চরম ভোগান্তীতে নদী তীরবর্তী মানুষ
এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম হাওর ‘হাকালুকি হাওর’-এর ফানাই নদী খননের কাজে চরম অনিয়ম, অব্যস্থাপনা, উদাসীনতা সর্বোপরি কাজের ধীরগতির কারণে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারি বরাদ্দের ১৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি হাকালুকি পারের লাখ লাখ বাসিন্দার ফানাই নদীর পানি নিষ্কাশন সমস্যার ফলে প্রতিবছর বন্যাকবলিত হয়ে ফসল হানি হতে পরিত্রাণ পাওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি হাওর পাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ফানাই নদী খননে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও উদাসীনতার কারণে প্রকল্পের কাজের মাধ্যমে উপকারের বদলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওর পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ। নদীর উজানভাটি দুইটি অংশের ভাটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশের খননের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হলেও কাজ হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ এবং উজান অংশের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের নভেম্বর মাসে, কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ।
জানা যায়, প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের মার্চে ভাটি অংশের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কাজ পায় ঢাকার মেসার্স মা-বাবা কনস্ট্রাকশন ও শরিফ অ্যান্ড সন্স নামক দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সর্বসাকূল্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ ৬৫-৭০ শতাংশ। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজের টাকা উত্তোলন করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান। এদিকে উজান অংশের কাজের মেয়াদ আগামী নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কাজ পায় এসএএসআই অ্যান্ড ইশতাত এন্টারপ্রাইজ ও জুয়েল ব্যান্সার নভপ্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ টাকা উত্তোলন করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
হাওড় পাড়ের মানুষের অভিযোগ, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কোথাও কাজ হয়নি। এতে চরম ভোগান্তি ও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন হাওড় পাড়ের লাখ লাখ মানুষ। সাধারণ মানুষ তাদের ভোগান্তি নিরসনের জন্য একাধিকবার প্রতিবাদ করলেও আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সচেতনমহল বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক তদারকির অভাব ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামকাওয়াস্তে কাজ করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না হলে উপকারের পরিবর্তে কৃষকদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে এমন আতঙ্কে রয়েছেন হাওর তীরবর্তী বাসিন্দারা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ফানাই নদী খনন প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় মন্ত্রণালয়। ৪০ কিলোমিটার খননে প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে (ভাটি অংশ) হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল থেকে ভূকশিমইল ইউনিয়ন হয়ে ব্রাক্ষণবাজার ইউনিয়নের কাকিচার পর্যন্ত সাড়ে ২৩ কিলোমিটার খনন ও নদীর দু’পাশ ড্রেজিং করে জলজ বৃক্ষ রোপনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ১৯ হাজার ১৬ টাকা। উজান অংশে ব্রাক্ষণবাজার ইউনিয়নের কাকিচার হতে কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা মহিষমারা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটারে বরাদ্দ দেয়া হয় ৯ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে হাকালুকি হাওরে গেলে দেখা যায়, হাওরের দু’গাঙ্গা পয়েন্ট (চালিয়া) থেকে ফানাই নদীর নিচের অংশের খনন কাজ যৎসামান্য করা হয়েছে। মাটি খননের যন্ত্র দ্বারা নদীর দুই পাশ থেকে কিছু মাটি উত্তোলন করে পাড়ে এলোপাতাড়ি ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে কৃষক, মৎসজীবী, রাখাল ও পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনসাধারণ উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির সম্মখীন হয়েছেন। বিশেষ করে গত দু’বছর হতে সদ্যসমাপ্ত বোরো মৌসুমে ফসল তুলতে কৃষকদের প্রচুর ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়েছে। অনেকের ফসলি জমিতে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। এদিকে পুরো নদী খনন না করায় নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে নদীর অনেক অংশ খননই করা হয়নি। ভাটি অংশে ৯ হাজার ৪শ’ জলজ বৃক্ষ রোপণের কথা থাকলেও সরেজমিনে কোথাও একটি গাছও দেখা যায়নি।
তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সরওয়ার আলম জানান, ২ হাজার ২শ’ গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু বাসএব তার কোন হদিস খুজে পাওয়া যায়নি।একই দৃশ্য ফানাই নদীর বাদে ভূকশিমইল, জাব্দা, ভূকশিমইল, ছিলারকান্দি, ছকাপন, কাদিপুর, চুনঘর ও খাকিচার অংশেও। ভুকশিমইল ইউনিয়নের দুদু মিয়া ও মানিক মিয়া মুসা জানান, নদীর দু’পাশে এলোমেলোভাবে মাটি ফেলে রাখার ফলে মাটিগুলো ফের নদীতে এবং পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতে পড়ে যাচ্ছে। এতে করে কৃষকসহ সাধারণ জনগণ অনেক ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকদের কিছু বললেই ক্ষমতার দাপট দেখায়, ফলে প্রতিবাদ করারও উপায় নেই। হাওর ‘বাঁচাও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনভাবেই কথা শোনানো যায়নি। নদী পাড়ের কোথায়ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় চাষাবাদের মৌসুমে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকছে। কাজের চরম অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে এত টাকা খরচ করেও প্রধানমন্ত্রীর এ বিশেষ প্রকল্প মানুষের কোন উপকারে আসছে না। অগোছালোভাবে মাটি ফেলে রাখায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে,গবাদিপশু কিংবা কৃষি পণ্য নিয়ে হাওরে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া নদীর পুরো অংশ খনন না করায় নৌকা চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাজে সীমহীন অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতি হয়েছে, তাই সুষ্ঠু তদন্তক্রমে কাজের বিল প্রদান এবং কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ফানাই নদীর অনেক স্থান আছে খননই করা হয়নি। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। একাধিকবার তাদের বলার পরেও কথাগুলো আমলে নেয়নি। কোথাও মাটি ফেলে রাখা হয়েছে আবার কোথাও নেই। এতে হাওর পাড়ের মানুষরা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। অসম্পূর্ণ কাজ করে দেয়ার তাগদা দিলেও তারা কোন পাত্তা দিচ্ছে না।
আদৌ কতটুকু করে দেবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি, ফানাই নদী খনন কাজ তদন্ত করে ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হোক। মেসার্স মা-বাবা কনস্ট্রাকশনের প্রোপ্রাইটর হাসান মোল্লা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করে দু’টাকা লাভমান হওয়া কষ্টকর। মোটামুটি ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছি। কোথাও মাটি কম আবার কোথাও মাটি বেশি থাকার কারণে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান জানান, যতটুকু কাজ হয়েছে সেই পরিমাণ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। সর্বাবস্থায় প্রকল্পের কাজ দেখভাল করার জন্য অফিসের দু’জন লোক ছিলেন। এখানে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই।
বুধবার, ০৯ জুন ২০২১ , ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪২
চরম ভোগান্তীতে নদী তীরবর্তী মানুষ
মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার
এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম হাওর ‘হাকালুকি হাওর’-এর ফানাই নদী খননের কাজে চরম অনিয়ম, অব্যস্থাপনা, উদাসীনতা সর্বোপরি কাজের ধীরগতির কারণে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারি বরাদ্দের ১৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি হাকালুকি পারের লাখ লাখ বাসিন্দার ফানাই নদীর পানি নিষ্কাশন সমস্যার ফলে প্রতিবছর বন্যাকবলিত হয়ে ফসল হানি হতে পরিত্রাণ পাওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি হাওর পাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ফানাই নদী খননে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও উদাসীনতার কারণে প্রকল্পের কাজের মাধ্যমে উপকারের বদলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওর পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ। নদীর উজানভাটি দুইটি অংশের ভাটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশের খননের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হলেও কাজ হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ এবং উজান অংশের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের নভেম্বর মাসে, কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ।
জানা যায়, প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের মার্চে ভাটি অংশের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কাজ পায় ঢাকার মেসার্স মা-বাবা কনস্ট্রাকশন ও শরিফ অ্যান্ড সন্স নামক দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সর্বসাকূল্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ ৬৫-৭০ শতাংশ। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজের টাকা উত্তোলন করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান। এদিকে উজান অংশের কাজের মেয়াদ আগামী নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কাজ পায় এসএএসআই অ্যান্ড ইশতাত এন্টারপ্রাইজ ও জুয়েল ব্যান্সার নভপ্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ টাকা উত্তোলন করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
হাওড় পাড়ের মানুষের অভিযোগ, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কোথাও কাজ হয়নি। এতে চরম ভোগান্তি ও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন হাওড় পাড়ের লাখ লাখ মানুষ। সাধারণ মানুষ তাদের ভোগান্তি নিরসনের জন্য একাধিকবার প্রতিবাদ করলেও আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সচেতনমহল বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক তদারকির অভাব ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামকাওয়াস্তে কাজ করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না হলে উপকারের পরিবর্তে কৃষকদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে এমন আতঙ্কে রয়েছেন হাওর তীরবর্তী বাসিন্দারা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ফানাই নদী খনন প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় মন্ত্রণালয়। ৪০ কিলোমিটার খননে প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে (ভাটি অংশ) হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল থেকে ভূকশিমইল ইউনিয়ন হয়ে ব্রাক্ষণবাজার ইউনিয়নের কাকিচার পর্যন্ত সাড়ে ২৩ কিলোমিটার খনন ও নদীর দু’পাশ ড্রেজিং করে জলজ বৃক্ষ রোপনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ১৯ হাজার ১৬ টাকা। উজান অংশে ব্রাক্ষণবাজার ইউনিয়নের কাকিচার হতে কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা মহিষমারা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটারে বরাদ্দ দেয়া হয় ৯ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে হাকালুকি হাওরে গেলে দেখা যায়, হাওরের দু’গাঙ্গা পয়েন্ট (চালিয়া) থেকে ফানাই নদীর নিচের অংশের খনন কাজ যৎসামান্য করা হয়েছে। মাটি খননের যন্ত্র দ্বারা নদীর দুই পাশ থেকে কিছু মাটি উত্তোলন করে পাড়ে এলোপাতাড়ি ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে কৃষক, মৎসজীবী, রাখাল ও পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনসাধারণ উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির সম্মখীন হয়েছেন। বিশেষ করে গত দু’বছর হতে সদ্যসমাপ্ত বোরো মৌসুমে ফসল তুলতে কৃষকদের প্রচুর ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়েছে। অনেকের ফসলি জমিতে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। এদিকে পুরো নদী খনন না করায় নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে নদীর অনেক অংশ খননই করা হয়নি। ভাটি অংশে ৯ হাজার ৪শ’ জলজ বৃক্ষ রোপণের কথা থাকলেও সরেজমিনে কোথাও একটি গাছও দেখা যায়নি।
তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সরওয়ার আলম জানান, ২ হাজার ২শ’ গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু বাসএব তার কোন হদিস খুজে পাওয়া যায়নি।একই দৃশ্য ফানাই নদীর বাদে ভূকশিমইল, জাব্দা, ভূকশিমইল, ছিলারকান্দি, ছকাপন, কাদিপুর, চুনঘর ও খাকিচার অংশেও। ভুকশিমইল ইউনিয়নের দুদু মিয়া ও মানিক মিয়া মুসা জানান, নদীর দু’পাশে এলোমেলোভাবে মাটি ফেলে রাখার ফলে মাটিগুলো ফের নদীতে এবং পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতে পড়ে যাচ্ছে। এতে করে কৃষকসহ সাধারণ জনগণ অনেক ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকদের কিছু বললেই ক্ষমতার দাপট দেখায়, ফলে প্রতিবাদ করারও উপায় নেই। হাওর ‘বাঁচাও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনভাবেই কথা শোনানো যায়নি। নদী পাড়ের কোথায়ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় চাষাবাদের মৌসুমে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকছে। কাজের চরম অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে এত টাকা খরচ করেও প্রধানমন্ত্রীর এ বিশেষ প্রকল্প মানুষের কোন উপকারে আসছে না। অগোছালোভাবে মাটি ফেলে রাখায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে,গবাদিপশু কিংবা কৃষি পণ্য নিয়ে হাওরে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া নদীর পুরো অংশ খনন না করায় নৌকা চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাজে সীমহীন অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতি হয়েছে, তাই সুষ্ঠু তদন্তক্রমে কাজের বিল প্রদান এবং কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ফানাই নদীর অনেক স্থান আছে খননই করা হয়নি। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। একাধিকবার তাদের বলার পরেও কথাগুলো আমলে নেয়নি। কোথাও মাটি ফেলে রাখা হয়েছে আবার কোথাও নেই। এতে হাওর পাড়ের মানুষরা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। অসম্পূর্ণ কাজ করে দেয়ার তাগদা দিলেও তারা কোন পাত্তা দিচ্ছে না।
আদৌ কতটুকু করে দেবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি, ফানাই নদী খনন কাজ তদন্ত করে ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হোক। মেসার্স মা-বাবা কনস্ট্রাকশনের প্রোপ্রাইটর হাসান মোল্লা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করে দু’টাকা লাভমান হওয়া কষ্টকর। মোটামুটি ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছি। কোথাও মাটি কম আবার কোথাও মাটি বেশি থাকার কারণে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান জানান, যতটুকু কাজ হয়েছে সেই পরিমাণ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। সর্বাবস্থায় প্রকল্পের কাজ দেখভাল করার জন্য অফিসের দু’জন লোক ছিলেন। এখানে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই।