অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ নজিরবিহীন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অনলাইন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে হতে যাওয়া নতুন ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের ঘটনাকে নজিরবিহীন ও বিভাগীয় কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন বিভাগটির আটজন শিক্ষক। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আগামী ১২ জুন দর্শন বিভাগে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার অনলাইনে নেয়া হবে বলে আবেদনকারীদের জানানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অধ্যাদেশ পাস করানো হয়েছে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা অনলাইনে নেয়াকে আমরা যথাযথ মনে করছি না, সেখানে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ যাচাই পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিভাগীয় সভাপতি তাদের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে অনলাইনে গণনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ সময় অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষাপর্ষদের সভায় কোন আলোচনা হয়নি। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বিভাগের দীর্ঘদিনের কনভেনশন লঙ্ঘন করা হয়েছে। একসঙ্গে এতজন শিক্ষক নিয়োগ বিভাগে অপ্রয়োজনীয় এবং এটি দুরভিসন্ধিমূলক। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ফরিদ আহমেদ, মো. মঞ্জুর ইলাহী, মো. জাকির হোসেন, সহকারী অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার ও মোহাম্মদ উল্লাহ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দর্শন বিভাগের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, জাকির হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং দর্শন বিভাগের সভাপতিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট ড. সৈয়দা নাসরিন। দর্শন বিভাগের আটজন শিক্ষকের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এর আগে গত বুধবার এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধে ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন ওই আট শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দর্শন বিভাগে ছয়জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই ছয় পদের বিপরিতে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৫৭ জন প্রার্থী। আগামীকাল শনিবার অনলাইনে তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সভায় কোন বিভাগের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের জন্য একেবারেই অপরিহার্য না হলে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন শিক্ষক নিয়োগ না করার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অনুরোধ জানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা মনে করেন, অনলাইন মৌখিক পরীক্ষা সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের অনুকূল নয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নতুন নিয়োগ জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।

শনিবার, ১২ জুন ২০২১ , ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৩০ শাওয়াল ১৪৪২

অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ নজিরবিহীন

প্রতিনিধি, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অনলাইন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে হতে যাওয়া নতুন ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের ঘটনাকে নজিরবিহীন ও বিভাগীয় কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন বিভাগটির আটজন শিক্ষক। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আগামী ১২ জুন দর্শন বিভাগে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার অনলাইনে নেয়া হবে বলে আবেদনকারীদের জানানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অধ্যাদেশ পাস করানো হয়েছে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা অনলাইনে নেয়াকে আমরা যথাযথ মনে করছি না, সেখানে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ যাচাই পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিভাগীয় সভাপতি তাদের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে অনলাইনে গণনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ সময় অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষাপর্ষদের সভায় কোন আলোচনা হয়নি। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বিভাগের দীর্ঘদিনের কনভেনশন লঙ্ঘন করা হয়েছে। একসঙ্গে এতজন শিক্ষক নিয়োগ বিভাগে অপ্রয়োজনীয় এবং এটি দুরভিসন্ধিমূলক। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ফরিদ আহমেদ, মো. মঞ্জুর ইলাহী, মো. জাকির হোসেন, সহকারী অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার ও মোহাম্মদ উল্লাহ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দর্শন বিভাগের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, জাকির হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং দর্শন বিভাগের সভাপতিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট ড. সৈয়দা নাসরিন। দর্শন বিভাগের আটজন শিক্ষকের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এর আগে গত বুধবার এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধে ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন ওই আট শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দর্শন বিভাগে ছয়জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই ছয় পদের বিপরিতে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৫৭ জন প্রার্থী। আগামীকাল শনিবার অনলাইনে তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সভায় কোন বিভাগের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের জন্য একেবারেই অপরিহার্য না হলে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন শিক্ষক নিয়োগ না করার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অনুরোধ জানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা মনে করেন, অনলাইন মৌখিক পরীক্ষা সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের অনুকূল নয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নতুন নিয়োগ জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।