বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব

মোস্তাফা জব্বার

চার ॥

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন। এর আগে আলোচিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্কে আরও যেসব বক্তব্য দেন সেগুলো অনুধাবন করা হলে তার দ্বিতীয় বিপ্লব নিয়ে কোন বিভ্রান্ত থাকবে না। ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, “আমার দেশের মানুষ দুঃখী, না খেয়ে কষ্ট পায়, গায়ে কাপড় নাই। শিক্ষার আলো তারা পায় না, রাতে একটা হারিকেনও জ্বালাতে পারে না, নানা অসুবিধার মধ্যে তারা দিন কাটাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শোষিতের গণতন্ত্র চাই। যারা রাতের অন্ধকারে পয়সা লুট করে, যারা বড় বড় অর্থশালী লোক, যারা বিদেশীদের পয়সায় ভোট কেনার জন্য দেয়, তাদের গণতন্ত্র নয়, শোষিতের গণতন্ত্র’।

দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। তিনি বলেন, আজকে এমেন্ডমেন্ট কনস্টিটিউশনে যে নতুন সিস্টেমে আমরা যাচ্ছি এটাও গণতন্ত্র। শোষিতের গণতন্ত্র এখানে জনগণের ভোটের অধিকার থাকবে এখন আমাদের সামনে কাজ কি, দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে উৎপাদন বাড়াতে হবে কলে কারখানায় সব জায়গায় পপুলেশন প্ল্যানিং আমাদের করতে হবে। পপুলেশন কট্রোল আমাদের করতে হবে। আমাদের দুর্নীতি ঘুষ চোরাকারবারি মুনাফাখোরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের কি করতে হবে? আমাদের কাজ করতে হবে।”

১৯৭৫ সালের ২১ জুলাই বাকশালের নবনিযুক্ত গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু কর্মপদ্ধতির দীর্ঘ নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক, ফ্যামিলি প্ল্যানিং আর আমার দ্বিতীয় বিপ্লবের যে চারটি প্রোগ্রাম আছে সেগুলো আপনারা করুন। ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কের জন্য পাম্প পেলাম না, এটা পেলাম না এসব বলে বসে না থেকে জনগণকে মবিলাইজ করুন। যেখানে খাল কাটলে পানি হবে, সেখানে সেচের পানি দিন। সেই পানি দিয়ে ফসল ফলান। মবিলাইজ দ্য পিপল। পাম্প যদি পাওয়া যায় ভালো। যদি পাওয়া না যায় তবে স্বনির্ভর হন। বাঁধ বেঁধে পানি আটকান, সেই পানি দিয়ে ফসল ফলান। আমাদের দেশে আগে কি পাম্প ছিল? দরকার হয়, কুয়া কেটে পানি আনুন। আমাদের দেশে পাঁচ হাত, সাত হাত, আট হাত কুয়া কাটলেই পানি উঠে। সেখানে অসুবিধা কি আছে? যে দেশে পানি আটকে রাখলে পানি থাকে, সেখানে ফসল করবার জন্য চিন্তার কি আছে? আর এখন থেকে যে সমস্ত সার থানায় যাবে, তা যেন রেগুলারলি গরিব-দুঃখীরা পায়।’

স্বনির্ভর কর্মোদ্যমের একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেছিলেন, আমি খবর পেলাম, ঠাকুরগাঁওয়ে একটা কোল্ড স্টোরেজ করা হয়েছে। এক বছর আগে সেটা হয়ে গেছে। কিন্তু পাওয়ার নাই। খবর নিয়ে জানলাম, পাওয়ার সেখানে যেতে এক বছর লাগবে। কারণ খাম্বা নাই। খাম্বা নাকি বিদেশ থেকে আনতে হবে। মিনিস্টার সাহেবকে বললাম খাম্বা টাম্বা আমি বুঝি না। বাঁশ তো আছে। এখানে দাঁড়াও, খাম্বা কাটো, দা লাগাও। দেড় মাস, দুই মাসের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। এটা লাগাও। কি করে লাগবে, সেটা আমি বুঝি-টুঝি না। দিল, লেগে গেল। কিন্তু ও আমার কাছে যদি না আসত, এক বছরের আগে খাম্বা পেত না, ওটা হতো না। এভাবে পাওয়ার গেল, আলু রাখল। এই মেন্টালিটি কেন হয়? খাম্বা বাংলাদেশের গাছে গাছে হয়। আমি বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় পাওয়ার দিতে চাই। কো-অপারেটিভও আমি প্রতিটি গ্রামে করতে চাই। এটা সোজাসুজি বাঙালি কো-অপারেটিভ যাকে বলা যায় মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ। আমি নিজে ঠিক করেছি আমার পদ্ধতি। প্রথমে এরিয়া ভাগ করে নেবেন। এমন জায়গায় নেবেন, যেখানে আমি ইমিডিয়েটলি পাওয়ার দিতে পারি। ধরুন যদি রাজশাহীতে যদি করি তাহলে এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে পাওয়ার নিতে পারি। এভাবে একটা দুটা তিনটা গ্রাম নিয়ে কো-অপারেটিভ করতে হবে এবং এটা হবে কমপালসারি কো-অপারেটিভ। এতে কোনো কিন্তু-টিন্তু নেই।’

এই বিশাল কর্মোদ্যোগকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থামিয়ে দেয়া হয়েছে। একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে এর পেছনের কারণগুলো কি? বঙ্গবন্ধু কোন সাম্রাজ্যবাদী দেশের প্রেসক্রিপশনে চলার মানুষ ছিলেন না। অর্থনৈতিক এই বিপ্লবটি সফল হলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে যাবে। সুতরাং শেখ মুজিবকে খতম করে বিশ্বব্যাংকের কথামত যারা চলে তাদের নিয়ে আসা হলোও তাই। জাতি হারাল তার সবচেয়ে সুদৃঢ় নেতাকে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তীতে রাতারাতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেকগুলো বড় বড় পরিবর্তন এলো। প্রথমেই সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ তার মতো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার মূল দুটি স্তম্ভকেও মুছে ফেলা হলো। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রাপ্তির যে অবিনাশী চেতনা বুকে নিয়ে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী সবাই মিলে পাকিস্তাানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, অর্জন করেছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ রাতারাতি হলে গেল ‘ধর্মীয় বাংলাদেশ’। পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে দেয়া হলো। তাই ১৫ আগস্ট আমরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হারাইনি, আমরা হারিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকেও। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যাতে কোন বিচার না হয় সে জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এর ভবিষ্যৎ বিচার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়া হলো। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রনায়ককে ঘাতকদের কাছে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রনায়ককে বঙ্গবন্ধুর মতো এমন করে সপরিবারে হত্যা করা হয়নি। এর পরে আবার আইন করে হত্যার ভবিষ্যৎ বিচার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়ার নজির সারা পৃথিবীতে আর একটিও নেই।

অবৈধ সামরিক শাসকের দল তৃতীয় যে কাজটি করল তা হলো বাঙলার মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে, বঙ্গবন্ধুর সব কীর্তিকে চিরতরে মুছে ফেলার কিছু চতুর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। রাষ্ট্রের সব গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো, বঙ্গবন্ধুর কথা বলা একদম বন্ধ করে দেয়া হলো। ২০ বছর রেডিও টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয়নি। যেই মানুষটির কণ্ঠ বাংলার নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল, যিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করেছিলেন, দিয়ে গিয়েছিলেন একটি পতাকা, একটি মানচিত্র। বাংলার প্রতিটি মানুষের প্রতি যার ছিল নিরন্তর ভালোবাসা। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শুধু মানুষকে ভালোবাসতে পারার অসম্ভব এই ক্ষমতাটিই যাকে বাংলার গণমানুষের নেতায় পরিণত করেছিল, সেই মানুষটিকে এক নিমেষে দেশের সব মিডিয়া, সব প্রকাশনা ভুলে গেল? সামরিক শাসকের দল সেখানেই থেমে থাকেনি, তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে নানান মিথ্যে ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে ভরা গল্প চারদিকে ছড়িয়ে দিল। সামরিক শাসকদের পালিত কিছু বুদ্ধিজীবী এই প্রচারের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন খুব নিষ্ঠার সঙ্গে। আর সেসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তি দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরতে থাকে বছরের পর বছর। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে সুদীর্ঘ ২১ বছর একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে এই সব মিথ্যা এবং বিভ্রান্তির গল্প শুনে।

এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সব কীর্তিকে মুছে ফেলতে যত চেষ্টা করা দরকার তারা সব চেষ্টাই চালিয়েছে। সব কীর্তিতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পাশাপাশি ওরা সুকৌশলে আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিল তা হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্যেও কিছু বিভ্রান্তি ঢুকিয়ে দেয়া। তারা খুব মুনশিয়ানার সঙ্গেই এই কাজটি করেছে। আমি নিশ্চিত আজ যদি ইন্টারনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করা হয় তবে অনেকগুলো ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে যেখানে বলা আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ মরেনি, শেখ মুজিবুর রহমান তিন লাখের জায়গায় বাড়িয়ে তিন মিলিয়ন বলেছিলেন। এইগুলো নিছক বিভ্রান্তি। খুব কৌশলে এই সব বিভ্রান্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিভ্রান্তিগুলো কিন্তু আবার রীতিমতো নামকরা গবেষকদের মুখ থেকে নিঃসৃত হয়ে, দলিল হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সম্বন্ধে চমৎকার একটি ব্যাখ্যা পড়েছিলাম হাসান মোরশেদের ফেসবুক লেখায়। তিনি লিখেছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, পৃথিবীর ভয়াবহতম এক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল মূলত দুই পরাশক্তির প্রচ্ছন্ন ভরসায়। সমাজতান্ত্রিক চীন এবং পুঁজিবাদী আমেরিকা। এই দুই শক্তির ভরসা ছাড়া পাকিস্তান কিছুই ছিল না। চীন তার বুদ্ধিবৃত্তির জায়গায় এখনও এতটা এগিয়ে নেই। কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধি রাখে, জ্ঞানের ও ইতিহাসের গুরুত্ব তারা বোঝে। তাই তাদের একটা উদ্যোগ আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ আরও যে সব মানবতাবিরোধী ইতিহাসের তাদের অংশগ্রহণ আছে, সেগুলোর বিকল্প পাঠ তৈরি করানো। ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের নামে চিহ্নিত রক্তের দাগগুলো পুরোপুরি মুছে ফেলতে না পারলেও অন্তত বিভ্রান্তি তৈরি করে রাখা।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের একটি বিকল্প ইতিহাস তুলে ধরেছেন, যা কিনা আমেরিকার ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও পাকিস্তানের আইএসআই অর্থায়নে করেছেন নেতাজি সুভাষ বসুর পরিবারের এক সদস্য, শর্মিলা বসুকে। সেখানে বলা হয়েছে ‘এখানে আসলে বিহারি ও বাঙালিদের জাতিগত দাঙ্গা চলছিল একাত্তরের শুরু থেকে। যেহেতু বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আর বাঙালিদের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ মূলত গুণ্ডাপাণ্ডার দল সেহেতু বিহারিরা ভয়ঙ্করভাবে কচুকাটা হচ্ছিল। এই অরাজকতা থামাতে বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অ্যাকশনে নামতে হয়েছিল। সেই অ্যাকশনে কিছু বাঙালি অস্ত্রধারী যাদের ভারত প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল তারা মারা গেছে। সংখ্যাটা খুব বেশি হলে ২৬ হাজার। বিহারিও কিন্তু মরেছে বাঙালির হাতে হাজার হাজার। আর ধর্ষণ! দু-চারটা ঘটনা যে ঘটেনি, তা নয়। তবে বাঙালিদের, বিশেষ করে শেখ মুজিবের বাড়িয়ে বলার একটা বদভ্যাস ছিল।’

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। আর তাই স্বভাবতই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এত সহজে বিশ্বাস করবে না। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যারের সাদাসিধে কলামে একটি লেখার কথা এখানে বলাটা যুক্তিযুক্ত মনে করছি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল অলি আহমেদের সঙ্গে এই প্রজন্মের একটি তরুণীর টেলিভিশনের একটি কথোপকথনের কথা নিয়ে সেখানে লেখেন। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন অলি আহমেদের এমন দাবির বিপরীতে তরুণীটি কর্নেল অলি আহমেদের প্রতি পুরো সম্মান রেখে খুব ঠাণ্ডা মাথায় তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে নির্জলা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত না করার জন্য অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু কবে, কীভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি কীভাবে প্রচারিত হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমসের কোন সংখ্যায় সেই ঘোষণার কথা ছাপা হয়েছে, তরুণীটি অলি আহমেদকে তা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাটিতে কি বলেছিলেন তাও অলি আহমেদকে শুনিয়েছেন। তরুণীটি এটিও বলেছেন যে, স্বাধীনতা ঘোষণা করা আর পাঠ করার মধ্যে দিনরাত পার্থক্য এটাতো অলি আহমেদের ভালো করেই বোঝা উচিত। কথোপকথনের এই পর্যায়ে তরুণীটি অলি আহমেদকে প্রশ্ন করেন জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষক হোন তাহলে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রে সেই ইতিহাস নেই কেন? কেন সেটি ১৯৯১ সালের পর থেকে শুরু হলো? তরুণীটি অলি আহমেদকে বলেছিলেন আপনারা রাজনীতি করতে চান করুন, সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে রাজনীতি করুন, কেন আপনারা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চান?

ঢাকা। ২৬ মার্চ, ২০১৯। আপডেট : ৬ জুন, ২০২১।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক]

mustafajabbar@gmail.com

মঙ্গলবার, ০৮ জুন ২০২১ , ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৬ শাওয়াল ১৪৪২

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব

মোস্তাফা জব্বার

চার ॥

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন। এর আগে আলোচিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্কে আরও যেসব বক্তব্য দেন সেগুলো অনুধাবন করা হলে তার দ্বিতীয় বিপ্লব নিয়ে কোন বিভ্রান্ত থাকবে না। ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, “আমার দেশের মানুষ দুঃখী, না খেয়ে কষ্ট পায়, গায়ে কাপড় নাই। শিক্ষার আলো তারা পায় না, রাতে একটা হারিকেনও জ্বালাতে পারে না, নানা অসুবিধার মধ্যে তারা দিন কাটাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শোষিতের গণতন্ত্র চাই। যারা রাতের অন্ধকারে পয়সা লুট করে, যারা বড় বড় অর্থশালী লোক, যারা বিদেশীদের পয়সায় ভোট কেনার জন্য দেয়, তাদের গণতন্ত্র নয়, শোষিতের গণতন্ত্র’।

দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। তিনি বলেন, আজকে এমেন্ডমেন্ট কনস্টিটিউশনে যে নতুন সিস্টেমে আমরা যাচ্ছি এটাও গণতন্ত্র। শোষিতের গণতন্ত্র এখানে জনগণের ভোটের অধিকার থাকবে এখন আমাদের সামনে কাজ কি, দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে উৎপাদন বাড়াতে হবে কলে কারখানায় সব জায়গায় পপুলেশন প্ল্যানিং আমাদের করতে হবে। পপুলেশন কট্রোল আমাদের করতে হবে। আমাদের দুর্নীতি ঘুষ চোরাকারবারি মুনাফাখোরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের কি করতে হবে? আমাদের কাজ করতে হবে।”

১৯৭৫ সালের ২১ জুলাই বাকশালের নবনিযুক্ত গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু কর্মপদ্ধতির দীর্ঘ নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক, ফ্যামিলি প্ল্যানিং আর আমার দ্বিতীয় বিপ্লবের যে চারটি প্রোগ্রাম আছে সেগুলো আপনারা করুন। ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কের জন্য পাম্প পেলাম না, এটা পেলাম না এসব বলে বসে না থেকে জনগণকে মবিলাইজ করুন। যেখানে খাল কাটলে পানি হবে, সেখানে সেচের পানি দিন। সেই পানি দিয়ে ফসল ফলান। মবিলাইজ দ্য পিপল। পাম্প যদি পাওয়া যায় ভালো। যদি পাওয়া না যায় তবে স্বনির্ভর হন। বাঁধ বেঁধে পানি আটকান, সেই পানি দিয়ে ফসল ফলান। আমাদের দেশে আগে কি পাম্প ছিল? দরকার হয়, কুয়া কেটে পানি আনুন। আমাদের দেশে পাঁচ হাত, সাত হাত, আট হাত কুয়া কাটলেই পানি উঠে। সেখানে অসুবিধা কি আছে? যে দেশে পানি আটকে রাখলে পানি থাকে, সেখানে ফসল করবার জন্য চিন্তার কি আছে? আর এখন থেকে যে সমস্ত সার থানায় যাবে, তা যেন রেগুলারলি গরিব-দুঃখীরা পায়।’

স্বনির্ভর কর্মোদ্যমের একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেছিলেন, আমি খবর পেলাম, ঠাকুরগাঁওয়ে একটা কোল্ড স্টোরেজ করা হয়েছে। এক বছর আগে সেটা হয়ে গেছে। কিন্তু পাওয়ার নাই। খবর নিয়ে জানলাম, পাওয়ার সেখানে যেতে এক বছর লাগবে। কারণ খাম্বা নাই। খাম্বা নাকি বিদেশ থেকে আনতে হবে। মিনিস্টার সাহেবকে বললাম খাম্বা টাম্বা আমি বুঝি না। বাঁশ তো আছে। এখানে দাঁড়াও, খাম্বা কাটো, দা লাগাও। দেড় মাস, দুই মাসের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। এটা লাগাও। কি করে লাগবে, সেটা আমি বুঝি-টুঝি না। দিল, লেগে গেল। কিন্তু ও আমার কাছে যদি না আসত, এক বছরের আগে খাম্বা পেত না, ওটা হতো না। এভাবে পাওয়ার গেল, আলু রাখল। এই মেন্টালিটি কেন হয়? খাম্বা বাংলাদেশের গাছে গাছে হয়। আমি বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় পাওয়ার দিতে চাই। কো-অপারেটিভও আমি প্রতিটি গ্রামে করতে চাই। এটা সোজাসুজি বাঙালি কো-অপারেটিভ যাকে বলা যায় মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ। আমি নিজে ঠিক করেছি আমার পদ্ধতি। প্রথমে এরিয়া ভাগ করে নেবেন। এমন জায়গায় নেবেন, যেখানে আমি ইমিডিয়েটলি পাওয়ার দিতে পারি। ধরুন যদি রাজশাহীতে যদি করি তাহলে এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে পাওয়ার নিতে পারি। এভাবে একটা দুটা তিনটা গ্রাম নিয়ে কো-অপারেটিভ করতে হবে এবং এটা হবে কমপালসারি কো-অপারেটিভ। এতে কোনো কিন্তু-টিন্তু নেই।’

এই বিশাল কর্মোদ্যোগকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থামিয়ে দেয়া হয়েছে। একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে এর পেছনের কারণগুলো কি? বঙ্গবন্ধু কোন সাম্রাজ্যবাদী দেশের প্রেসক্রিপশনে চলার মানুষ ছিলেন না। অর্থনৈতিক এই বিপ্লবটি সফল হলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে যাবে। সুতরাং শেখ মুজিবকে খতম করে বিশ্বব্যাংকের কথামত যারা চলে তাদের নিয়ে আসা হলোও তাই। জাতি হারাল তার সবচেয়ে সুদৃঢ় নেতাকে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তীতে রাতারাতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেকগুলো বড় বড় পরিবর্তন এলো। প্রথমেই সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ তার মতো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার মূল দুটি স্তম্ভকেও মুছে ফেলা হলো। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রাপ্তির যে অবিনাশী চেতনা বুকে নিয়ে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী সবাই মিলে পাকিস্তাানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, অর্জন করেছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ রাতারাতি হলে গেল ‘ধর্মীয় বাংলাদেশ’। পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে দেয়া হলো। তাই ১৫ আগস্ট আমরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হারাইনি, আমরা হারিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকেও। দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যাতে কোন বিচার না হয় সে জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এর ভবিষ্যৎ বিচার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়া হলো। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রনায়ককে ঘাতকদের কাছে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রনায়ককে বঙ্গবন্ধুর মতো এমন করে সপরিবারে হত্যা করা হয়নি। এর পরে আবার আইন করে হত্যার ভবিষ্যৎ বিচার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়ার নজির সারা পৃথিবীতে আর একটিও নেই।

অবৈধ সামরিক শাসকের দল তৃতীয় যে কাজটি করল তা হলো বাঙলার মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে, বঙ্গবন্ধুর সব কীর্তিকে চিরতরে মুছে ফেলার কিছু চতুর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। রাষ্ট্রের সব গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো, বঙ্গবন্ধুর কথা বলা একদম বন্ধ করে দেয়া হলো। ২০ বছর রেডিও টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয়নি। যেই মানুষটির কণ্ঠ বাংলার নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল, যিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করেছিলেন, দিয়ে গিয়েছিলেন একটি পতাকা, একটি মানচিত্র। বাংলার প্রতিটি মানুষের প্রতি যার ছিল নিরন্তর ভালোবাসা। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শুধু মানুষকে ভালোবাসতে পারার অসম্ভব এই ক্ষমতাটিই যাকে বাংলার গণমানুষের নেতায় পরিণত করেছিল, সেই মানুষটিকে এক নিমেষে দেশের সব মিডিয়া, সব প্রকাশনা ভুলে গেল? সামরিক শাসকের দল সেখানেই থেমে থাকেনি, তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে নানান মিথ্যে ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে ভরা গল্প চারদিকে ছড়িয়ে দিল। সামরিক শাসকদের পালিত কিছু বুদ্ধিজীবী এই প্রচারের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন খুব নিষ্ঠার সঙ্গে। আর সেসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তি দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরতে থাকে বছরের পর বছর। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে সুদীর্ঘ ২১ বছর একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে এই সব মিথ্যা এবং বিভ্রান্তির গল্প শুনে।

এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সব কীর্তিকে মুছে ফেলতে যত চেষ্টা করা দরকার তারা সব চেষ্টাই চালিয়েছে। সব কীর্তিতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পাশাপাশি ওরা সুকৌশলে আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিল তা হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্যেও কিছু বিভ্রান্তি ঢুকিয়ে দেয়া। তারা খুব মুনশিয়ানার সঙ্গেই এই কাজটি করেছে। আমি নিশ্চিত আজ যদি ইন্টারনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করা হয় তবে অনেকগুলো ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে যেখানে বলা আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ মরেনি, শেখ মুজিবুর রহমান তিন লাখের জায়গায় বাড়িয়ে তিন মিলিয়ন বলেছিলেন। এইগুলো নিছক বিভ্রান্তি। খুব কৌশলে এই সব বিভ্রান্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিভ্রান্তিগুলো কিন্তু আবার রীতিমতো নামকরা গবেষকদের মুখ থেকে নিঃসৃত হয়ে, দলিল হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সম্বন্ধে চমৎকার একটি ব্যাখ্যা পড়েছিলাম হাসান মোরশেদের ফেসবুক লেখায়। তিনি লিখেছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, পৃথিবীর ভয়াবহতম এক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল মূলত দুই পরাশক্তির প্রচ্ছন্ন ভরসায়। সমাজতান্ত্রিক চীন এবং পুঁজিবাদী আমেরিকা। এই দুই শক্তির ভরসা ছাড়া পাকিস্তান কিছুই ছিল না। চীন তার বুদ্ধিবৃত্তির জায়গায় এখনও এতটা এগিয়ে নেই। কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধি রাখে, জ্ঞানের ও ইতিহাসের গুরুত্ব তারা বোঝে। তাই তাদের একটা উদ্যোগ আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ আরও যে সব মানবতাবিরোধী ইতিহাসের তাদের অংশগ্রহণ আছে, সেগুলোর বিকল্প পাঠ তৈরি করানো। ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের নামে চিহ্নিত রক্তের দাগগুলো পুরোপুরি মুছে ফেলতে না পারলেও অন্তত বিভ্রান্তি তৈরি করে রাখা।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের একটি বিকল্প ইতিহাস তুলে ধরেছেন, যা কিনা আমেরিকার ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও পাকিস্তানের আইএসআই অর্থায়নে করেছেন নেতাজি সুভাষ বসুর পরিবারের এক সদস্য, শর্মিলা বসুকে। সেখানে বলা হয়েছে ‘এখানে আসলে বিহারি ও বাঙালিদের জাতিগত দাঙ্গা চলছিল একাত্তরের শুরু থেকে। যেহেতু বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আর বাঙালিদের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ মূলত গুণ্ডাপাণ্ডার দল সেহেতু বিহারিরা ভয়ঙ্করভাবে কচুকাটা হচ্ছিল। এই অরাজকতা থামাতে বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অ্যাকশনে নামতে হয়েছিল। সেই অ্যাকশনে কিছু বাঙালি অস্ত্রধারী যাদের ভারত প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল তারা মারা গেছে। সংখ্যাটা খুব বেশি হলে ২৬ হাজার। বিহারিও কিন্তু মরেছে বাঙালির হাতে হাজার হাজার। আর ধর্ষণ! দু-চারটা ঘটনা যে ঘটেনি, তা নয়। তবে বাঙালিদের, বিশেষ করে শেখ মুজিবের বাড়িয়ে বলার একটা বদভ্যাস ছিল।’

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। আর তাই স্বভাবতই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এত সহজে বিশ্বাস করবে না। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যারের সাদাসিধে কলামে একটি লেখার কথা এখানে বলাটা যুক্তিযুক্ত মনে করছি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল অলি আহমেদের সঙ্গে এই প্রজন্মের একটি তরুণীর টেলিভিশনের একটি কথোপকথনের কথা নিয়ে সেখানে লেখেন। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন অলি আহমেদের এমন দাবির বিপরীতে তরুণীটি কর্নেল অলি আহমেদের প্রতি পুরো সম্মান রেখে খুব ঠাণ্ডা মাথায় তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে নির্জলা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত না করার জন্য অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু কবে, কীভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি কীভাবে প্রচারিত হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমসের কোন সংখ্যায় সেই ঘোষণার কথা ছাপা হয়েছে, তরুণীটি অলি আহমেদকে তা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাটিতে কি বলেছিলেন তাও অলি আহমেদকে শুনিয়েছেন। তরুণীটি এটিও বলেছেন যে, স্বাধীনতা ঘোষণা করা আর পাঠ করার মধ্যে দিনরাত পার্থক্য এটাতো অলি আহমেদের ভালো করেই বোঝা উচিত। কথোপকথনের এই পর্যায়ে তরুণীটি অলি আহমেদকে প্রশ্ন করেন জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষক হোন তাহলে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রে সেই ইতিহাস নেই কেন? কেন সেটি ১৯৯১ সালের পর থেকে শুরু হলো? তরুণীটি অলি আহমেদকে বলেছিলেন আপনারা রাজনীতি করতে চান করুন, সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে রাজনীতি করুন, কেন আপনারা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চান?

ঢাকা। ২৬ মার্চ, ২০১৯। আপডেট : ৬ জুন, ২০২১।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক]

mustafajabbar@gmail.com