স্বর্ণের ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসের

বিদ্যমান ভ্যাট অব্যবস্থাপনার কারণে জুয়েলারি ব্যবসা জুয়েলার্সদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দাবি করে স্বর্ণ বিক্রির ওপর ভ্যাট হার কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জুয়েলারি একটি প্রাচীন সম্ভাবনাময় ও স্পর্শকাতর শিল্প হওয়া সত্ত্বেও (২০২১-২২) অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে এই শিল্পকে রক্ষার কোন দিকনির্দেশনা নেই। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৩০ লাখ মানুষ, ২০ হাজার ব্যবসায়ী ও ৪ কোটি গ্রাহকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এমন অভিমত দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে লেখা বাজুসের চিঠিতে কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দাবির পক্ষের যুক্তি এবং দাবি জানানোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হলো, বিদ্যমান ভ্যাট অব্যবস্থাপনার কারণে জুয়েলারি ব্যবসা আজ জুয়েলার্সদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বর্ণ মূল্যবান ধাতু বিধায় গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বড় অঙ্কের অর্থে পরিণত হয়। ফলে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের গ্রাহকরা ভ্যাট প্রদানে ব্যাপক অনীহা প্রকাশ করছে। একইভাবে উচ্চবিত্ত গ্রাহকরা এই উচ্চহারের ভ্যাটকে প্রত্যাখান করে পর্যটক সুবিধা গ্রহণ করে ভ্যাট ছাড়া গহনা ক্রয় করছে। বিশ্বব্যাপী হ্যান্ড মেড জুয়েলারি তৈরিতে এ দেশের কারিগররা শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে একদিকে যেমন দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে দেশের দোকানগুলো দিন দিন ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

এ বস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় জুয়েলারি খাতে মোট ১.৫ শতাংশ ভ্যাট অথবা শুধুমাত্র গহনার মজুরির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে দেশের জুয়েলার্সরা তথা স্বর্ণশিল্পীরা রক্ষা পাবে। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বর্তমান ভ্যাট ব্যবস্থায় সংশোধনী আনা হলে এই খাত থেকে সরকার দ্বিগুণ রাজস্ব পাবে। আমদানি পর্যায়ে ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) প্রতি ২ হাজার টাকা কাস্টমস ডিউটি (সিডি) প্রদান করার ফলে বিশ্ব বাজার থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কাঁচামাল পর্যায়েই বেশি। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২ হাজার টাকার পরিবর্তে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। আমদানিকৃত গোল্ড বার (স্বর্ণালংকার তৈরির কাঁচামাল) এ দেশের জুয়েলার্সরা ৬.৩ ফরম পূরণের মাধ্যমে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করে ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করে। পরবর্তীতে ক্রেতারা এর কাছ থেকে বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আহরণ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। কিন্তু জুয়েলার্সরা ক্রয় করা গোল্ডবারের (কাঁচামাল) উপকরণ কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বস্তুত এর ফলে জুয়েলারি খাতে (৫ শতাংশ + ৫ শতাংশ) ১০ শতাংশ ভ্যাট বিদ্যমান। মূল্যবান পণ্য বিধায় আরোপিত কর হার টাকার অঙ্কে অত্যন্ত বেশি।

টেকসই জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রপ্তানির সুযোগ ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় এনে (২০২১-২২) অর্থবছরের বাজেটে এসব দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২

স্বর্ণের ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

বিদ্যমান ভ্যাট অব্যবস্থাপনার কারণে জুয়েলারি ব্যবসা জুয়েলার্সদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দাবি করে স্বর্ণ বিক্রির ওপর ভ্যাট হার কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জুয়েলারি একটি প্রাচীন সম্ভাবনাময় ও স্পর্শকাতর শিল্প হওয়া সত্ত্বেও (২০২১-২২) অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে এই শিল্পকে রক্ষার কোন দিকনির্দেশনা নেই। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৩০ লাখ মানুষ, ২০ হাজার ব্যবসায়ী ও ৪ কোটি গ্রাহকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এমন অভিমত দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে লেখা বাজুসের চিঠিতে কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দাবির পক্ষের যুক্তি এবং দাবি জানানোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হলো, বিদ্যমান ভ্যাট অব্যবস্থাপনার কারণে জুয়েলারি ব্যবসা আজ জুয়েলার্সদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বর্ণ মূল্যবান ধাতু বিধায় গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বড় অঙ্কের অর্থে পরিণত হয়। ফলে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের গ্রাহকরা ভ্যাট প্রদানে ব্যাপক অনীহা প্রকাশ করছে। একইভাবে উচ্চবিত্ত গ্রাহকরা এই উচ্চহারের ভ্যাটকে প্রত্যাখান করে পর্যটক সুবিধা গ্রহণ করে ভ্যাট ছাড়া গহনা ক্রয় করছে। বিশ্বব্যাপী হ্যান্ড মেড জুয়েলারি তৈরিতে এ দেশের কারিগররা শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে একদিকে যেমন দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে দেশের দোকানগুলো দিন দিন ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

এ বস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় জুয়েলারি খাতে মোট ১.৫ শতাংশ ভ্যাট অথবা শুধুমাত্র গহনার মজুরির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে দেশের জুয়েলার্সরা তথা স্বর্ণশিল্পীরা রক্ষা পাবে। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বর্তমান ভ্যাট ব্যবস্থায় সংশোধনী আনা হলে এই খাত থেকে সরকার দ্বিগুণ রাজস্ব পাবে। আমদানি পর্যায়ে ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) প্রতি ২ হাজার টাকা কাস্টমস ডিউটি (সিডি) প্রদান করার ফলে বিশ্ব বাজার থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কাঁচামাল পর্যায়েই বেশি। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২ হাজার টাকার পরিবর্তে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। আমদানিকৃত গোল্ড বার (স্বর্ণালংকার তৈরির কাঁচামাল) এ দেশের জুয়েলার্সরা ৬.৩ ফরম পূরণের মাধ্যমে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করে ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করে। পরবর্তীতে ক্রেতারা এর কাছ থেকে বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আহরণ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। কিন্তু জুয়েলার্সরা ক্রয় করা গোল্ডবারের (কাঁচামাল) উপকরণ কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বস্তুত এর ফলে জুয়েলারি খাতে (৫ শতাংশ + ৫ শতাংশ) ১০ শতাংশ ভ্যাট বিদ্যমান। মূল্যবান পণ্য বিধায় আরোপিত কর হার টাকার অঙ্কে অত্যন্ত বেশি।

টেকসই জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রপ্তানির সুযোগ ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় এনে (২০২১-২২) অর্থবছরের বাজেটে এসব দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।