বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ

এতদিন করোনা সংক্রমণ বেশি ছিল শুধু সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ২২টি সীমান্তবর্তী জেলা সংক্রমণের ‘উচ্চঝুঁকি’তে ছিল; সেখানকার কয়েকটি জেলা এখনও সংক্রমণের হটস্পট।

তবে এখন সংক্রমণ সীমান্ত জেলায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রায় সব প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। সীমান্তবর্তী জেলা না হলেও নোয়াখালী ও কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি জেলায় কিছুদিন ধরে সংক্রমণ বাড়ছে। এতে আশপাশের জেলায়ও সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলেন, বর্তমানে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তা জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে সব প্রান্তে করোনার ভারতীয় ধরন অর্থাৎ ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা নেই। যদিও সীমান্তসংলগ্ন জেলা নয়-ঢাকা বিভাগের এমন একটি জেলায় ইতোমধ্যে করোনার ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত সাতজন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারের গত তিনদিনে ১০৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নোয়াখালীতে তিনদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২২৭ জনের। চট্টগ্রাম জেলায় তিনদিনে ৩৬১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এই বিভাগের অন্যান্য জেলার মধ্যে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়ও সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় দুই হাজার ৪০৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৩৭ জনের করোনা পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে সংক্রমণের যে পরিস্থিতি তা জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে আমাদের সামনে খুবই খারাপ অবস্থা অপেক্ষা করছে।’

মূলত দুই কারণে সংক্রমণ বাড়ছে জানিয়ে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অল্প কয়েক রোগী ছিল কিন্তু টেস্ট (নমুনা পরীক্ষা) কম হওয়ায় আমরা সবাইকে শনাক্ত করতে পারিনি। এতে অন্যান্য এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এখন ঢাকাও ভারতীয় ধরন অর্থাৎ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। সেটিও ছড়িয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, আমরা ...জনগণ একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি না; কেউই মাস্ক পরি না, সামাজিক দূরত্ব মানি না, মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলি না। এ কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে।’

ঢাকায় পরীক্ষা কম, শনাক্তও কম

নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় ঢাকা বিভাগে গত একদিনে শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে এ বিভাগে সংক্রমণের হার বাড়তির দিকেই রয়েছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরসহ এ বিভাগের ১৩ জেলায় আট হাজার ৬৮৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫১৩ জনের করোনা পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

৯ জুন এ বিভাগে ১০ হাজার ৩৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৭২৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ০১ শতাংশ।

৮ জুন ঢাকা বিভাগে ৯ হাজার ৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে গতকাল ফরিদপুরে ৪৬ জন, ঢাকায় ২৮৮ জন, গাজীপুরে ৪৭ জন, মাদারীপুরে ২০ জন, টাঙ্গাইলে ৪৬ জন, নারায়নগঞ্জে ১২ জন, কিশোরগঞ্জে ১৬ জনের সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে।

সংক্রমণের হারে শীর্ষে খুলনা বিভাগ

গত একদিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ৪৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৭৮ জনের করোনা শনাক্ত করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিভাগে শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এ বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ২০০ জন, খুলনায় ১২২ জন, বাগেরহাটে ৬৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ জন, কুষ্টিয়ায় ৭৩ জন, সাতক্ষীরায় ৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যান্য জেলায় সংক্রমণ কিছুটা কম।

শনাক্ত বেশি রাজশাহীতে

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় গত একদিনে পাঁচ হাজার ১১০টি নমুনা পরীক্ষায় ৮১৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

এ বিভাগের জেলার মধ্যে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫৮ জন, নওগাঁয় ৯৪ জন, রাজশাহীতে ৩৫৩ জন, জয়পুরহাটে ৯৬ জন, নাটোরে ৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্য জেলাগুলোতে শনাক্ত কিছুটা কম।

অন্যান্য বিভাগের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ৫৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৬২ জনের করোনা পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৪১৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ।

সিলেটের ৪ জেলায় ৫২৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৯২ জনের দেহে করোনা পাওয়া গেছে। এ বিভাগে সংক্রমণের হার ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

দেশে মোট মৃত্যু ১৩ হাজারের কাছাকাছি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত একদিনে করোনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৯৮৯ জনে। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এই ২৪ ঘণ্টায় দেশে দুই হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জনে।

একদিনে দুই হাজার ৬১ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১০টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৪৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ২৬ হাজার ২৩৮টি। গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ৪০ জনের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন ও নারী ৯ জন। তাদের ৩১ জন সরকারি হাসপাতালে, ছয়জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং তিনজন বাসায় মারা যান। এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ১২ হাজার ৯৮৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৩৫০ জন এবং নারী তিন হাজার ৬৩৯ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ২২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।

বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা গেছে, গত একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে আটজন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, আটজন রাজশাহী বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, দুইজন সিলেট বিভাগের এবং চারজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

image

রাজধানীসহ জেলায় জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড়, জেলার অনেক হাসপাতালে শয্যাও নেই, রোগী ভর্তি হতে পারছে না। গতকাল ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগী -সংবাদ

আরও খবর
খুলনায় শয্যা খালি নেই রোগী ভর্তি বন্ধ 
সাতক্ষীরা, যশোরে সংক্রমণ উদ্বেগ ছড়াচ্ছে
বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পরও চালের বাজার অস্থির
সবাই বলে টিকা দেবে কিন্তু ...
করোনার ভুয়া রিপোর্ট ঠেকাতে বিদেশগামীদের নতুন নির্দেশনা
এনু-রূপমসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে দুদক
তাদের কাজ রোগী ভাগিয়ে নেয়া
নতুন সেনাপ্রধান হচ্ছেন এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ
লামায় দুই শিশুর মৃত্যু
স্টিমকার গেমিং অ্যাপে জুয়া, আড্ডা ও টাকা পাচার

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২

বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

রাজধানীসহ জেলায় জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড়, জেলার অনেক হাসপাতালে শয্যাও নেই, রোগী ভর্তি হতে পারছে না। গতকাল ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগী -সংবাদ

এতদিন করোনা সংক্রমণ বেশি ছিল শুধু সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ২২টি সীমান্তবর্তী জেলা সংক্রমণের ‘উচ্চঝুঁকি’তে ছিল; সেখানকার কয়েকটি জেলা এখনও সংক্রমণের হটস্পট।

তবে এখন সংক্রমণ সীমান্ত জেলায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রায় সব প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। সীমান্তবর্তী জেলা না হলেও নোয়াখালী ও কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি জেলায় কিছুদিন ধরে সংক্রমণ বাড়ছে। এতে আশপাশের জেলায়ও সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলেন, বর্তমানে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তা জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে সব প্রান্তে করোনার ভারতীয় ধরন অর্থাৎ ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা নেই। যদিও সীমান্তসংলগ্ন জেলা নয়-ঢাকা বিভাগের এমন একটি জেলায় ইতোমধ্যে করোনার ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত সাতজন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারের গত তিনদিনে ১০৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নোয়াখালীতে তিনদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২২৭ জনের। চট্টগ্রাম জেলায় তিনদিনে ৩৬১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এই বিভাগের অন্যান্য জেলার মধ্যে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়ও সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় দুই হাজার ৪০৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৩৭ জনের করোনা পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে সংক্রমণের যে পরিস্থিতি তা জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে আমাদের সামনে খুবই খারাপ অবস্থা অপেক্ষা করছে।’

মূলত দুই কারণে সংক্রমণ বাড়ছে জানিয়ে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অল্প কয়েক রোগী ছিল কিন্তু টেস্ট (নমুনা পরীক্ষা) কম হওয়ায় আমরা সবাইকে শনাক্ত করতে পারিনি। এতে অন্যান্য এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এখন ঢাকাও ভারতীয় ধরন অর্থাৎ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। সেটিও ছড়িয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, আমরা ...জনগণ একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি না; কেউই মাস্ক পরি না, সামাজিক দূরত্ব মানি না, মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলি না। এ কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে।’

ঢাকায় পরীক্ষা কম, শনাক্তও কম

নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় ঢাকা বিভাগে গত একদিনে শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে এ বিভাগে সংক্রমণের হার বাড়তির দিকেই রয়েছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরসহ এ বিভাগের ১৩ জেলায় আট হাজার ৬৮৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫১৩ জনের করোনা পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

৯ জুন এ বিভাগে ১০ হাজার ৩৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৭২৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ০১ শতাংশ।

৮ জুন ঢাকা বিভাগে ৯ হাজার ৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে গতকাল ফরিদপুরে ৪৬ জন, ঢাকায় ২৮৮ জন, গাজীপুরে ৪৭ জন, মাদারীপুরে ২০ জন, টাঙ্গাইলে ৪৬ জন, নারায়নগঞ্জে ১২ জন, কিশোরগঞ্জে ১৬ জনের সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে।

সংক্রমণের হারে শীর্ষে খুলনা বিভাগ

গত একদিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ৪৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৭৮ জনের করোনা শনাক্ত করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিভাগে শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এ বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ২০০ জন, খুলনায় ১২২ জন, বাগেরহাটে ৬৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ জন, কুষ্টিয়ায় ৭৩ জন, সাতক্ষীরায় ৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যান্য জেলায় সংক্রমণ কিছুটা কম।

শনাক্ত বেশি রাজশাহীতে

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় গত একদিনে পাঁচ হাজার ১১০টি নমুনা পরীক্ষায় ৮১৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

এ বিভাগের জেলার মধ্যে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫৮ জন, নওগাঁয় ৯৪ জন, রাজশাহীতে ৩৫৩ জন, জয়পুরহাটে ৯৬ জন, নাটোরে ৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্য জেলাগুলোতে শনাক্ত কিছুটা কম।

অন্যান্য বিভাগের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ৫৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৬২ জনের করোনা পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৪১৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ।

সিলেটের ৪ জেলায় ৫২৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৯২ জনের দেহে করোনা পাওয়া গেছে। এ বিভাগে সংক্রমণের হার ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

দেশে মোট মৃত্যু ১৩ হাজারের কাছাকাছি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত একদিনে করোনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৯৮৯ জনে। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এই ২৪ ঘণ্টায় দেশে দুই হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জনে।

একদিনে দুই হাজার ৬১ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১০টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৪৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ২৬ হাজার ২৩৮টি। গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ৪০ জনের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন ও নারী ৯ জন। তাদের ৩১ জন সরকারি হাসপাতালে, ছয়জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং তিনজন বাসায় মারা যান। এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ১২ হাজার ৯৮৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৩৫০ জন এবং নারী তিন হাজার ৬৩৯ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে ২২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।

বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা গেছে, গত একদিনে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে আটজন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, আটজন রাজশাহী বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, দুইজন সিলেট বিভাগের এবং চারজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।