পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে পালাবদলের ইঙ্গিত

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে পালাবদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব কমছে মুকুল রায়ের। দলের বৈঠকেও যাচ্ছেন না মুকুল রায়। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক চানক্য জানান, বৈঠকের জন্য কোন আমন্ত্রণ পাননি। তাছাড়া, দলীয় বৈঠকের বিষয় বা ব্যাপারে কিছুই নাকি জানা নেই তার কিন্তু বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই আসছেন তার অনুগামীরা তার সল্টলেকের বাসভবনে। অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করছেন মুকুল রায়। মুকুল ঘনিষ্ঠদের কথায় নেতার সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ঠিক কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা নিয়েই বাড়ছে জল্পনা। রাজনৈতিক মহলের ভাবনায়, তবে কি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাচ্ছেন মুকুল রায়?

এখনও মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদে আছেন আবার বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০২১-র বিধান সভা নির্বাচনে জেতার পর থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমতে থাকে তার। ইদানীং বিজেপি অফিসেও খুব একটা যাচ্ছেন না।

এদিকে মুকুল রায়ের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ অবস্থায় বেশ চিন্তায় রয়েছেন তিনি। তার স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। এ সময় অভিষেক মুকুল রায়ের স্ত্রীর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। এ ব্যাপারে মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায় খুশি হন এবং অভিষেকের প্রশংসা করেন।

আর বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অথচ তা নিয়ে প্রকাশ্যেই মুকুল রায় বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না বলে এড়িয়ে যান। বিজেপির অন্দরেও কান পাতালে শোনা যাচ্ছে দিলীপ-মুকুলের ঠা-া লড়াইয়ের কথা। বিধানসভার ভোটে মুকুল রায় কৃষ্ণনগর উত্তরে জিতলেও পুত্র শুভ্রাংশু রায় বীজপুরে হেরে যান আর হেরে যাওয়ার পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন শুভ্রাংশু রায়ও। ফেইসবুকে পোস্টেও নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা বন্ধ করে নিজেদের হারের কারণ খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করেন মুকুল। তারপর থেকেই জল্পনা তৈরি হয় তার বিজেপি ত্যাগের। ইতোমধ্যেই মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ সংখ্যালঘু নেতারা বিজেপি ত্যাগের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। বিজেপি সংখ্যালঘু রাজ্যকমিটির সভাপতি কাশেম আলি, কবিরুল ইসলামের মতো বেশ কয়েক নেতা তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে আবেদনও করেছেন। তারা ক্ষমাও চাইছেন মমতা ব্যানার্জির কাছে। তৃণমূল সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন তারা।

প্রসঙ্গত, গতকালই রাজীব ব্যানার্জি থেকে সব্যসাচী দত্তর মতো বিজেপির হেভিওয়েট নেতারাও বেসুরো গাইছেন। এই দু’জনই নির্বাচনে হেরে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন তারা। ভোটের আগে তুণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড় থেকে বিজেপির প্রার্থী হলেও ভোটে পরাজিত হন। এরপর গত মঙ্গলবারে রাজীব ব্যানার্জির বেসুরো টুইট ঘিরে জল্পনা আরও ছড়ায়। এ নিয়ে তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদরের চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের কটাক্ষ, দলে বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা নেই। ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এ নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা। রাজনৈতিক মহলের মতে, এমনিতেই রাজ্য বিজেপি নেতারা রয়েছেন বেশ চাপে। কারণ গতকালই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি বলেন, দলবদল এবং বিজেপির জয়ী বহু বিধায়কও নাকি এখন তৃণমূলে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। অভিষেকের এ ধরনের মন্তব্যের পর থেকেই বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। ঠিক কোন কোন বিধায়ক তৃণমূলে যেতে তৈরি। যদিও বিজেপির সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতারা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ভোটের ফল প্রকাশ হতেই বিজেপির মিটিংয়ে আর দেখা যায়নি প্রবীর ঘোষাল, রাজীব ব্যানার্জিদের। বিজেপি থেকে একাধিক নেতাও দলবদল করে তৃণমূলে ফিরবেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

বিজেপির সংসদ সদস্য সোমিত্র খাঁ বলেছেন, মুকুল রায় বিজেপির একজন সর্বভারতীয় সভাপতি। বিজেপির এটি একটি বড় পদ। সর্বভারতীয় এই পদ ছেড়ে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে আমার মনে হয় না, কেননা তিনি একজন রাজনৈতিকবোদ্ধা লোক। কোন সিদ্ধান্ত নিলে তাকে অনেক চিন্তাভাবনা করেই নিতে হবে। এদিকে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের বড় মুখ তথা রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ জিতিন প্রসাদা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন। তার আগে এই নেতার প্রস্থান কংগ্রেসকে বড় ধাক্কা দিতে চলেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১ , ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৮ শাওয়াল ১৪৪২

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে পালাবদলের ইঙ্গিত

দীপক মুখার্জী কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে পালাবদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব কমছে মুকুল রায়ের। দলের বৈঠকেও যাচ্ছেন না মুকুল রায়। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক চানক্য জানান, বৈঠকের জন্য কোন আমন্ত্রণ পাননি। তাছাড়া, দলীয় বৈঠকের বিষয় বা ব্যাপারে কিছুই নাকি জানা নেই তার কিন্তু বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই আসছেন তার অনুগামীরা তার সল্টলেকের বাসভবনে। অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করছেন মুকুল রায়। মুকুল ঘনিষ্ঠদের কথায় নেতার সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ঠিক কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা নিয়েই বাড়ছে জল্পনা। রাজনৈতিক মহলের ভাবনায়, তবে কি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাচ্ছেন মুকুল রায়?

এখনও মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদে আছেন আবার বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০২১-র বিধান সভা নির্বাচনে জেতার পর থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমতে থাকে তার। ইদানীং বিজেপি অফিসেও খুব একটা যাচ্ছেন না।

এদিকে মুকুল রায়ের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ অবস্থায় বেশ চিন্তায় রয়েছেন তিনি। তার স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। এ সময় অভিষেক মুকুল রায়ের স্ত্রীর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। এ ব্যাপারে মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায় খুশি হন এবং অভিষেকের প্রশংসা করেন।

আর বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অথচ তা নিয়ে প্রকাশ্যেই মুকুল রায় বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না বলে এড়িয়ে যান। বিজেপির অন্দরেও কান পাতালে শোনা যাচ্ছে দিলীপ-মুকুলের ঠা-া লড়াইয়ের কথা। বিধানসভার ভোটে মুকুল রায় কৃষ্ণনগর উত্তরে জিতলেও পুত্র শুভ্রাংশু রায় বীজপুরে হেরে যান আর হেরে যাওয়ার পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন শুভ্রাংশু রায়ও। ফেইসবুকে পোস্টেও নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা বন্ধ করে নিজেদের হারের কারণ খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করেন মুকুল। তারপর থেকেই জল্পনা তৈরি হয় তার বিজেপি ত্যাগের। ইতোমধ্যেই মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ সংখ্যালঘু নেতারা বিজেপি ত্যাগের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। বিজেপি সংখ্যালঘু রাজ্যকমিটির সভাপতি কাশেম আলি, কবিরুল ইসলামের মতো বেশ কয়েক নেতা তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে আবেদনও করেছেন। তারা ক্ষমাও চাইছেন মমতা ব্যানার্জির কাছে। তৃণমূল সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন তারা।

প্রসঙ্গত, গতকালই রাজীব ব্যানার্জি থেকে সব্যসাচী দত্তর মতো বিজেপির হেভিওয়েট নেতারাও বেসুরো গাইছেন। এই দু’জনই নির্বাচনে হেরে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন তারা। ভোটের আগে তুণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড় থেকে বিজেপির প্রার্থী হলেও ভোটে পরাজিত হন। এরপর গত মঙ্গলবারে রাজীব ব্যানার্জির বেসুরো টুইট ঘিরে জল্পনা আরও ছড়ায়। এ নিয়ে তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদরের চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের কটাক্ষ, দলে বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা নেই। ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এ নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা। রাজনৈতিক মহলের মতে, এমনিতেই রাজ্য বিজেপি নেতারা রয়েছেন বেশ চাপে। কারণ গতকালই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি বলেন, দলবদল এবং বিজেপির জয়ী বহু বিধায়কও নাকি এখন তৃণমূলে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। অভিষেকের এ ধরনের মন্তব্যের পর থেকেই বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। ঠিক কোন কোন বিধায়ক তৃণমূলে যেতে তৈরি। যদিও বিজেপির সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতারা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ভোটের ফল প্রকাশ হতেই বিজেপির মিটিংয়ে আর দেখা যায়নি প্রবীর ঘোষাল, রাজীব ব্যানার্জিদের। বিজেপি থেকে একাধিক নেতাও দলবদল করে তৃণমূলে ফিরবেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

বিজেপির সংসদ সদস্য সোমিত্র খাঁ বলেছেন, মুকুল রায় বিজেপির একজন সর্বভারতীয় সভাপতি। বিজেপির এটি একটি বড় পদ। সর্বভারতীয় এই পদ ছেড়ে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে আমার মনে হয় না, কেননা তিনি একজন রাজনৈতিকবোদ্ধা লোক। কোন সিদ্ধান্ত নিলে তাকে অনেক চিন্তাভাবনা করেই নিতে হবে। এদিকে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের বড় মুখ তথা রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ জিতিন প্রসাদা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন। তার আগে এই নেতার প্রস্থান কংগ্রেসকে বড় ধাক্কা দিতে চলেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।