চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা দ্রুত আসবে

রাশিয়া থেকে আসবে ‘স্পুটনিক-৫’

রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ দ্রুত পাঁচ মিলিয়ন করোনাভাইরাসের টিকা ‘স্পুটনিক-৫’ আমদানি করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনার টিকা দ্রুত আসবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ভালো সংবাদ হচ্ছে আমেরিকা ভ্যাকসিন দেবে আমাদের। সঠিক পরিমাণ এখনও জানি না।’

গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার নতুন চালান না আসায় বাংলাদেশ রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে টিকা কিনতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর কথা আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। গতকাল রুশ রাষ্ট্রদূত জানালেন সর্বশেষ অবস্থা। রাশিয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের টিকা স্পুৎনিক-ভি কেনার চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানান ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা সরবরাহে এবং আপনাদের জনগণকে কোভিড মোকাবিলায় সহায়তায় প্রস্তুত। ‘এটা (চুক্তি) প্রায় হয়ে গেছে এবং ভালোভাবেই হবে। এটা খুব দ্রুতই হবে।’

কবে নাগাদ টিকা পাওয়া যেতে পারে, এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যৌথ উৎপাদন ও সরবরাহ, দুটো দিকই আছে। এটা জটিল প্রক্রিয়া, তবে কোন সমস্যা হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উৎপাদন ও টিকা কেনার উভয় বিষয়ে চুক্তি হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা ভালো বলতে পারবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারবে। তিনি রাশিয়া থেকে দ্রুত করোনা ভ্যাকসিন আমদানির ক্ষেত্রে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন। একইসঙ্গে দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের গতি এবং মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

আবদুল মোমেন বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য রাশিয়া সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

অন্যদিকে, ভারত করোনার টিকা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা না তোলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ কোটি অতিরিক্ত ডোজ থেকে কিছু টিকা পাঠাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। চলমান কূটনৈতিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তৎপরতায় এই কাজে সফল হওয়ার খবর জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তারা বলছে, বাংলাদেশকে দেবে। সঠিক পরিমাণ এখনো জানি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিডের মধ্যে সাকসেস হওয়ার পরে আরেক ঝামেলা! লোক বেশ কম মরছে বলে তারা আমাদের পাত্তা দেয় না। আমরা বেশ কষ্ট করে পাত্তায় আসছি।‘ সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও ‘খুব শীঘ্রই’ ওই টিকা পাওয়ার আশা প্রকাশ করে মোমেন বলেন, ‘আমাদের তো দরকার অনেক। অন্য দেশের মতো না যে, ২০ হাজার, এক লাখ হলে হয়ে যাবে। আমার ১৬৫ মিলিয়ন লোক, আমার অনেক লাগে। ১৩০ মিলিয়নকে দিলেও ২৬০ মিলিয়ন লাগবে। এটা বিশাল বাজার।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা সরঞ্জামের একটি চালান আজ বাংলাদেশে আসবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন জটিলতা তৈরি হয়নি। আমরা বলেছি টিকা কিনতে চাই এবং তোমরা কোন বাধা ছাড়াই জোগান দাও। চীন আমাদের বলেছে তারা কোন বাধা ছাড়াই টিকা সরবরাহ করবে।’

করোনা প্রতিরোধে চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ কিনছে বাংলাদেশ। মন্ত্রিপরিষদের ভ্যাকসিন ক্রয় কমিটি চীনের এই ভ্যাকসিন কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা হয় চীনের সঙ্গে। এই টিকার ডোজপ্রতি দাম ধরা হয়েছিল ১০ ডলার। বাংলাদেশের কাছ থেকে টিকার চাহিদাপত্র পাওয়ার পর বাণিজ্যিক স্বার্থে টিকার দাম যেন কোনভাবে প্রকাশ করা না হয়, সেটি বলে দেয় চীন। কিন্তু গত ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়ার পর বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার সাংবাদিকদের প্রতি ডোজের দাম ১০ ডলার পড়বে বলে দেন। চুক্তি হওয়ার আগেই এই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। টিকা পাওয়া নিশ্চিত করতে চীনকে চিঠি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা।

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা দ্রুত আসবে

রাশিয়া থেকে আসবে ‘স্পুটনিক-৫’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ দ্রুত পাঁচ মিলিয়ন করোনাভাইরাসের টিকা ‘স্পুটনিক-৫’ আমদানি করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনার টিকা দ্রুত আসবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ভালো সংবাদ হচ্ছে আমেরিকা ভ্যাকসিন দেবে আমাদের। সঠিক পরিমাণ এখনও জানি না।’

গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার নতুন চালান না আসায় বাংলাদেশ রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে টিকা কিনতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর কথা আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। গতকাল রুশ রাষ্ট্রদূত জানালেন সর্বশেষ অবস্থা। রাশিয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের টিকা স্পুৎনিক-ভি কেনার চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানান ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা সরবরাহে এবং আপনাদের জনগণকে কোভিড মোকাবিলায় সহায়তায় প্রস্তুত। ‘এটা (চুক্তি) প্রায় হয়ে গেছে এবং ভালোভাবেই হবে। এটা খুব দ্রুতই হবে।’

কবে নাগাদ টিকা পাওয়া যেতে পারে, এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যৌথ উৎপাদন ও সরবরাহ, দুটো দিকই আছে। এটা জটিল প্রক্রিয়া, তবে কোন সমস্যা হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উৎপাদন ও টিকা কেনার উভয় বিষয়ে চুক্তি হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা ভালো বলতে পারবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারবে। তিনি রাশিয়া থেকে দ্রুত করোনা ভ্যাকসিন আমদানির ক্ষেত্রে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন। একইসঙ্গে দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের গতি এবং মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

আবদুল মোমেন বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য রাশিয়া সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

অন্যদিকে, ভারত করোনার টিকা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা না তোলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ কোটি অতিরিক্ত ডোজ থেকে কিছু টিকা পাঠাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। চলমান কূটনৈতিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তৎপরতায় এই কাজে সফল হওয়ার খবর জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তারা বলছে, বাংলাদেশকে দেবে। সঠিক পরিমাণ এখনো জানি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিডের মধ্যে সাকসেস হওয়ার পরে আরেক ঝামেলা! লোক বেশ কম মরছে বলে তারা আমাদের পাত্তা দেয় না। আমরা বেশ কষ্ট করে পাত্তায় আসছি।‘ সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও ‘খুব শীঘ্রই’ ওই টিকা পাওয়ার আশা প্রকাশ করে মোমেন বলেন, ‘আমাদের তো দরকার অনেক। অন্য দেশের মতো না যে, ২০ হাজার, এক লাখ হলে হয়ে যাবে। আমার ১৬৫ মিলিয়ন লোক, আমার অনেক লাগে। ১৩০ মিলিয়নকে দিলেও ২৬০ মিলিয়ন লাগবে। এটা বিশাল বাজার।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা সরঞ্জামের একটি চালান আজ বাংলাদেশে আসবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন জটিলতা তৈরি হয়নি। আমরা বলেছি টিকা কিনতে চাই এবং তোমরা কোন বাধা ছাড়াই জোগান দাও। চীন আমাদের বলেছে তারা কোন বাধা ছাড়াই টিকা সরবরাহ করবে।’

করোনা প্রতিরোধে চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ কিনছে বাংলাদেশ। মন্ত্রিপরিষদের ভ্যাকসিন ক্রয় কমিটি চীনের এই ভ্যাকসিন কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা হয় চীনের সঙ্গে। এই টিকার ডোজপ্রতি দাম ধরা হয়েছিল ১০ ডলার। বাংলাদেশের কাছ থেকে টিকার চাহিদাপত্র পাওয়ার পর বাণিজ্যিক স্বার্থে টিকার দাম যেন কোনভাবে প্রকাশ করা না হয়, সেটি বলে দেয় চীন। কিন্তু গত ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়ার পর বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার সাংবাদিকদের প্রতি ডোজের দাম ১০ ডলার পড়বে বলে দেন। চুক্তি হওয়ার আগেই এই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। টিকা পাওয়া নিশ্চিত করতে চীনকে চিঠি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা।