চট্টগ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগে জিএমসহ গ্রেপ্তার ২

সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলেকে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বর্তমান মহাব্যবস্থাপকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে চট্টগ্রামে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানকেও। গ্রেপ্তার দুজন হলেন, কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন ও সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান। একই মামলায় গ্রেপ্তার দুইজনসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি তিন আসামি হলেন, কেজিডিসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, টেকনিশিয়ান দিদারুল আলম ও অবৈধভাবে সংযোগ পাওয়া গ্রাহক সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী কাজী সানোয়ার হোসেন লাবলু জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর সারওয়ার হোসেন ও মজিবুর রহমানকে দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

এর আগে, গত বুধবার দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ দেয়ার অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ার পর দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪২০, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের ?দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম এ সালাম নামে এক গ্রাহকের (বর্তমানে মৃত) নামে বরাদ্দকৃত ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার সংযোগ ছিল। এর থেকে ৬টি দ্বৈত চুলা রেখে বাকি ১২টি দ্বৈত চুলা নগরীর চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করা হয়। মৃত সালামের স্ত্রী নুরজাহান সালামের নামে ভুয়া চুক্তিনামা সৃজন করে সেগুলো স্থানান্তর করা হয়। মৃত সালাম এবং মুজিবুর রহমানের গ্রাহক সংকেত আলাদা। এ অবস্থায় সংযোগ স্থানান্তরের কোন আইনগত বৈধতা নেই।

এছাড়া ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে আরও ১০টি সংযোগ দেয়া হয় মুজিবুর রহমানের নামে সানোয়ারা আবাসিক এলাকায়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে পরের বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব সংযোগ দেয়া হয় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ হিসেবে ভুয়া আবেদনপত্র সৃজনের মাধ্যমে গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে মোট ২২টি অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়।

এদিকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সারওয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় কেজিডিসিএল কার্যালয়ের ফটকে তারা আন্দোলন করেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া কেজিডিসিএল সিবিএর সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন বলেন, একটি সাজানো মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১ , ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৯ শাওয়াল ১৪৪২

চট্টগ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগে জিএমসহ গ্রেপ্তার ২

চট্টগ্রাম ব্যুরো

সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলেকে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বর্তমান মহাব্যবস্থাপকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে চট্টগ্রামে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানকেও। গ্রেপ্তার দুজন হলেন, কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন ও সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান। একই মামলায় গ্রেপ্তার দুইজনসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি তিন আসামি হলেন, কেজিডিসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, টেকনিশিয়ান দিদারুল আলম ও অবৈধভাবে সংযোগ পাওয়া গ্রাহক সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী কাজী সানোয়ার হোসেন লাবলু জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর সারওয়ার হোসেন ও মজিবুর রহমানকে দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

এর আগে, গত বুধবার দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ দেয়ার অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ার পর দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪২০, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের ?দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম এ সালাম নামে এক গ্রাহকের (বর্তমানে মৃত) নামে বরাদ্দকৃত ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার সংযোগ ছিল। এর থেকে ৬টি দ্বৈত চুলা রেখে বাকি ১২টি দ্বৈত চুলা নগরীর চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করা হয়। মৃত সালামের স্ত্রী নুরজাহান সালামের নামে ভুয়া চুক্তিনামা সৃজন করে সেগুলো স্থানান্তর করা হয়। মৃত সালাম এবং মুজিবুর রহমানের গ্রাহক সংকেত আলাদা। এ অবস্থায় সংযোগ স্থানান্তরের কোন আইনগত বৈধতা নেই।

এছাড়া ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে আরও ১০টি সংযোগ দেয়া হয় মুজিবুর রহমানের নামে সানোয়ারা আবাসিক এলাকায়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে পরের বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব সংযোগ দেয়া হয় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ হিসেবে ভুয়া আবেদনপত্র সৃজনের মাধ্যমে গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে মোট ২২টি অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়।

এদিকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সারওয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় কেজিডিসিএল কার্যালয়ের ফটকে তারা আন্দোলন করেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া কেজিডিসিএল সিবিএর সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন বলেন, একটি সাজানো মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।