কয়লাবিদ্যুতে জাপানি বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জলবায়ু কর্মীদের

মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সব ধরনের জাপানি বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি) ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, অবিলম্বে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র (১ম পর্যায়) নির্মাণ স্থগিত করে যে পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তার ওপর তরল হাইড্রোজেনের মতো কম দূষণকারী জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প এখনই বাতিল করে সৌর বা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সব ধরনের জাপানি বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে, মাতারবাড়ির স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের গবেষণা তথ্য উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ২১০০ সাল নাগাদ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামাতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের সব চেয়ে বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এই সময়সীমার মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের হাতে আর সময় নেই। তাই আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) সুপারিশ অনুসারে এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ঢাকা জেলার সমন্বয়কারী রুহুল আমিন রাব্বি বলেন, জি-৭ এর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটভুক্ত সাত দেশ (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান) আর কয়লা খাতে বিনিয়োগ করবে না। সম্মিলিতভাবে নেয়া এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাপান কয়লাবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। আমাদের মতো দরিদ্র দেশের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ মে জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে বড় একটি ইস্যু ছিল- বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন। বৃহৎ সাত অর্থনীতির দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে চলতি বছরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বব্যাপী কয়লা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি চীন ও জি-৭ জোটভুক্ত দেশ জাপানের। গার্ডিয়ান, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, জি-৭ সম্মেলনে চলতি বছরের মধ্যেই কয়লা খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব ওঠার পর জোটের ছয়টি দেশ এতে একবাক্যে সমর্থন জানায়। একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসারও ঘোষণা দেয়া হয়।

তবে এ বিষয়ে জাপানের বক্তব্য ছিল, দেশটি যদি এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, তাহলে এ খাতে চীনের একাধিপত্য তৈরি হবে। এর বিপরীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন আরও বেশি করে তুলনামূলক কম দক্ষ প্রযুক্তি ও নকশার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ পাবে।

তবে শেষ পর্যন্ত জোটের অন্য ছয় দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের ভিত্তিতে এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয় জাপান। সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

কয়লাবিদ্যুতে জাপানি বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জলবায়ু কর্মীদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সব ধরনের জাপানি বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি) ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, অবিলম্বে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র (১ম পর্যায়) নির্মাণ স্থগিত করে যে পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তার ওপর তরল হাইড্রোজেনের মতো কম দূষণকারী জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প এখনই বাতিল করে সৌর বা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে সব ধরনের জাপানি বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে, মাতারবাড়ির স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের গবেষণা তথ্য উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ২১০০ সাল নাগাদ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামাতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের সব চেয়ে বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এই সময়সীমার মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের হাতে আর সময় নেই। তাই আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) সুপারিশ অনুসারে এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ঢাকা জেলার সমন্বয়কারী রুহুল আমিন রাব্বি বলেন, জি-৭ এর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটভুক্ত সাত দেশ (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান) আর কয়লা খাতে বিনিয়োগ করবে না। সম্মিলিতভাবে নেয়া এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাপান কয়লাবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। আমাদের মতো দরিদ্র দেশের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ মে জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে বড় একটি ইস্যু ছিল- বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন। বৃহৎ সাত অর্থনীতির দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে চলতি বছরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বব্যাপী কয়লা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি চীন ও জি-৭ জোটভুক্ত দেশ জাপানের। গার্ডিয়ান, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, জি-৭ সম্মেলনে চলতি বছরের মধ্যেই কয়লা খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব ওঠার পর জোটের ছয়টি দেশ এতে একবাক্যে সমর্থন জানায়। একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসারও ঘোষণা দেয়া হয়।

তবে এ বিষয়ে জাপানের বক্তব্য ছিল, দেশটি যদি এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, তাহলে এ খাতে চীনের একাধিপত্য তৈরি হবে। এর বিপরীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন আরও বেশি করে তুলনামূলক কম দক্ষ প্রযুক্তি ও নকশার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ পাবে।

তবে শেষ পর্যন্ত জোটের অন্য ছয় দেশ কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের ভিত্তিতে এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয় জাপান। সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়।