অরক্ষিত সীমান্ত পথে প্রবেশ থেমে নেই : আতঙ্কে খুলনা

খুলনা বিভাগের ছয় জেলার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে এখনও দেশে ঢুকছে মানুষ। অরক্ষিত এ পয়েন্টগুলো ‘চোরাই পথ’ নামে পরিচিত। ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই দালাল চক্রের মাধ্যমে এ সীমান্ত পারাপার হয়। অবৈধভাবে দুই দেশে যাতায়াত সীমান্তে সচরাচর ঘটনা হলেও করোনাকালে বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষকরে সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ‘ভারতীয় ধরন’ শনাক্ত হওয়ার পর শঙ্কা আরও বেড়েছে। কারণ চোরাইপথে যাতায়াতকারীরা ভারত থেকে আসার পর কোনরকম স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আসছে না। সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নিয়মিত অভিযানে হাতে গোনা কিছু অনুপ্রবেশকারী আটক হলেও একটি বড় অংশ তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকে নির্বিঘেœ চলে যাচ্ছে নিজ নিজ বাড়িতে। অবৈধ বহির্গমন-অনুপ্রবেশকারীরা পরিবার ও এলাকার মানুষের সঙ্গে নীরবে মিশে যাচ্ছে। খুলনায় ভারত ভ্রমণ ছাড়াই করোনার ‘ভারতীয় ধরন’র আক্রান্তের খবরে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, খুলনায় ‘ভারতীয় ধরনে’ আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত চার। গত ৮ মে বাংলাদেশের দুই ব্যক্তির শরীরে করোনার ‘ভারতীয় ধরন’র অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারা দুজনই পুরুষ এবং উভয়ই ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তাদের একজন ছিলেন খুলনার। এরমধ্যে দুই বছরের শিশুসহ তিনজনের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস আছে। তবে সর্বশেষ ব্যক্তি সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করেননি। খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। চলতি মে মাসের শুরুর দিকে কিছুটা কম ছিল। ঈদের পর আবার বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাই করোনা বাড়ার একমাত্র কারণ।

সিভিল সার্জন বলেন, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা খুলনা জেলায় মানুষের সচেতনতা এখনও কম। রাস্তাঘাট, বাজার-রেস্তরাঁয় মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায় না।

তবে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা দাবি কয়েছেন, শুধু ভারতের করোনা প্রকোপের কারণে সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি জেলা থাকায় খুলনাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবে খুলনা বিভাগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, খুলনা জেলায় গতবছরের ১৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এরপরের ১২ মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৪৭ জন। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে চলতি মে মাসের হিসাবে জেলায় করোনায় আক্রান্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গড় হিসাবে এই একমাসে করোনায় মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে খুলনায় ২ হাজার ৫০২টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৪৬ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শনাক্তের হার ছিল গড়ে ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ঈদের পরের ১৫ দিনে ২ হাজার ৯৯২ নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হন ৬৪৮ জন। শনাক্তের গড় হার ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খুলনা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ থেকে ৩০ মে খুলনা বিভাগে ২ হাজার ৯২৮ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে শনাক্ত ১ হাজার ৯৪ জনই খুলনা জেলার। তারমধ্যে আবার খুলনা শহরের ৯৪৮ জন। এ সময়ে খুলনায় মারা গেছেন ২৫ জন। এরমধ্যে শহরের ২০ জন। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে, অর্থাৎ ঈদের আগের ১৫ দিনে ৪৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরমধ্যে শহরের ৩৯৫ জন। ওই সময়ের মধ্যে মারা যান ১২ জন। আর ঈদের পরের ১৫ দিন, অর্থাৎ ১৬ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬৪৮ জন। এর মধ্যে শহরের ৫৫৩ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ১৩ জন।

খুলনা জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭২ জন। এদিকে জেলায় মোট আক্রান্ত ১০ হাজার ১৭৪ রোগীর মধ্যে খুলনা নগরেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২৭৪। অর্থাৎ জেলার প্রায় ৮১ শতাংশ রোগীই খুলনা নগরের। খুলনা নগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৬ জন।

গতবছরের ১৩ এপ্রিল খুলনার ছোট বয়রার করিম নগরে জেলার প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। খুলনা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যে থেকে দেখা গেছে, খুলনায় করোনা শনাক্তের প্রথম দুইমাসে সংক্রমণের গতি ধীর ছিল। গতবছরের জুনে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। এরপর জুলাই মাসে দুটিই অনেক বেড়ে যায়। আগস্টে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কিছুটা কমে যায়। সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকে। এরপর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্তও পরিস্থিতি একটু উন্নতির দিকে ছিল। সোমবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনার ১০০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে এখন ১০০ করোনারোগীই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ১১ জন।

মঙ্গলবার, ০৮ জুন ২০২১ , ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৬ শাওয়াল ১৪৪২

করোনায় ভারতী ধরন শনাক্ত বাড়ছে

অরক্ষিত সীমান্ত পথে প্রবেশ থেমে নেই : আতঙ্কে খুলনা

প্রতিনিধি, খুলনা

খুলনা বিভাগের ছয় জেলার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে এখনও দেশে ঢুকছে মানুষ। অরক্ষিত এ পয়েন্টগুলো ‘চোরাই পথ’ নামে পরিচিত। ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই দালাল চক্রের মাধ্যমে এ সীমান্ত পারাপার হয়। অবৈধভাবে দুই দেশে যাতায়াত সীমান্তে সচরাচর ঘটনা হলেও করোনাকালে বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষকরে সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ‘ভারতীয় ধরন’ শনাক্ত হওয়ার পর শঙ্কা আরও বেড়েছে। কারণ চোরাইপথে যাতায়াতকারীরা ভারত থেকে আসার পর কোনরকম স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আসছে না। সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নিয়মিত অভিযানে হাতে গোনা কিছু অনুপ্রবেশকারী আটক হলেও একটি বড় অংশ তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকে নির্বিঘেœ চলে যাচ্ছে নিজ নিজ বাড়িতে। অবৈধ বহির্গমন-অনুপ্রবেশকারীরা পরিবার ও এলাকার মানুষের সঙ্গে নীরবে মিশে যাচ্ছে। খুলনায় ভারত ভ্রমণ ছাড়াই করোনার ‘ভারতীয় ধরন’র আক্রান্তের খবরে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, খুলনায় ‘ভারতীয় ধরনে’ আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত চার। গত ৮ মে বাংলাদেশের দুই ব্যক্তির শরীরে করোনার ‘ভারতীয় ধরন’র অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারা দুজনই পুরুষ এবং উভয়ই ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তাদের একজন ছিলেন খুলনার। এরমধ্যে দুই বছরের শিশুসহ তিনজনের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস আছে। তবে সর্বশেষ ব্যক্তি সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করেননি। খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। চলতি মে মাসের শুরুর দিকে কিছুটা কম ছিল। ঈদের পর আবার বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাই করোনা বাড়ার একমাত্র কারণ।

সিভিল সার্জন বলেন, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা খুলনা জেলায় মানুষের সচেতনতা এখনও কম। রাস্তাঘাট, বাজার-রেস্তরাঁয় মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায় না।

তবে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা দাবি কয়েছেন, শুধু ভারতের করোনা প্রকোপের কারণে সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি জেলা থাকায় খুলনাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবে খুলনা বিভাগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, খুলনা জেলায় গতবছরের ১৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এরপরের ১২ মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৪৭ জন। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে চলতি মে মাসের হিসাবে জেলায় করোনায় আক্রান্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গড় হিসাবে এই একমাসে করোনায় মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে খুলনায় ২ হাজার ৫০২টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৪৬ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শনাক্তের হার ছিল গড়ে ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ঈদের পরের ১৫ দিনে ২ হাজার ৯৯২ নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হন ৬৪৮ জন। শনাক্তের গড় হার ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খুলনা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ থেকে ৩০ মে খুলনা বিভাগে ২ হাজার ৯২৮ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে শনাক্ত ১ হাজার ৯৪ জনই খুলনা জেলার। তারমধ্যে আবার খুলনা শহরের ৯৪৮ জন। এ সময়ে খুলনায় মারা গেছেন ২৫ জন। এরমধ্যে শহরের ২০ জন। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে, অর্থাৎ ঈদের আগের ১৫ দিনে ৪৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরমধ্যে শহরের ৩৯৫ জন। ওই সময়ের মধ্যে মারা যান ১২ জন। আর ঈদের পরের ১৫ দিন, অর্থাৎ ১৬ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬৪৮ জন। এর মধ্যে শহরের ৫৫৩ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ১৩ জন।

খুলনা জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭২ জন। এদিকে জেলায় মোট আক্রান্ত ১০ হাজার ১৭৪ রোগীর মধ্যে খুলনা নগরেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২৭৪। অর্থাৎ জেলার প্রায় ৮১ শতাংশ রোগীই খুলনা নগরের। খুলনা নগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৬ জন।

গতবছরের ১৩ এপ্রিল খুলনার ছোট বয়রার করিম নগরে জেলার প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। খুলনা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যে থেকে দেখা গেছে, খুলনায় করোনা শনাক্তের প্রথম দুইমাসে সংক্রমণের গতি ধীর ছিল। গতবছরের জুনে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। এরপর জুলাই মাসে দুটিই অনেক বেড়ে যায়। আগস্টে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কিছুটা কমে যায়। সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকে। এরপর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্তও পরিস্থিতি একটু উন্নতির দিকে ছিল। সোমবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনার ১০০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে এখন ১০০ করোনারোগীই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ১১ জন।