রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হট স্পট

স্বস্তি পাওয়া যাবে না এ মাসেও

সংক্রমণ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পটে’ পরিণত হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শয্যা স্বল্পতায় এই দুই জেলার ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলো নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না।

সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলায়ও বাড়ছে সংক্রমণ। চলতি মাসে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারেÑ এমন আশঙ্কা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুন মাস স্বস্তিতে যাবে না। কারণ বর্তমানে সংক্রমণ অস্থিতিশীল।

রাজশাহীতে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ২২২ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। জেলায় সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। একদিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪২ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গত একদিনে ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ৯ হাজার ২৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৬১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এক সময় করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র থাকা রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ এই ১৩ জেলায় গত একদিনে শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য প্রফেসর নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সংক্রমণ সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ২২ সীমান্ত জেলায় উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে। প্রথমদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংক্রমণ ঠেকানোর জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ওই জেলায় সংক্রমণ আটকে রাখা যায়নি। এখন আর কী করার আছে... সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, টেস্ট বাড়াতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে।’

রাজশাহী ছাড়া সীমান্তবর্তী অন্য জেলার হাসপাতালে ‘আইসিইউ ও অক্সিজেন সাপোর্ট’ নেই জানিয়ে বিএসএমএমইউর সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘দেশে অক্সিজেনেরও সংকট রয়েছে। অক্সিজেনের প্রকৃত অবস্থা কী সেটা আমরা জানতে চাই। ভারত থেকে আমাদের অক্সিজেনের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ আমদানি করা হতো কিন্তু ভারত অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করায় আমরা কি উৎপাদন বাড়াতে পেরেছি?’

সীমান্ত জেলার সংক্রমণে

উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চলতি জুন মাস গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে না।

গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ শঙ্কার কথা জানিয়ে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘খুলনা, রাজশাহী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যে কারণে একটি মেডিকেল টিম সেন্ট্রাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, জরুরি রোগী ছাড়া যেন কাউকে ভর্তি নেয়া না হয়। প্রয়োজনে পুরো হাসপাতাল করোনা সেবায় ব্যবহার করা হবে। প্রান্তিক অন্য এলাকাগুলোতে তা-ই বলা হয়েছে।’

রোবেদ আমিন জানান, গত এক সপ্তাহে দেশে সংক্রমণের পজেটিভ রেট বেড়ে গেছে; মৃত্যু বাড়ছে ধীরে ধীরে। ৫ জুন ৪৩ জন মারা গেছেন এবং তাদের বেশিরভাগই রাজশাহী এবং তার আশপাশের প্রান্তিক এলাকার।

দেশে সংক্রমণের হার প্রায় ছয় থেকে সাত শতাংশে নেমে এসেছিল উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘কিন্তু সেটা ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১১ শতাংশের বেশি। যদিও ৯২ ভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য আমরা আনন্দিত; কিন্তু মৃত্যুর হারও বেড়েছে।’

গত ৩০ মে থেকে সংক্রমণের হার উঠানামা করছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘তাহলে আমরা ওই পর্যায়ে নেই যেখানে বলতে পারি আমাদের ট্রান্সমিশন (সংক্রমণ) স্টেবল (স্থিতিশীল); এখন পর্যন্ত আমাদের ট্রান্সমিশন আনস্টেবল (অস্থিতিশীল) হয়ে গেছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত যে চিত্র দেখতে পাই, এপ্রিলের ভয়াবহতা হয়তো আমরা ট্যাকেল করতে পেরেছি কিন্তু জুন মাস যখন শুরু হয়েছে, মাত্র ছয় দিন। এর মধ্যে আমরা আট হাজার ৭৭৪ জন রোগী পেয়ে গেছি। তাহলে এই মাসটি গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’

গতকাল সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিকিৎসা কার্যক্রম ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ধৈর্য ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) পালন করলে সংক্রমণ কমবেই। ‘লকডাউনের কারণে সংক্রমণ না বাড়লেও নিম্নমুখী হতে ধৈর্য না হারিয়ে অন্তত দুই/তিন সপ্তাহ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যেন করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যে কোন ভ্যারিয়েন্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’

ভারতীয় ট্রাকচালক ও ভারত ফেরতদের যেন আরও ভালোভাবে নজরদারিতে আনা যায় এ জন্য আরও একটি স্ক্রিনিং মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।

ঢাকা বিভাগে সংক্রমণের হার ৬ শতাংশের নিচে

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে একদিনে আট হাজার ২৬০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৭৩ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগরীতে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্য জেলার মধ্যে গাজীপুরে ৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত, ফরিদপুরে ১৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জনের করোনা, গোপালগঞ্জে ৩১টি নমুনা পরীক্ষায় সাতজনের করোনা, মাদারীপুরে ১৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা, রাজবাড়ীতে ৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা, নারায়ণগঞ্জে ১৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের করোনা, কিশোরগঞ্জে ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের করোনা, শরীয়তপুরে ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা, টাঙ্গাইলে ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা ৪ জনের করোনা, মানিকগঞ্জে ৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা, মুন্সীগঞ্জে ৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নরসিংদীতে কোন নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে নাটোরে ৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের করোনা শনাক্ত, নওগাঁয় ৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ জনের দেহে সংক্রমণ, পাবনায় ৫৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা, সিরাজগঞ্জে ৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় চারজনের সংক্রমণ, বগুড়ায় ১৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং জয়পুরহাটে ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় দেশে শনাক্ত বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বিকেলে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; আগের দিন ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়। এদিন দেশে এক হাজার ৬৭৬ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৪৭ জন।

গত একদিনের শনাক্ত নিয়ে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ দশ হাজার ৯৯০ জনে আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৩৯ জনে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৫১ হাজার ৩২২ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৬১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ৩৮ জনের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ১২ জনই চট্টগ্রাম বিভাগের। অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে চারজন, রাজশাহীতে চারজন, খুলনায় ছয়জন, বরিশালে একজন, সিলেটে তিনজন, রংপুরে পাঁচজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৬০ শতাংশের বেশি

দিনাজপুর : জুন মাসের গত ৬ দিনে দিনাজপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮২ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন জানান, জেলায় মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৯৮৮ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৩৮৫ জন।

যা ৬০ শতাংশের বেশি। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত লকডাউনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার আরও ৯ গ্রাম লকডাউন

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় করোনার উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে অনির্দিষ্টকালের লকডাউন কার্যকর করা হয়। গতকাল থেকে পাশের আরও ৯ গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনিয়ন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নাস্তিপুর, ঝাঁঝাডাঙ্গা, কামারপাড়া, বাড়াদি, বড়বলদিয়া ও ছোট বলদিয়ার ৬টি গ্রাম এবং কুড়–লগাছি ইউনিয়নের গুলবাড়ি, চাকুলিয়া ও ঠাকুরপুর গ্রাম ১৪ দিনের লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে জেলার সীমান্ত নিকটবর্তী ১৬টি গ্রাম লকডাউনের আওতায় আনা হলো।

রাজশাহীতে মোড়ে মোড়ে করোনা পরীক্ষা

রাজশাহী : রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রি করোনা টেস্ট (র‌্যাপিড টেস্ট) শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে করোনা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭ জন পজেটিভ এসেছে বলে জানান রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাইউম তালুকদার।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন এবং রাজশাহী, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গার একজন করে।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, মারা যাওয়াদের মধ্যে দুইজনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ নিয়ে চলতি মাসের ৬ দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ৬ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ৩৫ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। এর মধ্যে ১ জুন, সাতজন, ২ জুন সাতজন, ৩ জুন নয়জন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫ জুন ৮ জন ও সর্বশেষ ৬ জুন ছয়জন।

খুলনার শয্যার চেয়ে বেশি রোগী

খুলনা : খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের।

খুলনা ১০০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, রোববার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ১২৫ জন। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন ৯৫ জন (রেড জোন) ও করোনা সন্দেহ রোগী (ইয়োলো জোন) ছিলেন ৩০ জন।

দুপুরের মধ্যে আরও ৫ জন রোগী ভর্তি হন। এরমধ্যে দুজনকে ইয়েলো জোন থেকে রেড জোনে নেয়া হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে ১৩ জন ও এইচডিইউতে ১২ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি বলেন, খুলনায় করোনা হাসপাতাল হওয়ার পর একসঙ্গে ১৩০ জন রোগী ভর্তি এই প্রথম। এরআগে ১০০ রোগীর কাছাকাছি ভর্তি হয়েছে। তবে এবার যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে তা আগে কখনও হয়নি।

গতকাল খুলনা নগরের তিনটি ও জেলার একটি উপজেলায় কঠোর বিধিনিষেধ অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পরিপালিত হয়েছে।

এক সপ্তাহের ওই বিধিনিষেধের প্রথম দুইদিন মোটামুটি পরিপালিত হলেও রোববার তেমনটি দেখা যায়নি।

বাগেরহাটে ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৫৭ জন,

বাগেরহাট : করোনায় বাগেরহাটের মোংলায় আরও একজন মারা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মোংলা উপজেলায় ৩৪ জন। বাকি ৪ উপজেলায় ২৩ জন।

সাতক্ষীরায় কঠোর প্রশাসন

সাতক্ষীরা : সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে সাতক্ষীরার প্রশাসন। তিন স্তরে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে পুলিশ, সীমান্তে বিজিবি ও মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোড়ে মোড়ে চালানো হয় তল্লাশি।

সাতক্ষীরার সঙ্গে খুলনা ও যশোরের সংযোগস্থলে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে আসা ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপারদের বন্দরে খোলামেলা চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ যাতায়াত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে, লকডাউনের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬৫টি মামলায় ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ রোধে আমবাজার স্থানান্তর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : করোনা সংক্রমণ রোধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জনবহুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের হাসপাতাল রোড এলাকা থেকে আমবাজার স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার স্টেডিয়াম মাঠসংলগ্ন এলাকায় এ বাজারটি স্থানান্তর করা হয়। জানা গেছে, জেলায় আম মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আম বাজারে ভিড় বেড়ে যায়। বিশেষ করে বর্তমানে করোনাকাল হওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে বড় পরিসর জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হট স্পট

স্বস্তি পাওয়া যাবে না এ মাসেও

সংক্রমণ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পটে’ পরিণত হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শয্যা স্বল্পতায় এই দুই জেলার ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলো নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না।

সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলায়ও বাড়ছে সংক্রমণ। চলতি মাসে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারেÑ এমন আশঙ্কা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুন মাস স্বস্তিতে যাবে না। কারণ বর্তমানে সংক্রমণ অস্থিতিশীল।

রাজশাহীতে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ২২২ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। জেলায় সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। একদিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪২ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গত একদিনে ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ৯ হাজার ২৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৬১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এক সময় করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র থাকা রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ এই ১৩ জেলায় গত একদিনে শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য প্রফেসর নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সংক্রমণ সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ২২ সীমান্ত জেলায় উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে। প্রথমদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংক্রমণ ঠেকানোর জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ওই জেলায় সংক্রমণ আটকে রাখা যায়নি। এখন আর কী করার আছে... সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, টেস্ট বাড়াতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে।’

রাজশাহী ছাড়া সীমান্তবর্তী অন্য জেলার হাসপাতালে ‘আইসিইউ ও অক্সিজেন সাপোর্ট’ নেই জানিয়ে বিএসএমএমইউর সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘দেশে অক্সিজেনেরও সংকট রয়েছে। অক্সিজেনের প্রকৃত অবস্থা কী সেটা আমরা জানতে চাই। ভারত থেকে আমাদের অক্সিজেনের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ আমদানি করা হতো কিন্তু ভারত অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করায় আমরা কি উৎপাদন বাড়াতে পেরেছি?’

সীমান্ত জেলার সংক্রমণে

উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চলতি জুন মাস গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে না।

গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ শঙ্কার কথা জানিয়ে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘খুলনা, রাজশাহী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যে কারণে একটি মেডিকেল টিম সেন্ট্রাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, জরুরি রোগী ছাড়া যেন কাউকে ভর্তি নেয়া না হয়। প্রয়োজনে পুরো হাসপাতাল করোনা সেবায় ব্যবহার করা হবে। প্রান্তিক অন্য এলাকাগুলোতে তা-ই বলা হয়েছে।’

রোবেদ আমিন জানান, গত এক সপ্তাহে দেশে সংক্রমণের পজেটিভ রেট বেড়ে গেছে; মৃত্যু বাড়ছে ধীরে ধীরে। ৫ জুন ৪৩ জন মারা গেছেন এবং তাদের বেশিরভাগই রাজশাহী এবং তার আশপাশের প্রান্তিক এলাকার।

দেশে সংক্রমণের হার প্রায় ছয় থেকে সাত শতাংশে নেমে এসেছিল উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘কিন্তু সেটা ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১১ শতাংশের বেশি। যদিও ৯২ ভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য আমরা আনন্দিত; কিন্তু মৃত্যুর হারও বেড়েছে।’

গত ৩০ মে থেকে সংক্রমণের হার উঠানামা করছে জানিয়ে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘তাহলে আমরা ওই পর্যায়ে নেই যেখানে বলতে পারি আমাদের ট্রান্সমিশন (সংক্রমণ) স্টেবল (স্থিতিশীল); এখন পর্যন্ত আমাদের ট্রান্সমিশন আনস্টেবল (অস্থিতিশীল) হয়ে গেছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত যে চিত্র দেখতে পাই, এপ্রিলের ভয়াবহতা হয়তো আমরা ট্যাকেল করতে পেরেছি কিন্তু জুন মাস যখন শুরু হয়েছে, মাত্র ছয় দিন। এর মধ্যে আমরা আট হাজার ৭৭৪ জন রোগী পেয়ে গেছি। তাহলে এই মাসটি গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’

গতকাল সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিকিৎসা কার্যক্রম ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ধৈর্য ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) পালন করলে সংক্রমণ কমবেই। ‘লকডাউনের কারণে সংক্রমণ না বাড়লেও নিম্নমুখী হতে ধৈর্য না হারিয়ে অন্তত দুই/তিন সপ্তাহ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যেন করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যে কোন ভ্যারিয়েন্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’

ভারতীয় ট্রাকচালক ও ভারত ফেরতদের যেন আরও ভালোভাবে নজরদারিতে আনা যায় এ জন্য আরও একটি স্ক্রিনিং মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।

ঢাকা বিভাগে সংক্রমণের হার ৬ শতাংশের নিচে

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে একদিনে আট হাজার ২৬০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৭৩ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগরীতে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্য জেলার মধ্যে গাজীপুরে ৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত, ফরিদপুরে ১৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জনের করোনা, গোপালগঞ্জে ৩১টি নমুনা পরীক্ষায় সাতজনের করোনা, মাদারীপুরে ১৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা, রাজবাড়ীতে ৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা, নারায়ণগঞ্জে ১৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের করোনা, কিশোরগঞ্জে ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের করোনা, শরীয়তপুরে ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা, টাঙ্গাইলে ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা ৪ জনের করোনা, মানিকগঞ্জে ৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা, মুন্সীগঞ্জে ৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নরসিংদীতে কোন নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে নাটোরে ৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের করোনা শনাক্ত, নওগাঁয় ৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ জনের দেহে সংক্রমণ, পাবনায় ৫৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা, সিরাজগঞ্জে ৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় চারজনের সংক্রমণ, বগুড়ায় ১৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং জয়পুরহাটে ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় দেশে শনাক্ত বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বিকেলে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; আগের দিন ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল করোনায়। এদিন দেশে এক হাজার ৬৭৬ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৪৭ জন।

গত একদিনের শনাক্ত নিয়ে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ দশ হাজার ৯৯০ জনে আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৩৯ জনে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৫১ হাজার ৩২২ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৬১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ৩৮ জনের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ১২ জনই চট্টগ্রাম বিভাগের। অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে চারজন, রাজশাহীতে চারজন, খুলনায় ছয়জন, বরিশালে একজন, সিলেটে তিনজন, রংপুরে পাঁচজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৬০ শতাংশের বেশি

দিনাজপুর : জুন মাসের গত ৬ দিনে দিনাজপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮২ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন জানান, জেলায় মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৯৮৮ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৩৮৫ জন।

যা ৬০ শতাংশের বেশি। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত লকডাউনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার আরও ৯ গ্রাম লকডাউন

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় করোনার উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে অনির্দিষ্টকালের লকডাউন কার্যকর করা হয়। গতকাল থেকে পাশের আরও ৯ গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনিয়ন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নাস্তিপুর, ঝাঁঝাডাঙ্গা, কামারপাড়া, বাড়াদি, বড়বলদিয়া ও ছোট বলদিয়ার ৬টি গ্রাম এবং কুড়–লগাছি ইউনিয়নের গুলবাড়ি, চাকুলিয়া ও ঠাকুরপুর গ্রাম ১৪ দিনের লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে জেলার সীমান্ত নিকটবর্তী ১৬টি গ্রাম লকডাউনের আওতায় আনা হলো।

রাজশাহীতে মোড়ে মোড়ে করোনা পরীক্ষা

রাজশাহী : রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ ফ্রি করোনা টেস্ট (র‌্যাপিড টেস্ট) শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে নগরীর পাঁচটি পয়েন্টে করোনা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭ জন পজেটিভ এসেছে বলে জানান রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাইউম তালুকদার।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন এবং রাজশাহী, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গার একজন করে।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, মারা যাওয়াদের মধ্যে দুইজনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ নিয়ে চলতি মাসের ৬ দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ৬ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ৩৫ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। এর মধ্যে ১ জুন, সাতজন, ২ জুন সাতজন, ৩ জুন নয়জন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫ জুন ৮ জন ও সর্বশেষ ৬ জুন ছয়জন।

খুলনার শয্যার চেয়ে বেশি রোগী

খুলনা : খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের।

খুলনা ১০০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, রোববার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ১২৫ জন। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন ৯৫ জন (রেড জোন) ও করোনা সন্দেহ রোগী (ইয়োলো জোন) ছিলেন ৩০ জন।

দুপুরের মধ্যে আরও ৫ জন রোগী ভর্তি হন। এরমধ্যে দুজনকে ইয়েলো জোন থেকে রেড জোনে নেয়া হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে ১৩ জন ও এইচডিইউতে ১২ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি বলেন, খুলনায় করোনা হাসপাতাল হওয়ার পর একসঙ্গে ১৩০ জন রোগী ভর্তি এই প্রথম। এরআগে ১০০ রোগীর কাছাকাছি ভর্তি হয়েছে। তবে এবার যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে তা আগে কখনও হয়নি।

গতকাল খুলনা নগরের তিনটি ও জেলার একটি উপজেলায় কঠোর বিধিনিষেধ অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পরিপালিত হয়েছে।

এক সপ্তাহের ওই বিধিনিষেধের প্রথম দুইদিন মোটামুটি পরিপালিত হলেও রোববার তেমনটি দেখা যায়নি।

বাগেরহাটে ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৫৭ জন,

বাগেরহাট : করোনায় বাগেরহাটের মোংলায় আরও একজন মারা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মোংলা উপজেলায় ৩৪ জন। বাকি ৪ উপজেলায় ২৩ জন।

সাতক্ষীরায় কঠোর প্রশাসন

সাতক্ষীরা : সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে সাতক্ষীরার প্রশাসন। তিন স্তরে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে পুলিশ, সীমান্তে বিজিবি ও মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোড়ে মোড়ে চালানো হয় তল্লাশি।

সাতক্ষীরার সঙ্গে খুলনা ও যশোরের সংযোগস্থলে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে আসা ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপারদের বন্দরে খোলামেলা চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ যাতায়াত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে, লকডাউনের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬৫টি মামলায় ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ রোধে আমবাজার স্থানান্তর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : করোনা সংক্রমণ রোধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জনবহুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের হাসপাতাল রোড এলাকা থেকে আমবাজার স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার স্টেডিয়াম মাঠসংলগ্ন এলাকায় এ বাজারটি স্থানান্তর করা হয়। জানা গেছে, জেলায় আম মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আম বাজারে ভিড় বেড়ে যায়। বিশেষ করে বর্তমানে করোনাকাল হওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে বড় পরিসর জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।