বুরকিনা ফাসোতে সশস্ত্র হামলা : নিহত ১৩৮

জাতিসংঘের ক্ষোভ

বুরকিনা ফাসোর উত্তরাংশের একটি গ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় অন্তত ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ হামলার ঘটনাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে দেশটির সরকার।

সোলহান নামের ওই গ্রামে রাতভর হামলায় স্থানীয় বাজারও পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এ হামলায় এখনও কোন গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। তবে বুরকিনা ফাসোতে চরমপন্থি ইসলামী গোষ্ঠীগুলো প্রায়ই হামলা-নাশকতা চালিয়ে আসছে, বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে।

এ ঘটনায় ‘তীব্র ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

তার মুখপাত্র বলেছেন, এ ঘৃণ্য হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে এবং অগ্রহণযোগ্য প্রাণহানি ঠেকানোর লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রক মার্ক ক্রিস্টিয়ান কাবোর বলেন, হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন।

তিনি এই হত্যাকা-কে ‘বর্বর’ ও ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন এবং অপশক্তিদের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুরকিনা ফাসোর এটি একটি নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ।

ঘটনাস্থল মালি ও নাইজার সীমান্তবর্তী বুরকিনা ফাসোর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রাম। ইয়াঘা প্রদেশের প্রধান শহর সেবা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট গ্রামটির নাম সোলহান। হামলায় নিহতদের গণহারে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং গণকবর থেকে আরও মরদেহ উদ্ধারের ফলে প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে প্রশাসন।

কোন হামলায় একসঙ্গে এত মানুষকে হত্যার ঘটনা বুরকিনা ফাসোতে এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংঘাতপ্রবণ দেশটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। কোন বয়সী মানুষকেই ছাড় দেয়নি সন্ত্রাসীরা।

জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ও আইএস সমর্থিত সন্ত্রাসীরা সামরিক সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ডিফেন্স অফ দ্য মাদারল্যান্ডের (ভিডিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়। পরে গ্রামজুড়ে নির্বিচার হত্যাকা- চালায় সন্ত্রাসীরা। সবশেষে বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করে বেসামরিক প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কাজে যোগদানের আগে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ভিডিপি সদস্যদের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত ভিডিপির দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক এ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। বুরকিনা ফাসো, মালিসহ আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে শুরু করে ২০১২ ও ২০১৩ সাল থেকে। মালির উত্তরাঞ্চলে বড় অংশ দখলও করে নেয় তারা।

অঞ্চলটির পাঁচ দেশকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কয়েক বছর ধরে সহযোগিতা করছে সাবেক উপনিবেশ স্থাপনকারী রাষ্ট্র ফ্রান্সের সেনাবাহিনী। যদিও হামলা, অপহরণ বন্ধ হয়নি।

বুরকিনা ফাসোতে সহিংসতায় গত কয়েক বছরে প্রাণ গেছে প্রায় দেড় হাজার মানুষের। দেশটিতে গৃহহীন হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ।

image

বুরকিনা ফাসোর উত্তরাঞ্চলজুড়ে সশস্ত্র হামলায় বেসামরিক লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে রয়টার্স

আরও খবর
আটকের কয়েক ঘণ্টা পর মুক্ত আল-জাজিরার সাংবাদিক
আফগানিস্তানে ফের বোমা হামলায় নিহত ১১

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

বুরকিনা ফাসোতে সশস্ত্র হামলা : নিহত ১৩৮

জাতিসংঘের ক্ষোভ

image

বুরকিনা ফাসোর উত্তরাঞ্চলজুড়ে সশস্ত্র হামলায় বেসামরিক লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে রয়টার্স

বুরকিনা ফাসোর উত্তরাংশের একটি গ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় অন্তত ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ হামলার ঘটনাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে দেশটির সরকার।

সোলহান নামের ওই গ্রামে রাতভর হামলায় স্থানীয় বাজারও পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এ হামলায় এখনও কোন গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। তবে বুরকিনা ফাসোতে চরমপন্থি ইসলামী গোষ্ঠীগুলো প্রায়ই হামলা-নাশকতা চালিয়ে আসছে, বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে।

এ ঘটনায় ‘তীব্র ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

তার মুখপাত্র বলেছেন, এ ঘৃণ্য হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে এবং অগ্রহণযোগ্য প্রাণহানি ঠেকানোর লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রক মার্ক ক্রিস্টিয়ান কাবোর বলেন, হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন।

তিনি এই হত্যাকা-কে ‘বর্বর’ ও ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন এবং অপশক্তিদের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুরকিনা ফাসোর এটি একটি নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ।

ঘটনাস্থল মালি ও নাইজার সীমান্তবর্তী বুরকিনা ফাসোর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রাম। ইয়াঘা প্রদেশের প্রধান শহর সেবা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট গ্রামটির নাম সোলহান। হামলায় নিহতদের গণহারে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং গণকবর থেকে আরও মরদেহ উদ্ধারের ফলে প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে প্রশাসন।

কোন হামলায় একসঙ্গে এত মানুষকে হত্যার ঘটনা বুরকিনা ফাসোতে এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংঘাতপ্রবণ দেশটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। কোন বয়সী মানুষকেই ছাড় দেয়নি সন্ত্রাসীরা।

জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ও আইএস সমর্থিত সন্ত্রাসীরা সামরিক সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ডিফেন্স অফ দ্য মাদারল্যান্ডের (ভিডিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়। পরে গ্রামজুড়ে নির্বিচার হত্যাকা- চালায় সন্ত্রাসীরা। সবশেষে বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করে বেসামরিক প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কাজে যোগদানের আগে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ভিডিপি সদস্যদের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত ভিডিপির দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক এ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। বুরকিনা ফাসো, মালিসহ আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে শুরু করে ২০১২ ও ২০১৩ সাল থেকে। মালির উত্তরাঞ্চলে বড় অংশ দখলও করে নেয় তারা।

অঞ্চলটির পাঁচ দেশকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কয়েক বছর ধরে সহযোগিতা করছে সাবেক উপনিবেশ স্থাপনকারী রাষ্ট্র ফ্রান্সের সেনাবাহিনী। যদিও হামলা, অপহরণ বন্ধ হয়নি।

বুরকিনা ফাসোতে সহিংসতায় গত কয়েক বছরে প্রাণ গেছে প্রায় দেড় হাজার মানুষের। দেশটিতে গৃহহীন হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ।