খুলনায় শয্যা খালি নেই রোগী ভর্তি বন্ধ 

নওগাঁয় এক শিশুর মৃত্যু

খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শনাক্ত হয়েছে ৫৭৮ জন, যা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভাগে সর্বোচ্চ। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান।

রাশেদা বলেন, এ নিয়ে খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৯৫ জনের।

এদিকে শয্যা খালি না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি স্থগিত রেখেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট কর্তৃপক্ষ। ইউনিটে মোট বেডের সংখ্যা ১০০টি। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ১৩০ জন।

তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা জানিয়েছেন, নতুন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভাগে যথেষ্ট চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। বিভাগটিতে মোট ৪৯টি আইসিইউ শয্যা ও ৩০৪টি উচ্চ প্রবাহের ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে।

গতকাল দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা ইউনিটের ফোকালপারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এখানে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। শয্যার অতিরিক্ত রোগী থাকায় শয্যা খালি না হওয়া পর্যন্ত রোগী ভর্তি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। শয্যা খালি সাপেক্ষে রোগী ভর্তি নেয়া হবে।

ডা. সুহাস জানান, গতকাল সকাল পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দু’জন এবং উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভর্তি আছেন ১২৬ জন। যারমধ্যে ৫৫ জন আছেন রেড জোনে, ২৯ জন ইয়োলো জোনে। আইসিইউতে ১২ জন এবং এইচডিইউতে আছেন ৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৭ জন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যার চেয়ে রোগীর চাপ বেশি। এর আগে কখনো এত সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়নি। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আজ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা আছে। সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সতেচন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

নওগাঁয় করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি, শিশুর মৃত্যু

নওগাঁ, প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়ে ৮ মাসবয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া আদিয়ান নামের ওই শিশু নওগাঁ সাপাহার থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য রায়হান উদ্দিনের সন্তান। গত বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতেই শিশুটির মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নওগাঁয় করোনায় মোট ৪৯ জনের মৃত্যু হলো। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বুধবার শনাক্তের গড় হার ছিল ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরটি-পিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৩৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১৭৯টি নমুনার আরটি-পিসিআর টেস্টে ৫১ জনের করোনা পজেটিভ আসে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া ১৯৩টি নমুনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৩ জনের করোনা পজেটিভ আসে। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৭ শতাংশ। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়ামতপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া সদর উপজেলার ১২ জন, সাপাহার উপজেলায় ১১ জন, পোরশায় ৬ জন, ধামইরহাটে ৮ জন, বদলগাছীতে ২ জন, মান্দায় ৫ জন, মহাদেবপুরে ৪ জন, রাণীনগরে ৩ জন এবং আত্রাই উপজেলায় ৮ জনের নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বুধবার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত মঙ্গলবার ৪৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের করোনা হয়। শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত রোববার শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ওইদিন ১ হাজার ১৯২টি নমুনা পরীক্ষা ১১৯ জনের শনাক্ত হয়। গত ১ জুন থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৮৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পার্সন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি জানার জন্য এবং মানুষকে নমুনা দিতে আগ্রহী করতে বিনামূল্যে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। গত রোববার ও সোমবার উন্মুক্ত স্থানে ক্যাম্প করে পথচলতি মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাতে ১ হজার ৫৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই চিত্র কিছুটা উদ্বেগজনক। বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিনামূল্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর জন্য যে শয্যা প্রস্তুত রয়েছে তার চেয়ে করোনা রোগী অনেক কম ভর্তি রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে করোনা রোগী বেড়ে গেলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নওগাঁ সদর হাসপাতালে আরও ৪৫টি শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

এদিকে চলতি জুন মাসের ১ম দিন ৬৭ জন করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন, ২য় দিন করোনা আক্রান্ত ১৫ জন, ৩য় দিন করোনায় আক্রান্ত ২৩ জন, ৪র্থ দিন করোনায় আক্রান্ত ২৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন, ৫ম দিন করোনা আক্রান্ত ২৪ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন, ৬ জুন আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ জন, ৭ জুন আক্রান্ত হয়েছে ১১৯ জন, ৮ জুন আক্রান্ত হয়েছে ৩৬ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন এবং ৯ জুন আক্রান্ত হয়েছে ৫২ জন।

করোনা মোকাবিলায় নওগাঁ স্বাস্থ্য বিভাগ

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকালপার্সন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ জানিয়েছেন, নওগাঁ করোনা চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালসহ ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১টি শয্যা প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালে ৪৫টি, সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি এবং জেলার অন্য ৯টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫টি করে মোট ১৩৫টি শয্যা রয়েছে।

জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালের কোনটিতেই আইসিইউ শয্যা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে চারটি হাসপাতালে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতাল, নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ৭টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৮২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে।

জেলায় বর্তমানে ৫৮৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫৬ জন রোগী জেলার সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের অধিকাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া অনেকে রাজশাহী কিংবা বগুড়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২

খুলনায় শয্যা খালি নেই রোগী ভর্তি বন্ধ 

নওগাঁয় এক শিশুর মৃত্যু

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শনাক্ত হয়েছে ৫৭৮ জন, যা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভাগে সর্বোচ্চ। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান।

রাশেদা বলেন, এ নিয়ে খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৯৫ জনের।

এদিকে শয্যা খালি না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি স্থগিত রেখেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট কর্তৃপক্ষ। ইউনিটে মোট বেডের সংখ্যা ১০০টি। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ১৩০ জন।

তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা জানিয়েছেন, নতুন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভাগে যথেষ্ট চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। বিভাগটিতে মোট ৪৯টি আইসিইউ শয্যা ও ৩০৪টি উচ্চ প্রবাহের ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে।

গতকাল দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা ইউনিটের ফোকালপারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এখানে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। শয্যার অতিরিক্ত রোগী থাকায় শয্যা খালি না হওয়া পর্যন্ত রোগী ভর্তি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। শয্যা খালি সাপেক্ষে রোগী ভর্তি নেয়া হবে।

ডা. সুহাস জানান, গতকাল সকাল পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দু’জন এবং উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভর্তি আছেন ১২৬ জন। যারমধ্যে ৫৫ জন আছেন রেড জোনে, ২৯ জন ইয়োলো জোনে। আইসিইউতে ১২ জন এবং এইচডিইউতে আছেন ৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৭ জন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যার চেয়ে রোগীর চাপ বেশি। এর আগে কখনো এত সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়নি। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আজ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা আছে। সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সতেচন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

নওগাঁয় করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি, শিশুর মৃত্যু

নওগাঁ, প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়ে ৮ মাসবয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া আদিয়ান নামের ওই শিশু নওগাঁ সাপাহার থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য রায়হান উদ্দিনের সন্তান। গত বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতেই শিশুটির মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নওগাঁয় করোনায় মোট ৪৯ জনের মৃত্যু হলো। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বুধবার শনাক্তের গড় হার ছিল ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরটি-পিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৩৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১৭৯টি নমুনার আরটি-পিসিআর টেস্টে ৫১ জনের করোনা পজেটিভ আসে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া ১৯৩টি নমুনার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৩ জনের করোনা পজেটিভ আসে। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৭ শতাংশ। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়ামতপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া সদর উপজেলার ১২ জন, সাপাহার উপজেলায় ১১ জন, পোরশায় ৬ জন, ধামইরহাটে ৮ জন, বদলগাছীতে ২ জন, মান্দায় ৫ জন, মহাদেবপুরে ৪ জন, রাণীনগরে ৩ জন এবং আত্রাই উপজেলায় ৮ জনের নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বুধবার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত মঙ্গলবার ৪৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের করোনা হয়। শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত রোববার শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ওইদিন ১ হাজার ১৯২টি নমুনা পরীক্ষা ১১৯ জনের শনাক্ত হয়। গত ১ জুন থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৮৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পার্সন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি জানার জন্য এবং মানুষকে নমুনা দিতে আগ্রহী করতে বিনামূল্যে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। গত রোববার ও সোমবার উন্মুক্ত স্থানে ক্যাম্প করে পথচলতি মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাতে ১ হজার ৫৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই চিত্র কিছুটা উদ্বেগজনক। বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিনামূল্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর জন্য যে শয্যা প্রস্তুত রয়েছে তার চেয়ে করোনা রোগী অনেক কম ভর্তি রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে করোনা রোগী বেড়ে গেলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নওগাঁ সদর হাসপাতালে আরও ৪৫টি শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

এদিকে চলতি জুন মাসের ১ম দিন ৬৭ জন করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন, ২য় দিন করোনা আক্রান্ত ১৫ জন, ৩য় দিন করোনায় আক্রান্ত ২৩ জন, ৪র্থ দিন করোনায় আক্রান্ত ২৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন, ৫ম দিন করোনা আক্রান্ত ২৪ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন, ৬ জুন আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ জন, ৭ জুন আক্রান্ত হয়েছে ১১৯ জন, ৮ জুন আক্রান্ত হয়েছে ৩৬ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন এবং ৯ জুন আক্রান্ত হয়েছে ৫২ জন।

করোনা মোকাবিলায় নওগাঁ স্বাস্থ্য বিভাগ

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকালপার্সন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ জানিয়েছেন, নওগাঁ করোনা চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালসহ ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১টি শয্যা প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালে ৪৫টি, সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি এবং জেলার অন্য ৯টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫টি করে মোট ১৩৫টি শয্যা রয়েছে।

জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালের কোনটিতেই আইসিইউ শয্যা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে চারটি হাসপাতালে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতাল, নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ৭টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৮২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে।

জেলায় বর্তমানে ৫৮৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫৬ জন রোগী জেলার সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের অধিকাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া অনেকে রাজশাহী কিংবা বগুড়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।