নন-কটন পোশাক রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা

টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় নন-কটন (ম্যান মেইড ফাইবার) পণ্যের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ২০১৭ সালে বিশ্বে নন-কটন বা বেসড টেক্সটাইল ট্রেডের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ বিশ্ব বাজারে আমাদের পোশাকশিল্পের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের দখলে ছিল ১০ শতাংশের বেশি।

বর্তমানে নন-কটনের চাহিদা যেমন বাড়ছে, কটনের পাশাপাশি এটার উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে বাংলাদেশের। লোকালভাবেও দেশে এর উৎপাদন করা যাবে। কটনের সঙ্গে এটাকেও এগিয়ে নেয়ার সময় এসেছে বলে এমনটি দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ রপ্তানি উৎসাহিত করতে, বিশেষ করে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছে ব্যবসায়ীরা।

এর কারণ হিসেবে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, নন-কটন পোশাকের প্রধান রপ্তানিকার দেশ চীনের উৎপাদন খরচ সম্প্রতি বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে নন-কটনের চাহিদাও কটন অপেক্ষা বেশি। এ অবস্থায় এ শিল্পকে এড়িয়ে নিতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশে প্রাইভেট খাতে নিয়োগ একেবারেই হয়নি। বিগত দশকে দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকেতে পারছে না। কারণ তাদের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকেল চিপস’ আছে এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ অপেক্ষা। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হলে এ খাতে যেসব বিনিয়োগগুলো ইতোমধ্যেই হয়েছে তা সারভাইভ করে যাবে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, রপ্তানি বাড়বে বিশ্ব বাজারে। একই সঙ্গে দেশে রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে বহুগুণে, হাজারো বেকারের কর্মসংস্থান হবে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, বিগত চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছলেও পণ্যের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন হয়নি বললেই চলে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রপ্তানি অনুযায়ী আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল কটনের তৈরি, যা ১০ বছর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে আমাদের শিল্পটির কটন নির্ভরতা বেড়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার টন ফাইবার আমদানি করে, যার ৯৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল কটন। আমাদের মোট ৪৩০টি স্পিনিং মিলের মধ্যে ৪০৩টিই কটন স্পিনিং মিল। যেখানে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনের প্রায় ৭৫ শতাংশই নন-কটন। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ সিনথেটিক (ম্যান মেড ফাইবার) যা বার্ষিক ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে, সেখানে কটনের শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ যা বছরে ১ থেকে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে।

অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার এবং রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

বিজিএমইএ’র দাবি, নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধটি পুনর্বিবেচনা, এই মুহূর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্যাশ-ফ্লো ম্যানেজ করা, যেটি করতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এছাড়া কর কিছুটা কমানো। এ কর প্রত্যাহার হলে সরকার খুব বেশি রাজস্ব হারাবে না, কিন্তু শিল্প উপকৃত হবে। হোটেল, পর্যটন, ব্যাংক, বীমা, প্রসাধনী ইত্যাদি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের পরোক্ষ আয় বাড়বে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক ফাইবার চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি। অথচ বিশ্ব বাজারে নন-কটনের চাহিদাই এখন বেশি। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান মেড ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসব বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজি নির্ভর। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই শিল্পের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকে চিপস’ থাকায় এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ রপ্তানি উৎসাহিত করতে, বিশেষ করে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।’

জিএসপি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ২০২৪ সালে এলডিসি গ্যাজুয়েট সম্পন্ন করবে। এ অবস্থায় প্রি-সময় হিসেবে এমনিতেই আমরা হয় তো তিন বছর সময় পাব। সেক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এ সুবিধা পরে ১০ বছর চাইব। সেটা না দিলেও অন্তত পাঁচ বছর বা ২০৩১ সাল পর্যন্ত জিএসপি প্লাস পাওয়ার আশা করতেই পারি। তবে আপাতত আমরা জিএসপি চাই না। এ সময়ের মধ্যে আমরা সময়, প্রস্তুতি, উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগ সবই আনতে পারব। এছাড়া আগামী ৩ মাসে ‘সেন্টার অব অ্যাফিসিয়েন্সি’ শুরু করব যেখানে নতুন বাজার ও পণ্য নিয়ে নানা দিক উঠে আসবে।’

বুধবার, ০৯ জুন ২০২১ , ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪২

নন-কটন পোশাক রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় নন-কটন (ম্যান মেইড ফাইবার) পণ্যের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ২০১৭ সালে বিশ্বে নন-কটন বা বেসড টেক্সটাইল ট্রেডের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ বিশ্ব বাজারে আমাদের পোশাকশিল্পের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের দখলে ছিল ১০ শতাংশের বেশি।

বর্তমানে নন-কটনের চাহিদা যেমন বাড়ছে, কটনের পাশাপাশি এটার উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে বাংলাদেশের। লোকালভাবেও দেশে এর উৎপাদন করা যাবে। কটনের সঙ্গে এটাকেও এগিয়ে নেয়ার সময় এসেছে বলে এমনটি দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ রপ্তানি উৎসাহিত করতে, বিশেষ করে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছে ব্যবসায়ীরা।

এর কারণ হিসেবে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, নন-কটন পোশাকের প্রধান রপ্তানিকার দেশ চীনের উৎপাদন খরচ সম্প্রতি বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে নন-কটনের চাহিদাও কটন অপেক্ষা বেশি। এ অবস্থায় এ শিল্পকে এড়িয়ে নিতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশে প্রাইভেট খাতে নিয়োগ একেবারেই হয়নি। বিগত দশকে দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকেতে পারছে না। কারণ তাদের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকেল চিপস’ আছে এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ অপেক্ষা। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হলে এ খাতে যেসব বিনিয়োগগুলো ইতোমধ্যেই হয়েছে তা সারভাইভ করে যাবে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, রপ্তানি বাড়বে বিশ্ব বাজারে। একই সঙ্গে দেশে রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে বহুগুণে, হাজারো বেকারের কর্মসংস্থান হবে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, বিগত চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছলেও পণ্যের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন হয়নি বললেই চলে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রপ্তানি অনুযায়ী আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল কটনের তৈরি, যা ১০ বছর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে আমাদের শিল্পটির কটন নির্ভরতা বেড়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার টন ফাইবার আমদানি করে, যার ৯৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল কটন। আমাদের মোট ৪৩০টি স্পিনিং মিলের মধ্যে ৪০৩টিই কটন স্পিনিং মিল। যেখানে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনের প্রায় ৭৫ শতাংশই নন-কটন। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ সিনথেটিক (ম্যান মেড ফাইবার) যা বার্ষিক ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে, সেখানে কটনের শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ যা বছরে ১ থেকে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে।

অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার এবং রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

বিজিএমইএ’র দাবি, নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধটি পুনর্বিবেচনা, এই মুহূর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্যাশ-ফ্লো ম্যানেজ করা, যেটি করতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এছাড়া কর কিছুটা কমানো। এ কর প্রত্যাহার হলে সরকার খুব বেশি রাজস্ব হারাবে না, কিন্তু শিল্প উপকৃত হবে। হোটেল, পর্যটন, ব্যাংক, বীমা, প্রসাধনী ইত্যাদি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের পরোক্ষ আয় বাড়বে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক ফাইবার চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি। অথচ বিশ্ব বাজারে নন-কটনের চাহিদাই এখন বেশি। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান মেড ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসব বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজি নির্ভর। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই শিল্পের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকে চিপস’ থাকায় এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ রপ্তানি উৎসাহিত করতে, বিশেষ করে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।’

জিএসপি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ২০২৪ সালে এলডিসি গ্যাজুয়েট সম্পন্ন করবে। এ অবস্থায় প্রি-সময় হিসেবে এমনিতেই আমরা হয় তো তিন বছর সময় পাব। সেক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এ সুবিধা পরে ১০ বছর চাইব। সেটা না দিলেও অন্তত পাঁচ বছর বা ২০৩১ সাল পর্যন্ত জিএসপি প্লাস পাওয়ার আশা করতেই পারি। তবে আপাতত আমরা জিএসপি চাই না। এ সময়ের মধ্যে আমরা সময়, প্রস্তুতি, উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগ সবই আনতে পারব। এছাড়া আগামী ৩ মাসে ‘সেন্টার অব অ্যাফিসিয়েন্সি’ শুরু করব যেখানে নতুন বাজার ও পণ্য নিয়ে নানা দিক উঠে আসবে।’