্সটাইল ও তৈরী পোশাক খাত সম্পর্কে বাজেটে যেসব প্রস্তাব রয়েছে তা কার্যত অপ্রতুল এবং প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে চলতি বাজেট প্রস্তাবনার মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক কর সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনের ১৮ গ যা নি¤েœাক্ত তার প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকষর্ণ করছি।’

আরও বলা হয়, ‘রপ্তানি বাণিজ্যের খরচ কমানো ও স্থানীয় বস্ত্র শিল্পের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমরা ‘উৎস আয়কর কর্তনের হার ০.২৫ শতাংশ নির্ধারণ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক ওভেন ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু পুনঃনির্ধারণ ও টেক্সটাইল খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ওপর আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ ধার্য্যরে প্রস্তাব করেছিলাম। আমরা মনে করি, বিটিএমএ কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত প্রস্তাবগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত হলে সার্বিক টেক্সটাইলসহ তৈরী পোশাক খাত কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারতো।’

‘একই সঙ্গে ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু পুনঃনির্ধারণের প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন, যদি এখনই সম্ভব না হয় তাহলে এ লক্ষ্যে সম্পুরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ধার্য্যরে অনুরোধ করছি। এছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে খরচ কমানোর লক্ষ্যে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পূর্বের ন্যায় ০.২৫ শতাংশে নির্ধারণসহ টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রাংশকে শুধুমাত্র ১ শতাংশ শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে আমদানি সুবিধা প্রদানের জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ করছি।’

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

বিটিএমএ-এর বাজেট প্রতিক্রিয়া

টেক্সটাইল খাতের অনেক প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়নি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টেক্সটাইল খাতের অনেক প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়নি বলে মনে করেন টেক্সটাইল খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন বিটিএমএ। গতকাল বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব তথ্য জানানো হয়। বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন লিখিত বক্তব্যে এই প্রতিক্রিয়া জানান।

লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘২০২১-২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তবানার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও কাঁচামালের আমদানি শুল্ক হ্রাস ও শুল্কমুক্তভাবে আমদানির সুবিধা প্রদান, স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব, আগাম কর ৪ থেকে ৩ শতাংশে ধার্য্যরে প্রস্তাব যার মধ্যে তৈরী পোশাক ও বস্ত্র খাতের বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির শুল্ক হার ১ শতাংশ বহাল ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে মূসক বিভাগীয় কর্মকর্তা থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহের বিধানটি বাতিল এবং একই সঙ্গে, বস্ত্র খাতের ‘প্রটোসেনসিটিভ রোটারি স্ক্রিণ অ্যান্ড টেম্পারেচার প্রব’ আইটেম দুটি অন্তর্ভুক্ত করে রেয়াতি শুল্কে আমদানির সুবিধা প্রদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঘোষিত বাজেট প্রস্তাবনার, পাবলিকলি ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর হার হ্রাস করে ২২ দশমিক ৫ ও ৩০ শতাংশ ধার্য্যসহ এক ব্যক্তি কোম্পানি কর হার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে দেশীয় শিল্পের জন্য কাঁচামাল তৈরী উৎসাহিত করার জন্য মূসক অব্যাহতির মেয়াদ আরও বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে বাজেট প্রস্তাবনায় বিটিএমএ কর্তৃক প্রদত্ত প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব যেমন সব ধরনের সুতার ওপর মূল্য সংযোজন কর ৩ টাকা ধার্য্য, কৃত্রিম আঁশের সুতায় তৈরী ফেব্রিকের মূসক প্রত্যাহারসহ সব ধরণের ফাইবারকে শুল্ক ও করমুক্তভাবে আমদানির বিষয়টিকে বিবেচনায় না নেয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর গৃহীত উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করি।’

প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, কৃত্রিম আঁশের দ্বারা তৈরী পোশাকে ডিজাইন ও ফ্যাশনে ভিন্নতা আনা তুলনামূলকভাবে সহজ। এছাড়া টেকনোলজির কারণে এর দ্বারা তৈরী পোশাক সামগ্রী তুলনামূলক কম দাম ও পরনেও আরামদায়ক। তাই আমরা উক্ত প্রস্তাবটি পণ্যের বহুমুখীকরণ তথা প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের বিষয়টিকে আরও উৎসাহিত করার মাধ্যমে কৃত্রিম আঁশের সুতার ব্যাপক আমদানি নিরুৎসাহিতসহ স্থানীয়ভাবে তা তৈরীর স্বার্থেই প্রদান করেছিলাম। কেননা টেক্সটাইল এখন শুধুমাত্র কাঁচা তুলা দ্বারা তৈরী সুতা ও তার দ্বারা প্রস্তুতকৃত ফেব্রিক ও গার্মেন্টসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। টেক্সটাইল প্রোডাক্ট তৈরীতে এখন শুধুমাত্র কাঁচা তুলা, পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার, ভিএসএফ বা ফ্লাক্স ফাইবারই ব্যবহারই হয়না, তৈরী পোশাকের ক্রেতার চাহিদা বা রপ্তানি আদেশের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে আমাদের জানামতে আরও অনেক নাম না জানা ফাইবার সুতা তৈরীর জন্য ব্যবহার হয়।’ ‘কিন্তু দুঃখজনক বিষয় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় এর কোন প্রতিফলন নেই। সরকার তৈরী পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি একই সঙ্গে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির রপ্তানিতে যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিতের বিষয়টি প্রাধান্য দিলেও সামগ্রীক বাজেটটি বিশ্লেষণে টেক্সটাইল ও তৈরী পোশাক খাত সম্পর্কে বাজেটে যেসব প্রস্তাব রয়েছে তা কার্যত অপ্রতুল এবং প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে চলতি বাজেট প্রস্তাবনার মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক কর সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনের ১৮ গ যা নি¤েœাক্ত তার প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকষর্ণ করছি।’

আরও বলা হয়, ‘রপ্তানি বাণিজ্যের খরচ কমানো ও স্থানীয় বস্ত্র শিল্পের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমরা ‘উৎস আয়কর কর্তনের হার ০.২৫ শতাংশ নির্ধারণ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক ওভেন ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু পুনঃনির্ধারণ ও টেক্সটাইল খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ওপর আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ ধার্য্যরে প্রস্তাব করেছিলাম। আমরা মনে করি, বিটিএমএ কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত প্রস্তাবগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত হলে সার্বিক টেক্সটাইলসহ তৈরী পোশাক খাত কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারতো।’

‘একই সঙ্গে ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু পুনঃনির্ধারণের প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন, যদি এখনই সম্ভব না হয় তাহলে এ লক্ষ্যে সম্পুরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ধার্য্যরে অনুরোধ করছি। এছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে খরচ কমানোর লক্ষ্যে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পূর্বের ন্যায় ০.২৫ শতাংশে নির্ধারণসহ টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রাংশকে শুধুমাত্র ১ শতাংশ শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে আমদানি সুবিধা প্রদানের জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ করছি।’