হল বন্ধ, ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার ঢাবি ছাত্রীর লাশ

মৃত্যুর কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর : পুলিশ

করোনার কারণে হল বন্ধ। ৩ থেকে ৪ দিন আগে এক বান্ধবীকে নিয়ে আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা সাবলেটে ভাড়া নিয়েছেন। বেশি ভাড়া নিয়ে আরামে থাকার জন্য নতুন বাসায় ওঠার কথা বাবাকেও জানিয়েছেন কিন্তু সেই বাসা থেকে দরজা ভেঙে উদ্ধার হলো ইসরাত জাহান তুষ্টি নামে ২১ বছর বয়সী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মরদেহ। কীভাবে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হলো তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ এবং তার পরিবার। মৃত্যুর কারণ জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকাহত বাবা এখন বাড়িতে বসে অপেক্ষা করছেন আদরের মেয়ের লাশ গ্রহণ করার জন্য।

গতকাল ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল সেন্টারে ফোন আসার পর ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পলাশী ব্যারাক ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আমরা ভোর ৫টা ১০ মিনিটে স্টাফ কোয়ার্টার ইউনিট-২ এর ১৮ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে যাই। ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করি। ইসরাত জাহান তুষ্টি (২১) নামে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মারা যাওয়া ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সংযুক্ত ছিলেন। হল বন্ধ থাকায় স্টাফ কোয়ার্টারের ওই ভবনের নিচতলায় থাকতেন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায়।

পুলিশের মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা আলতাফ উদ্দীন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ও আমার খুব আদরের মেয়ে ছিল। আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। বড় আদরের ছিল মেয়েটা। মেয়েটার আগে থেকেই একটু শ্বাসকষ্ট ছিল।’ ইশরাতের বাবা কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা করেন। গণমাধ্যমকে বলেন, ইশরাত ওই বাসায় মাত্র তিন থেকে চার দিন আগে উঠেছিল। ফোন করে জানিয়েছিল, বাসাটা খুব সুন্দর। আগের বাসার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিতে হবে। সবাই মিলে সুখ-শান্তিতে আছে। তিনি তখন হেসে মেয়েকে বলেছিলেন, টাকা যা লাগে লাগুক, মেয়ের পছন্দ হয়েছে, এটাই বড় কথা।

বাবা আলতাফ উদ্দীন জানান, মেয়ের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই মুঠোফোনে কথা হতো। গত শনিবার এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিল বলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। কে জানত মেয়ের সঙ্গে আর কথা বলার সুযোগই থাকবে না। আফসোস করে বলেন, মেয়ে কীভাবে মারা গেল, তা নিশ্চিত নই। শরীর খারাপ থাকায় তিনি ঢাকায় আসতে পারছেন না। বাড়িতে অপেক্ষায় আছেন কখন আদরের মেয়ের লাশটি আসবে। মেয়ের মৃত্যুর খবরে আত্মীয়স্বজনরা গতকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ছাত্রী ইসরাত জাহান তুষ্টির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ময়নাতদন্ত ছাড়া এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। এছাড়া পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ?‘ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল বলে ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলে জানতে পেরেছেন তারা। তুষ্টির বান্ধবী পরিচয় দিয়ে তাপসী নামের আরেক ছাত্রীও তাদের একই তথ্য দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী ওই ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রক্টরের ভাষ্য, মেয়েটি একটি বাসায় সহপাঠীদের সঙ্গে ভাড়া থাকত। মৃত ছাত্রীর সহপাঠীরা হাসপাতালে এসেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সকালে যে চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন, তিনি জানিয়েছেন মৃত অবস্থায় মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

প্রক্টর আরও বলেন, দুইজন শিক্ষার্থী মিলে স্টাফ কোয়ার্টারের নিচতলায় একটি রুমে সাবলেট থাকত। সকালে তার রুমমেট ঘুম থেকে উঠে বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখতে পান। তবে, ভেতরে কলের পানি পড়ছিল। এরপর ওই রুমমেট ৯৯৯ এর মাধ্যমে তাদের খবর দিলে পরে ওই বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। অসুস্থজনিত কারণে তিনি বাথরুমের ভেতরে পড়ে মারা যেতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তিনি গত শনিবার (৫ জুন) বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন। এছাড়া তার ঠাণ্ডার সমস্যা ছিল বলে জানতে পেরেছি।

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

হল বন্ধ, ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার ঢাবি ছাত্রীর লাশ

মৃত্যুর কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর : পুলিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনার কারণে হল বন্ধ। ৩ থেকে ৪ দিন আগে এক বান্ধবীকে নিয়ে আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা সাবলেটে ভাড়া নিয়েছেন। বেশি ভাড়া নিয়ে আরামে থাকার জন্য নতুন বাসায় ওঠার কথা বাবাকেও জানিয়েছেন কিন্তু সেই বাসা থেকে দরজা ভেঙে উদ্ধার হলো ইসরাত জাহান তুষ্টি নামে ২১ বছর বয়সী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মরদেহ। কীভাবে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হলো তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ এবং তার পরিবার। মৃত্যুর কারণ জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকাহত বাবা এখন বাড়িতে বসে অপেক্ষা করছেন আদরের মেয়ের লাশ গ্রহণ করার জন্য।

গতকাল ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল সেন্টারে ফোন আসার পর ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পলাশী ব্যারাক ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আমরা ভোর ৫টা ১০ মিনিটে স্টাফ কোয়ার্টার ইউনিট-২ এর ১৮ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে যাই। ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করি। ইসরাত জাহান তুষ্টি (২১) নামে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মারা যাওয়া ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সংযুক্ত ছিলেন। হল বন্ধ থাকায় স্টাফ কোয়ার্টারের ওই ভবনের নিচতলায় থাকতেন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায়।

পুলিশের মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা আলতাফ উদ্দীন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ও আমার খুব আদরের মেয়ে ছিল। আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। বড় আদরের ছিল মেয়েটা। মেয়েটার আগে থেকেই একটু শ্বাসকষ্ট ছিল।’ ইশরাতের বাবা কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা করেন। গণমাধ্যমকে বলেন, ইশরাত ওই বাসায় মাত্র তিন থেকে চার দিন আগে উঠেছিল। ফোন করে জানিয়েছিল, বাসাটা খুব সুন্দর। আগের বাসার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিতে হবে। সবাই মিলে সুখ-শান্তিতে আছে। তিনি তখন হেসে মেয়েকে বলেছিলেন, টাকা যা লাগে লাগুক, মেয়ের পছন্দ হয়েছে, এটাই বড় কথা।

বাবা আলতাফ উদ্দীন জানান, মেয়ের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই মুঠোফোনে কথা হতো। গত শনিবার এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিল বলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। কে জানত মেয়ের সঙ্গে আর কথা বলার সুযোগই থাকবে না। আফসোস করে বলেন, মেয়ে কীভাবে মারা গেল, তা নিশ্চিত নই। শরীর খারাপ থাকায় তিনি ঢাকায় আসতে পারছেন না। বাড়িতে অপেক্ষায় আছেন কখন আদরের মেয়ের লাশটি আসবে। মেয়ের মৃত্যুর খবরে আত্মীয়স্বজনরা গতকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ছাত্রী ইসরাত জাহান তুষ্টির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ময়নাতদন্ত ছাড়া এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। এছাড়া পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ?‘ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল বলে ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলে জানতে পেরেছেন তারা। তুষ্টির বান্ধবী পরিচয় দিয়ে তাপসী নামের আরেক ছাত্রীও তাদের একই তথ্য দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী ওই ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রক্টরের ভাষ্য, মেয়েটি একটি বাসায় সহপাঠীদের সঙ্গে ভাড়া থাকত। মৃত ছাত্রীর সহপাঠীরা হাসপাতালে এসেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সকালে যে চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন, তিনি জানিয়েছেন মৃত অবস্থায় মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

প্রক্টর আরও বলেন, দুইজন শিক্ষার্থী মিলে স্টাফ কোয়ার্টারের নিচতলায় একটি রুমে সাবলেট থাকত। সকালে তার রুমমেট ঘুম থেকে উঠে বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখতে পান। তবে, ভেতরে কলের পানি পড়ছিল। এরপর ওই রুমমেট ৯৯৯ এর মাধ্যমে তাদের খবর দিলে পরে ওই বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। অসুস্থজনিত কারণে তিনি বাথরুমের ভেতরে পড়ে মারা যেতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তিনি গত শনিবার (৫ জুন) বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন। এছাড়া তার ঠাণ্ডার সমস্যা ছিল বলে জানতে পেরেছি।